![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১
অরনী বাসায় ঢুকতেই ছোট বোন হেমা এক রকম ঝাপিয়ে পরল ওর উপড়।
- ও দিদি,ও দিদি জানো, কি হইছে?
অরনী কিছুটা জানে। ইউনিভার্সিটি যাওয়ার আগে প্রেস্ক্রিপশন ফেলে গিয়েছিল বাসায়। মা'কে ফোন করে হেমাকে বলল ওটা খুজে যায়গা মত রাখতে। হেমা বোধহয় ওর সাথে কথা বলার অপেক্ষাতেই ছিল। অরনীর কথা শেষ না হতেই উত্তেজিত ভাবে বলল--
--জান কি হইছে?
-কি?
-কোত্থেকে জানি একটা গুইসাপ আসছে নিচে। বিশ-আল বড় আর সুন্দর।
বোনের উৎসাহ আর আগ্রহ বরাবরই বোঝে অরনী। হেসে দিয়ে বলল-
-যাও ছবি তুলে রাখ। আমি এসে দেখব।
-কি দিয়ে তুলব?
-উমা দিদির ক্যামেরা?
-ও দেবেনা। তুমি বলে দাও ওকে দিতে।
উমা কে ফোনে বলতে বলতে হেমার চিৎকার করে নিচে দৌড়াতে থাকে
- থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্ক। প্রমিজ, ক্যামেরার কিছু করবনা।
বাসায় ফিরতেই স্বাভাবিক ভাবে অরনী ধরে নেয় এখন গুইসাপের ছবি দেখতে হবে। ঝাপিয়ে পরা হেমা আপাতত তাই আলামত দিচ্ছে। হেমা বড় বড় চোখ করে বলে-
-জান আজ কি হইছে?
-কি?
-ম্যানেজার আঙ্কেলটা না গুইসাপটাকে পিটিয়ে আধ মড়া বানায় দিছে।তারপর কইজানি ফেলে আসছে।
অরনী অবাক হয়। গুইসাপকে নিরিহ প্রাণী হিসেবে জানে ও। মোবাইল স্ক্রিন থেকে চোখ তুলে হেমার দিকে তাকিয়ে বলে-
-ক্যানো?!
-জানিনা। আমি কেবল নিচে গেছি ছবি তুলব।লিফটের দরজা খুলতেই দেখি ওটা আমার সামনে। বোঝ আমার অবস্থা। বাইচা গেছি লিফটে ঢোকেনাই। দৌড় দিয়া সিরির নিচে গিয়া লুকাইল।আমি কেবল ক্যামেরা তাক করছি, তখন গার্ড আইসা ধাওয়া দিল।
-ধাওয়া দেবার দরকার কি ছিল? বস্তায় ভরার চেষ্টা করলেই তো হত!
-জানিনা কেন দিল। গুইসাপটা না জান এত্ত জোরে চিতকার দিয়া ম্যানেজারের রুমে ঢুকে গেছে, ম্যানেজার না..হিহিহিহি ভয়ে এক লাফে চেয়ার থেকে উঠে টেবিলে উইঠা গেছে। হিহিহিহি।
-হিহিহিহি। তোদের ম্যানেজার আর গার্ড। গুইসাপ দেখে দৌড়ায়।
-আরে গুইসাপ সোফা চেয়ার এর নিচ দিয়ে শেষ মেশ ওর টেবিলের নিচেই গেল। ও জান গার্ডের কাছ থেকে লাঠি নিয়ে কি যে পিটাইল।পিটাইতে পিটাইতে রুম থেকে বাইর করল।তারপর ও আর গার্ড মিলা খুব মারল যতখন নড়া না বন্ধ হয়।মেবি মাথায় মারছে, চোখ দিয়া রক্ত পরছিল।
-পিটানোর কি দরকার ছিল? বস্তায় ভরে বন বিভাগকে খবর দিলেই তো হত (অরনী এক রকম বিস্ময়ে আর্তনাদ করে ওঠে)
-জান ওকে না পরে গার্ড আঙ্কেল লেজ ধরে টানতে টানতে রাস্তার ওপারে নিয়ে গেছে। ও যাবেনা,নখ দিয়ে নিচে খামচায় ধরছে,আঙ্কেল যে টানছে,নখের আচর পুরা বসে গেছে গেটের সামনে ইটে।
অরনী চোখ বড় হতে থাকে। হেমা ল্যাপটপ থেকে দেখায়। ওর বর্ননার সাথে প্রতি ছবি হা করে গেলে। এ্যপার্টমেন্টের নিচতলায় অজানা ভাবে ঢুকে যাওয়া গুইসাপ, তার প্রান বাচানোর আপ্রান চেষ্টা, হা করা মুখ যেন ছবিতেও গোঙ্গগায়। গুইসাপের লেজ ধরে টেনে নিয়া যাওয়া, রাস্তায় জেদী নখের আচর, চোখ ফেটে বের হওয়া রক্ত, রাস্তার মাঝখানে পাশ কেটে যাওয়া রিক্সার চাকার ভীতর দিয়ে দিয়ে সোনালী-ধূসর আহত গুইসাপ।
-কোথায় ফেলল ওটাকে?
-জানিনা, মেবি ওই পাশের নালার মাঝখানে,ওটার পেট কত মোটা দেখছ? বাবু নাই তো পেটে?
অরনী দীর্ঘশ্বাস ফেলে।উত্তর জানা তার। এত্ত নিঃঠুর মানুষ কেমনে হয়।
২
আরজ আলীর আজ শরীরটা ভাল নাই। এম্নিতেই ৪০টা ফ্লাটের দেখাশোনা, ভাড়াটিয়া-মালিকের গান শোনা তাকে চাপে রাখে। এই এ্যাপার্টমেন্টের সবাই নব্য বাড়িওয়ালা, তাই অধিকাংশের ঠাট আর ভুজুং-ভাজুং বেশী। চুন থেকে পান খসলেই চাকরি নট। এত্ত প্রেসার কাজের। তার উপড় কোত্থেকে এক উটকো গুইসাপ আসছিল। স্যাররা কেউ ছিলেন না,ভাগ্যিস। থাকলে টেবিলে চড়ার অপরাধে এতোখনে চাকড়ি যেত। যা ভয় পাইয়েছিল সাপটা! ইয়া বড় জিহবা! বিশাল শরীর। সবচেয়ে বিশ্রি ছিল ডাকটা। গুইসাপ ডাকে আজীবনে সে শোনেনি। স্বাভাবিক ভাবেই চেয়ারে পা উঠিয়ে গার্ড কে ডাকছিল লাঠি দেবার জন্য। এর মাঝখানেই সাপটা বিকট স্বরে চীৎকার করে উঠল। আরজ আলী যথেষ্ট সাহসী ছেলে হলেও হঠাত শিরশিরে অনুভুতি হয়। প্রান বাচানোর বেসিক ইন্সটিংক তাকে স্বজরে ঢাক্কা মেরে টেবিলে তুলতে তুলতে বলে "পালাও আরজ আলী, বেচে থাকলে চাকরী দেখা যাবে।" টেবিলে উঠেই তার চোখ লাল হয়, ততক্ষনে গার্ড লাঠি নিয়ে আসে। টেবিলের উপড়ে বসেই আরজ আলী স্বরুপে ফিরে আসে। ক্রমাগত আঘাত আসতে থাকে গুইসাপটার উপড়। আরজ আলী দাতে দাত চাপে, গুইসাপের চীৎকার দেবার শোধ তিনি আজ তুলবেন। রাগে কাপতে কাপতে তার চোখ আটকায় গুইসাপের চোখে। তার রক্তলাল চোখে এক সময় একটু একটু করে লাল হতে থাকে গুইসাপের চোখ। গুইসাপ পাতা ফেলেনা,তার চোখ আকটে আছে আরজের চোখে। নির্বাক বোবা রাগ নাকি যন্ত্রনা বোঝা যায়না। আরজের মুখ দিয়ে এক সময় লালা ঝড়তে শুরু করে। ততখনে বেদিশা সাপটা ম্যানেজারের রুম থেকে বের হয়ে উন্মুক্ত স্থানে আসে। গার্ড টা করিতকর্মা। কিছু বলার আগেই ম্যানেজারের সাথে হাত মিলায় সে। উপুর্যুপরি লাঠি উঠতে থাকে, এক সময় তাল মিলিয়ে, ছন্দ মিলিয়ে, অদ্ভুত পাশবিক আনন্দে হাসতে থাকে আরজ।শান্তি লাগে প্রতিশোধ নেবার। ক্লান্ত লাঠি এক সময় থামে। গার্ড টানতে টানতে মৃতপ্রায় গুইসাপ গেটের বাইরে নিয়ে যায়। আরজ আলীর ক্লান্তি লাগে। অনেক দিন এমন শারিরীক পরিশ্রমের কাজ হয়না। ১১টা বাজতেই তার চোখ ঘুমে পরে আসে।
৩
অরনীর অভ্যাস মত ঘুমাতে যাবার আগে গোসল সারে। আলগোছে চুল ছেড়ে দিয়ে গুইসাপটার কথা ভাবে। কি হত ওটাকে এমনে না মারলে। কারও ক্ষতি তো করতনা। হ্যা,নিচে বাচ্চারা খেলে। কিন্তু এক দিন খেলা বন্ধ রাখলে কি এমন ক্ষতি হত? হেমা বলল,পাশের নালায় ফেলছে ওকে, কাল যাবে নাকি একবার দেখতে। যদি বেচে থাকে বন বিভাগ কে খবর দিবে? অরনী পেপারে পড়েছে বন বিভাগ আজ এটা উদ্ধার করে, কাল সেটা উদ্ধার করে অভয়ারণ্যে ছেড়ে দেয়। গুইসাপটাকেও নিশচই বাচাবে, তা ছাড়া ছবি দেখে দুর্লভই মনে হয়। সাত-পাচ ভাবতে ভাবতে কখন জানি ঘুমিয়ে পরে। হটাত ঘুমের ঘোরে মনে হয় কে যেন ওর লম্বা চুল বেয়ে বেয়ে উপড়ে উঠছে! ঠিক রিতুর বিড়ালটা যেমন ওরণা নখ দিয়ে আচড়ে বেয়ে বেয়ে উপড়ে ওঠে ওমন। ঘুমের ঘোরেই মনে হয় জিনিস টা আগে ওর দরজার কাছে ছিল অনেক খন। একটু খানি ঘাড় বের করে অনেক ক্ষন ওকে পর্যবেক্ষন করল, তারপর যেন আস্তে আস্তে ঘুরে এসে ওর খাটের পাশে দাড়াল। কি যেন দেখল, হয়তো ওর মুখ। তারপর আবার ঘুরে মাথার কাছে গিয়ে নখের আচরে চুল গেথে উপড়ে উঠতে লাগল। স্পষ্ট ভাবে অরণি টের পেল তার নখের আচর চিরুনির মত লাগছে,একটু একটু করে উপড়ে উঠছে সে। চোখ খুললেই হয়তো দেখতে পাবে ওর মুখের উপর উলটো ভাবে ঝুলে থাকা আরেকটা মুখ!
অরনী বোবায় ধরা মানুশের মত হিতাহিত জ্ঞানশুণ্য হয়, কখন কিভাবে সে উঠে বসার সাহস পায় নিজেও জানেনা। তবে স্পষ্ট বুঝতে পারে কেউ এসেছিল এই ঘরে, কোন পার্থিব প্রমান না থাকলেও বোঝা যায় ছিল কিছু একটা,ঘরটা গুমোট করে।
কাল সকালেই যাবে গুইসাপকে খুজতে।
৪
আরজ আলী ঘুমায়, হা করে। ফ্যান টা ফুল স্পিডে, পায়ের কাছে কাথা। আজ ঘুমটা ভাল হবার কথা। স্যাররা খুশি হবেন এত্ত বড় একটা বিপদ সে এইভাবে সামাল দিল। ঘুমের ঘোরে ভাল লাগে, মনে হয় কোথাও অদৃশ্য রেডিও বাজছে, ঘোরে ঘুম বাড়ে। গরমটা জ্বালাচ্ছে কয়দিন ধরে খুব। তবুও আরজ আলী ঘুমকে জেকে ধরে। রাত বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে গরম বারে। আরজের ঘুম পাতলআ লাগে, ধুর!! টেবিল ফ্যানটাও চালাতে হবে দেখছি।লালায় ভিজে যাওয়া বালিশে পাশ ফিরে শোয়, উহু! এমনে আরাম হচ্ছেনা। আরজ ঘুম থেকে ওঠে। অদ্ভুত রকম অস্বস্তি ঘর জুড়ে, গুমোট কেমন জানি। আরজ হাত দিয়ে ফ্যান খোজে। কি আশ্চর্য! ফ্যান কই গেল? এই খানেই তো ছিল। আরজ হাতড়াতে থাকে। নাহ! পাওয়া যাচ্ছেনা। বিছানা থেকে নামে আরজ। ফ্লোরে পা রাখতেই গা গুলানি একটা অনুভুতি কাজ করে। পায়ের নিচে নরম খসখসে এটা কি? আরজ বেড সুইচ দিয়ে লাইট জ্বালায়, ৬০ পাওয়ারের লাইটটা জ্বলতে থাকে ডীম লাইটের মত। সেই কমল আলোয় আরজ দেখতে পায় গুইসাপটাকে, তার পায়ের নিচে। গা গুলানো অনুভুতি এইবার শিরশিরে অনুভুতি হতে থাকে, এইবার গুইসাপের তারস্বর ছাড়াই তার পা বিছানার উপড়ে উঠে যায়। প্রচন্ড তেষ্টা পাচ্ছে তার, বুক ঘামাচ্ছে, ঘারের পিছনে ব্যাথা লাগছে। আরজ ভাবতে চায় এইগুলা সব হ্যালুসিনেশান, মস্তিষ্ক উত্তেজিত আছে,তাই। কিন্তু বেশিক্ষন চিন্তা চলেনা, পানি খাওয়া দরকার। টেবিলের উপড় পানি আছে, পানি খেয়ে কিছুক্ষন বাইরে গার্ডের সাথে হাটবে বলে ঠিক করল। কিন্তু টেবিল এত্ত দূরে কবে গেল? ফ্লোরে পা রাখতেই আবার সেই গা গুলানো অনুভুতি। আরজ পা তুলে অন্য জায়গায় রাখে, কিন্তু এইবার আর পা তোলার শক্তি হয়না তার। এক রকম ছিটকে উঠে পা তুলে "মা'গো" বলে চীৎকার দিতে চায় সে। কিন্তু একি! গলা থেকে কেমন জানি গুইসাপের মত আওয়াজ বের হয়। আরজ কোন রকমে এলোপাতারি দৌড়ে টেবিলের কাছে যায়। গ্লাস ভর্তি পানি এক নিশ্বাসে শেষ করতে থাকে। হুস আসছে তার বোধ হয়, লাইট আস্তে আস্তে উজ্জ্বল হতে থাকে। উজ্জ্বল হতে থাকা সেই আলোয় আরজ দেখেতে থাকে তার হাতের তালুর ওখান থেকে গুইসাপের সেই নখের আচর আকরে আছে পানির গ্লাসটাকে। হিম হয়ে যাওয়া হৃদপিন্ড টা এক ধাক্কায় নাই হয়ে যেতে যেতে আরজ আলী আয়নায় দেখে তার চোখ থেকে রক্ত পরছে। নির্বাক বোবা ক্রোধের নাকি যন্ত্রনার ,তা বোঝা যায়না।
২| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:২৪
নভেল ডি ক্যাসনোভা বলেছেন:
৩| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:৩৯
নীলাঞ্জনার বাক্স-পেঁটড়া বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ ভোর ৬:২৮
প্লাবন২০০৩ বলেছেন: "বুড়ো মানুষের চিন্তা কেন জট পাকিয়ে যায়"।
আপনি বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন না। দ্রুত হারে লেখার উন্নতি ঘটছে। চালিয়ে যান, উন্নতি ঘটতে থাকবেই। এখনকার লেখাই তো অনেক পুরনোদেরও হার মানায়।
ব্লগিংয়ে স্বাগতম।
পুনশ্চঃ প্রথম লাইনটা আপনার প্রতম পোষ্ট থেকে নেয়া।
৫| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ ভোর ৬:২৯
প্লাবন২০০৩ বলেছেন: পুনশ্চঃ প্রথম লাইনটা আপনার প্রথম পোষ্ট থেকে নেয়া।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:১৩
বাপ্পা বলেছেন: সুন্দর লিখা, কেরি ওন।