নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
চাউলের বস্তা আর বাজারের ব্যাগ নিয়ে রিক্সায় বাড়ি ফিরছিলাম। ঘাটলার ঢালে নামতেই দেখি হামলাকারীরা সদলবলে হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা দখল করে। রিক্সাচালক বেল বাজাতেই রেগে অস্থির! জবাব না দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে আসার সময় বিপরীত পাশ থেকে আসা এক লোক আমাকে দেখিয়ে তাচ্ছিল্যের ছলে বলে উঠলো, 'এই সেই বিসিএস না?' পিছে তাকিয়ে দেখি, সবাই মিলে বেশ মজা নিচ্ছে আমাকে নিয়ে।
.
লোকটিকে আমি চিনি না, সেও আমাকে চিনতো না। কিন্তু আমার নামে এতো মিথ্যা কথা ওরা রটিয়ে দিয়েছে, যে সম্মান-ভালোবাসার বদলে অনেক অপরিচিতের কাছেই যেন আমি এক হাসির পাত্র! চিনি না, জানি না, সে আমাকে নিয়ে মজা নিচ্ছে! আমি নাকি সবার কাছে বিসিএস ক্যাডার পরিচয় দিয়ে বেড়াই! তাই যদি করতাম, তাহলে আমি এখনও বাবার করে রেখে যাওয়া ভাঙা ঘরে থাকতাম না, খুব সাধারণ মলিন পোষাকে ঘুরতাম না, রাস্তার পাশের দোকানে বসে চা না খেয়ে ভালো রেস্টুরেন্টে খেতাম স্যুট-টাই পরে। পরিচয় যেখানে সেখানে দিয়ে বেড়ালে দোকানে বাকি খেতাম, ফাঁপড় নিয়ে পয়সা করতাম। এমন কিছু করিনি।
.
আমি তখনই পরিচয়টা দেই, যখন আমি কোনো বিপদে পড়ি অথবা বিপদের পূর্বাভাস পাই। আমাকে দেখে অনেকেই মনে করে আমি বুঝি কলেজে পড়ি। আমাকে দেখে বয়স বোঝা যায় না, অফিসার মনে হয় না দেখে, এটা কি আমার দোষ? অথচ আমি সরকারি কলেজে পড়াই দেড় বছর হলো। আমি দেশের একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। যখন কোথাও যুক্তি দিয়ে কথা বলি বা অন্যায়ের প্রতিবাদ করি, তখন সবাই এমন চোখে তাকায়, যেন 'বাচ্চা ছেলের বড়দের মতো পাকনামি কেন? মুখে মুখে তর্ক বেয়াদবি কেন?' তখন আমাকে পরিচয় দিতে হয় আমার কথার ওজন বুঝাতে।
.
যখন প্রথম সারদায় জয়েন করি, আমাকে বেছে বেছে ৪০৪ আর ৪০৫ নং কক্ষে পরীক্ষার ডিউটিতে দেওয়া হতো। এসব রুমেই নকল বেশি হতো। যেখানে সিনিয়র স্যারেরা কিছু বলেন না, সেখানে আমার মতো একটা পিচ্চি সুন্দর ছেলে কেন নকল করতে বাধা দেবে? তখন ওরা শুরু করতো অবজ্ঞা করা, কথা না শোনা আর বেশি কথা বলা। বাধ্য হয়ে আমাকে তখন খাতা নিয়ে নেওয়া এমনকি বহিষ্কার করতে হতো। কারণ হলে নকলমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতেই সরকার আমাকে বেতন দেয়৷
.
যে পরিচয় আমি অনেক কষ্ট করে যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়ে অর্জন করেছি, সেই পরিচয় আমি দেবো না কেন? বাড়িতে যে ময়লাওয়ালার ময়লা নেওয়ার কথা, এলাকার শত্রুরা তাকে কানে কানে বলে দেয় সে যেন আমার বাসার ময়লা না নেয়। বাসার অবস্থা যেহেতু ভালো না, তাই ওকেও নিজের পরিচয় দিতে হয় ঝামেলা এড়াতে। না দিলে ভাবে কলেজের ছাত্র আর বিধবা মা থাকে এই ভাঙা ঘরে, না নিলেই কি? তখন আমার পরিচয় দিতে হয়, টাকা-পয়সা দিয়েও মেয়র মহোদয়ের সাথে নিজের সখ্যতার কথা জানাতে হয়। কারণ তা না হলে কাউন্সিলর বা তার লোকের কারণে আমাকে দুর্গতি পোহাতে হবে এবং এজন্য বারবার পৌরসভায় যেতে হবে, যা চাকরি বাঁচিয়ে সংসার সামলিয়ে কষ্টকর। তার চেয়ে যদি পরিচয় দিলে কাজটা ঠিকভাবে করে, সম্মান দেয়, তাহলে পরিচয় দেবো না কেন? কারো ভাত মেরে পরিচয় অর্জন করিনি, নিজে খেটে করেছি।
.
তো, সেই লোককে পেয়ে গেলাম আঙিনার ভেতর। ডাকলাম, পাশে বসালাম। তারপর বুঝিয়ে বললাম, 'আপনাকে যা বলা হয়েছে আমার নামে, তা সত্য নয়। আমার সম্পর্কে জানতে হলে আমার সঙ্গে মিশুন, দেখুন, জানুন। তারপর খারাপ কিছু পেলে আমাকে ঘৃণা করুন বা আমার দুর্নাম করুন। কিন্তু অন্যের কথা শুনে আমাকে নিয়ে উপহাস করবেন কেন?' লোকটা নিজের কার্ড দিয়ে বললো, মহিম স্কুল মার্কেটের স্বরুপ ডেন্টাল কেয়ার তাঁর, তিনি ডেন্টিস্ট। অবাক হলাম, শিক্ষিত লোক তাও ডাক্তার, তিনিই কানকথা শুনে মানুষের মূল্যায়ন করেন? পরে দেখলাম তিনি বিডিএস সনদধারী নন। সে যাই হোক, কথার মাঝেই তড়িঘড়ি ব্যস্ততা দেখিয়ে উঠে গেলেন। কেউ আমার সাথে দেখে ফেললে সমস্যা! আবার বউকে নিয়ে বাইকে যাওয়ার সময় হর্ণও দিলেন! যেন নিজেকে আমার চেয়ে অনেক উপরে বুঝিয়ে পাশবিক আনন্দ পেলেন।
.
আগে এইসব নিন্দুকদের এড়িয়ে চলতাম। কে কী বললো কানে তুলতাম না। এখন দেখি, ছেড়ে দিয়েই ভুল করেছি। কাল এক দাদা বলছিলেন, 'তোমার এমন এমন সব শত্রু হয়েছে, এমন সব মিথ্যাকথা তারা ছড়িয়ে দিচ্ছে, যে তোমার তো বিয়ে করাই কষ্টকর হয়ে যাবে!' কিন্তু আমি করবই বা কি? ওদের সাথে চিপায় বসে চা বিড়ি খেতে পারবো না, অন্যায়ের সাথে আপস করতে পারবো না, যারা আমার ক্ষতি করেছে তাদেরকেও ক্ষমা করতে পারবো না মন থেকে। চাকরির সীমাবদ্ধতার কারণে কাউকে গিয়ে মেরেও এই অপমানের বদলা নিতে পারবো না। আবার ওদের সাথে না মিশে আলাদা চললেও বলবে, 'নিজেকে অনেক বড় কিছু ভাবে, তাই আমাদের সাথে মেশে না'। যাবোটা কই?
.
বিকেলে একটা মিটিং ছিলো এলাকায়। আমাদের পল্লী আর মোল্লাবাড়ি সড়কের মাঝে শ্রীঅঙ্গনের অমর বন্ধু ব্রহ্মচারী প্রদত্ত জায়গায় শ্রীঅঙ্গন সমাজকল্যাণ সংঘের দেয়ালটা জঙ্গলে ছেয়ে আছে। সেটাই পুনরুজ্জিবিত করার চেষ্টা নিয়েছে এলাকার কিছু ছোটভাই। সেদিন বাসায় এসেও চিঠি দিয়ে বলে গেছে, 'দাদা, আপনি কিন্তু অবশ্যই থাকবেন'। এই ক্লাবের শুরু থেকে উপদেষ্টা ছিলেন আমার বাবা কবি বাবু ফরিদী। আমি নিজেও এখান থেকে আবৃত্তি বা ভালো রেজাল্টের জন্য মেডেল পেয়েছি। আবার এটাকে চালু করা গেলে এলাকার ছেলেপেলে নেশার পথ ছেড়ে আলোর পথে আসবে। সুস্থবুদ্ধির মেধার মননের চর্চা হবে। দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে এলাকার মুরুব্বিদের ডাকে গেলাম, তাদের অনুরোধে সভাপতির পাশের চেয়ারে বসে বক্তব্য দিলাম।
.
যে আমাকে ভালোবাসবে, মূল্যায়ন করবে আমি তারই আপন। যে আমার কষ্টার্জিত সাফল্যকে হেয় প্রতিপন্ন করবে, আমার মাকে কষ্টে দেবে, আমি তার বন্ধু হবো না কোনোদিন। এভাবেই চলছে আমার আজকালকার জীবন। বুঝতে পারছি, নিন্দুকদের কল্যাণে আমাকে এখন শহরের অনেকেই চেনে! রাস্তায় বের হলে অনেকেই ফিরে ফিরে চায়। তাদের প্রতি অনুরোধ, যাদের বিরুদ্ধে যা লিখেছি, পড়ে দেখুন, সত্য কিনা নিজের বিবেককে জিজ্ঞেস করুন। দূর থেকে নিন্দা না করে কাছে এসে আমাকে চিনুন, আমিও আপনাকে চিনতে ও জানতে চাই।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:৩৬
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: যে আমাকে ভালোবাসবে, মূল্যায়ন করবে আমি তারই আপন।
.......................................................................................... একদম সঠিক কথা