নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দ্বিধাগ্রস্হ স্বপ্নচারী

বাংলা আমার তৃষ্ণার জল;তৃপ্ত শেষ চুমুক।আমি একবার দেখি বারবার দেখি-দেখি বাংলার মুখ

অ্যালব্যাট্রস

মঙ্গল দীপ জ্বেলে অন্ধকারে দু'চোখ আলোয় ভরো প্রভু

অ্যালব্যাট্রস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈদ যেখানে যেমন

০৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:৩৫

ভার্সিটি থাকাকালীন সময়ে বাসায় যাওয়া হতো বড় কোন বন্ধে।দিনাজপুরে বাবার চাকরীর সুবাদে সেখানেই থাকা হত।নোয়াখালী থেকে দিনাজপুরের দূরত্ব ৬০০ মাইলের কিছু বেশি।সরাসরি ট্রেন বা বাসে যাওয়া যেত না।যেতে হত প্রথমে ঢাকা।এরপর ঢাকা থেকে দিনাজপুর।বেশিরভাগ সময়ই ট্রেনে যাওয়া হত।সময় মত ট্রেন ছাড়লেও নোয়াখালী থেকে ঢাকা ৭ ঘন্টা আর এরপর ঢাকা থেকে দিনাজপুর ৯ ঘন্টা।কমপক্ষে ১৬-১৭ ঘন্টা লেগে যেত।তার সাথে রাস্তায় বিরতি,ট্রেন লেইট এসব হাবিজাবি তো ছিলই।মানে সোজা কথায় বলতে গেলে পুরা একটা দিন-ই নাই হয়ে যেত।একারণে দেখা যেত যে সেমিস্টার ব্রেক কিংবা সামার ভ্যাকেশন ছাড়া যাওয়া হতো না।আমার বন্ধুদের যাদের বাসা কাছে ছিল তারা কয়দিন পর পরই বাসায় যেত।মাঝে মাঝে খারাপ লাগত যে আমি যেতে পারছিনা।আবার মজা লাগত এটা ভেবে যে বাসায় যাওয়ার সত্যিকার যে মজাটা তা তারা পায়না।অনেকদিন পর পর বাসায় যেতাম বলে প্রিপারেশন নিতাম দু-একদিন আগে থেকে।ঈদের ছুটি আসলে উত্তেজনায় থাকতাম।বাড়ি যাব।বাড়ি যাব!ব্যপারটা যেন এমন যে দূরে থাকলেই বাড়ি যাওয়ার মজা বেশি।হয়তবা।কিন্তু চাইলেই বাড়ি যেতে না পারার কষ্টও কিন্তু কম না।

মেঘে মেঘে বেলা অনেক গড়িয়েছে এরপর।বাবা বদলী হয়ে চলে গেলেন চট্টগ্রাম।ইতিমধ্যে ভার্সিটি লাইফও শেষ হল।সম্প্রতি এলাম দেশের বাইরে।হিটলারের দেশ।বিজাতীয় ভাষা,সংস্কৃতি।সব কিছুই নতুন নতুন।অন্যরকম।এখনও অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারিনি পুরোপুরি।যেখানেই যাই দেশের সাথে কোনকিছুর মিল আছে কিনা খুঁজতে থাকি।বাসার কাছে একটা নদী আছে।রাইন তার নাম।মন খারাপ হলে তার পাড়ে গিয়ে বসে থাকি।

ঈদ আসলে পএিকার পাতা কেন যেন একটু বেশীই রঙ্গিন মনে হয়।অনেক আয়োজনই থাকে সেখানে।ঈদ বাজারের খবর,ঈদ স্পেশাল রেসিপির খবর।ঈদ নিয়ে তারকাদের ইনিয়ে-বিনিয়ে বলা আহ্লাদপূর্ণ অনুভুতিগুলো ফিচার হিসেবে ছাপা হয়।এসব ছাড়াও সারাবছরের কমন আইটেম রাজনীতির খবরও একটু নতুন আঙ্গিকে থাকে।রাজনৈতিক দলগুলো ঈদবোনাস হিসেবে দেশবাসীর জন্য ঈদের পর কি কি কর্মসূচি দিচ্ছে তার আগাম খবরাখবর থাকে প্রথম ও শেষ পাতায়।মাঝখান থেকে পথশিশু কিংবা দীনহীন মানুষদের নিয়ে মর্মস্পর্শী কিছু খবর ছাপিয়ে একটু ব্যালেন্স করার চেষ্টা চলে।তবে সব খবরের মাঝে যেটা দেখতে সবচেয়ে ভাললাগে সেটা হলো ঘরমুখো মানুষের ছবিগুলো।এসব ছবি দেখলে মনে পড়ে যায় টিকেটের জন্য অপেক্ষা,ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে টিকেট পাওয়া আর এরপর আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে বাড়ি যাওয়ার সেই স্মৃতিগুলো।ট্রেন-বাস-লঞ্চের উপচে পড়া ভীড়ের মাঝে এত কষ্ট করে এত আশঙ্কা নিয়ে বাড়িফেরা এই মানুষগুলোর সবার মুখেই কিন্তু হাসি থাকে।ইয়াং জেনারেশনের ছেলেপেলে হলে ত কথাই নাই!যেন বাস,ট্রেনের ছাদে কিংবা লঞ্চের ছাদে অতিরিক্ত যাত্রী হিসেবে ঝুলতে ঝুলতে যাওয়ার চেয়ে মজার কোন কাজ আর দুনিয়াতে নাই।তখনি মনে হয় বাংলাদেশ আসলেই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশ।বাড়ি যাওয়ার এই মূহুর্তগুলো পুরোটাই আসলে টান টান উত্তেজনায় ভরা থাকে।তবে আমার কাছে মনে হয় ঈদ প্রকৃ্তপক্ষে সেদিনই যেদিন এই মানুষগুলো এত ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে শেষমেষ বাড়ি ফিরে আত্ত্বীয়-স্বজনদের দেখে।

এখন আমার নোয়াখালী টু দিনাজপুরের সেই ৬০০ মাইলের ঈদ জার্নির কথা ভাবলে মজা লাগছে।কারন এখন দেশ থেকেই কমবেশী সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটারের মত দূরে আছি।ঈদ কবে ভুলেই যেতাম নিজের দেশের পত্রিকায় চোখ না রাখলে।কারণ এদেশে আমাদের ঈদ কবে তা নিয়ে কোন মাথাব্যথা নাই।কোন ছুটি-ছাটা নাই।কোন আয়োজনও তাই নাই।ঈদের দিন অনেক বাংলাদেশী স্টুডেন্টকেই তাদের রেগুলার জব করতে হয়।দিনশেষে দেশে কথা বললেই তাদের কাছে ঈদ ঈদ লাগে।কিংবা সকালে দেশী মানুষ কেউ যদি বলে যে ‘ভাই ঈদ মুবারক’ তাহলে কিছুটা ঈদের আমেজ পাওয়া যায়।আমাদের কাছেও সত্যিকারের ঈদ সেদিনই হবে যেদিন দেশে ফিরে আত্ত্বীয়স্বজনের মুখ দেখব।আর ঈদের আমেজ পূর্ণতা পাবে যেদিন আবার সব বন্ধু-বান্ধবরা মিলে টঙ্গের চা দোকানে প্রাণখুলে আড্ডা দিব।



আমরা প্রবাসীরা সেই ঈদের অপেক্ষায় আছি অধীর আগ্রহে।আপাতত পত্রিকার পাতায় ওই ঘরমুখো মানুষগুলোর ছবি দেখে ঈদের প্রহর গুনছি।মনে বেজে চলেছে ঈদের সেই চিরচেনা সুর ‘ও মোর রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ............’



ঈদের আমেজে বদলে যাক আমাদের মানসিকতা।বদলে যাক দেশ।ঈদ মুবারক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.