![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হারিয়ে গিয়ে ছোট্টোবেলা ছোট্ট খেলার সাথী, একলা আমি দেশ বিদেশে পুরান সে ঘর খুঁজি। শলার হাতের, কাপড় পরা মায়ের দেয়া পতুল, টিন পিতলের মিথ্যে ঘরের খেলার সে সব দুপুর।
একটা কথা বলি? খুব গোপন একটা কথা। জ্ঞানী লোকে বলে গোপন কথা গোপন রাখার প্রথম এবং প্রধান সর্ত হচ্ছে সেটা নিজের একান্তই গোপনে রাখা। কিন্তু আমি তো মহাজ্ঞানী কেউ না। সে হিসেবে বলে ফেলি একটা গোপন কথা। সে কথা আর কেউ জানুক বা না জানুক, রোজ একবার করে আমার মনে পড়ে। সকালের ঘুম শেষে আমি আয়নায় তাকিয়ে নিজ চোখে চোখ রাখি। আমার বার বার মনে পড়ে ভয়ানক সেই অপ্রকাশ্য গোপন কথা। আমি নিজ চোখে চোখ রেখে বলি,
"আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
আমি শব্দহীন জীবন নিয়ে বেঁচে আছি।
আমি একটা গোলোকধাঁধায় আটকে পড়ে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছি।আমি আমার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।"
কিছু হারিয়ে ফেলার বোধ আমাদের মাঝে কবে থেকে বেড়ে উঠতে শুরু করে তা আমাকে অনেক ভাবিয়েছে। ওইযে ছোট্ট শিশু, মায়ের কোলে ঠিক তার স্তন্যের উষ্নতায় কী ভীষণ ভালোবাসায় আগলে আছে, সে তো তা হারিয়ে ফেলেছে জন্মের বছরখানেক বাদেই। একেবারেই হারায়নি হয়তো। কিন্তু সেই যে ওই হারিয়ে ফেলবার প্রকৃয়াটা যে শুরু হয়ে গিয়েছে, সেটা অনেকটা একটা চেইন রিয়্যাকশনের মতো করে আজীবন চলে আসছে। আমিও একে একে সব হারাতে শুরু করলাম। কিন্তু ভাষা হারিয়ে ফেলবো তা কখনো ভাবিনি। ভাষা আবার কেমন করে হারায় মানুষ? কী সব বাজে কথা!
আমার স্ত্রী রিনু। অতি ভালো মেয়ে। সাধারণ ছিমছাম আর মায়াবী চেহারা। রোজ সন্ধ্যায় বাসে চড়ে বাড়ি ফেরার সময় আমি বাসের জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকি। এ শহর বড্ড জটিল। এ শহরের রাস্তার কোণে কোণে গল্প গাঁথা থাকে। কিন্তু আমি শুধু তাকিয়ে থাকি বাসের চৌকোণে ময়লা জানালা দিয়ে। সেসব গল্প আমাকে স্পর্শ করে না। চারপাশের এ্তো শত মানুষ আমাকে টানে না একদম। আমি শুধুমাত্র একজন অপেক্ষমাণ বাসযাত্রী। আমার একমাত্র গন্তব্য একটা ফ্লাটের দু'রুমের ছোটো বাসা যা্ রিনু নামেন একটা সোজা সরল মেয়ে খুব যত্ন করে গুছিয়ে রাখে।
আমি রোজ ঘরে ফিরে রিনুকে পাশ কাটিয়ে আমাদের বেডরুমে যাই। আমার ঘামে ভেজা শার্ট খুলে ঘরে পরার গেন্জী আর প্যান্ট খুঁজে বেড়াই। রিনু সব গুছিয়ে রাখে। তারপর খেতে বসে আমরা কথা বলার ব্যর্থ চেষ্টা করে বিছানায় শুতে যাই। রিনুর সৌখিনতায় জ্বালানো ছোট মোমবাতি যখন নিভু নিভু হতে শুরু করে, তখন আমরা অর্ধনগ্ন ক্লান্ত শরীরে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে যাই। তারপর সকালে আবার সেই পুরানো দিন নতুন করে শুরু হয়। সেই পুরানো দিনের্ একমাত্র নতুন সংযোজন আমার ক্রমশ বিলুপ্তরত ভাষার অগ্রগতি।
ভাষার সাথে স্মৃতির যোগসূত্র এত দূঢ় হতে পারে তা আমি ভাবিনি কখনো। যখন থেকে আমার ভাষাবিলুপ্তি শুরু হয়েছে, ঠিক তখন থেকে আমি খুঁটিনাটি নতুন তথ্য মস্তিষ্কে গেড়ে নেয়া ভুলতে শুরু করেছি। এই যেমন, প্রথম যখন রিনুকে দেখেছি তখন কেমন লেগেছে তা আমার মনে পড়ে না। শুধু মনে পড়ে ভালো লেগেছে। সেই ভালো লাগার বিশেষ কোনো বিবৃতি নেই। খুব বেশি গরমের পর বৈশাখী বাতাস আসলেও তো ভালো লাগে। কিন্তু সেই ভালোলাগা আর এই ভালোলাগার বিভাজন আমি ভুলে গিয়েছি অনেক আগে।
ভাষাবিলুপ্তি কতোটা ভয়ংকার হতে পারে তা আমি বুঝতে পেরেছি নিজেকে একটা পশুর সাথে তুলনা করে। খাদ্য আর জৈবিক চাহিদার পূর্ণতা আমাকে সন্তুষ্টি দিচ্ছে। ভাষাহীনতা আমাকে ভাবায় না মোটেও। ভাবাবেই বা কেনো। সময়ের সাথে সাথে শব্দ অভিধানের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে যাওয়াটা আমার পশু জীবনের প্রয়োজনীয়তার পূর্ণায়নে বেশ ভালোভাবে সহায়তা করছে। 'ইয়েস বস, ইয়েস বস' যেমন অফিসের সব সমস্যার সমাধান করে দেয়, তেমনি 'তোমাকে খুব ভালোবাসি' কী সহজেই না সমাধান করে দেয় ঘরের মানুষের মানসিক দুঃখবোধ কিংবা অস্থিরতা। আমি কখনো ভাবিনি এতো সহজে সীমিত ভাষা ব্যবহার এই ভাষাবিলুপ্তির প্রকৃয়ার উন্মোচন ঘটাবে। কিন্তু শেষপর্যন্ত এটাই তো হবার ছিলো। এটাই স্বাভাবিক।
ভাষাবিলুপ্তির দোহাই দিয়ে আমি প্রতিদিন-ই না না রকমের অস্বস্থিকর অবস্থা কিংবা আপদ পাশ কাটিয়ে আসছি। রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে কলিগদের নানান মন্তব্য কিংবা, কে বা কারা মারলো, বা মরলো তা নিয়ে ইত্যাদি তর্ক থেকে ভাষাবিলুপ্তি আমাকে রেহাই দিচ্ছে বেশ। নতুন ভাষা শিখবার প্রচেষ্টায় আমি দুই কানে হেডফোন চাপিয়ে পাশ্চাত্য বাদ্যের সুরে সুখি নাগরিক জীবন উপভোগ করতে করতে ঘরে ফিরি। রিনুর আজকে মন খারাপ। আমি ঘরে ফিরি ওকে ভালোবাসার কথা শোনাবো বলে।
০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:১৩
নিনকা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য!
২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ২:৪৪
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: "আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
আমি শব্দহীন জীবন নিয়ে বেঁচে আছি।
মর্মার্থটা অদ্ভুত সুন্দর।। ভাললাগা জানিয়ে গেলাম।।
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ ভোর ৬:২০
নিনকা বলেছেন: ভাল লেগেছে জেনে খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ অনেক
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৩৮
মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: চমৎকার...অব্যাক্ত বাস্তবতা!