![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষ।
গল্পের নামঃ কল্পনার জগত
.
সুমন ও শাকিল সরকারি খাজানা ও জাহাজ নিয়ে পালাচ্ছে।
.
- দোস্ত পালিয়ে তো আসলাম। কিন্তু যাব কই? পুলিশ যদি খুজে পায় তবে হাড্ডি ভেংগে দিবে। (সুমন)
~ চিন্তা করিস না। আমরা অন্য দেশে বসবাস শুরু করব। (শাকিল)
.
হঠাৎ দুজনেরই মাথা ব্যাথায় দুজনেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। চোখ খুলে দেখল তারা নদীর পাড়ে। জাহাজের কোনো অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে না। তারা মনে করল, তুফানে তাদের জাহাজ সহ খাজানা ডুবে গেছে।
.
একটু ভেতরে ঢুকে দেখল এখানে জন বসতি আছে। তবে অন্যরকম। এখানকার ঘর বাড়ি গাছের মাথায় মাথায় এবং কাঠের।
.
এখানকার মানুষের মধ্যে নারীরাই প্রধান। সকল প্রকার কাজকর্ম নারীরাই করে। এখানের নারীদের লজ্জা-মায়া নেই। কিছু নারীদের লজ্জা-মায়া আছে। এখানের মানুষ গুলো সেসব নারীদের মানসিক রোগী বলে।
.
~ দোস্ত এটা কোন জায়গা?
- আমার তো মনে হচ্ছে পাগলদের এলাকা।
.
কিছুদিন থেকে তারা এলাকাটা সম্পর্ক যেসব ধারণা পেল তা হল।
.
এখানে এক ধরণের গাছের পাতা হল মানুষের জন্য অর্থ (টাকা)। গাছটার নাম এরিথিক গাছ। গাছটি বিশাল আকৃতির। একটি বড় অঞ্চল জুড়ে এর শাখা প্রশাখা বিস্তৃত। গাছটির ৫০হাত কাছে যে আসে, গাছটি তাকে শিকড় দ্বারা পেচিয়ে মেরে ফেলে।
.
গাছটির পাতাগুলো জীবিত পাতা। গাছ থেকে আলাদা হবার পরও একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বেচে থাকে। প্রথমে বাজারে পাতার খুব দাম থাকে। কিন্তু ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এক সময় শূন্য হয়ে যায়। কারণ তখন পাতাটি মরে যায়।
.
পাতা গুলো যে ইচ্ছে সেই আনতে পারে না। প্রতিটি পরিবারের মেয়েরা পাতাগুলো আনতে পারে। যে ঘরে মেয়ে নেই সে ঘরের ছেলেরা চাকরি করে। অনেক কষ্টের। এখানকার ছেলেদের শক্তি কম।
.
সুমন ও শাকিল না খেয়ে প্রায় ক্লান্ত হয়ে গেছে। তারা কিছু কিনতেও পারছে না। কারণ তাদের কাছে এরিথিক পাতা নেই।
.
তাদের দশা দেখে ইরিকার মায়া হল। এখানকার মানুষের মতে মেয়েটি মানসিক রোগী। কারণ মেয়েটির লজ্জা-মায়া আছে।
.
ইরিকা, সুমন ও শাকিলকে এরিথিক পাতা দিল। তারা খেয়ে দেয়ে নদীর ধারে ঘুম দিল। ঘুম থেকে উঠে দেখল নদীর ওপারেও একটি এলাকা দেখল।
.
~ চল সুমন ওপারে যাই।
- হুম চল।
.
যখনই তারা নদীরে পা দিবে তখনই ইরিকা এসে সরিয়ে দিল।
> আপনারা জানেন না আত্মহত্যা মহাপাপ?
.
মেয়েটির কথা শুনে দুজন একে অপরের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
- কিসের আত্মহত্যা?
> তবে নদীতে যাচ্ছিলেন কেন?
- আমরা তো সাতার জানি।
.
ইরিকা কিছু না বলে একটা খরগোস ধরে পানিতে মেলা মারল। তারপর যা ঘটল তা দেখে সুমন ও শাকিল পাথর হয়ে গেল।
.
খরগোসটা যখন পানিতে পড়ল, তখন পানি থেকে কিছু একটা দানবের মত উঠে এসে খরগোসটিকে পানির নিচে নিয়ে গেল।
.
- ওটা কি ছিল?
> ওটা জাইকা। এই দুই পাড়ের রক্ষাকারী।
- রক্ষাকারী!!! ওটাকে ভক্ষণকারী বলে।
> আস্তে বলুন কেউ শুনলে জাইকার হাতে তুলে দিবে।
.
সুমন ও শাকিল প্রতিনিয়ত অবাক হচ্ছে। এখানকার নিয়মানুযায়ী মেয়ে যাকে পছন্দ করবে তাকে বিয়ে করতে পারবে। ছেলের কথার কোনো মূল্য নেই।
.
একদিন একটা বিয়ের আয়োজনে ইরিকা উদাস মনে বসে আছে।
.
- তোমাকে উদাস দেখাচ্ছে কেন?
> আমার ছোট বোনের বিয়ে।
- তাইলে তোমার নাচার কথা।
> আমার বিয়ে না হয়ে ওর বিয়ে হচ্ছে আর আমি নাচব?
- ওহ তবে তো দুঃখের বিষয়। কিন্তু তোমার বিয়ে হচ্ছে না কেন? তুমি যাকে পছন্দ করবে তাকেই তো বিয়ে করতে পারবে।
.
> আমি মানসিক রোগী তাই আমি কাউকে পছন্দ করতে পারব না।
- তুমি কিভাবে বুঝলে যে তুমি মানসিক রোগী?
> আমার লজ্জা-মায়া আছে। এটাই মানসিক রোগীর লক্ষণ।
- আরে লজ্জা তো নারীর ভূষণ।
> মানে?
- কিছু না। তুমি আমাকে বিয়ে করবে? (সুমন)
ইরিকা কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর লজ্জা পেয়ে দৌড় দিল।
- আরে উত্তর তো দিয়ে যাও।
.
পরেরদিন ঘুম থেকে উঠে দেখল কিছু লোক তাদের ঘিরে দাড়িয়ে আছে। সুমন উঠা মাত্রই বয়স্ক মহিলা, সুমনকে জিজ্ঞেস করল,
< ইরিকা তোমাকে বিয়ে করতে চায়, ও কিন্তু মানসিক রোগী। তুমি কি রাজি?
- হ্যা।
.
বিয়ে হয়ে গেল। এখানকার রীতি অনুযায়ী তারা একটা ঘর পেল। যেটা একটা গাছের মাথায়। দোলনার মাধ্যমে ঘরে চলে এল। শাকিল গাছের নীচে ঘুমিয়ে পড়ল। স্বামী স্ত্রী ছাড়া কেউই গাছের মাথায় থাকা ঘরগুলোতে উঠতে পারবে না।
.
ঘরে ঢুকে সুমন ইরিকার দিকে তাকাল। ইরিকা তো লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না।
.
- জান, তুমি সবার থেকে আলাদা।
> তোমরা দুজনও সবার থেকে আলাদা।
সুমন একটু হাসি দিয়ে বলল
- তোমায় পেয়ে আমি অনেক খুশি।
> আমিও। তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়। কাল তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।
- কেন?
> সকালে যদি এরিথিক(টাকা) না আনি তবে আমরা খাব কি?
- দরকার নেই। আমি চাকরি পেয়েছি।
> আমি থাকতে তুমি চাকরি করবে কেন? বাকিরা শুনলে হাসবে।
- আমি বাকিদের চিন্তা করি না। তুমি সারাদিন ঘরে বসে ঘর সাজাবে, রান্না করবে এবং সন্ধ্যায় আমার অপেক্ষা করবে।
.
ইরিকা সুমনকে জড়িয়ে ধরে বলল
> জান, আমি এমনই একটি সংসার চেয়েছিলাম।
সুমন ইরিকাকে জড়িয়ে ধরে মনে বলল, আমি তোমাকে এখান থেকে বের করতে চাই। নিয়ে যেতে চাই সেখানে যেখানে সবাই তোমার মতই।
.
সুমন ও শাকিল চাকরি করে চলতে লাগল। সুমন ও ইরিকার জীবন বাকিদের থেকে আলাদা। সুমন কাজ করে সন্ধ্যায় ফিরে তারপর দুজন বেশ গল্প করে।
.
বেশ কিছু দিন পর, সুমন চাকরি থেকে ফিরে দেখল ইরিকার মনটা খারাপ।
.
- কি হয়েছে আমার ময়নাটার?
> আমি মা হতে চলেছি।
- এটা তো খুশির সংবাদ।
> (অনেক কিছু বলল)
.
ইরিকার কথা শুনে সুমন স্তব্ধ হয়ে গেল। কারণ এখানকার নিয়মানুযায়ী নব শিশুকে নদীর তীরে রাখতে হয়। যদি শিশুটি পানিতে হাত দেয়। তবে শিশুটিকে পাপী বলে গণ্য করা হয়। আর পানিতে হাত দেয়ার সাথেসাথেই জাইকা নামক দানবটি শিশুটিকে ভক্ষণ করে ফেলে।
.
> আমি চাইনা আমার সন্তানের কিছু হোক। চল না আমরা দূরে কোথাও পালিয়ে যাই। যেখানে এসব কিছুই থাকবে না। (কেদে কেদে)
- তুমি চিন্তা কর না। আমি আমাদের সন্তানের কিছু হতে দিব না।
.
দিন যত যায় ইরিকার ভয় তত বৃদ্ধি পায়। আর অন্যদিকে সুমন ও শাকিল যুদ্ধের প্রস্তুতি করতে থাকে। তারা তাদের জাহাজটাও খুজে পেল।
.
আজ সুমন ও ইরিকার জীবনে নতুন ফুল এল, একটা ফুটফুটে মেয়ে। জন্মের পরই কিছু মহিলা এসে ইরিকার কোল থেকে তার মেয়েকে নিয়ে গেল। ইরিকা চিতকার করে কান্না করছে। যা দেখে অন্যান্য মেয়েরা হাসতে লাগল। কারণ এখানকার নারীদের মধ্যে লজ্জা মায়া বলতে কিছু নেই।
.
সুমন এসে ইরিকাকে সান্তনা দিয়ে বলল
- তুমি চিন্তা কর না। আমি আমাদের মেয়ের কিছু হতে দিব না।
.
সুমন নদীর পাড়ে চলে এল। তাদের সন্তানকে নদীর পাড়ে পানি থেকে এক ইঞ্চি দূরে রাখা হয়েছে। কিছুক্ষণ মেয়েটি একটু নড়ে উঠল। যার ফলে পা পানিতে স্পর্শ হয়েছে। সাথেসাথে জাইকা ফুলে উঠেছে এবং এক হাত দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে আসছে।
.
সুমন এসে সেই হাত তার মেয়েকে স্পর্শ করার আগেই কেটে দিল। সবাই হায় হায় করতে লাগল। অন্যদিকে শাকিল একটি বড় গাছের মাথা থেকে জাহাজ থেকে আনা বোম মারল। সাথেসাথেই জাইকা শেষ।
.
তখন এক বৃদ্ধ লোক এসে সুমনকে বলল
-- তুমি তো এই দুনিয়ার না।
- হ্যা। আমি প্রতিবাদী দুনিয়ার।
লোকটা কিছুক্ষণ ভেনে তারপর বলল
-- এই নাও নকশা। নিজের দুনিয়ায় ফিরে যাও।
.
শাকিলও ইশারা দিয়ে হ্যা বলল। অতঃপর ইরিকা, সুমন, তাদের ফুটফুটে মেয়ে এবং শাকিল নিজেদের দুনিয়াতে আসার জন্য রওনা দিল।
.
> আমরা কোথায় যাচ্ছি?
- যেখানে তুমি মানসিক রোগী নও। যেখানে আমরা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারব।
.
ইরিকা তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল
> কি সুন্দর এবং মায়াবী দেখতে, তাই না?
- হুম।
> তবে ও পাপী হল কিভাবে? নদীতে পা দিল কেন?
- ওসব কিছু মিথ্যা। নবজাতক কখনোই পাপী হয় না। তারা ফুলের মত পবিত্র।
.
হঠাৎ ইরিকার মাথা প্রচন্ড ব্যাথা শুরু করল। সুমন ইরিকাকে সামলিয়ে ধরল।
.
~ কি হয়েছে ভাবির? (শাকিল)
- আমরা আমাদের দুনিয়ায় এসে গেছি।
~ মানে?
- ইরিকার দুনিয়ার আবহাওয়া আর আমাদের দুনিয়ার আবহাওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। তাই মাথা ব্যাথা করছে। যেমনটা আমাদের করেছিল।
.
শাকিল "ইয়াহু" বলে জাহাজের গতি বাড়ালো।
পরে তারা জানতে পারল, এই দুনিয়ায় মাত্র একদিন পার হয়েছে।
.
লিখাঃ Nishi Chowdhuri (রাত্রির আম্মু)
©somewhere in net ltd.