নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিনোদন ও জাগরণের চেষ্টা। হরর, থ্রিলার, রম্য এই জাতীয় কিছু লেখার চেষ্টায় আছি। (০২/০২/১৭)

Nishi Chowdhuri

আমি মানুষ।

Nishi Chowdhuri › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পেত নামঃ নামটা জানা নেই।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:০০

গল্পের নামঃ জানা নেই। :-(
.
~ কই যাচ্ছিস ভাইয়া?
- দুচোখ যেদিকে যায়।
~ আগামীকাল থেকে তো বিজয়ের মাস।
- তাই তো শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।
.
আলেয়া শাড়ির আচল দিয়ে নিজের কান্নাময় মুখটি চেপে ধরলেন। লোকটি নাম আলী হোসেন। একজন দিনমজুর।
.
ঘর থেকে নেমে আলী সেই পরিচিত পথে হেটে যাচ্ছে। পথটি তার ৪৫ বছরের পরিচিত। ৪৫ বছর ধরে এই পথ দিয়ে তার মাঝেমাঝে যাওয়া আসা হয়। তবে কিছু দিবস আছে যা নির্ধারিত। এসব দিবসে সে অবশ্যই এই পথে আসে।
.
হুম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটতে হাটতে চলে এলো গন্তব্যে।
- কেমন আছিস ভাই? আশাকরি ভালই আছিস। অনন্ত এখানের পরিবেশ থেকে ওখানের পরিবেশ অনেক ভাল। এতদিনে নিশ্চয়ই তোর ব্যাথা গুলো সেরে গেছে। রাগ করে আছিস? কি করব বল! কাজের চাপে প্রতিদিন আসতে পারি না। ছুটির দিনগুলোতে আসি। তোদের না দেখলে যে আমার মনটাও আনচান করে।
.
- কেমন আছিস মা? জানি তুই আরও ভীষণ রেগে আছিস। এই অসহায় বাবা তোর জন্য কিছুই করতে পারেনি। কি করব বল? জানিস তোকে এক মুহূর্তে জন্যও ভুলতে পারিনি। আমার প্রতিটি কদমে তোকে মনে পড়ে। এই অসহায় বাবাকে ক্ষমা করে দিস।
.
- কেমন আছ বাবা মা? জানি তোমরা ভাল নেই। এসব দেখে কে-ই-বা ভাল থাকতে পারে! কিন্তু কি করব বল? একার পক্ষে যতটুকু করার ততটুকুই করেছি। জানো বাবা তোমাদের দেখা স্বপ্ন আজও স্বপ্নই থেকে গেছে। বাস্তব হবে কিনা তা জানা নেই।
.
আচ্ছা যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। আলী চুপ করে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলো। তারপর বাবা মায়ের কবরের পাশ থেকে এক মুঠো মাটি নিয়ে মাথায় লাগিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যেতে লাগল। একটু সামনে যেয়ে পিছনে একবার তাকিয়ে বলল সবাই ভালো থেকো। হয়তো আর আসা হবে না। আলীর চোখ বেয়ে নোনা জল বেরিয়ে আসলো।
.
হুম আলী এতক্ষণ তার পরিবারের কবরের সাথে কথা বলছিল। যদিও সেই কবরের উপর আরও কবর আছে। তবুও আলী এখানে এসে নিজের মনের কথা ব্যক্ত করে। এতে সে বুকে শান্তি পায়।
.
আলী একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার বাবাও মুক্তিযোদ্ধা। বাবার মৃত্যু নিজের চোখের সামনে হতে দেখেছে। তখন আলীর বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। মুক্তিবাহিনীর গুপ্তচর হিসেবে কাজ করত। আলীর বাবা মরার সময় আলী বলেছিল
- বাপজান তোমার খুব কষ্টে হচ্ছে?
= নারে বাজান কষ্ট না, শান্তি লাগতেছে। আমি এক সোনার বাংলাদেশ দেখতেছি। কষ্ট লাগতেছে এই জন্য যে নিজের চোখে সেই বাংলাদেশ দেখতে পারলাম না। বাবা একটা কথা মনে রাখবি এই দেশ আমাদের। এই দেশের মানুষ আমাদের। যতটুকু পারবি দেশের জন্য করবি।
.
মরার আগে আলীর বাবা নিজের সন্তানদের কথা না বলে দেশের কথা বলেছিলেন।
.
আলীর ভাই রহমত। সে আজ কবর বাসী। কিছু বছর আগে রাজনীতির নোংরা খেলায় বলির পাঠা হয়েছিল। লাশ দেখেই বুঝা গিয়েছিল প্রচন্ড মারধর করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ জানিয়েছিল ক্রসফায়ারে মারা গেছে। শেষ গোসল করানোর সময় আলী দেখেছিল গুলির চিহ্ন পিঠ পিছনে। সবাই জানত আসল ঘটনা কি! কিন্তু কিছুই করার ছিল। আমাদের আইন ব্যবস্থা ধনীদের পক্ষে।
.
আলীর একমাত্র মেয়ে ফারজানা। সেও আজ কবর বাসী। কিছু মাস আগে কিছু নরপশুদের লোভ লালসার শিকার হয়ে প্রাণ দিতে হয়েছিল তাকে। আলী সেখানেই ছিল। নিজের এক মাত্র মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু সেই নরপশুদের সাথে পেরে উঠেনি। নরপশু গুলো আলীর পা ভেংগে দিয়েছিল। আশেপাশের মানুষ হয়তো লুকিয়ে গেছিল, নয়তো ভিডিও করতে ব্যস্ত ছিল। মেয়ের সেই আর্তনাদ আজও আলীকে ঘুমাতে দেয় না। ঘুমাতে দেয় না মানুষের সেই দৃশ্যগুলো।
.
মাঝেমাঝে আলী তার বাবার শেষ কথা মনে করে বলে, বাবা তুমি যদি বেঁচে থাকতে তবে এসব দেখে লজ্জায়, কষ্টে, ঘৃণায় মরে যেতে।
.
আলী বাসায় ফিরে এলো। সকালে ঘুম ভাংলো পুলিশের লাঠির বাড়িতে। আলীকে ধরে নিয়ে গেল পুলিশ। অপরাধ - ৭ খুন। খুন নয় নরপশুদের এই পবিত্র মাটি থেকে উপড়ে ফেলেছে আলী। কিন্তু আইনী ও সমাজের চোখে এটা খুন। আলী একজন খুনী। বিভত্স খুনী।
.
লিখাঃ নিশি চৌধুরী (রাত্রির আম্মু)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.