নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
ক্রিকেটের ঈশ্বর বলা যায় যাকে, সেই সদা বিনয়ী শচীন রমেশ টেন্ডুলকারের বিদায়বেলায় মনে মেঘ খেলা করবে এটাই তো স্বাভাবিক । প্রিয় ক্রিকেটার শুধু নয়, প্রিয় মানুষ বলে কথা! সাথে সাথে এই শেষ রাতে, টাইমলাইন ঘেঁটে যখন মগজটা স্মৃতির অ্যালবাম হাতড়ে এনেছেই, তখন আর যাই কোথায়? এসব ছেড়ে ঘুমোতে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না । তাই, হুট করেই শোবার ঘরের খাটের নিচ থেকে টেনে বের করে ফেললাম ধুলোর আস্তরণে আমার শৈশবের ক্রিকেট খেলার সাথী- প্রিয় ব্যাটটি । কালো হাতলের হলুদ এই ব্যাটটির সাথে মিশে আছে অনেক অনেক স্মৃতি । গায়ে প্রিয় ক্রিকেটার শচীনের নামটাও আজ অবধি আছে, জানেন? শচীন, সৌরভ গাঙ্গুলি আর আকরাম খানের কতগুলো স্টিকারও লাগিয়েছিলাম অপর পিঠে । সেগুলো এখন অস্পষ্ট ।
ছোটবেলায় স্কুল থেকে ফিরে দুপুরে একটু ঘুম দিয়ে উঠে ফুসরৎ মিলতো একটু খেলার । পাড়ার বড় ভাই, ছোট ভাইয়েরা মিলে খালি জায়গা ও অলিতে গলিতে চলতো খেলা । মাঝে মাঝ বড়রা খেলায় নিত না । আমি মন খারাপ করে ঘুরতাম । এই অবস্থা দেখে বাবা একদিন হঠাৎ এই ব্যাটটি এনে আমাকে চমকে দিয়েছিল, স্পষ্ট মনে আছে । সেদিন রাতে বাবার হাত থেকে ব্যাটটি পেয়েই আমার আর যেন ত্বর সইছিল না! বাড়ির উঠোনে ২৫ ওয়াটের বাল্বটির আলোতেই বাপ-ব্যাটায় মিলে শুরু হল খেলা । বাবা বোলিং করল, আর আমি ব্যাটিং । সেই রাতে আর পড়া হল না, ঠিকমত হলনা ঘুমও । অনেকটা রাত জেগে রইলাম ব্যাট কোলে নিয়ে শুয়ে! আমার এই অভ্যাসটার কথা তো আগেও বলেছি- বাবা নতুন কিছু কিনে দিলে আমার আনন্দের আর সীমা থাকতো না, প্রথম রাতে আমি সেটা মাথার কাছে কিংবা কোলে নিয়ে ঘুমাতাম । তবে ভালো লাগতো একটা জিনিস যে, বাবাকে কখনও বলে দিতে হয়নি কখন কোনটা লাগবে । বাবা আমার ও মায়ের মনের কথা বুঝতে পারতো এবং সামর্থ্য থাকুক আর না থাকুক, ঠিকই নিয়ে হাজির হতো!
সেই ছোটবেলায় টিভি আজকের মতো এতটা ছিল না । আমার মনে আছে, আমাদের গোটা পাড়ার মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি ঘরে ছিল । আমাদের বাসার টিভিটাই ছিল পাড়ার সর্বপ্রথম রঙ্গিন টিভি । আমি যখন ক্লাস ৩ তে, তখন স্যামসাং এর সেই টিভিটি বাবা ইন্সটলমেন্টে কিনেছিল এবং আজও সেটি বহাল তবিয়তে চলছে! সেই টিভিতে খেলা দেখার সুযোগ খুব কমই পেতাম । প্রতিবেশীরা নাটক আর ছবি দেখতে আসতো । তবে বাংলাদেশের খেলা আর শচীনের খেলা হলে আমি আগেভাগেই পড়া শেষ করে রাখতাম, যাতে বাবার অনুমতি পাই ।
অবাক বিস্ময়ে দেখতাম- ছোট্ট সেই মানুষটি কিভাবে মাথা ঠাণ্ডা রেখে প্রতিপক্ষকে সবসময় প্রাপ্য সম্মান আর বিনয়টুকু দেখিয়ে একের পর এক সেঞ্চুরি হাঁকায়! শচীন-গাঙ্গুলি উদ্বোধনী জুটি প্রিয় ছিল তখন। এই মানুষটিকে আমি কখনও রাগতে দেখিনি । কখনও কোন বোলারের স্লেজিং এর জবাব মুখে দিয়েছেন বলেও চোখে পড়েনি, দিয়েছেন ব্যাটে । তিনি শুধু নিজেকে এক অপরিসীম উচ্চতায় নিয়ে গেছেন বললে ভুল হবে । তিনি ক্রিকেটের জয় ঘোষণা করেছেন, দেখিয়েছেন কি করে খেলতে হয়, শিখিয়েছেন বিনয় । তাঁর তুলনা নেই, হবেও না । আমার মনে হয় বিশ্বের যেকোন ক্রিকেটার এক বাক্যে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করবে, করতেই হবে । এতো এতো রেকর্ড তৈরি করে টানা ২৪ বছর ক্রিকেট বিশ্বকে শাসিয়ে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করার দুঃসাহস আর আছে কার?
জয়তু শচীন টেন্ডুলকার । আপনার অবসর নেই, আপনি তো ক্রিকেটের রাজা । তবে, এই ম্যাচের পর টিভিতে যখন আপনাকে আর লাইভ দেখতে পাবো না, নিজের অজান্তে ভক্তের মনের কোণে নিরব আক্ষেপ আর চোখে এক ফোঁটা অশ্রু জমলে, কষ্ট পাবেন না যেন!
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:০১
সাদা মনের মানুষ বলেছেন: সচীনের প্রতি রইলো শ্রদ্ধা