নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ফেসবুকে যুক্ত হোনঃ www.facebook.com/dev.d.nipun

...নিপুণ কথন...

সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।

...নিপুণ কথন... › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতি কথা কয়, ঝরে কান্না হয়ে

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৪২

মামুনুর রশীদ মামুন। ফরিদপুর ওপার বাজারের হোটেল শ্যামলী এর ম্যানেজার ছিলেন। এখন ব্যবসা করেন। দেরীতে আজ অনেকের সাথে আমি তাঁকেও আমার ভার্সিটির পড়ালেখা সম্পন্ন হবার সুখবরটি দিলাম। মেসেজ পেয়ে সবার আগে ফোন দিলেন পাঠক সমাবেশের সেলিম আলফাজ কাকু। বাবার শেষ বইগুলির প্রুফ তিনিই দেখে দিয়েছিলেন। অভিনন্দন আর দোয়া দিচ্ছেন, কথা হচ্ছে "রবীন্দ্র সমগ্র" এর ২৩ ও ২৪ তম সংখ্যা নিয়েও। এমন সময় একটা অজানা নাম্বার থেকে বারবার ফোন আসছে। কথা শেষ করে দেখি ১৭বার মিসড কল! কল ব্যাক করব ভাবছি যখন, তখন আবার ফোন এলো। ওদিক থেকে ভেজা কন্ঠ- "দেবু, বারবার ফোন দিচ্ছি, কল ঢুকেইনা..." আমি বললাম "ওহ, মামুন কাকা! আমি সেলিম আলফাজ কাকুর সঙ্গে..." তিনি শুনলেন না, বলেই গেলেন- "আমি যে কত্ত খুশি হইছি! আজ দাদা বেঁচে থাকলে..." এটুকু বলে তিনি আর বলতে পারছিলেন না কিছু। শুধু অঝরে কেঁদে যাচ্ছেন। আমার চোখে এখন আর সহসা পানি আসে না। ক্ষানিকটা সময় থেমে থেকে, বললাম- "কাকু, কাঁদবেন না প্লিজ! আমি জানি আপনি আমাদের কথা ভাবেন। কিন্তু বাবার কথা মনে হলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেন না, তাই আসেন না। খবর রাখেন না। আপনি কি বাজারে? কখন ফ্রি হবেন? আমাকে বলবেন, আমি দেখা করব।" কাকু জানালেন, তিনি কাল সকালেই বাসায় আসবেন।

মামুন কাকাকে দেখে আসছি সেই ছোট থেকে। খুব ভালো মানুষ। আমার বাবা কবি বাবু ফরিদীর ঘনিষ্ট বন্ধুর মতো ছিলেন, বয়সে ছোট হলেও। এই মানুষটিকে ব্যবসায়ী থেকে কবি বানিয়েছিলেন বাবু ফরিদী। এমন মোটিভেট করেছিলেন যে, কাব্যচর্চা, বিভিন্ন জেলায় লেখক সম্মেলনে যাওয়া -এসব করতেন বাবার সাথে। বাবা তাঁকে সব জায়গায় নিয়ে যেতেন। কাকুর হোটেল শ্যামলীতে কবি-সাহিত্যিকিদের আড্ডা বসতো নিয়মিত। বিকেল হলেই বাবা শহরের কোর্ট চত্বর, সাহিত্য সংস্থা, নয়তো এই হোটেল শ্যামলীতে থাকতেন। আমার নিজেরো অনেক স্মৃতি আছে এই হোটেলের দোতলায়। ম্যানেজার মামুন কাকার রুমে আমাকে বসিয়ে বাবা এটা ওটা বাজার করতে পাশের মার্কেটে যেত। আমার বাল্যশিক্ষা ছিল কেউ "কি খাবে?" বললে প্রথমে বলা- "কিছু না"। তারপর খুব পিড়াপিড়ি করলে, "আপনি যা খাওয়াবেন, তাই" -বলা। মামুন কাকা কিছু না খায়িয়ে থাকতে দিতেন কই? নিচ থেকে বেয়ারাকে দিয়ে ফান্টা নয়তো পেপসি আনাতেন।

তখন আমি সম্ভবত ক্লাস ৩ এ। ব্যাপ্টিস্ট চার্চ মিশন স্কুলে পড়ি। আমি কখনো বাবার কাছে কিছু চাইতাম না, বাবার পছন্দই ছিল আমার পছন্দ। কেন জানি সেদিন স্কুলে বন্ধুদের দেখে খুব শখ হয়েছিল রাইডার কেডস পায়ে দেবার। এই কেডস পায়ে দিয়ে হাটলে পায়ে লাল লাল লাইট জ্বলে! খুব মন খারাপ, বাবা পাত্তা দিচ্ছেনা তাই। আমি জেদ করতে পারিনা, বলতে পারিনা আমাকে দিতেই হবে। তখন শুধু কাঁদতে পারি। কান্নাকাটি শুরু করব করব ভাব, এমন সময় বাবা অভিনয় শুরু করলো। তখনো মোবাইল আসেনি। মামুন কাকার ডেস্কের টেলিফোনটা নিয়ে নাম্বার টিপে এমন ভান ধরলো, যেন স্কুলের ম্যামের সাথে কথা বলছে! "দাড়া দেখি তোর দিদিমণি কী বলে!" -বলেই শুরু হল টেলিফোনে কথা- "কি? আপনি বলছেন এই কেডস পড়া ভালো না? স্কুলের ড্রেসের সাথে মানায় না? ওর জন্য নতুন যেটা কিনেছি সেটাই ভালো? আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি নিপুণকে এখনই বলে দিচ্ছি"। বাবা সারাটা জীবন এভাবেই অভিনয় করে গেছেন। সৎভাবে জীবিকা নির্বাহ করে যতটা সম্ভব দিয়েছেন, কখনো কিছুর কমতি হতে দেননি। তাই বলে এত দাম দিয়ে বিলাসি জুতা কেনার পক্ষে ছিলেন না, যে বিলাসিতা আমাদের মানায় না। বড় হয়ে এসব ঘটনা মনে পড়ে, আর আমি অবাক হই। বুঝতে শিখি, কী করে বড় হতে হয়!

প্রথমবার স্ট্রোক করার পর বাবার জন্য অনেক করেছিলেন মামুন কাকা। পরেরবার কি যে হল! কিভাবে মারা গেল, কিছুই বুঝলাম না। আমি তখন নাবালক। মামুন কাকা এরপর থেকে আর যোগাযোগ করতেন না। অনেক পরে দেখা হলে শুনেছি, এত কাছের বড়ভাই হারিয়ে নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ঘুম আসতো না রাতে, ঘুমালেই স্বপ্নে বাবাকে দেখতেন, ঘুম ভেঙ্গে যেত। এরপর সেই হোটেল গেল। নতুন একটা কাজ করেন বাজারে। খোঁজ নিতে না পারলেও দোয়া যে করেন, এটা নিশ্চিত। কাল সকালে তিনি যখন আসবেন, আমি নিশ্চিত তিনি এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদবেন, বাবা মারা যাবার এই ৭ বছর পরেও। মা কাঁদতে গেলে রাগারাগি করে থামিয়ে দেই। এটা বেয়াদবি জেনেও। এসব আমার সহ্য হয়না। কিন্তু, বাবু ফরিদীর এত এত সুহৃদ-গুণগ্রাহীদের কান্না আমি কি করে থামাই?

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:২৩

মাহমুদ০০৭ বলেছেন: পোস্ট পড়ে আপ্লুত হলাম ।
আপনার , আপনার বাবা , কাকু সবার জন্য শুভকামনা রইল ।

২ টা ব্যাপার মিলে গেল আমার সাথে ।

১) আমিও আমার মাকে কাঁদতে দেইনা ।
২) ঐ কেডস পরার আমারও শখ ছিল , বাবা কিনে দেবেনা মনে হয়েছিল
, তাই আর বলিনি। জাম্প কেডস ছিল এগুলা। ঐ কোম্পানির কেডস আছে কিনা কে জানে ।

ভাল থাকবেন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.