![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষ।
গল্পের নামঃ গল্পের গল্প
.
:- এই রাফি একটা গল্প শুনবি?
>> আপু আমি এখন পড়তেছি। ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।
:- ওলে বাবা আমার ভাইটা আজ পড়তে পড়তে বই তামা তামা বানিয়ে ফেলবে।
>> হ্যাঁ বানিয়ে ফেলব।
বইটা কেড়ে নিলাম।
:- আগে গল্পটা শুন। তারপর পড়িস।
>> যেয়ে তোর ফেসবুকে ছড়িয়ে দে। আর আমাকে ছেড়ে দে।
:- চুপ।
.
অতঃপর নিরুপায় হয়ে চুপচাপ শুনতে লাগল।
.
গল্প শুরু…………
> কিরে সুমী শুনলাম তুই নাকি জাহেদ স্যারের কাছে আর পড়বি না। (প্রিয়া)
~ হ্যারে।
> পাগল নাকি? সামনে পরীক্ষা। আর জাহেদ স্যারের মত স্যার এই এলাকায় আরেকটা নাই।
~ জানি। তবুও আমি বাধ্য।
> কিসের বাধ্য?
~ স্যারের কাছে আসার পথে কিছু ছেলে প্রতিদিন বিরক্ত করে। দিনদিন ওদের সাহস আরও বেড়েই চলছে। গতকাল তো পথও আটকিয়েছিল। এভাবে চলতে থাকলে সেই দিন বেশি দূরে নেই যেদিন ওড়না ধরেও টান দিবে।
.
প্রিয়া ভাবলো আসলেই তো। কিন্তু এই ভয়ের জন্য পড়ালেখায় আঘাত হবে কেন? স্বাধীন ভাবে পড়ালেখাও কি করার অধিকার নেই আমাদের?
.
> আচ্ছা শুন তুই প্রাইভেট ছাড়িস না। আগামীকাল থেকে আমরা তোকে এগিয়ে দিয়ে আসব।
~ নেকড়ে জানোয়ার-শুয়োরের কাছে হরিণ কিংবা হরিণের দলও কিছু না। হরিণের দল আসলে তাদের জন্য আরও ভাল হয়।
.
প্রিয়া ভাবলো তাও ঠিক। তারা সবাই মিলেও বা কি করতে পারবে? বখাটেগুলোর সাথে কিছু হলে সমাজ বলবে মেয়ে হয়ে ছেলেদের সাথে ঝগড়া করতে এসেছ কেন? কি ঝগড়াটে মেয়ে রে বাবা। এদের বাবা মা কি এটাই শিক্ষা দিয়েছে? ব্লা ব্লা ব্লা এসব বলবে সমাজ। কিন্তু কেউ বখাটেগুলো সম্পর্কে একটা শব্দ বলবে না। কেউ বলবে না তারা কেব মেয়েদেরকে টিজ করে? তাদের বাবা মা কি এটাই শিখিয়েছে?
.
প্রিয়া সুমীকে বলল
> আচ্ছা তুই তো তোর মাকে সাথে আনতে পারিস। আন্টিকে বলবি তোর সাথে আসা যাওয়া করতে।
~ মাকে আমি ইচ্ছে করেই আনি না। মা সাথে আসলে আমার ভয় আরও বেশি করে। পত্রিকায় খবর দেখিস না শুয়োরের দল মাকে মেয়ে কাউকেই ছাড়ে না। তাদের কাছে বাচ্চা বুড়ো এসব কিছুই না। শুধু খেতে পারলেই হল।
> কি যে বলি ভেবেই পাচ্ছি না। দিনদিন পরিস্থিতি এত জঘন্য হবে তা ভাবতেও পারিনি।
~ হুম। আগে সাথে মা কিংবা বড় বোন থাকলে মনে সাহস পেতাম। কিন্তু এখন ভয় পাই। তাদের সাথেই না যেন উল্টাপাল্টা কিছু হয়ে যায় এই ভয়েই সারা রাস্তা পার করতে হয়।
.
প্রিয়া নির্বাক হয়ে গেল। সমাজ আমাদের স্বাধীন ভাবে এক কদম ফেলতেও বাধা দিচ্ছে। ছুটি শেষে সুমী স্যারকে বেতন দিয়ে বলল স্যার আমি আর পড়ব না। কারম জানতে চাইলে স্যারকে বলল বাসায় টিচার রেখেছে। অতঃপর বের হয়ে সুমী বাসায় উদ্দেশ্যে হাটতে লাগল। প্রিয়া সুমীর পিছু পিছু গেল। একটু পরেই সেই শুয়োরদের সামনে দিয়ে তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে যেতে লাগল সুমী। আর মনে মনে ভাবতে লাগল আজই এর শেষ। এই পথে আর আসতে হবে না। নরপিশাচ গুলো অনেক ভাবেই উত্ত্যক্ত করল। সব সহ্য করে সুমী তাড়াতাড়ি হেটে নরপিশাচদের থেকে দূরে চলে গেল। তারপর যেন একটা মুক্ত শ্বাস নিল। অতঃপর বাসায় চলে গেল। সুমী কিছুটা দূর থেকে সবই দেখল।
.
পরেরদিন স্কুলে
:- এই সুমী? (রুমি)
~ বল।
:- তুই তো জাহেদ স্যারের বাসা চিনিস তাই না?
~ হুম। চিনি।
:- আমি আজ থেকে স্যারের কাছে ভর্তি হব। তুই আমাকে আজকে স্যারের বাসাটা চিনিয়ে দিস।
.
নিরুপায় হয়ে হ্যাঁ বলল সুমী। রুমি ও সুমীর বাসার মধ্যে দূরত্ব অনেক। তবুও দরকার তাই বিকালে রুমিই সুমীর বাসায় চলে এলো। তারপর এক সাথে জাহেদ স্যারের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। সুমী মনে মনে আল্লাহর কাছ্ব শুকরিয়া আদায় করল। কারণ আজ নেকড়ে শেয়াল গুলো নেই।
.
প্রাইভেটে সুমীকে দেখে প্রিয়া বলল
> কিরে তুই?
~ রুমিকে বাসা চিনিয়ে দিতে আসলাম। স্যার দেখে বলল যেহেতু এসেছি তাই আজকের ক্লাসটা যেন করে যাই।
> ভালই।
.
সাধারণত সন্ধ্যা হয় ৫:৩০টার মধ্যেই। তাই জাহেদ স্যার প্রাইভেটে শেষ করে বিকাল ৪:৪৫ / ০৫:০০ এর মধ্যেই। কিন্তু সামনে পরীক্ষা হওয়ায় সবাই নানান অসুবিধা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে করতে ছুটি সন্ধ্যার সময় হল।
.
সুমী রুমি এক সাথে হাটতে লাগল। রুমি সামনে যেয়ে রিক্সায় উঠে যাবে। কিছুক্ষণ হাটার পর সেই নরপিশাচদের সামনে দিয়ে যেতে লাগল। এই সময় এই রাস্তা দিয়ে মানুষের যাতায়াত কম। তাই ছেলেগুলো সুযোগ পেয়ে সুমীদের পথ আটকে দাড়ালো এবং নানান কথা বলতে লাগল। সুমী কিছুটা দৌড় দিয়ে চলে গেল। কিন্তু রুমি এক পাও সামনে দিল না। সোজা হয়ে দাড়িয়ে রইল।
.
কিছুটা সামনে যেয়ে সুমী দেখল রুমি তার সাথে নেই। পিছু ফিরে দেখল রুমি নেকড়েদের ভীড়ে দাড়িয়ে আছে। এটা নয় যে ওরা ধরে রেখেছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে রুমি নিজ ইচ্ছাতেই দাড়িয়ে আছে। কিন্তু কেন তা নিয়েই সুমীর চিন্তা। সেখানে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না সুমীর। তবে সুমী যেখানে দাড়িয়ে আছে সেখান থেকে কথাবার্তা স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে।
.
নরপিশাচদের একজন বলে রুমি উঠলো
= কি আপু যাবা নাকি আমাদের সাথে?
-- আপুর মনে হয় কিছু লাগবে। চল আপু সাইডে যাই।
--- আপু আমরা বেশি না মাত্র ৫জন।
.
রুমি কাদতে লাগল।
-- আরে থাক কাদতে হবে না। একজনই যথেষ্ট। তবুও কেদো না সুন্দরী?
রুমির কান্না বাড়তে লাগল।
.
ছেলেগুলো নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলতে লাগল।
-- কি বলিস নিয়ে যাব?
--- আরে বেটা দেখছিস না কান্না করতেছে। তবে মামা মা* এক ****
-- দেখ ওর বান্ধবী চলে গেছে। কিন্তু ও দাড়িয়ে আছে। তারমানে সিগনাল গ্রিন। মাইয়া রাজি। যাস্ট ভয় পাইতেছে।
--- মামা তাড়াতাড়ি ওখানে(ঝোপঝাড়) নিয়ে চল। তারপর ……………
.
একটা ছেলে এসে রুমির হাত ধরল। রুমি ঠাস করে থাপ্পড় মেরে বসে পড়ে কাদতে লাগল। বাকিরা অবাক হয়ে গেল। এসব দেখে সুমীও এলো। এবার নরপশু গুলো একটু ঘাবড়ে গেল। রুমি চিতকার করে কাদতে লাগল। একটা ছেলে এগিয়ে এসে কাপা হাতে রুমির মুখের উপর মোবাইলের আলো মারল। তারপর ছেলেটিও ধুম করে পড়ে গেল। নরপশুগুলো সেই ছেলেটিকে ধরলো।
.
-- কিরে দোস্ত কি হইছে?
= (চুপ)
--- ধুর বেটা মজার সময় তোর আবার কি হইল?
= চুপ কর ভাই। ও আমার বোন।
কথাটি বলে ছেলেটি অঝোর বেগে কান্না শুরু করল। সুমী ও বাকিরা নিস্তব্ধ হয়ে গেল। সুমী রুমিকে কাধে ভর করে তুললো।
> কান্নার কিছু নেই ভাইয়া। আপনারা ৫ জন। মজাই হবে।
.
কথাটা শুনে ছেলে প্লিজ থামুন বলে কান চেপে ধরে কান্না করতে লাগল।
> এবার বুঝলেন টিজ কতটা কষ্টের? এবার থেকে টিজ করার আগে এই ঘটনাটি একবার মনে করিয়েন।
.
সুমী রুমিকে নিয়ে চলে গেল। এরপর কি হবে তা জানা নেই। হয়তো ছেলেটি আত্মহত্যা করবে। মেয়েটিও করতে পারে। বেঁচে থাকলেও ভাইবোন দুটা আগেরমত একে অন্যের সাথে হাসিখুশি ভাবে কথা বলতে পারবে না। বেঁচে থাকবে জিন্দা লাশ হয়ে তারা।
.
গল্প শেষ। রাফি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
:- কেমন হল গল্পটা?
রাফি কিছু না বলে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে কাদতে লাগল।
:- কি হল?
>> আপু বিশ্বাস কর। আমি কিছু করিনি। আমি যাস্ট ওদের সাথে তখন দেখা করতে গিয়েছিলাম। সে সময় এসব ঘটেছে। আমি ওদেরকে বকাও দিয়েছি।
:-হুম বুঝলাম। আচ্ছা তুই পড়। আমি যাই। কাজ আছে।
>> না। তোর কোলে মাথা রাখতে ইচ্ছে করছে।
:- তাহলে বই তামা তামা করবে কে?
>> পরে করব।
কি আর করা! ভাইয়ের আবদার মানতেই হল।
.
মূল ঘটনাটি হল আজকে মেজ ভাইটাকে দেখলাম কিছু অসভ্যদের সাথে দাড়িয়ে ছিল। অসভ্যগুলো কোচিং সেন্টারের সামনে দাড়িয়ে থাকে। আর মেয়েদেরকে ইভটিজিং করে। আজকে তাদের সাথে আমার ভাইকেও দেখেছিলাম। যদিও ও কোনো মেয়েকে কিছু বলেনি। তবুও কষ্ট লেগেছে। কথায় আছে, "সত্ সঙ্গে স্বর্গবাস অসত্ সঙ্গে সর্বনাশ।" আজ না হয় দাড়িয়ে ছিল কিন্তু আগামীকাল যে তাদের সাথে তাল মিলাবে না তার গ্যারান্টি কি? তাই অনেক ভেবেচিন্তে এই কাজটা করলাম। অর্থাৎ গল্পটা ওকে শুনালাম। ও অনেক কেদেছে। আমারও কান্না পেয়েছিল খুব। তবুও আশাকরি ভাইটা এখন আর বিপথগামী হবে না।
.
হে আল্লাহ আমার ভাইকে সঠিক পথে রেখো। (আমিন)
.
পরিশেষে এটাই বলল
ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়া মেয়েরা প্রতিদিন তিল তিল করে মরে। ইভটিজিং করার আগে একবার ভাবুন আপনার ঘরেও মা বোন আছে।
.
Before you harass a female, just remember………
She's someone's sister.
She's someone's mother.
.
বিঃদ্রঃ শেষ অংশটি একটি ইন্ডিয়ান ভিডিও এর সাথে মিল আছে।
.
লিখাঃ Nishi Chowdhuri (রাত্রির আম্মু)
©somewhere in net ltd.