নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
খুব কান্না পাচ্ছিলো গতকাল ফরিদপুরের শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গনে। কেন এই বয়সেও কান্না পায় জানেন? আবেগে, কষ্টে আর হতাশায়। এই মন্দিরের আশেপাশেই আমার জন্ম, আমার বেড়ে ওঠা। মন্দিরের কমিটিতে আমার বাবা অ্যাডভোকেট কমল কৃষ্ণ গুহ ওরফে কবি বাবু ফরিদী ছিলেন সেই অমর বন্ধু ব্রহ্মচারী মহারাজের আমলে, যিনি এই মন্দির বা 'বড় আঙিনা'র সীমানা নির্মাণ থেকে শুরু করে বসতি স্থাপন অনেক কাজ বাবাকে সাথে নিয়ে করেছিলেন। আমার মা Krishna Guho, যিনি ডিএইচএমএস ডাক্তার, টানা ১৮ বছর বাইরে কোথাও প্র্যাক্টিস না করে এই আঙ্গিনার দাতব্য চিকিৎসালয়ে মাত্র ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা মাসিক বেতন আর ৫ টাকা ভিজিটে রোগীদের সেবা দিয়েছেন। সেখান থেকে আমার মাকে অপমান করার পর মা আর মনের দুঃখে ঐ চেম্বারে বসেন না; কাল আমাকেও অপমান করা হলো।
.
গত পরশু ১৭ জানুয়ারি ছিলো আমার জন্মদিন। ছোট থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত আমার জন্মদিন পালন করা হয়েছে। কেক কাটা হতো না, উপহার নেওয়া হতো না। শুধু হতো শিশুভোজ। একদম ফ্রিতে পেটপুড়ে খাওয়া-দাওয়া, এলাকার এক উৎসব হতো আমাদের বাড়িতে। জানুয়ারি মাসে এই দুইটা উৎসব হতো আমাদের এলাকায়-- একটি মাসের প্রথম মঙ্গলবার আমাদেএ বাড়িতে পূজা, আরেকটি আমার জন্মদিন। বাবা মারা যাওয়ার পর আর কোনোদিন পালন করিনি। তো, আমার মঙ্গল কামনায় গত পরশু বিকেলে মা আঙিনায় একটা ভোগ প্রসাদের মালসার জন্য টাকা জমা দিয়েছিলেন। সেই মালসা আনতে গিয়েই এক এলাহী কান্ড হয়ে গেলো আর কি!
.
কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে বাজারে গেলাম। সেখানে দেখা ও আড্ডা হলো আমার প্রাক্তন কর্মস্থলের সাবেক দুই প্রিয় সহকর্মীর সাথে। তাদেরকে বিদায় জানিয়ে ভাবলাম, চুল কাটানো ও সেভ করানো দরকার। সাধারণত ঝিলটুলির দিকটায় অজানা অচেনা সেলুন থেকেই কাটাই; কারণ আমার শত্রুপক্ষ এলাকায় আমার এমন দুর্নাম রটিয়ে দিয়েছে, যে পরিচিত কেউ তাদের ভয়ে আমার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করে না আজকাল। কিন্তু কাল দেরী হয়ে গেলো, গোয়ালচামট লাক্সারী হোটেলের ওখানে এসে মনে পড়লো চুল কাটানোর কথা। ছোট থেকেই লাক্সারীর নিচে শুক্লা হেয়ার ড্রেসারে চুল কাটাতাম। অনেকদিন পর গেলাম, জানতে চাইলাম সিরিয়াল আছে কতোগুলো আর কতক্ষণ লাগবে? আমাকে বলা হলো কমপক্ষে দেড় ঘন্টা লাগবে। দেখলাম ভিড় নেই মোটেও, তবুও বসে রইলাম, গল্প করতে থাকলাম এক দাদার সাথে। মাত্র ১০ মিনিটের মাথায় ডাক এলো। চুল কাটানোর পর সেভটাও করতে চাইলে সবাই বললো, বাড়িতে গিয়ে সেভ করে নিতে। আমি অবাক হয়ে যতবার বলি, এখানেই করে যেতে চাই, ততবারই এক উত্তর। স্বপন কাকা ছোট থেকে চুল কাটান আমার, তিনি বললেন তাঁর মাজায় ব্যাথা, চলে যাবেন।
.
আমি তবুও নাছোড়বান্দা, বসে রইলাম, অন্য কাউকে করানোর অনুরোধ করলাম। জানতে চাইলাম, কেউ আমার সম্পর্কে কিছু বলেছে বা নিষেধ করেছে কিনা আমাকে সেবা দিতে? তারা অস্বীকার করলো ঠিকই, কিন্তু সেলুনের পাশেই আমার এলাকার মহিলা কাউন্সিলরের স্বামী পেপারের হকার পেপার বিজয়ের পেপারের দোকান এবং সম্ভবত কিছু একটা হয়েছে। যাহোক, সম্ভবত আমাকে বসে থাকতে দেখলে কোনো বিপদ হতে পারে তাদের, তাই শুরুতে বললেন দেরী হবে, যাতে আমি চলে যাই; পরে বসে থাকতে দেখে সাথে সাথে করিয়ে বিদেয় করতে চাইলেন! পরে আরেকটা ছেলেকে দিয়ে সেভ করিয়ে মোট ৯০ টাকা বিল দিয়ে ফিরে এলাম।
.
আসার পথে মা ফোন দিয়ে বললো, আসার পথে আঙিনা থেকে ভোগের মালসাটা নিয়ে আসিস। আমি খুব একটা মন্দির ঘেঁষা বা খুব ধার্মিক ছেলে নই; কোথায় কী পাওয়া যায় জানি না। তবুও মা অসুস্থ বিধায় নিজেই নিয়ে আসতে গেলাম। ভোগ যেখান থেকে দেয় সেখানে গিয়ে জানোট চাইলাম, আমার মা নাকি একটা ভোগ দিয়েছে, সেটা দেন। যে সাধুটা গত শুক্রবারের আগের শুক্রবার আমাকে দেখে অনেক কথা বললো; অনেক দুঃখের কথা বললো সে স্পষ্টবাদী বলে তাকে নাকি ব্রাহ্মণকান্দা আঙিনায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো জানালো, আঙিনার অনেক দুর্নীতি আর ভক্তদের অভিযোগ সম্পর্কে বললো; আর গত শুক্রবার যে কাজ কেউ কখনও করেনি গত ১০ বছরে, সেই কাজ করে আমাদেরকে মন্দির প্রাঙ্গনে বসে থাকতে দেখে মিষ্টান্ন এনে খাওয়ালো, সেই অল্পবয়সী সাধুটাই যেন আমাকে চিনতে পারলো না! সে আমাকে বললো অফিসের অ্যাকাউন্টে গিয়ে খোঁজ নিতে। যাওয়ার আগেই অ্যাকাউন্টের ঐ কাকা দেখি এদিকে আসছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কাকা, মা নাকি ভোগ দিছে? ভোগটা দিবেন? সে খুব ব্যস্ততা দেখিয়ে কথার ভালোভাবে জবাব না দিয়েই চলে গেলো। যেন তিনিও আমাকে চেনেন না! আমি বললাম, একটু দেখবেন যে 'দেবু' নামে কোনো ভোগ আছে কিনা? সে দূর থেকে বললো, রসিদ ছাড়া দেখার টাইম নাই। যেহেতু বাইরে থেকে এসেছি এবং বাসায় মায়ের কাছে রসিদ আর আমরা এখানে সুপরিচিত, আমি ভেবেছিলাম রসিদ ছাড়াই পাওয়া যাবে। এমনিতেও এখানে সবকিছু যে একদম নিয়ম মেনে চলে, তা নয়। অফিসের ভেতরে উঁকি দিলাম, সভাপতি সম্পাদক কেউ নেই। তাঁরা সাধারণত ভক্তদের বাড়িতে সারা বছর পরিক্রমা করতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন বলে স্থানীয় ভক্তদের অভিযোগ, আঙিনায় সমস্যা হলে একটা দারোয়ানও পাওয়া যায় না।
.
তো, মায়ের ফোনে কল দিয়ে না পেয়ে আবার ১০ মিনিট হেঁটে বাড়ি গেলাম। গিয়ে দেখি মা মোবাইল অন্য ঘরে রেখে দূরে রান্না করছে। রসিদ নিয়ে অফিসে গিয়ে কাউন্টারের লোকটাকে সেটা দিয়ে বললাম, দেখেন তো এটা আজকের কিনা? তিনি এবারও ব্যস্ততার অজুহাতে পাত্তা দিচ্ছেন না। ওদিকে বেলা বাজে আড়াইটা। আমাকে আবার খেয়ে বের হতে হবে। কাছে গিয়ে বললাম, আপনার কাছেও তো রসিদের একটা অংশ আছে, দেখেন তো এটা মিলিয়ে? আর জানতে চাইলাম, আপনি কি আমাকে চেনেন না? আমাকে আর আমার মাকে না চেনার কোনো কারণ নেই নাম বলার পরেও। তবুও এমন করার একটাই কারণ, আমাকে অপমান করে ক্ষেপিয়ে তোলা এবং একটা ইস্যু বানানো। আমি চলে যাচ্ছিলাম তার ছেলের কাছে, যে অল্পবয়সী সাধু তখন প্রসাদ দিচ্ছিলো। পেছন থেকে শুনলাম, লোকটি বললেন, 'সব জায়গায় পাওয়ার খাটাইতে নাই'। অবাক হয়ে ফিরে তাকালাম। জানতে চাইলাম, আমি ক্ষমতা কোথায় দেখালাম? টাকা দিয়ে ভোগ অর্ডার দিয়ে গেছি, সেটা নিতে এসেছি। সাথে সাথে পাশ থেকে একজন অচেনা বলে উঠলেন, টাকার কথা বললে অকল্যাণ হয়। প্রসাদের অর্ডার নেওয়া কাউন্টারের লোকটা বললেন, আপনি কি হইয়া গ্যাছেন যে আপনাকে চিনতে হবে?!
.
অবাক কান্ড! যার সাথে কোনোদিন কথা বলিনি, সে কেন এমন আচরণ করবে? আঙিনায় আসলে তো একাই বসে থাকি, আর কীর্তন শুনি। ২৪ ঘন্টা একটানা হওয়ার কথা নাম, সেই কীর্তনটাও আজকাল ঠিকভাবে হয় না। আজ হঠাৎ বাপ-ব্যাটার এমন আচরণ চেঞ্জের কারণ হতে পারে গত শুক্রবার আদর করে প্রসাদ খাওয়ানোর কারণে হয়তো তারা চাকরি হারানোর চাপে পড়েছে। কারণ আঙিনার কমিটির কেউ কেউ আমার স্থানীয় শত্রুদের সিন্ডিকেটের অংশ এবং মিত্র। যাহোক, হইচই শুনে প্রবীণ সাধুদের একজন, হরিবোল দাদু এগিয়ে এলেন। কিন্তু তাঁর আগের মতো ক্ষমতা নাই। তাই তিনি আমাকে ভালোবাসেন বলে আমাকেই সরিয়ে নিয়ে গেলেন। প্রসাদ পেলাম। একজন দূরের ভক্ত এগিয়ে এসে বললেন, 'দাদা, আপনি আজ যা করলেন, তা করা দরকার ছিলো। আমাদের সাথেও এমন ব্যবহার করে। টাকা না দিলে প্রসাদ দেয় না। আবার দিলেও খারাপ ব্যবহার করে।' বললাম, 'আপনারা প্রতিবাদ করেন না বলেই এরা এমন সাহস পায়। প্রভু একা বসে প্রণামীবাক্সে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৭৫ হাজার টাকা রোজগার করেন। মন্দিরের বিশাল স্টেট, ভাড়াটিয়া, ভক্তদের অনুদান ইত্যাদি বাদই দিলাম। কারো এখানে এসে প্রসাদ না পেয়ে ফেরার তো কথা না! সেখানে তারা দাতব্য চিকিৎসালয় বন্ধ করে দিয়েছে, একটা নিয়মিত দারোয়ান নাই, সাধুরা ঠিকমতো বেতন পায় না বলে অভিযোগ করে। প্রভুর আঙিনার দুর্নাম শুনতে ভালো লাগে না।
.
ফেরার পথে শুনি, সেই লোকটা আরও লোক জড়ো করে বলছে, 'দেখছেন কী বেয়াদব? নিজেকে কী মনে করে?' শুনে আর প্রতিবাদ না করে পারলাম না। পাশেই দাঁড়ানো এক 'পাগলা', যে সারা জীবন আমার বাবার সহায়তায় চলেছেন। আজ তিনি আমার অপমানের প্রতিবাদ না করে আমাকেই তাড়িয়ে দিতে চাইলেন! আরেকজন বললেন, 'এতোদিন আপনার নাম শুনেছি যে আপনি খুব বেয়াদব, আজ দেখলাম মাস্টার মানুষ, মাইর খেয়েও চুপ থাকবেন। এতো চিল্লান ক্যান?' আমি হতবাক হয়ে গেলাম! শিক্ষক বলে আমি আমার অপমানের প্রতিবাদটাও করতে পারবো না? এমন শিক্ষক আমি নই। যাহোক, বৃদ্ধ হরিবোল দাদুকে আবার এগিয়ে আসতে হলো। তাঁর অনুরোধে ঝামেলা না বাড়িয়ে সেখান থেকে চলে এলাম। আসলে আমার শত্রুপক্ষ এমনভাবে সবাই মিলে আমার দুর্নাম রটিয়েছে গোটা শহরে, যে অচেনা মানুষও বিরূপ আচরণ করতে শুরু করে। ওদের লক্ষ্য আমাকে ফরিদপুর ছাড়া করা। এভাবে আসলে একঘরে হয়ে একা একা এমন পরিবেশে বেঁচে থাকা খুব কঠিন। ২১ সেপ্টেম্বর আমার ওপর হামলার ঘটনাটাও সুপরিকল্পিতভাবে এই আঙিনার মন্দিরের মাঠেই হয়েছিলো, দারোয়ানকে সরিয়ে দিয়ে। আমি ওদের প্রত্যেকের শাস্তি চাই। সাথে সাথে শ্রীঅঙ্গনের কমিটির পদত্যাগ দাবি করছি।
.
আমার ওপর ২১ সেপ্টেম্বরের হামলার বিষয়ে আমার করা অভিযোগের ভিত্তিতে যে ধারাগুলো পুলিশী তদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে, তা জামিনযোগ্য বিধায় ৫ মাস ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়িয়ে ও হুমকি ধামকি দিয়ে গত ১৬ তারিখ বিবাদীরা প্রথমবার আদালতে হাজির হয়ে সাথে সাথেই জামিন পেয়ে গেছে। আমার লইয়ার সিনিয়র আইনজীবী ও বাবার বড়ভাই অ্যাডঃ সাইদুন নবী বললেন, আমার মক্কেল প্রাণনাশের হুমকিতে আছে; এরা পথেঘাটে তাকে মারার জন্য অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। অনুরোধ করলেন অ্যারেস্ট করতে। কিন্তু বিজ্ঞ আদালত জানালেন, জামিনযোগ্য ধারায় জামিন দিতে হবে এবং তিনি এও বলে দিলেন, সাক্ষ্য প্রমাণ দেওয়া গেলে তাদের শাস্তি হবে। নিরাপত্তার কথাটা পুলিশকে জানাতে বলে তিনি সম্ভবত পরের তারিখ দিলেন। উপস্থিত আইনজীবীরা সবাই বিবাদীদেরকে কঠিন ভাষায় তিরস্কার করে বললেন, 'একজন প্রফেসর মানুষকে বিরক্ত করো কেন? আর করবা না।' আমি চিন্তায় আছি এরা সাক্ষ্য দেওয়ার আগেই বড় কোনো ক্ষতি না করে আমার অথবা সাক্ষীদের। সেটা না করলেও যেভাবে সামাজিকভাবে আমাদেরকে প্রতিদিন মানসিক চাপে রাখা হচ্ছে আর অসম্মান করা হচ্ছে, সেটাও বা কম কিসের? শুনলাম, স্থানীয় মহিলা কাউন্সিলর তৃষ্ণা সাহা আবারও এলাকা থেকে আমার বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগ করে সাইন তুলে বেড়াচ্ছেন! এলাকার অসহায় খেটে খাওয়া মানুষ দিতে বাধ্য হচ্ছে! এভাবেই আরও একটি জন্মদিন গেলো এবং আরও কিছু কষ্টের ও হতাশার কাহিনী জমা হতে শুরু করলো আর কি!
২| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৪৪
...নিপুণ কথন... বলেছেন: বাস্তব ভাই।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:২০
রাজীব নুর বলেছেন: গল্প না বাস্তব?