![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষ।
গল্পের নামঃ ভালবাসা সব পারে
.
নিধি বর্তমান যুগের মডার্ন মেয়ে। ওয়েস্টার্ন পোষাক ছাড়া তার চলেই না। সবকিছুই ম্যাচিং করে পড়ে। আবিদ, সিম্পল একটি ছেলে। একই কলেজে পড়ে। নিধির দুই ব্যাচ সিনিয়র।
.
কলেজের সিড়িতে দাড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে আবিদ এবং তার কিছু বন্ধুরা।
.
> এই যে, সিড়িতে ভীড় জমিয়েছেন কেন?
- আমরা যেখানে দাড়াই সেখানেই ভীড় জমে যায়।
> তা ঠিক। কারণ বানর দেখলেই ভীড় জমে।
.
কথাটা বলে নিধি চলে গেল। আবিদ একটু অবাক হল।
- দোস্ত মেয়েটা কে?
~ কলেজের ক্রাশ।
- তাই নাকি? তো ক্রাশের খোঁজ খবর কতটুকু নিলি?
~ সবই নিয়েছি। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে।
- আমাকে বানর বলেছে তাই না? চল এবার ওকে একটু পেত্নী বানিয়ে আসি।
~ চল।
.
বন্ধুরা মিলে ক্লাসের বাইরে একটা স্থানে বসে আছে। অন্যদিকে নিধি ও তার বান্ধবীরা ক্লাসের বাইরে দাড়িয়ে গল্প করছে। তখনই আবিদ তার বন্ধুর সাথে নিধিকে ইঙ্গিত করে কথা বলতে শুরু করল।
.
- দোস্ত আজকাল কিছু মডার্ন মেয়ে কলেজকে ফ্যাশন শো বানিয়ে ফেলেছে।
~ সত্যিই বলেছিস।
.
নিধি শুনেও না শুনার ভান করল।
- আচ্ছা তুই কি জানিস ছেলেদের জিন্স প্যান্টের দাম কেন বেড়েছে?
~ কেন?
- কিছু মেয়ে জিন্স পড়া শুরু করেছে তো তাই দাম বেড়েছে।
~ সর্বনাশ! তাহলে তো কিছুদিন পর শার্টের দামও বেড়ে যাবে।
- সবই কপাল বুঝলি? এই মডার্ন মেয়েদের জন্য আমাদের বাজেটে হামলা হচ্ছে।
.
নিধিও শুরু করল।
> জানিস প্রিয়া, চুড়ির দাম খুব বেড়ে গেছে। কারণ কিছু বজ্জাত ছেলে চুড়ি পড়া শুরু করেছে। কিছু কিছু ইতর আছে যারা কানে দুল, গলায় চেইনও পড়ে। এদের জন্য আমাদের জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আল্লাহ জানে কবে যেন শাড়িও পড়া শুরু করে দেয়।
.
কথাগুলো বলে নিধিরা হাসাহাসি করছে। আবিদ কিছু বলতে যাবে তখনই প্রফেসরের আগমন ঘটল। তাই চলে গেল।
.
~ দোস্ত মেয়েটা তো মুস্তাফিজের মত কাটার মেরে তোকে বোল্ড করে দিল।
- অপেক্ষা কর। আমি মেয়েটার এসব মডার্ন ড্রেস পড়া বন্ধ করে দিব।
~ তুই কি দেশের সরকার যে মডার্ন ড্রেসের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করবি?
- যাস্ট ওয়েট এন্ড সি। আমি ওর চালচলন সব বদলিয়ে দিব।
~ পারবি নারে ভাই। কোটিপতি বাবার দুলালী। এসব মেয়ে বড্ড জেদি হয়।
- পৃথিবীতে একটা অস্ত্র আছে। যার পরশে পাথরও মূহুর্তের মধ্যে গলে যায়।
~ রাসায়নিক বোমা?
- আরে ধুর বেটা। ওসব না। সেটা হচ্ছে ভালবাসা।
~ তোর জন্য পাবনায় সিট বুকিং করাব?
- হ্যাঁ করা। কারণ কিছুদিন পর মেয়েটা আমার প্রেমে পাগল হবে।
~ হইছে চাপাবাজি বন্ধ করে ক্লাসে চল।
- সময় আসলেই বুঝবি।
.
দুজনে ক্লাসে চলে গেল। আবিদ নিধিকে সব জায়গায় ফলো করতে লাগল। প্রথম প্রথমে নিধি না বুঝলেও পরে বুঝতে পারে।
.
আরও কিছুদিন যাওয়ার পর নিধি ঘুরতে বের হলে আবিদও সেখানে বন্ধুদের নিয়ে হাজির হয়ে যায়।
.
> আপনি আমাকে সব জায়গায় ফলো করছেন কেন?
- এটা তোমার ভুল ধারণা। আসলে আমাদের সবকিছুর টাইমিং মিলে যাচ্ছে। তাই একে অপরের সাথে বারবার দেখা হচ্ছে।
> ও আচ্ছা। তো আপনি আমাকে লাইন মারছেন?
- এবারও ভুল। আমি লাইন মারছি না। আমি ভালবাসছি।
.
ঠাস।
.
আবিদ গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রইল।
.
> কি ভেবেছিস! আমি তোর মত ছেলের প্রেমে পড়ব? দুদিন ফলো করলেই গলে যাব? আর কখনো যদি আমার আশেপাশেও দেখি তবে ইভটিজিংয়ের কেইসে পুলিশে ধরিয়ে দিব।
.
নিধি চলে গেল। আবিদের বন্ধুরাও আবিদকে নিয়ে চলে গেল।
.
পরেরদিন কলেজে,
আবিদের এক বন্ধু সিড়ির দিকে নজর রাখছে কখন নিধি আসবে। এই তো নিধি চলে এসেছে। দৌড়ে যেয়ে আবিদকে বলল। নিধি সিড়ি দিয়ে উঠেই আবিদ ও তার বন্ধুর কথাবার্তা শুনতে পেল। আসলে নিধিকে শুনানোর জন্যই এই নাটক।
.
~ দোস্ত গতকাল নিধি তোকে থাপ্পড় মারল আর তুই কিছুই বললি না?
- ও তো জানে না আমি ওকে কতটা ভালবাসি। তাছাড়া ভালবাসার মানুষটি হাতে মার খাওয়ার মজাই আলাদা।
~ তুই বেটা পাগল হয়ে গেছিস।
- হ্যা রে। আমি নিধির প্রেমে পাগল হয়ে গেছি।
.
সেদিনের পর থেকে কিছুদিন ধরে নিধি কলেজে আসেনি। তারপর যেদিন আসলো আবিদ সবার আগে যেয়ে নিধির সামনে উপস্থিত
- কি হইছে তোমার? এতদিন আসনি কেন?
.
নিধি এক দৃষ্টিতে আবিদের দিকে তাকিয়ে আছে।
- কি হল বল!
> অসুস্থ ছিলাম।
- মিথ্যা বল কেন? আমি খবর নিয়েছি তোমার কোনো অসুখ হয়নি।
> আপনি কিভাবে জানলেন?
- স্পেশাল মানুষের সব খবরই রাখি।
.
নিধি কিছু না বলে চলে গেল।
.
একদিন, রাত ১২টার সময় আবিদ নিধিকে কল করল।
> হ্যালো কে বলছেন?
- আমি।
> আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?
- ইচ্ছে থাকিলে উপায় হয়।
> কি জন্য ফোন করেছেন?
- হ্যাপি বার্থডে
.
নিধি তো আকাশ থেকে পড়ল।
> আপনি কিভাবে জানলেন?
- যাকে ভালবাসি। তার সব খবরই রাখি।
> দেখুন আমি এসব শুনে গলবো না।
- তুমি বাসিও না। আমি একাই ভালবেসে যাব।
> আমি রাখছি।
- তোমার জন্মদিন উপলক্ষে আগামীকাল কলেজের পিছনের নদীর পাড়ে একটা সারপ্রাইজ নিয়ে অপেক্ষা করব।
> আমি আসব না। বাই।
.
নিধি ফোন কেটে দিল। যথারীতি সকালে উঠে কলেজে গেল। আবিদের সাথে কয়েকবার দেখাও হয়েছে। ছুটির পর আবিদ ছোট করে বলল তোমার অপেক্ষায় থাকব। নিধি জবাব না দিয়ে চল গেল। বিকালে নিধি তার বান্ধবীদের সাথে বার্থডে ট্রিট দিতে বের হল। কিন্তু মনটা কেন যেন বারবার নদীর পাড়ের কথা ভাবছে। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হল। সন্ধ্যার পর বৃষ্টি থামল। নিধিও তার বাসায় ফিরে এল। পরেরদিন কলেজে গেল। কিন্তু আজ আবিদকে কোথাও দেখছে না। বেশ কিছুদিন হয়ে গেল আবিদ কলেজে আসছে না। অবচেতন মন আবিদের খবর নেয়ার জন্য আবিদের বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারল বৃষ্টিতে ভিজার কারণে আবিদেরজ্বর এসেছে। তাই কলেজে আসতে পারেনি।
.
নদীর পাড়ে।
- তুমি এখানে!
ঠাস।
> এত ভালবাস কেন?
- জানি না।
> যদি তোমার কিছু হয়ে যেত?
- ভালবাসার জন্য জীবন দিতেও রাজি।
> আর কক্ষনো এসব বলবা না। তোমার কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাচবো? (কেদে কেদে)
- কেন? আমার বাচা মরার সাথে তোমার সম্পর্ক কি?
> ন্যাকামী কর?
- একটু একটু করি।
.
নিধি আবিদকে জড়িয়ে ধরল।
> আর কখনো বৃষ্টিতে ভিজবা না।
- তোমার সাথে কোনো এক পশলা বৃষ্টিতে ভিজার ইচ্ছে আছে।
> নাহ। আর কখনোই না।
.
আবিদ ডায়েরি লিখে না। তবে নিধিকে উদ্দেশ্য করে একটা ডায়েরি লিখা শুরু করেছে। একদিন ক্লাসে বসে আবিদ ডায়েরিটা বের করে দু চার লাইন লিখে আবার ভেতরে রেখে দিল। নিধি ডায়েরিটা দেখে ফেলল। আসলে এটা আবিদরই প্ল্যান। পরে নিধি ডায়েরিটা চুপ করে নিয়ে নিল। আপন মানুষের ডায়েরি পড়ার মজাই আলাদা।
.
নিধি দেখল পুরো ডায়েরি জুড়ে শুধুই তার নাম। হঠাৎ একটা পৃষ্ঠার নিধির চোখ আটকে পড়ল।
.
জানো টুইটি বার্ড (আবিদ নিধিকে টুইটি বার্ড বলেই ডাকে) তোমাকে জিন্স শার্টে দেখলে আমার কলিজায় আঘাত পড়ে। কিন্তু তোমার সুখের জন্য কিছু বলতে পারি না। বড্ড ইচ্ছে করে তোমায় সেলোয়ার কামিজে দেখতে। চোখে কাজল, হাতে রেশমি চুড়ি, পড়নে সুন্দর ম্যাচিং করা একটি সেলোয়ার কামিজ শুধু এইটুকুই। জানি না কবে এই আশাটুকু পূরণ হবে।
.
পরেরদিন সকালে নিধি ডায়েরির বিবরণ অনুযায়ী সেজে কলেজের এলো। কলেজে এসেই আবিদকে খুজা শুরু করল। কলেজের সবাই নিধির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিধি কিছুটা বিরক্তবোধ করল। পরিশেষে আবিদকে খুজে পেল। নিধি আবিদের দিকে এগিয়ে আসছে।
.
নিধি আবিদের সামনে এল। আবিদ হা করে তাকিয়ে আছে।
> এই মুখ বন্ধ কর মশা ঢুকবে তো।
- ইয়ে মানে…… আজ হঠাৎ এই বেশভূষায়?
> কেউ একজন আছে যে নিজের সবকিছু ডায়রিকে বলে।
- তুমি আমার ডায়েরি পড়েছ? (না বুঝার ভাব)
.
নিধি আবিদের কলার ধরে বলল
> দেখ, আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড। সুতরাং যা বলার আমাকেই বলবা। ডায়রিকে বললে খবর আছে।
- বাপরে ডেইঞ্জারাস রূপ। আজ তোমাকে ভয়ংকর সুন্দরী লাগছে।
> হয়েছে আর পাম দিতে হবে না। চল এবার ক্লাসে চল।
- একটা আবদার রাখবে?
> আমি না রাখলে কে রাখবে শুনি? কি আবদার সেটা বল।
- সবসময় এই বেশভূষায় থাকবে?
> তোমার ভাল লাগে বুঝি?
- ভীষণ ভাল লাগে।
> ঠিক আছে থাকব।
.
মূহুর্তেই পরিবর্তন হয়ে গেল নিধি। যে মেয়ে জিন্স টপ ছাড়া কিছু পড়ত না। সেই মেয়ে এখন সেলোয়ার কামিজ পড়ে। এদিকে সুযোগ বুঝে আবিদ নিধিকে নদীর পার্কে ডাকল।
.
> কেমন আছ বাবুই?
- ভাল। তোমাকে একটা কথা বলার জন্য ডেকেছি।
> হুম। বল।
- দেখ নিধি আমি আসলে তোমার সাথে রিলেশন করেছি যাতে তোমার পোষাক. পরিবর্তন করাতে পারি।
> মানে?
- মানে হল আমি তোমার বেশভূষা পরিবর্তনের জন্য এসব করেছি।
> তুমি আমাকে ভালবাস না?
- বাসি বাসি। তবে শুরুতে যা দেখেছ সে সব ছিল নাটক। আমি সেদিন বৃষ্টিতে ভিজি নাই। জ্বরও আসেনি। রাহাত তোমাকে মিথ্যা বলেছিল।
> তারমানে তুমি আমার সাথে নাটক করেছ?
- হ্যা। তবে সেটা ছিল শুরুতে। এখন আমি তোমাকে ছাড়া কিছু বুঝি না।
.
নিধি কাদতে শুরু করল।
- এই প্লিজ কেদো না। আমি সত্যিই এখন তোমাকে ভালবাসি। ভীষণ ভালবাসি।
> আমি তোমাকে বিশ্বাস করব কিভাবে? দুদিন পর যদি আবার অন্য একটা গল্প বল তখন?
- তুমি যা বলবে আমি তাই করব। তাহলে তো বিশ্বাস হবে?
> কানে ধরে ২০০ বার উঠবস কর।
.
আবিদ কথা না বাড়িয়ে উঠবস শুরু করল। ভেবেছে কিছুক্ষণ পর নিধি থামিয়ে দিবে। কিন্তু নাহ। উল্টা নিধি গুনে যাচ্ছে। এভাবে ৫০ পর্যন্ত হল। নিধি দেখল আবিদের চোখমুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। নিধি যেয়ে আবিদকে জড়িয়ে ধরল।
.
> হয়েছে আর করতে হবে না।
- আর শক্তিও ছিল না। এখনই পড়ে যেতাম।
> হিহিহি
- কত কিউট হাসি।
> চল কলেজে চল।
.
অতঃপর চলতে লাগল দুজন।
.
ভালবাসা সব পারে। :-D
.
লিখাঃ নিশি চৌধুরী (রাত্রির আম্মু)
©somewhere in net ltd.