নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর দুনিয়া

আমিন আশরাফ

আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা

আমিন আশরাফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বইয়ের নাম ঝিলাম নদীর দেশ

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৩৬

ছোটোবেলায় পাঠকের মৃত্যু শিরোনামে একটা গল্প পড়েছিলাম। বই পাগল লেখক বই পড়তে পড়তে বেশ কয়েকবার ট্রেন মিস করেন। বইয়ের নেশা তাকে এতোটা পাগল করে দিয়েছিল যে লেখক বই ছাড়া পৃথিবীতে অন্য কিছু কল্পনা করতে পারে না, বই ছাড়া অন্যকিছুর কথা ভাবতেও পারে না। বই ছাড়া অন্য কারো প্রেমেও পড়তে জানে না। দশ বছর পর যখন ঠিক সেই বইটা আবার তার হাতে এলো, যেটা এক সময় গোগ্রাসে গিলতে গিয়ে বারবার গাড়ি ফেল করেছিল। তো লেখক আগ্রহ নিয়ে যখন এই বইটা আবার পড়তে গেলেন তখন তার একটা পৃষ্ঠাও পড়তে ইচ্ছে হলো না। মনে হচ্ছে গল্পগুলো একদম অখাদ্য।
কাহিনিটা বলার কোনো আনুষ্ঠানিক উদ্দেশ্য নেই। এমনিতে বলা। পাঠকের মৃত্যু যে কারো হতে পারে। সেটা দুটো কারণে। এক. হয়তো আগে যে বইটা তার কাছে ভাল লেগেছিল তো তার মন-মানসিকতার সে বই পড়ার মতো উপযোগী নেই। দুই. হয়তো তার বই পড়ার আগের সেই আগ্রহ আর উচ্ছাস এখন আর নেই। সময় পাল্টেছে, ব্যস্ততা বেড়েছে। বইয়ের সঙ্গে প্রেম করার মতো সময়টা এখন তার কবজাতে নেই।
প্রথমটা কারণ আমার থাকলেও দ্বিতীয়টাও যে ফিল করিনি তা না। প্রথম বই পড়েছি, কাসেম বিন আবু বকরের ‘অসম প্রেম।’ কমপক্ষে কুড়ি তিরিশ বার। নায়ক লেখাপড়া শিখে ঢাকাতে রিকশায় চালায় আর নায়িকার জন্য ছুটে বেড়ায়। মনটা নায়কের জন্য অনেক আনচান করতো। বাবার ভয়ে ঘরের সেল্ফটার পেছনে বইটা সব সময় লুকিয়ে রাখতাম।আর ভাবতাম হায়! নায়িকার মতো নায়কও যদি বড়লোক হতো। তাহলে হয়তো দুজন আবার একসাতে হতো। গরীব হওয়ার কারণে নায়িকার বাবা নায়ককে হেলা করতো না। তাকে আর রিকশা চালাতে হতো না। এজন্য বারবার এ্ই আশা নিয়ে বইটা আবার শুরু থেকে শেষ করতাম। হায়! যদি মিরাক্কেলের মতো বইয়ের ঘটনাগুলো বদলে যেতো, নায়কের পক্ষে চলে যেতো। এরপর সময় পাল্টেছে। আরো অনেক বই পড়ার মতো তাওফিক মহান আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন। তখন মাঝে মাঝে আমার প্রথম ক্লাসের বাইরে বই পড়ার স্মৃতিটা নিজের ভেতর দৌড়ঝাঁপ করতো। প্রায় পনের বছর পরে নীলখেতের বই পাড়া থেকে আবার সেই বইটা আবার সংগ্রহ করি। তো প্রথম দুপৃষ্ঠা পড়তেই ‘অসম প্রেম’ এমন অখাদ্য লেগেছে যে, নিজের প্রতি অবাক হয়ে গেছিলাম যে, আমি এই বইটাই এক সময় নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে পড়েছি। বইটা তখনই বইটা ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম। পরে কাসেম বিন আবু বকরের এক ভক্ত নিযে গিয়েছিলো।
অনেকদিন পর হাতে দারুণ একটা বই নিলাম। মাদরাসায় ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে বইটা খোলে পড়তে থাকি। মনে হচ্ছে, অনেক দিন পর গোগ্রাসে গিলে ফেলার মতো বস্তু পেয়েছি। বইটাতে পাচ্ছিলাম অমৃতের ভ্রমণের স্বাদ, গল্পের মজা ইতিহাসের উত্তেজনা। নাম ঝিলাম নদীর দেশ। লিখেছেন বুলবুল সরওয়ার। এমন একটা বাসার সেল্ফে থেকে বাইন্ডিং আর পাতাগুলো আলাদা হয়ে যাচ্ছিল ব্যাপারটা এখন আমার আফসোসটাকে উসকে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে আবেগ নামক রোগে ভুগি। কোনো বই ভাল লাগলে মনে হয় বই ছাড়া মানুষকে মানুষ কল্পনা করা বিস্তর বোকামি। বই সব সময়ই আপনার সঙ্গী হবে আর কেউ নয়। জ্ঞানীরা বলেন, বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। ওমর খৈয়াম বলেছেন, ‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে ,প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে,কিন্তু বইখানা অনন্ত যৌবনা-যদি তেমন বই হয়।’ সে হিসাবে বউ হারানোর ভয় থাকলেও বই হারানোর কোনো ভয় নেই।
‘ঝিলাম নদীর দেশ’ বইটিতে লেখক শ্রীনগর-কাশ্মীর ভ্রমণকাহিনি লিখেছেন। এখনো পড়ে শেষ করতে পারিনি। তারপরও আমি হলফ করে বলতে পারি, কেউ যদি একত্রে ভ্রমণ-গল্প-উপন্যাস আর সত্যাশ্রয়ী ইতিহাসের স্বাদ পেতে চান, তাহলে ঝিলাম নদীর দেশ আপনাকে ঠকাবে না।
শেষ কথা হলো, এই তো আর কদিন পরে আসছে আমাদের প্রাণের একুশে বইমেলা ২০১৬। মেলাতে আপনি ভাল বই কিনতে পারবেন বেশ সহজে। আপনাকে বলতে পারি, বইয়ের বিকল্প কেবল বই-ই হতে পারে। পিডিএফ আপনাকে কখনো আসল বইয়ের স্বাদ দিতে পারে না। তারপর যারা সহজে বই সংগ্রহ করতে না পারেন না বা কারো আর্থিক সমস্যা থাকে । তাদের জন্য নাই মামার চেয়ে কানা মামা পিডিএফই ভাল। সবার মতো আমার জীবনটাও বইময় হোক। সেই প্রার্থনা রইলো এবারের বইমেলাতে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:২৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: পাঠকের মৃত্যু গল্পটা বনফুলের

২| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৫

আমিন আশরাফ বলেছেন: জি!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.