নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ফেসবুকে যুক্ত হোনঃ www.facebook.com/dev.d.nipun

...নিপুণ কথন...

সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।

...নিপুণ কথন... › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ হতো আমার প্রথম মৃত্যুদিবস!

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৪৮

আজকের রাতটা আমার জন্য কালরাত। গত বছর এই রাতে আমাকে আমার বাড়ির সামনের শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গন মন্দির প্রাঙ্গনে ডেকে নিয়ে পরিচিত-অপরিচিত স্থানীয় একদল সন্ত্রাসী আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র হামলা চালায়। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে অল্পের ওপর দিয়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই আমি। নাহলে আজ আমার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হতো।
.
কেমন হতো তেমনটা হলে? আমার জন্য কি কেউ দুফোঁটা চোখের জল ফেলতো? হয়তো না। কিন্তু এটুকু বলতে পারি, কোনোদিন কোনো অন্যায়-দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেইনি, সৎপথে চলেছি, প্রতিবাদ করেছি। তাই, মরে গিয়েও নিজেকে এটুকু স্বান্ত্বনা আমি দিতে পারতাম যে অন্তত মনের দিক দিয়ে আমি নিজের কাছে হেরে যাই নি, যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি বাবার দেখানো সৎপথে হাঁটার, চেষ্টা করেছি তাঁর কথামতো অসহায়ের হাতে রাখতে 'সহোদর হাত'।
.
যেহেতু মরে যাইনি এবং যেহেতু আমি একটা সরকারি চাকরি করি, তাই আমি এই হামলার ঘটনায় থানায় গিয়ে একটা জিডি করেছিলাম। ফরিদপুরের অবস্থাটা এমন যে, এদের বিরুদ্ধে কেউ থানায় যেতেও ভয় পায়। যাহোক, জীবনে প্রথম জিডি, ঠিকমতো গুছিয়ে দেওয়ার সুযোগ পাইনি। যে দেখে সেই বলে এই সামান্য ৩২৩ আর ৫০৬(২) ধারায় কিছু হবে না তাদের। তবু আমি হাল ছেড়ে দেওয়ার লোক নই। তাই আইনি লড়াই চালিয়ে গেলাম। কিন্তু আসলেই শেষ পর্যন্ত কিছু হলো না।
.
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সততা ও সৎসাহসের প্রশংসা করতে হয়। ঘটনার পুরোপুরি সত্যটা উঠে না এলেও মোটামুটি সত্য উঠে এসেছে, আসামী পক্ষের ব্যাপক পলিটিক্যাল লবিং স্বত্বেও। দুটি ধারাতেই আসামীদেরকে দোষী দেখিয়ে রিপোর্ট দিয়েছেন তিনি। এরপর জাতীয় নির্বাচন ছিলো, তাই ইমেজের কথা চিন্তা করে কিছুদিন এরা চুপচাপ ছিলো। আবার পুরোদমে নির্যাতন শুরু করে মার্চ-এপ্রিলের দিকে। এপ্রিলের ১ তারিখে এরা পুলিশের উপস্থিতিতে আমাকে আমার মাসহ আবার মারে আমার বাড়ির সামনে। এরপর কোতয়ালী থানায় প্রথমে বসে আপসে মিটমাট করানোর চেষ্টা হয়। তাতে কাজ নাহলে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে স্থানীয় মহিলা কাউন্সিলর তৃষ্ণা সাহা, সুকেশ সাহাসহ মোট ৯ জনসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামী করে মামলা দেই ১০টি ধারায়। আমি মামলা করার ৩ দিন পর আসামীরাও পালটা মিথ্যা মামলা দেয় আমার ও মায়ের বিরুদ্ধে, আমরা নাকি চাঁদাবাজ! আমাদের এজাহারে মিথ্যা মামলার হুমকির কথা উল্লেখ থাকলেও সেটা থানায় গৃহিত হয়। যাহোক, ৪ মাস পর সেই মামলার তদন্ত রিপোর্ট না দিয়ে দুটিরই ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দেওয়া হয় ৩২৩ আর ৫০৬ ধারায়। সবাই বলছে এখন মামলা ভিলেজ ট্রায়ালে সেই কাউন্সিলরের অফিস পৌরসভায় চলে যাবে। কাজেই, এখন আর শালিসে আপস ছাড়া উপায় নাই, যদি না না রাজি দেই!
.
আরও শুনবেন? হতাশ হবেন শুনলে। প্রথম মামলার প্রায় এক বছর পর এই বছর ৮ সেপ্টেম্বর মাত্র ২ দিনের নোটিশে আমাকে সাক্ষী দিতে বলা হয়। আমিও বোকার মতো (যেহেতু অনভিজ্ঞ) সাক্ষী নিয়ে হাজির হয়ে যাই আদালতে। এপিপি জাহিদ ব্যাপারী সাক্ষী হাজিরায় সাইন করে পাঠিয়ে দিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম কত টাকা দেবো, তিনি বললেন টাকা লাগবে না, তিনি আমার বাবার জুনিয়র উকিল, তাই টাকা নিবেন না।
.
এরপর আদালতে আমার মামলা উঠলো। আসামীরা কাঠগড়ায় গিয়ে দাঁড়ালো। উকিল সাহেব এলেন না। ফোন দিলাম, তিনি জানালেন অন্য মামলায় অন্য কোর্টে খুব ব্যস্ত তিনি। একথা আগে বললে আমি আরেকজন উকিল নিয়োগ দিতাম। যাহোক, শিক্ষা হয়ে গেলো। উকিল ছাড়াই সাক্ষ্য দিলাম। প্রতিপক্ষের নারায়ণ উকিল বেশ নামকরা! তিনি শুরু থেকেই আমাকে বাজেভাবে আক্রমণ করলেন সবার সামনে, উঠেপড়ে লাগলেন এটা প্রমাণ করতে যে আঙিনায়(শ্রীঅঙ্গন) এই ধরণের কোনো ঘটনাই ঘটে নাই! তাকে আমি চিনতাম না তখন। তিনি এই আঙিনার কমিটিতেও আছেন। তাই সেখানে এমন ঘটনা ঘটেছে এটা তো তিনি মানতে চাইবেনই না! শেষে উকিল সাহেব আমাকে বিচারকের সামনেই 'ফাউল' বলে সম্বোধন করে বললেন আমার বাসা থেকেই নাকি তারা মাদক কিনে খায়'! আমি প্রতিবাদ করলে আশপাশ থেকে অন্যরা বললেন, উকিলরা নাকি এই ভাষাতেই জেরা করে থাকে! যাহোক, আমার সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিলেন। তিনজনই আসামীদের দেখিয়ে বললেন এরাই আমাকে মেরেছেন এবং এটা তারা দেখেছেন। আমি খুব আশাবাদী হলাম, ভাবলাম এরা অন্তত ছয় মাস হলেও জেলে যাবে এবং আমি সুবিচার পাবো! কিন্তু হায়!
.
আমি কী বোকা! আমার সরকারি উকিল জাহিদ কাকু আমাকে ফোন দিলেন আমরা সাক্ষ্য দিয়ে আদালত থেকে বের হওয়ার পরেই। কী দারুণ টাইমিং! আমাকেই উলটো ধমক দিয়ে বলতে শুরু করলেন, তুমি একটা উকিলের ছেলে, তুমি বোঝো না কিছু? আমি বিনীতভাবে বললাম, আমার তো আইন-আদালত সম্পর্কে ধারণা নাই; উকিলের ছেলে হলেই কি জন্ম নিয়ে আমি আইন শিখে গেছি? বাবা বেঁচে নেই আজ ১১ বছর। বাবা থাকলে কি আর এভাবে কোর্টের বারান্দায় ঘুরে বেড়াতে হতো? যাহোক, বলতে বাধ্য হলাম যে তিনি থাকতে পারবেন না একথা আমাকে আগে বললে আমি অন্য একজন উকিল নিয়োগ দিতাম। তিনি তখন মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে যেন দুদিকই রক্ষা করলেন। আমি বুঝলাম, তিনি নিরূপায়।
.
এরপর? সপ্তাহখানেক আমি কর্মস্থল বোয়ালমারিতে ব্যস্ত ছিলাম। ১৭ তারিখ কোর্টে মামলার খোঁজ নিতে গিয়ে শুনি ১৬ তারিখেই নাকি আসামীরা সব বেকসুর খালাস পেয়ে গেছে! আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম! তা কি করে হয়? এত ভালো সাক্ষ্য দিলাম আমরা! এই সপ্তাহখানেক আমাকে উকিল মুহুরিরা কিছু জানাননি, আমিও নানা ব্যস্ততায় ছিলাম বিধায় যেতে পারিনি ফরিদপুর কোর্টে, আমার হয়ে তো দৌঁড়ানোরও কেউ নেই; এর মাঝেই নাকি পরপর ডেট ফেলে রায় ঘোষণা হয়ে গেছে! একদিনের জন্যও তাদেরকে জেলে রাখা গেলো না। যাকগে, বিজ্ঞ আদালত যা ভালো বুঝেছেন তাই করেছেন। আমার আর কারো প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই। কিন্তু একজন প্রয়াত উকিলের ছেলে হয়েও নিজের পক্ষে একজন উকিল পেলাম না, একজন বিসিএস ক্যাডার হয়েও রাষ্ট্রের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাচ্ছি না-- এসব ভাবলেই এই বয়সেও শুধু কান্না পাচ্ছে।
.
এখন আমার সামনে দুটি পথ। আপীল করা ও নারাজি দেওয়া, অথবা মামলা হামলার কথা ভুলে যাওয়া। কোনটা বেছে নেবো আপনারাই বলেন। একজন বিচারপতি এসেছিলেন ফরিদপুরে ইন্সপেকশনে। তাঁকেও বলতে পারিনি এসব কথা। হয়তো গুমও হয়ে যেতে পারি তাহলে। আরেকটা পথ আছে যদিও, কিন্তু সেই আত্মহত্যার পথ আমি বেছে নিতে রাজি নই। আবার একজন শিক্ষক হয়ে এভাবে দুইবার মার খেয়ে মাথা উঁচু করে এই সমাজে এই আসামীদের পাশ দিয়ে হেঁটেও যেতে পারছি না আজকাল। ইদানিং নিজেকে বড় বেশি অসহায় লাগছে। সবাই বলে, 'যা হয়েছে ভুলে যাও'। আপনি আমার জায়গায় থাকলে কি করতেন? পারতেন সব ভুলে যেতে?

লেখাঃ দেব দুলাল গুহ

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৫৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনাকে যারা মারধর করেছে, এরা সনাতন ধর্মের লোকজন?

২| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ভোর ৫:৩৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



১ নং কমেন্ট করার পর, আপনার উত্তর পাইনি ৫/৬ ঘন্টা; ভাবছি, নুরু সাহেবকে বলবো, আপনার নামে একটা পোষ্ট দিতে।

৩| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:০০

হাফিজ বিন শামসী বলেছেন: ভুলে ও আত্মহত্যার পথ বেছে নিবেন না। জীবনে সমস্যা থাকবেই। এ ব্যপারে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন।

৪| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:২৮

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: আল্লাহ ভরসা
সত্যের জয় হবেই একদিন

৫| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:২৯

...নিপুণ কথন... বলেছেন: হামলাকারীরা সনাতন ধর্মের লোক হলেও এর পিছে উপরের হাত আছে।

৬| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: আপনাকে ডেকে নিয়ে মারতে চেয়েছিল কেন?? আপনার অপরাধ কি?

৭| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সত্য কথা হলো ওদের সাথে পারবেন না। তাই চুপ করে থাকুন। অন্যথায় আপনি আবার মার খাবেন। এই দেশ নষ্টদের দখলে চলে গেছে।

৮| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৩

বিজন রয় বলেছেন: সততার মৃত্যু নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.