![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষ।
গল্পের নামঃ ভাগ্যের খেলা
.
গল্পের শুরুতে কিছু কথা বলে দিচ্ছি। আমাদের আকার আকৃতি একেক জনের একেক রকম। কেউ বয়সের তুলনায় দেখতে বড় আবার কেউ ছোট। এটার কারণ কি জানেন? বংশগত? হুম তবে সম্পূর্ণ না।। এটার আরেকটা কারণ হচ্ছে হরমন। আমাদের আকার আকৃতির পিছনের বংশের ভূমিকা আছে। তবে হরমনের ভূমিকাও আছে। আপনার বংশের সবাই ফর্সা। কিন্তু দেখিয়েন দু চারজন ভিন্নও আছে। বংশের সবাই লম্বা কিন্তু দু চারজন ব্যতিক্রমও আছে। এসবের কারণ হল হরমন।
.
এবার গল্পে আসি।
.
নাঈমা ও রাজ। একে অপরকে ভীষণ ভালবাসে। ক্লাস এইট থেকেই ভালবাসার চ্যাপ্টার শুরু হয়েছিল। ক্লাসের মধ্যে দু চারটা কাপল ছিল্ব তারমধ্যে নাঈমা ও রাজের জুটি সবচেয়ে কিউট ছিল। দুজনই দেখতে কিউটের ডিব্বা।
.
নাঈমা সারাদিন রাজকে শাসনের উপর রাখত। এইটা শিখ নায় কেন? ওটা কর নায় কেন? আজ স্যারের ক্লাসে পড়া পার নায় কেন? নাঈমার শাসনের ফলে রাজ অকর্মা স্টুডেন্ট থেকে ভাল স্টুডেন্ট হয়ে গেল।
.
বেশ ভালমতই কাটল তাদের স্কুল জীবন। রোমান্স কম পড়াশুনা বেশি। দুজন দেখা করলেও নাঈমা নানান প্রশ্ন করত। এইটা বল তো? ওইটা বল তো?
.
কলেজ লাইফে এসে তাদের রোমান্স চ্যাপ্টার শুরু হল। এখন দেখা করলে আলাপ আলোচনা বেশি করে। কিন্তু তাদের ভালবাসা বেশিদিন টিকলো না। হরমনের কারণে। নাঈমা ও রাজ কলেজে উঠলেও তাদেরকে দেখে মনে হয় না যে তারা কলেজে পড়ে। মনে হয় ক্লাস এইটের স্টুডেন্ট। অর্থ্যাৎ তারা দুজনই দেখতে পিচ্চি। কলেজে উঠার কিছুদিন পর নাঈমা শারীরিকভাবে বৃদ্ধি হতে থাকে। কিন্তু রাজ আগেরমতই। যার ফলে দিনদিন দুজনকে দেখতে বেমানান. লাগে।
.
কলেজ শুরুর পর থেকে যে কাপলটা কলেজের বেস্ট কিউট কাপল ছিল। আজ সেই কাপলকে দেখলে সবাউ হাসে। বন্ধু মহলে হাসাহাসি হয়। সবাই বলে ছোট ছেলে বড় আপুর সাথে প্রেম করে।
.
এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর একদিন নাঈমা রাজকে বলল
> তোমার কি মনে হয় না আমাদের সম্পর্কটা আগেরমত নেই?
- ইয়ে মানে?
> দেখ সোজা কথা হচ্ছে আমাদেরকে এখন আর মানাচ্ছে না।
- দেখ ………
> দেখতে হবে না। জানি কষ্ট হবে। তবুও আমাদের ভবিষ্যতের জন্য বলছি আমাদের ব্রেকআপ করে ফেলা উচিত।
.
দীর্ঘদিনের ভালবাসায় ব্রেকআপ শব্দটা শুনলেই কান্না আসে। কিন্তু রাজের চোখে কান্নার ভাবটাও নেই। আসলে প্রকৃতি মানুষকে শক্ত করে দেয়। চোখের পানি চিরদিনের জন্য মুছে দেয়।
.
> যদি এখনো এক সাথে থাকি। তবে ভবিষ্যতে দেখা যাবে তুমি নিজেই ডিপ্রেসড হয়ে সম্পর্ক ছিন্ন করবা। নয়তো ভিতরে ভিতরেই তিলতিল করে নিজেকে শেষ করে দিবা। তাই আমি আজই এই সম্পর্ক ছিন্ন করলাম।
.
নাঈমা কথা গুলো বলে চলে গেল। হয়ে গেল ব্রেকআপ। মুখের ব্রেকআপ। লোকচক্ষুর জন্য ব্রেকআপ। কিন্তু মনের ব্রেকআপ হয়নি। ব্রেকআপের পর নাঈমার কাছে অনেক ভাল ভাল প্রপোজ এসেছে। কিন্তু নাঈমা না করে দিয়েছে। অন্যদিকে রাজ শহর ছেড়ে অন্য শহরে চলে গেছে। রাজও চাইলে দু একটা প্রেম করতে পারে কিন্তু করেনি। দুজন দুজনকে মন থেকে ভুলতে পারেনি।
.
৭ বছর পর
ঈদে, শপিং মার্কেটে রাজ ও নাঈমার দেখা হয়ে গেল। দুজনই দুজনকে লক্ষ্য করেছে। কিন্তু কথার বলার সাহস রাজের হয়নি। কিন্তু নাঈমা বলেছে।
> কিরে তুমি এখানে?
- আরে নাঈমা তুমি! (ভান)
> এই হল আমার স্বামী। সরোয়ার। আর এ হল চোখের মনি নিম্মি।
- হাই! (হাত মিলালো) এই হল আমার স্ত্রী প্রিয়া।
> হাই। (হাত মিলালো)
.
দুটি পরিবার বেশ কিছুক্ষণ আলাপ আলোচনা করতে লাগল। নাঈমা সরোয়ারকে বলল,
> তোমরা গল্প কর আমরা (রাজের স্ত্রী) একটু শপিং করে আসি।
= তাড়াতাড়ি এসো।
রাজও তার স্ত্রীকে যাওয়ার জন্য ইশারায় হ্যাঁ বলল।
.
নাঈমা ও প্রিয়া শপিং করতে লাগল।
~ আপনার সাথে আমার কিছু ইম্পোটেন্ট কথা আছে।
> জ্বি বলুন।
~ একটু নিরিবিলি হলে ভাল হয়।
.
অতঃপর দুজনে একটা ফাস্টফুডের দোকানে বসল।
~ আপনি আর রাজ একে অপরকে ভালবাসতেন তাই না?
> ইয়ে মানে ……
~ দেখুন আপনার কথা জানি না বাট রাজ এখনো আপনাকে ভুলতে পারেনি। বিয়ে হয়েছে বছরখানেক হল কিন্তু রাজের মনে এখনো জায়গা করতে পারিনি।
> দেখুন ভাল আমি বাসতাম। কিন্তু এখন আমার পরিবার আছে। তারাই আমার সবকিছু।
~ এই কথাটা রাজ তী বুঝতে চাচ্ছে না। আপনিই বলুন ও ছাড়া আমার আর কে আছে? কিন্তু ও সেটা বুঝে না। অতীত নিয়ে এখনো পড়ে আছে।
> কি বলব বুঝতে পারছি না।
~ আমার বিশ্বাস আপনি যদি ওকে একটু বুঝান তাহলে হয়তো ও আমাকে স্ত্রীর অধিকারটা দিবে।
> কিন্তু কিভাবে?
~ আপনি আপনার নাম্বার দিন। আমি একদিন সময় বুঝে রাজকে পার্কে নিয়ে আসব।
> আচ্ছা। এতে যদি আপনি সুখী হন তাহলে এটাই ভাল।
.
অতঃপর সেদিন বিদায়।
একদিন,
~ অফিস বন্ধ?
- হুম।
~ আমি আজ পর্যন্ত আপনার থেকে কিছু চাইনি। আজ চাইব। দিবেন?
- আশাকরি এমন কিছু চাইবেন না। যা আমার পক্ষে সম্ভব না।
~ বেশি কিছু না। যাস্ট আজকে যদি আমাকে নিয়ে একটু ঘুরতে যাবেন? প্লিজ।
.
রাজ মনে মনে ভাবল এ তো আর বেশি কিছু না। মেয়েটা এইটুকু তো পেতেই পারে। অতঃপর পার্কে ঘুরতে চলে এলো।
~ আপনি একটু বসেন আমি একটু আসছি।
- কোথায়?
~ যাস্ট দু মিনিট।
.
প্রিয়া চলে গেল। রাজ বসে আছে। একটু পরেই নাঈমা এসে হাজির।
- তু ……তু …মি?
> কিছু কথা আছে। বস।
.
দুজনই বসে পড়লো।
> তুমি প্রিয়ার প্রতি অন্যায় করছো কেন?
- মানে?
> দেখ তোমার মন জুড়ে এখন প্রিয়া থাকা উচিত। সেখানে অন্য কাউকে রাখাটা শুধু অন্যায় নয় অপরাধ। আচ্ছা তুমিই বল এতে প্রিয়ার কি দোষ? মেয়েটা তোমাকে মনে প্রাণে ভালবাসে। কিন্তু বিনিময়ে কি পাচ্ছে? শুধু অবহেলা। বউয়ের স্থানে অন্য কাউকে রাখা পাপ।
.
রাজ চুপ করে রইলো।
> ভালবাসার মর্ম দাও। মেয়েটাকে আপন করে নাও। ও তো শুধু তোমাকে চায়। তোমার মনে নিজের জায়গা চায়। এটা ওর অধিকার। তুমি ওকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পার না।
- আসলে ………
> আমি সবই জানি। কিন্তু জন্ম মৃত্যু বিয়ে সবই আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। প্লিজ মেয়েটাকে ওর প্রাপ্য অধিকার দাও। তুমি ছাড়া মেয়েটার আর কে আছে বল? ভালবাসায় ব্যর্থ হলে কত কষ্ট হয় তা তো জানই। প্রিয়াকে সেই কষ্টটা দিওনা।
.
কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে তারপর রাজ বলল
- তুমি যেতে পার।
> কি!
- তুমি না গেলে তো প্রিয়া আসবে না। এখন প্রিয়াকে দরকার।
.
নাঈমার মুখে হাসি ফুটলো।
> আল্লাহ তোমাদের জীবন সুখে শান্তিতে ভরিয়ে তুলুক।
নাঈমা চলে গেল। দূর থেকে সবই দেখছিল প্রিয়া। কিন্তু কিছু শুনেনি। নাঈমার যাওয়ার একটু পরেই প্রিয়া এলো।
.
> স্যরি লেইট হয়ে গেল।
- ইটস ওকে।
.
আশেপাশে তেমন কেউই নেই। নিরিবিলি পরিবেশ। রাজ প্রিয়া পাশাপাশিই বসে আছে। কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর রাজ বলল
- খুব গরম লাগছে। দেখলে একদম ঘেমে গেছি। রুমাল হবে?
প্রিয়া ব্যাগে রুমার খুজতে লাগল। কিন্তু নেই। মনে মনে বলল, রুমালটা আজকেই ফেলে আসার কথা! হঠাৎ যা রাজ যা করল তাতে প্রিয়া বেশ অবাক হল। রাজ প্রিয়ার ওড়না দিয়ে ঘাম মুছে ফেলল।
.
- তোমার ওড়নায় ঘাম মুছার অধিকার তো আমার আছে তাই না?
প্রিয়ার চোখে পানি চলে এলো রাজ চোখের পানি মুছে দিল। রাজের ভালবাসার ছোঁয়া পেয়ে প্রিয়া কেদে উঠলো।
- আরে কাদছো কেন?
প্রিয়া রাজের বুকে মাথা দিয়ে কাদতে কাদতে বলল
~ আমার কিছু লাগবে না। শুধু তোমার বুকে মাথা রাখতে দিও।
- বুকেই তো আছ। এখন কান্না থামাও।
.
প্রিয়া কান্না থামালো।
- এতদিনের অবহেলার জন্য আমাকে মাফ করে দাও।
> ছিঃ ওসব বলতে নেই।
- তোমাকে পেয়ে আমি সত্যিই ভাগ্যবান
> আমিও তোমাকে পেয়ে ভাগ্যবতী।
- বুকটা শূণ্য লাগছে। পূরণ করবে?
.
প্রিয়া মুচকি হেসে রাজের বুকে মাথা রাখল। বসে আছে দুজন। শুরু হল ভালবাসার প্রাপ্য অধ্যায়।
.
জন্ম, মৃত্যু ও বিবাহ আল্লাহর ইচ্ছায় হয়।
.
লিখাঃ নিশি চৌধুরী (রাত্রির আম্মু)
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:১৫
Nishi Chowdhuri বলেছেন: শুকরিয়া ঋতো আহমেদ ভাই
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:০৩
ঋতো আহমেদ বলেছেন: সুন্দর গল্প