নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ফেসবুকে যুক্ত হোনঃ www.facebook.com/dev.d.nipun

...নিপুণ কথন...

সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।

...নিপুণ কথন... › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাগো এই দেশেতেই জন্ম যেন এই দেশেতেই মরি..

২১ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৩

প্রিয়া সাহা ফেসবুকে আমার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সম্ভবত তিনিই বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠিয়েছিলেন। এরপর কিছুদিন পরেই আমি তাকে বন্ধুতালিকা থেকে বাদ দিতে বাধ্য হই। আমি সাধারণত তাদেরকেই বাদ দেই যাদের সাথে মতোবিরোধের প্রেক্ষিতে ঝামেলা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা থাকে, বারবার চেষ্টা করেও বুঝাতে ব্যর্থ হই, অথবা যদি কেউ আক্রমণাত্মক বা ক্ষতিকারক কিছু করে। এখন আমি ফেসবুকে তার আইডিটাও পাচ্ছি না। সম্ভবত দুজনের কেউ একজন অন্যকে ব্লক দিয়েছি। তিনি এখনও হিন্দু সমাজের নেতা কিনা আমি জানি না। তার সাথে আমার কোনোদিন দেখাও হয়নি।
.
কিছুদিন আগে আমি যখন প্রতিবেশী দেশ ভারতে গিয়েছিলাম, তখন অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন দেশে হিন্দুদের অবস্থা কী, তারা কেমন আছেন। আমি বলেছি আগের চেয়ে ভালো আছেন, হিন্দু তরুণদের মধ্যে যারা যোগ্য তারা মেধায় চাকরি পাচ্ছে, সাম্প্রদায়িক হামলাও কম হচ্ছে। তখন একজন আমাকে বললেন, তাহলে ফেসবুকে আপনাদের পত্রিকায় যেসব খবর দেখি তা কি মিথ্যা? আমি বললাম, সেগুলো সত্যি হতে পারে, আমি তো নিজে সবগুলো দেখিনি; কিন্তু আগে সংবাদপত্রে এসব সাধারণত আসতো না বা প্রকাশিত হতো না, কিন্তু এখন প্রকাশ হয় বলে আপনারা জানেন। সবাই জানে বলেই ব্যবস্থাগ্রহণও দ্রুত হয়। প্রশাসন-পুলিশও আগের চেয়ে সতর্ক বলেই আর কোনো নাসিরনগর বা রসরাজের ঘটনা ঘটেনি। হিন্দুরা যদি আগের চেয়ে ভালো না থাকতো, নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি হিন্দু-মুসলিম দেখা হতো, তাহলে আমার মতো ছেলে তো মেধায় চাকরি পেতো না। হয়তো আমি আশানরূপ পাইনি, কিন্তু পেয়েছি তো! কিছুটা নিপীড়ন থাকবেই, সব দেশেই সংখ্যায় কমেরা কমবেশি চাপে থাকে।
.
তখন একজন বললেন, আচ্ছা, আপনার ওপর যে হামলা হলো, সেটা কারা করলো? অবাক হলেও পরে উপলব্ধি করলাম, ফেসবুকের কল্যাণে দুনিয়াটা এখন অনেক ছোট। আমি বললাম সামনে তো হিন্দুরাই ছিলো। তিনি বললেন, পেছনে কেউ না থাকলে কি তারা এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকে? বললাম, আমি ধৈর্য ধরে আছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জানিয়ে রেখেছি। দেখি কী হয়। তারা হয়তো ভেবেছিলেন আমি তাদের কাছে সাহায্য চাইবো। এমন জবাবে দমে গেলেন। আরেক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন, দুইবার হামলার পরেও পড়ে আছেন কেন ওখানে? চলে আসতে পারেন না? (এমনকি একটা মন্দির কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে থেকে যাওয়ার প্রস্তাবও দিয়ে বসলো!) আমি বললাম, হামলা তো এখানেও হতে পারে, রিফিউজি বলে গালি দিতে পারে। তাছাড়া এখানে এসে আমি কি করে খাবো? ওই দেশ আমার জন্মভূমি, আমার বাবা ঐ দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। ঐ দেশ ছেড়ে কেন আসবো? তাছাড়া ঐদেশে আমি এখন একটা সম্মানের চাকরিও করি। দেশের সেবা করে পেট চালানোর ব্যবস্থা হয়েছে। এখানে এসে কারো গলগ্রহ কেন হবো? যেখানে আমার পূর্বপুরুষই পালায়নি, আমি তাদের চেয়ে ভালো অবস্থানে থেকে কেন পালাবো? বললাম, আমি ওখানেই থাকবো, থেকেই লড়াই করবো। হোক আমার জায়গা দখল, হোক আরও হামলা, মারাক হিন্দু গুন্ডাপান্ডা দিয়েই আবার, তবুও আমি আমার মাতৃভূমি ছেড়ে যেতে চাই না। আর বললাম, সব মুসলিম কিন্তু একরকম না। কিছু কিছু মুসলিম হিন্দুদের কারো কারো চেয়েও ভালো।
.
আমার বাবার আসল নাম অ্যাডভোকেট কমল কৃষ্ণ গুহ হলেও তিনি ফরিদপুরকে ভালোবেসে বাবু ফরিদী ছদ্মনাম নিয়েছিলেন। এই নামেই তিনি সারা দেশে সুপরিচিত ছিলেন। সরকারি চাকরি করেছেন, কবি লেখক সংগঠক ছিলেন, শেষে ওকালতি করেছেন। সংগ্রামের জীবন তাঁর। অনেক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। প্রচুর পরিচিতি আর জনপ্রিয়তার কারণে তাঁর বন্ধু বেশিই ছিলো মুসলিম। বাবার রহস্যজনক মৃত্যুর পর যখন তাঁকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়, অনেকেই অবাক হয়েছিলেন; ৩০ বছর একসাথে সাহিত্যাঙ্গনে পদচারণা করা লোকটিও সেদিন জেনেছিলেন এই লোকটা জন্মগতভাবে হিন্দু। এতোটাই অসাম্প্রদায়িক ছিলেন আমার বাবা। আমাদের এলাকার মুসলিমরাও এমন, ছোট থেকেই দেখে এসেছি সহাবস্থান, একের বাড়িতে অন্যের আসা-যাওয়া, খাওয়া-আড্ডা। কোনোদিন দাঙ্গা-ফ্যাসাদ হয়নি।আওয়ামী লীগ-বিএনপি হিন্দু-মুসলিম মিলেই থাকি। পাশের শ্রীঅঙ্গন মন্দিরটি রক্ষায় মুসলিমদের অবদানও কম নয়। আমার বন্ধুদের মাঝেও মুসলিম বন্ধু অনেক। মিলেমিশেই আছি সবাই, কিছু সমস্যা তো থাকবেই। আমার এলাকার হিন্দুরাই বরং আমাদেরকে সমাজচ্যুত করার ফন্দি এটেছে। হামলা করেছে কার ইন্ধনে জানি না, কিন্তু মামলা তুলে না নিলে এলাকার কাউকে মিশতে দেয় না আমাদের সাথে, মায়ের সরকারি স্কুলটা কিছুদিন আগে মায়ের চেষ্টার কমতি না থাকলেও তুলে দিয়েছে শত্রুতা করে। মুসলিমরা এর মধ্যে আসে না, কারণ এলে যদি সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগ করে ঐসব সংঘবদ্ধ হিন্দুরা!
.
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে কিছুদিন আগে এক সাক্ষাতে যারা গিয়েছিলেন তারা সবাই বিভিন্ন দেশের সংখ্যালঘু নির্যাতিত নিপীড়িত জনগোষ্ঠী। সবাই তাকে সমস্যার কথা জানিয়ে প্রতিকার চেয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প কিন্তু সেভাবে কাউকেই কার্যকরী আশ্বাস তেমন একটা দেননি, শুধু শুনেছেন। সেখানে প্রিয়া সাহা কীভাবে গেলেন আমি জানি না। যেভাবেই গিয়ে থাকুন, তিনি নিজের ওপর হামলার কথা বলেছেন, যা সম্ভবত সত্যি, যারাই হামলা করে থাকুক না কেন। পত্রিকায় নিউজ হয়েছে। এ নিয়ে ফেসবুকে ছবি দেখলাম হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান ঐক্য পরিষদ মানববন্ধনও করেছে। তাহলে সেটা হয়তো মিথ্যা নয়। মিথ্যা হলে সেটারও বিচার হতে হবে। নাহলে হামলাকারীদের বিচার চাই। আরেকটা তথ্য তিনি যেটা দিয়েছেন, সেই ৩৭ মিলিয়নের তথ্য তিনি কোথা থেকে পেয়েছেন সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। এতোদিনে সেটা বলেও দেওয়া উচিত ছিলো বিতর্ক এড়াতে। হয়তো তিনি ৪৭ এর দেশভাগের আগের আর এখনকার তুলনা করে সেই সংখ্যাটা বলেছেন, যেমনটা ইউটিউবে দেখলাম মার্কিন কংগ্রেসম্যান ডোল্ড বলেছেন ৪৯ মিলিয়ন! গোবিন্দ প্রামাণিক নামে একজন দেখলাম হিসাব করে শুধু হিন্দুই দেখিয়েছেন ৪ কোটি মিসিং!(টাইমলাইনে আছে) আবার অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত স্যার এই জনগোষ্ঠী যাদেরকে দেশে পাওয়া যাচ্ছে না, মিসিং পপুলেশন বলেছেন। প্রিয়া সাহা বলেছেন উধাউ হয়ে গেছে, 'ডিসঅ্যাপিয়ার্ড'। তার উচিত ছিলো তথ্যসূত্র উল্লেখ করা এবং এটাও বলা যে এখন সংখ্যায় কমেরা আগের চেয়ে ভালো আছে। তবে তিনি যদি নিজেই ভিক্টিম হয়ে থাকেন, তাহলে তার আবেগাক্রান্ত হয়ে উলটাপালটা বলাটাও অস্বাভাবিক নয়। সেটা নিশ্চয়ই মার্কিনিরাও বুঝবেন। বুঝেই পরবর্তী স্টেপ নিবেন। তবে আমি মনে করি তিনি আগে আমাদের মাননীয়াকে সরাসরি সমস্যার কথাগুলো বলতে পারতেন একবার। তাতে কাজ নাহলে তারপর নিজ দায়িত্বে যা খুশি করতে পারতেন। আর বাইরে কারো কাছে এর আগেও নালিশ করে বা প্রতিকার চেয়ে কেউ সফল হয়েছে কি? এই দেশ আমাদের, এই দেশটাকে আমরাই গড়বো। বাইরের কেউ এসে তো আর গড়ে দিতে পারবে না। বাইরেএ কারো হুমকিতে নত হওয়ার লোকও আমাদের মাননীয়া নন।
.
দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা যে কমবেশি হচ্ছে এটা অস্বীকার করার হয়তো উপায় নেই। এমনিতেই কেউ নিজের ভিটেমাটি আর স্মৃতি ছেড়ে পালায় না। কিন্তু সেগুলো কমাতে সরকার তৎপর আছে এটাও সত্যি। অন্তত সরকারের উচ্চ পর্যায় এসব ব্যাপারে আন্তরিক। প্রিয়া সাহা যদি মিথ্যা কোনো তথ্য দিয়ে থাকেন, তার বিচার তিনি পাবেন। ইতিমধ্যেই মামলা হয়েছে। কিন্তু আমাকে আমার মুসলিম বন্ধুরাও কথা দিক, আজকের পর থেকে আর কোনো হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান বা আদিবাসী নিজেকে সংখ্যায় কম মনে করবে না, বঞ্চিত মনে করবে না, কারো মন্দিরে হামলা হলে তারা সবাই এক হয়ে রুখে দেবে, কাউকে 'মালাউন' বলা হবে না, কারো বাড়িতে আগুন দেওয়া হবে না আর। হিন্দুদের পূজায় মুসলিমরা নারু খেতে যাবে, মুসলিমদের ঈদে হিন্দুরা জর্দা খেতে যাবে। একে অন্যকে ভাই ভাববে, বন্ধু ভাববে। কেউ কারো সম্পদ দখল করার বা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে না। তাহলেই প্রিয়া সাহার বক্তব্য ভুল প্রমাণিত হবে। আমিও চাই সেটাই হোক। কারণ এই দেশ আমার, এই মাটি আমার। পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাই, মনটা পড়ে থাকে এই দেশে আমার ছোট্ট ভাঙা ঘরেই। কারণ এখানে আমার মা আছে, আছে বাবার স্মৃতি। এই দেশ আমাকে অনেক দিয়েছে, আমাকে গড়ে তুলেছে। এখন দেশকে আমার দেবার পালা।
.
মাগো এই দেশেতেই জনম আমার, যেন এই দেশেতেই মরি!

(Feel free to share)

লেখাঃ দেব দুলাল গুহ (দেবু ফরিদী)

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:০৭

বিজন রয় বলেছেন: ++++

২| ২১ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:১২

মা.হাসান বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।
মানুষের সুন্দর সত্ত্বা জাগ্রত হোক।
দেশে অনেক অনিয়ম আছে, তবে এগুলি হিন্দু-মুসলিম সমস্যার কারনে বলে আমার মনে হয় না। বরং ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতার দাপট বিনা বাধায় দেখাতে পারে বলেই এগুলো হয়।
বসুন্ধরা বা যমুনা গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠান হাজার হাজার মানুষের জমি দখল করেছে। এখানে সংখ্যার হিসাবে কিছু হিন্দু সম্পত্তি থাকাও স্বাভাবিক। এটাকে মুসলমানদের দ্বারা হিন্দু সম্পত্তি জবরদখল বললে অহেতুক রং চড়ানো হবে। এটা একটা উদাহরন মাত্র। প্রায় সব ক্ষেত্রেই এরকম উদাহরণ দেয়া যাবে।

৩| ২১ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: গুজব শুইনা আন্দাজে গণপিটুনি দিয়া মানুষ মাইরা ফেলা! মানুষগুলি সব খুনি হইয়া উঠতেছে!
বড় ভয়ানক
লজ্জার!!!!

৪| ২১ শে জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



শেখ হাসিনা নালিশ শুনলে মানুষ ট্রাম্পের কাছে যাবেন না, মির্জা ফখরুল বিভিন্ন দুতাবসে গিয়ে নালিশ করবেন না।

৫| ২১ শে জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৯

আল ইফরান বলেছেন: আই রেসপেক্ট ইউর স্পিরিট।
মুসলমান হিসেবে আপনার নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করা আমার ধর্মীয় দায়িত্বের অংশ বলেই আমি মনে করি।

৬| ২১ শে জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৬

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: আপনার লিখা পড়ে ভালো লেগেছে। দেশের প্রতি আপনার ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা জানাই। পাশাপাশি কিছু কথা প্রয়োজন বোধ অবশ্যই করছি। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাংলাদেশে হিন্দু এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনের উপর কম-বেশী অন্যায় বা অত্যাচার হয়েছে। এটাকে মোটেও স্বাভাবিক বলার উপায় নেই, তারপরেও বলবো সংখ্যালঘু (এই শব্দটাকে ঘৃণা করি) সম্প্রদায়ের প্রতি দ্বিমুখী আচরণ পৃথিবীর সব দেশেই কম বেশী আছে, যদিও একটা স্বাধীন দেশে এটা মোটেও প্রত্যাশিত নয়। ভারত, চীন, বার্মা, বসনিয়া, প্যালেস্টাইন ছাড়াও আরো অনেক দেশেই মুসলিমদেরও (সংখ্যালঘু) বাস্তুচ্যুত, গুম, খুন করা হচ্ছে।

ঐ মহিলা কোথা থেকে ৩৭ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ উধাও হয়ে যাওয়ার নাম্বারটা পেয়েছেন তা আমার জানা নেই। এ কথা সত্য যে বিগত শতাব্দীর প্রথম থেকেই (সূত্রঃ ১) ইস্ট বেঙ্গল থেকে প্রচুর হিন্দু ভাই-বোন বিভিন্ন দেশে (বিশেষ করে ভারত) পাড়ি জমিয়েছেন, এটাকে আমি স্বাভাবিকই বলবো কারন তৎকালীন সময়ে শুধু আমাদের এখানেই নয়, পুরো ভারত বর্ষেই এমনটা হয়েছে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য এ ধারা এখনো অব্যাহত আছে কম আর বেশী। ১৯০১ সালের হিসেবে মোটে জনসংখ্যার ৩৩% হিন্দু দেখানো হয়েছে (সূত্রঃ ১, ১০৩ নং পাতা)। সবচেয়ে বেশী পরিবর্তন এসেছে ১৯৩১-১৯৫১ সাল সময়ে। এসময় তাদের শতকরা হার ২৯.৪% থেকে ২২% এ নেমে আসে। ৭১- এ-ও একই ঘটনা ঘটেছে পাকিস্তানী বর্বরতার কারনে। ১৯৬১ সালে ১৮.৫% থেকে স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ এ তা ১৩.৫% এ নেমে আসে।

১৯৮১ সালে ১২.১%, ১৯৯১ সালে ১০.৫%, ২০০১ সালে ৯.২%, ২০১১ সালে ৯.৫% ছিলো। বিষয় হলো, ১৯৭৪ এ স্বাধীন বাংলাদেশে জনসংখ্যা ছিলো প্রায় ৭ কোটি এবং ২০১১ সালে তা ১৫ কোটিরও বেশী (সূত্রঃ ২)। এই সময়ে (১৯৭৪-২০১১) মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দের চেয়ে অনেক বেশী ছিলো এবং এখনো তা আছে। প্রশ্ন হলো, সংখ্যার দিক থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বেড়ে গেলেও শতকরা হিসেবে (%) তাদের সংখ্যা দিন দিনই কমেছে। তার সবচেয়ে বড় কারন, দেশ ত্যাগ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানো আর মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের কোন হিসেবেই ৩৭ মিলিয়ন মানুষ কমে যাওয়ার হিসেবে দেখানো সম্ভব নয়। তাহলে এই ৩৭ মিলিয়ন আসলো কোথা থেকে? ভারতবর্ষ ৪৭-এ ভাগ হওয়ার পর থেকে হিসেব করলে খুব সম্ভবত আপনি এই নাম্বারের আশে পাশে আসতে পারবেন কিন্তু সেটার দায় কি স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকদের? ৭১ এ চলে যাওয়া মানুষদের দায়ও কি নব্য স্বাধীন বাংলাদেশের?

এখনো কোটি কোটি হিন্দু ভাই-বোন বাংলাদেশ কে নিজের মাতৃভূমি ভেবে বসবাস করছেন, চাকুরি করছেন, ভালো আছেন তাহলে যারা চলে গেছেন তাদের নিয়ে এই মহিলার এত হা-হুতাশ কেন? বাস্তবতা হলো উনি স্বার্থান্বেষী একজন মানুষ যিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী বা বিচার ব্যবস্থার কাছে অভিযোগগুলো না করে, বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে আমেরিকা গিয়েছেন দেশের দুর্নাম করার জন্য। উনার হাসব্যন্ড একজন উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা, উনার দুই মেয়ে আমেরিকায় পড়াশোনা করছেন, কিভাবে? প্রশ্ন অনেক, উত্তর অনেক জটিল। তিনি তার কাজের মাধ্যমে শুধু তার নিজের হীনমন্যতার একটা উধাহরণ সৃষ্টি করলেন যেটার ফলাফল বেশ সুদূর প্রসারী হতে পারে। স্বাধীন দেশে কারো প্রতি অন্যায় বা অবিচার কাম্য নয়। দেশ ছেড়ে যাওয়া কোন কিছুর সমাধান হতে পারে না। দেশ আমার আপনার আমাদের সবার। দেশকে নিজের ভাবলে অন্যের কাছে নিজের দেশের দুর্নাম করাটা ছোট মন-মানসিকতার পরিচয় দেয় হয়। সবশেষে বলবো, একটা অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে আমাদের মাথা উঁচু করে দাড়াতে হলো সবাইকে এক সাথে কাজ করতে হবে। আমাদের দেশেও সমস্যা আছে আর সেটা তখনই সমাধান করা সম্ভব যখন আমি আপনি ধর্মের উর্দ্ধে উঠে দেশের জনগণ হিসেবে ভাতৃত্ববোধকে জাগ্রত করতে পারবো। মনে রাখতে হবে, ধর্ম যার যার, দেশ সবার।

১। দেখুন
২। দেখুন

লেখকে তার লিখার জন্য আবারও ধন্যবাদ জানাই। আবারও বলতে চাই, এই দেশ আপনার, আমার, আমাদের সবার। কারো কথায় কান না দিয়ে আসুন আমরা হাতে হাত রেখে এক সাথে দাঁড়াই, বলি আমার সোনার বাংলা আমি তোমার ভালোবাসি।

৭| ২২ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ১০:১০

জগতারন বলেছেন:
সত্যি, বাংলার হিন্দুরা কোনোদিন মনে প্রাণে বাংলাদেশের বাঙ্গালী নয়।
বাংলাদেশ (বাঙ্গালীর দেশ) কে তারা ভালোবাসে না।
বাংলাদেশের হিন্দুদের অন্তর জুড়ে শুধুই হিন্দুস্তান আর হিন্দুস্তান।
আমরা আসলে দুধ-ভাত দিয়ে কালসাপ পুষছি.…

৮| ২২ শে জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৪

নীল আকাশ বলেছেন: সংখ্যালঘুরা বিশেষ করে হিন্দুরা যদি বাংলাদেশে অত্যাচারের শিকারই হতেন তবে বাংলাদেশের প্রশাসনের প্রায় সবখানেই উচ্চপদে হিন্দু সম্প্রদায়ের এতো আধিক্য হলো কোথা থেকে ? তার পরিবারই তো "প্রিভিলেজড" শ্রেনীতে আছেন। এটা কি করে হলো যদি তারা অত্যাচার সহ্য করে টিকে থাকেন ? তাদের তো অনেক আগেই ভারতে চলে যাবার কথা। কিছু মানুষ থাকে যারা সব সময় ধান্দা করে আর সবাইকে বিপদে ফেলার চেস্টায় থাকে। এই মহিলার অবশ্যই দেশকে অপমান করাত জন্য বিচার হওয়া উচিত।

আমি আপনাকে মন থেকে ধন্যবাদ দেব এত সুন্দর একটা হৃদয় স্পর্শ লেখা দেবার জন্য। আমার অনেক বন্ধু হিন্দু। এদের একজনের সাথে আমার এতটাই ক্লোজ বন্ধুত্ব যে সেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। এই সব স্বার্থপর প্রিয়া সাহারা আমাদের সাথে আপনাদের এই সুন্দর ভাব নষ্ট করতে চায়। আপনাদের পক্ষ থেকে আরও বেশি এর প্রতিবাদ আশা উচিত।

আপনাকে আবারও অসংখ্য ধন্যবাদ রইল।

৯| ২৫ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:৫৬

অনেক কথা বলতে চাই বলেছেন: ছোটবেলায় পূজার সময় পরিচিত হিন্দুদের বাড়ীতে নাড়ু খেতে যেতাম। আহ, কি মজাই না ছিলো! কিভাবে যে অমন নাড়ু বানান আপনারা! এখনও ভুলিনি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.