নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিনোদন ও জাগরণের চেষ্টা। হরর, থ্রিলার, রম্য এই জাতীয় কিছু লেখার চেষ্টায় আছি। (০২/০২/১৭)

Nishi Chowdhuri

আমি মানুষ।

Nishi Chowdhuri › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুখোশধারী পশু

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:১৪

গল্পের নামঃ মুখোশধারী পশু
.
ছোট মেয়ে নাম তার নাবিলা। মাত্র ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে। কিছুদিন আগেও বেশ হাসিখুশি ভাবে চলাফেরা করত। কিন্তু ইদানিং বেশ আতংকের সাথে চলাফেরা করে। এর কারণ হল তার দূর সম্পর্কের এক চাচা। নিকৃষ্ট সেই লোক চাচা নামে কলংক। কলংকিত সেই অমানুষটি সুযোগ পেলেই কুচিন্তা বাসনা নিয়ে নাবিলাকে জড়িয়ে ধরে। প্রথম থেকেই নাবিলার কাছে তার এসব আচরণ ভাল লাগেনি। তার জড়িয়ে ধরার মাঝে নাবিলা অস্বস্তিবোধ করত। কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারে না। কি বলবে ছোট্ট এই মেয়েটি? কিভাবে এসব বলতে হয় তা তো মেয়েটা জানেও না। ওর পবিত্র মন তো এসব সম্পর্কে কিছুই জানে না। এসব কর্মকান্ডের কি বা নাম দিবে সে?
.
আদি যুগ থেকে সন্তানের বেস্ট ফ্রেন্ড হল তার বাবা মা। অনেকেই হতে পারে আবার অনেকে হতে পারে না। যার যা ভাগ্য। নাবিলার বাবা মা যথেষ্ট চেষ্টা করে নাবিলার বেস্ট ফ্রেন্ড হতে। বিশেষ করে নাবিলার মা। বাবা তো সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে।
.
নিকৃষ্ট সেই চাচা কিছুদিনের জন্য বেড়াতে এসেছে। বিকৃত মস্তিষ্কের এই কলংকিত লোকটি এসেই নাবিলার প্রতি নিজের নোংরা দৃষ্টি দিয়েছে। সুযোগ পেলেই নিজের জঘন্য বাসনা পূরণে মগ্ন হয়ে উঠে।
.
একদিন নাবিলা পড়ার রুমে বসে আছে। বাকিরা সবাই টিভি দেখছে। কলংকিত সেই লোকটি ওয়াশরুমের নাম দিয়ে নাবিলার রুমে চলে এলো। নাবিলার মাথা ব্যাথা করছিল তাই মাথা ধরে বসে আছে। তখন বিকৃত মস্তিষ্কের লোকটি এসে নাবিলার মাথা চেপে দেয়ার নামে নিজের কুকর্ম চালানো শুরু করল। নাবিলার কাছে অসহ্য লাগা শুরু করল। নাবিলা বলতে লাগল তার মাথা ব্যাথা চলে গেছে। কিন্তু জঘন্য সেই লোকটি থামলো না। কিছুক্ষণ পর ভেতর থেকে ডিনারের ডাক এলো। তাই কুলাঙ্গার লোকটি চলে গেল।
.
সন্তানের মন মা বুঝতে পারেন। আল্লাহ প্রদত্ত একটা শক্তি। নাবিলার আচার আচরণ দেখে নাবিলার মা বুঝল নাবিলার কিছু একটা হয়েছে। যখনই কেউ পিছন থেকে নাবিলার কাধে হাত দেয় তখনই নাবিলা কেপে উঠে। ব্যাপারটা নাবিলার মা বারবারই লক্ষ্য করেছেন।
.
> আম্মু তোমার কি হয়েছে? (মাথায় হাত দিয়ে জ্বর আছে কিনা দেখল)
ছোট্ট মেয়েটি কিছুই বলতে পারল না। শুধু মায়ের বুকে ঝাপ দিয়ে কান্না করতে লাগল। নাবিলা মা স্বান্তনা দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল।
.
একদিন নাবিলা স্কুল থেকে এসে ড্রেস চেইঞ্জ করছিল। নাবিলাকে তার মা ছোটবেলা থেকেই লজ্জা আবরণ করা শিখিয়েছে। তো নাবিলা যখন ড্রেস চেইঞ্জ করছিল তখন সেই মানুষ রূপী পশুটার আগমন ঘটল। নাবিলা দৌড়ে যেয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ল। আর বের হল না। যখন নাবিলার মা এসে ডাক দিল তখনই বের হল।
.
নাবিলার মা আরও কিছু জিনিস লক্ষ্য করেছেন তা হল আগে নাবিলা ঘরের এদিক সেদিকে নানা ধরণের খেলা খেলতো। কিন্তু এখন সারাক্ষণ মায়ের সাথে সাথে থাকে। রাতে পড়ার রুম আটকিয়ে রাখে। যা আগে করত না। নাবিলার মা মনে করল হয়তো নাবিলা ভয় পেয়েছে। কিন্তু ভয় পেলে রাতে দরজা লাগিয়ে রাখবে কেন? কিছু প্রশ্নের উত্তর নাবিলার মাও খুজে পাচ্ছিল না। তাই তিনি নাবিলার দেখাশুনায় মনোযোগী হলেন। অন্যদিকে সেই নেকড়ে লোকটি চলে গেল।
.
কিছুদিন পর নাবিলা আবার আগের মত করে চলাফেরা করতে লাগল। নাবিলার মায়ের মনের মধ্যে থাকা প্রশ্নগুলো কেটে গেল। নাবিলার হাসিমুখ দেখে তিনি সব ভুলে গেলেন। কিন্তু নাবিলার হাসিমুখ বেশিদিন রইল না। সেই নেকড়ের আগমন আবার ঘটল। চাকরির ইন্টারভিউ দেয়ার নামে কিছুদিন থাকতে এলো। মুখোশ পড়া এই লোকটি আসল আচরণ সম্পর্কে নাবিলা ছাড়া আর কেউ জানত না। তাই নাবিলার বাবা মা কোনো আপত্তি করল না।
.
নিজের ঘরেই নাবিলা আবার বন্দী হয়ে গেল। নিজেকে সবসময়ই রুমের মধ্যে আটকিয়ে রাখে। নাবিলার এমন আচরণ নাবিলার মায়ের মনে আবার সন্দেহ জাগালো। তিনি আবার নাবিলার দেখাশুনায় মনোযোগ দিলেন। একদিন নাবিলা স্কুল থেকে ফিরে দেখল তার মা ঘরে নেই। বলা বাহুল্য স্কুল খুব পাশেই। নাবিলার মা পাশের বাসায় গেছে। ঘরে সেই নেকড়ে লোকটা। দরজা সেই কুলাঙ্গারেই খুলেছে। নাবিলা ফ্রেশ হয়ে বেশ কিছুক্ষণ পর রুম থেকে বের হল। ভাত নিয়ে নিজের রুমে চলে গেল। যেই দরজা আটকাতে গেল ওমনি লোকটা চলে এলো। বলল আজ আমি নিজ হাতে তোমাকে খাইয়ে দিব। নাবিলা বারবার বলল আমি খেতে পারব। তবুও সে শুনল না। নাবিলাকে কোলে বসিয়ে ভাত খাইয়ে দিতে লাগল। সেই সাথে নিজের বিকৃত মস্তিষ্কের পরিচয় দিতে লাগল।
.
ঘরের ডুপ্লিকেট চাবি নাবিলার মায়ের কাছে আছে। তাই তিনি ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ঢুকে পড়লেন। নাবিলার জুতা দেখে বুঝল নাবিলা এসেছে। চুপিসারে নাবিলাকে দেখতে গেল। যেয়ে যা দেখল তাতে নিজের চোখকে নিশ্বাস করাতে পারছেন না। নাবিলার মা স্তব্ধ হয়ে গেলেন। এই মুহূর্তে ঘরে কেউ নেই। হাতেনাতে ধরতে গেলে যদি হিতে বিপরীত হয়ে যায়। তাই নিজে দ্রুত যেয়ে কলিংবেল চাপ দিল।
.
কলিংবেলের শব্দ পেয়ে পশুটি দ্রুত নাবিলার রুম থেকে চকে গেল। নাবিলার যেয়ে দরজা খুলে তার মাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগল। এতদিন নাবিলার কান্নার কারণ না বুঝলেও আজ বুঝেছেন। নাবিলা মা তার স্বামীকে কল করে তাড়াতাড়ি ঘরে আসতে বলল। ঘন্টাখানেক পর নাবিলার বাবা এলো। সাথেসাথেই নাবিলার মা লোকটিকে ঝাড়ু পিটা শুরু করল। নাবিলার বাবা কিছুই জানে না তাই নাবিলার মাকে ধরে ফেলল।
.
- আরে কি করছ এসব? পাগল হয়েছ নাকি?
> হ্যাঁ আমি পাগল হয়েছি। এক্ষুণি এই জানোয়ারটাকে ঘর থেকে বের কর।
- আরে কি হয়েছে সেটা তো বল।
> বলার মত না। ভাবতেই ঘৃণা হয়।
.
এদিকে পুলিশ চলে এসেছে। নাবিলার আপন মামা পুলিশ। নাবিলা তার ভাই ও স্বামীকে সব খুলে বলল। রাগের মাথায় দুজনই পশুটাকে এলোপাতাড়িভাবে মারতে শুরু করল। কনস্টেবলরা এসে ধরল। তারপর থানায় নিয়ে গেল। নাবিলা তার মাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগল। স্বান্তনা দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল।
.
রাতে ডিনারে
> শুন আম্মু, আমি না তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড?
~ হ্যা মামনি।
> তাহলে তুমি আমাকে আগে বলনি কেন যে লোকটা তোমাকে ডিস্টার্ব করছিল?
নাবিলার ছোট মাথায় এই প্রশ্নের উত্তর নেই। তাই চুপ করে রইল।
> শুন আম্মু ভবিষ্যতে এমন কিছু হলে মামনিকে অবশ্যই বলবে। ঠিক আছে?
~ ঠিক আছে মামনি।
.
সময়ের স্রোতের সাথে নাবিলা অতীতের কালো দিনগুলো ভুলে গেল। কিন্তু নাবিলার মনে পুরুষ জাতির উপর আক্ষেপ তৈরি হয়ে গেল। বাবা ছাড়া আর কাউকেই সে এখন ভালো চোখে দেখে না। নিজের আপন মামা, চাচা ও বাকিদের থেকে নিজেকে দূরে দূরে রাখে।
.
এমন ঘটনা বর্তমান সমাজে অহরহ ঘটে থাকে। কিন্তু প্রকাশ পায় না। কিভাবে পাবে? এমন লজ্জাজনক ঘটনা কেউ প্রকাশ করতে চায় না।
.
সবসময় সন্তানের দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। বিশেষ করে মেয়েদের দিকে। পরিশেষে এটাই বলব অন্যের তুলনায় নিজের সন্তানদেরকে বেশি বিশ্বাস করুন। তাদের চালচলন সর্বদা খেয়াল রাখুন। কারণ অনেক সময় তারা অনেক কিছু মুখে বলতে পারে না। কিন্তু চালচলনে প্রকাশ পায়।
.
লিখাঃ Nishi Chowdhuri (রাত্রির আম্মু)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.