নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিনোদন ও জাগরণের চেষ্টা। হরর, থ্রিলার, রম্য এই জাতীয় কিছু লেখার চেষ্টায় আছি। (০২/০২/১৭)

Nishi Chowdhuri

আমি মানুষ।

Nishi Chowdhuri › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পের নামঃ গুলু গুলু

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৯

গল্পের নামঃ গুলু গুলু
.
- হাই গুলু গুলু। (গাল ধরে টান দিল)
> আউচ! ব্যাথা লাগে তো। বাদর। এই তোকে না বলেছি গালে হাত দিবি না। (রেগে)
- কি করব বল! তোর তুলতুলে গাল দুটা দেখলে না ধরে পারি না।
> একদিন হাত ভেংগে দিব।
- দিস। তবুও ধরব। গুলু গুলু।
> আর বারবার গুলু গুলু ডাকিস কেন? কতবার নিষেধ করেছি তবুও?
- আমার ইচ্ছে তাই।
> আচ্ছা মোটারা কি মানুষ না?
- বাকিদের কথা জানি না তবে তুই হলি গুলু গুলু।
.
কথাটা বলে নিধির গাল আবার টান দিয়ে ভো দৌড় দিল আবিদ। নিধি নিধি ধরতে চাইল কিন্তু পারল না
.
ক্লাসে
- গুলু গুলু!
> কি হইছে? (রেগে)
- ক্লাসের পর কোথাও যাবি?
> হ্যা যাব তো।
- কোথায়? (খুশি মনে জিজ্ঞেস করল)
> বাসায়। (রাগন্বিত স্বরে)
- ধুরর।
> হুররর।
- গুলু গুলু।
> অসহ্য।
.
এভাবেই প্রতিটি মুহূর্ত কাটে নিধি ও আবিদের। আবিদ নিধিকে ভীষণ ভালবাসে। কিন্তু বলতে পারে না। নিধি আবিদকে শুধু ফ্রেন্ড ভাবে। এর বেশি কিছুই না। আবিদ নিধিকে কত রকমের ইঙ্গিত দেয় তবুও নিধি বুঝে না। স্বাভাবিক ভাবেই চলে। সবাই বলে মেয়েরা নাকি সব বুঝতে পারে। কিন্তু নিধির বেলায় সেটা হচ্ছে না কেন?
.
- জানিস গুলু আমি একটা মেয়ের প্রেমে পড়েছি।
> ভার্সিটিতে নতুন যেটা আসছে সেটা?
- হ্যারে। দেখলি তুই আমার মনের খবরও জানিস।
> তোর চয়েস এত বাজে কেন?
- কি বলিস! ভার্সিটির সবাই ওই মেয়ের পিছু লাইন মারে।
> কারণ মেয়েটা টাইট জামা প্যান্ট পড়ে তাই তোদের চোখ লাফিয়ে পড়ে।
- যাইহোক আমি তো আজ প্রপোজ করবই।
> তাহলে আমার সাথে তোর ফ্রেন্ডশিপ এখানেই শেষ।
- আরে আজিব তো! (মনে মনে খুশি)
> দেখ ভালবাসবি এমন কাউকে যাকে দেখলে মন ভরে যাবে। মেয়েটার মনকে ভালবাসবি, চেহারা কিংবা জামা-কাপড়কে নয়।
.
নিধি চলে গেল। আবিদ তো মহাখুশি। যাক বাবা এটলিস্ট জেলাস ভাবটা তো এসেছে। আবিদ আরও কিছু মেয়ে বন্ধুদের সাথে মিশতে শুরু করল। তাও আবার নিধির সামনে সামনে ঘুরে। কিন্তু নিধি কিছুই মনে করল না। আবিদ বুঝল এই প্ল্যান কাজ করবে না। আবিদ নানারকম টেকনিক এপ্লাই করতে লাগল। কিন্তু সবই ফেল। নিধির মাথায় বন্ধু ব্যতীত অন্য চিন্তা আসেই না।
.
আবিদ নিধির কেয়ার করা শুরু করল। যা আজকালকার বয়ফ্রেন্ডও করে না। এভাবে কিছুদিন চলল। তবুও কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করল না।
.
- ওই গুলু গুলু।
> কি হইছে? (বিরক্ত ভাব)
- আচ্ছা তোর চোখ নাই কেন?
> কই! আছে তো। আমার তো মনে হচ্ছে তোরই চোখ নাই।
- আচ্ছা তুই কি কিছু বুঝিস না? নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করছিস?
> দেখ আমাকে যা বলবি সোজাসুজি বলবি। ঘুরিয়ে বললে ঘুরিয়ে থাপ্পড় দিব।
- ধ্যাত।
আবিদ চলে গেল।
.
একদিন পরীক্ষা শেষে হল থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে নিধি। হঠাৎ দুটা বান্ধবীর কথোপকথন শুনে থেমে গেল। কারণ কথাগুলো তাকে নিয়ে।
~ ইয়ার নিধির মত কপাল যদি আমার হতো তাহলে আর কথাই ছিল না। (জেরিন)
= কেন কি হইছে? (রাহী)
~ কেন তুই জানিস না? আবিদ নিধিকে পাগলের মত ভালবাসে।
= বলিস কি!!! তাহলে তো সত্যিই নিধি খুব লাকী।
~ হুম। বাট নিধি আবিদের মনের কথা বুঝেই না। কত ইঙ্গিত দেয় তবুও বুঝে না। কত কেয়ার করে।
= আমার তো নিধির উপর হিংসা হচ্ছে।
.
নিধি একটা কাশি দিয়ে নিচে নামতে লাগল। মেয়ে দুটা নিধিকে হাই বলল নিধিও প্রতি উত্তরে হাই বলে চলে এল। তারপর মেয়ে দুটার মাঝে আবিদ এল।
- থ্যাংকস ইয়ার। অনেক অনেক উপকার হল।
~ থ্যাংকস লাগবে না। রিলেশন শুরু হলে ক্যান্ডিতে ট্রিট দিবি।
- অবশ্যই।
.
আসলে এটা ছিল আবিদের প্ল্যান। একটু পরে স্বাভাবিকভাবেই আবিদ নিধির কাছে এল।
- কিরে গুলু গুলু পরীক্ষা কেমন হয়েছে?
নিধি চুপচাপ বসে আছে। কিছু একটা ভাবছে। আবিদ মনে মনে বলছে কাজ হয়েছে। নিধি ভাবছে।
- কিরে গুলু গুলু কই হারালি?
> হ্যাঁ!!! হ্যাঁ! না মানে!
- কি হইছে তোর? পরীক্ষা ভাল হয়নি?
> হয়েছে।
- এখন তো পরীক্ষা শেষ। চল কোথাও ঘুরতে যাই।
> আমার ভাল লাগছে না। যাই। পরে কথা হবে।
.
নিধি চলে গেল। আবিদ মনে মনে খুশি হল। যাক এটলিস্ট নিধি তাকে নিয়ে ভাবা তো শুরু করেছে।
.
নিধির ভাবতে লাগল। সত্যিই কি আবিদ তাকে ভালবাসে? কিন্তু কেন? আবিদের মত স্মার্ট ছেলে তার মত মুটকিকে ভালবাসবে? সে তো কোনো দিক থেকেই আবিদের যোগ্য না। বন্ধুত্ব আছে এটাই তো বড়। নিধি কিছুতেই মানতে পারছে না আবিদ তাকে ভালবাসে। এটা তো সম্ভবই না। তারওপর আবিদ নিধিকে ব্যঙ্গ করে গুলু গুলু বলে। ভালবাসলে কি আর ব্যঙ্গ করত? উফফ! নিধি আর ভাবতে পারছে না। হয়তো মেয়েগুলো দুষ্টামি করেছে।
.
এদিকে পরীক্ষার পর ভার্সিটি বন্ধ হওয়ার কারণে নিধির সাথে আর দেখা হচ্ছে না আবিদের। ফোনে যোগাযোগটাও অফ হয়ে গেছে। নিধির মোবাইল অফ। আবিদের মনে বন্ধুত্ব হারানোর ভয়টা উঠল। কিছুদিন পর ভার্সিটি চালু হল। আবিদ নিধি দুজনই এসেছে।
.
- কিরে গুলু গুলু! তোর মোবাইল অফ কেন?
> এমনই।
- এ কয়েকদিনে আমার কথা একবারও মনে পড়েনি?
নিধি চুপ হয়ে গেল। কি বলবে? সে তো এই কয়েকদিন আবিদকে নিয়েই ভেবেছে।
- আমাকে মনে রাখার কি আছে! আমি কে?
> এসব কথা বাদ দে তো। চল ক্লাসে যাই।
.
ক্লাসে এসে নিধি আবিদের দিকে অসংখ্যবার তাকিয়েছে। চোখাচোখিও হয়েছে। কারণ আবিদ তো নিধির দিকেই তকিয়ে থাকে। নিধি লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে ফেলে। আবিদ ব্যাপারটা লক্ষ্য করল। মনে মনে খুশিই হল।
.
ক্লাস শেষে
- এই গুলু গুলু।
> বুঝলাম আমি মোটা। তাই বলে কি সবসময়ই ব্যঙ্গ করতে হবে? (করুণ ভাবে)
- এইভাবে বলছিস কেন? আমি তো তোকে আদর করে গুলু গুলু বলি। অন্য কাউকে তো ডাকি না। ঠিক আছে তুই রাগ করলে আর ডাকব না।
.
আবিদ অভিমান করে হাটা দিল। আবিদ মনে ভাবতেছে আমার শূণ্যতা যদি নিধি অনুভব করে। তবে নিধিও আমাকে ভালবাসে।
.
বাসায় এসে নিধি ভাবতে লাগক আসলেই তো ভার্সিটিতে তো আবিদের আরও দুটা বান্ধবী মোটা। কই তাদেরকে তো কখনো গুলু গুলু কিংবা অন্যকিছু বলে না। তাহলে কি "গুলু গুলু" শুধুই তার জন্য? উফফ! নিধি লজ্জায় বালিশে মুখ চাপা দিল। তারমানে সত্যিই আবিদ তাকে ভালবাসে। কিন্তু ভালবাসলে বলছে না কেন? আমি বলব? নাহ! যদি আমার ধারণ ভুল হয়। তবে বন্ধুত্বটাও যাবে।
.
যে শব্দটা শুনলে নিধি রাগ করত। আজ সেই শব্দটাই নিধির প্রিয় শব্দ। উফফ! আসলেই তো শব্দটা খুব রোমান্টিক। "গুলু গুলু" একদম কিউট। তার সাথে মানায়। তবে আবিদেরর চোখে।
.
পরেরদিন ভার্সিটিতে,
- ওই শুন গুলু গুলু!
> হুম। (এই প্রথম রাগের পরিবর্তে হুম)
- ওহ! স্যরি। নিধি তোর প্র্যাকটিক্যাল খাতাটা দে তো।
> দিব না।
- কেন?
> আগে ঠিক করে ডাক।
- ঠিক করেই তো ডাকলাম। নিধি।
> নাহ। এটা না। ওটা ডাক।
- কোনটা?
> যেটা সবসময় ডাকিস।
- গুলু গুলু?
> হুম। (লজ্জা ভাব)
- রাগ করবি না?
> উহু!
- সত্যি?
> হুম। (অন্যদিকে তাকিয়ে)
- যাক বাবা এতদিন পর হলেও বুঝলি।
> কি বুঝলাম?
- এই যে আমি তোকে … (গলা আটকে গেল)
> আমাকে কি?
.
আবিদের মুখ কথা যেন বের হচ্ছে না।
- ইয়ে মানে ……
> তাড়াতাড়ি বল। ক্লাসের দেরি হচ্ছে।
- পরে বলব।
> সঠিক সময়ে সঠিক জিনিস না বললে পরে কিন্তু পস্তাতেও পারিস।
- না না আমি তোকে হারাতে চাই না। তোকে ছাড়া বাঁচব না।
.
নিধি মনে মনে হেসে বলল মনের ভাবটা তো প্রকাশ করেছে তবুও সেই ম্যাজিক্যাল তিনিটা শব্দ বলল না। কিন্তু নিধি সেই তিনটা শব্দ আবিদের মুখ থেকে শুনতে চায়। তাই নিধি না বুঝার ভান করে বলল
> বুঝলাম না।
- তোকে সারাজীবন আমার পাশে চাই।
> উফফ! তুই কি গাধা নাকি? ওই তিনটা শব্দ বল না। আমি শুনতে চাই।
- তোকে বিয়ে করব।
.
নিধি হেসে উঠল।
> তুই তো নতুন ম্যাজিক শব্দ আবিষ্কার করলি।
- তুই চাইলে আমাদের নতুন একটা জগতও আবিষ্কার করব। যেখানে তুই, আমি আর আমাদের বাবুরা থাকবে।
.
যাহ! ফাজিল বলে নিধি ম্যখ ঘুরিয়ে নিল।
- এহহহহ! লজ্জা পেলে হবে না। আমার কিন্তু দুটা বাবু লাগবে। একদম তোর মত গুলু গুলু হতে হবে।
> তুই যে বদের হাড্ডি তা তো আগে জানতাম না। আমি গেলাম।
নিধি লজ্জা পেয়ে হাটা হাটা দিল। আবিদও পিছু পিছু হাটা শুরু করল। কিছুদূর যাওয়ার পর এক সাথে হাটতে লাগল। শুরু হল তাদের এক সাথে পথ চলা।
.
লিখাঃ নিশি চৌধুরী (রাত্রির আম্মু)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.