![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষ।
গল্পের নামঃ ভাইয়ের জন্মদিন।
.
> অলিইইইইইইন উঠ।
~ কি হইছে? এই শীতের সাতসকালে কেউ ডাকে? তাও আবার শীতকালীন ছুটিতে!
> কেন শীতকালে কি খাওয়া দাওয়া লাগে না?
~ তো?
> রুটি বানাবো। ময়দা শেষ। যা ময়দা নিয়ে আয়।
~ সারাদিন ময়দা মুখে মাখলে শেষ তো হবেই।
> কি বললি? বড্ড বেড়ে গেছিস তাই না?
~ যা সত্য তাই বললাম।
> থাক ঘুমিয়ে। নাস্তাও পাবি না।
~ লাগবে না। আগে ঘুম।
.
চলে এলাম। অহেতুক তর্ক করে লাভ নেই। শীত আসার পর থেকে অলিনের ঘুমটা বেড়ে গেছে। আসলে ওর দোষ না। শীতের সকালটাই এমন। কম্বল / লেপ / কাঁথা থেকে বের হতেই ইচ্ছে করে না।
.
বাবা মা এক সপ্তাহের জন্য ঢাকায় মামার বাসায় গেছে। সেই থেকে অলিনের ঘুমটা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
.
কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে আবার ডাকতে গেলাম।
> উঠবি?
~ উফফ! আবার!
> পরে কিন্তু আর বানাতে পারব না।
~ লাগবে না।
.
জিদ উঠল। কিন্তু কিছু করার নেই। ভাই তো। :-( ও না খেয়ে থাকলে কষ্টটা আমারই লাগবে। তাই নিজেই দোকান থেকে ময়দা আনতে গেলাম।
> আংকেল ১কেজি পুষ্টি ময়দা দেন তো।
দোকানের পাশে কিছু ছেলে বসে থাকে। মেয়ে দেখার জন্য। বড় আপু, ছোট আপু, আন্টি কেউই এদের চোখ থেকে রেহাই পায় না। তাড়াতাড়ি ময়দা নিয়ে বাসায় চলে এলাম।
.
ঘন্টাখানেক পর, অলিন উঠলো।
~ নাস্তা দে।
> কোত্থেকে দিব?
ও কথা না বলে পাকঘরে যেয়ে একটু খুজে রুটি পেয়ে গেল। নিয়ে এসে টেবিলে বসল। আমি ভাজি এনে দিলাম।
> খা।
~ আমি জানতাম তুই বানিয়েছিস।
> উদ্ধার করছেন। এবার খেয়ে উদ্ধার করেন।
~ হেহেহে।
.
ভেংচি দিয়ে সোফায় বসে পড়লাম। পরেরদিন রুটি বানাতে যেয়ে দেখি ময়দায় দু তিনটে তেলাপোকা। ইইইইইই! আমি ভয়ে সব ময়দা পাকঘরের বেসিনে ফেলে দিলাম। কিছুক্ষণ বোকার মত তাকিয়ে রইলাম। তারপর গেলাম ঘুমের রাজাকে ডাকতে।
.
> অলিইইইইন উঠ।
~ উফফফ! আমার প্যানপ্যান? আব্ব্য আম্মু যাওয়ার পর তোর জ্বালায় শান্তি মত ঘুমাতেও পারি না।
> দেখ পাখিরাও উঠে গেছে।
~ ওরা ঘুমের মজা বুঝে নাকি? আমি মানুষ। তাই আমি বুঝি।
> উঠ না ভাই। যা ময়দা এনে দে।
~ গতকালই না আনলি? সব মেখে ফেলেছিস?
> এইইইই একদম ফালতু কথা বলবি না। হাত থেকে পড়ে গেছে।
~ বুঝি বুঝি। সবই বুঝি।
> লাগবে না তোর যাওয়া। আমি নিজেই যেতে পারব। ঘরে একটা বুঝদার ভাই থাকতে বোনকে দোকানে যেতে হবে। সবই কপাল।
.
আমি টাকা বের করে দরজার সামনে এসে দেখি অলিনা দাড়িয়ে আছে।
~ দে টাকা দে।
> কেন?
~ ময়দা আনবো।
> লাগবে না। আমি আনতে পারব।
> এই তোর সমস্যা কি? এতক্ষণ বলছিলাম পারব না। তবুও জোর করছিলি। এখন বলছি দে। তাতেও জোর।
.
রাগি ভাবেই টাকাটা হাতে দিলাম। ও বেরিয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর ময়দা নিয়ে এলো। তারপর আমি রুটি বানিয়ে দিলাম। দুজন এক সাথে খেতে লাগলাম।
~ কোনো কিছু লাগলে আমাকে বলবি। তোর বাইরে যেতে হবে না।
> হঠাৎ এত ভদ্র?
.
উত্তর না দিয়ে খেতে লাগল। একটু পর আবার বলল
~ আমি যদি ঘরে নাও থাকি তবুও ঘর থেকে বের হবি না। আমাকে কল দিবি।
এবার বুঝলাম যে নিশ্চয়ই দোকানের পাশের ছেলেগুলোর কর্মকাণ্ড দেখেছে। ভাই গুলো এমনই। বাইরের পরিবেশটা বুঝে গেলে ঘরের মানুষজনকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করে। বিশেষ করে বোনদেরকে।
.
আব্বু আম্মু ঢাকা থেকে চলে এসেছে। সেদিনের পর থেকে বাইরের সব কাজ অলিনই করে। আমি কোচিং + স্কুলে যাওয়ার সময় ফ্রি থাকলে অলিনও আমার সাথে যায়। ভালই লাগে। ভাইটা আমার জন্য চিন্তা করে।
.
প্রতিদিন ওর সাথে রিমোট নিয়ে ঝগড়া হয়। > ও সারাদিন বক্সিং + খেলা দেখতে চায়। আর আমি এহেম এহেম জলসা + জি বাংলা।
.
একদিন রিমোট নিয়ে প্রচুর ঝগড়া হয়েছে। মারামারিও। আম্মু দুজনকেই মেরে রিমোট আলমারিতে আটকিয়ে রেখেছে। অতঃপর রাগ করে একে অপরের সাথে কথা বলা বন্ধ। সারাদিন কথাই হয়নি।
.
পরেরদিন সকালে,
আমি মোবাইল চালাচ্ছি। হঠাৎ অলিন এসে বলল
~ রাগ করে আছিস?
আমি শুনেও না শুনার ভান করে মোবাইল চালাচ্ছি।
~ আচ্ছা। স্যরি। আর হবে না। মাফ করে দে।
> ভাইবোনে স্যরি বলতে নেই।
~ জানি। কিন্তু তোর তো ভাব বেশি।
> আবার কিন্তু ঝগড়া হবে।
~ চোখ বন্ধ কর তো।
> কেন? মেরে পালাবি?
~ সারাদিন মাথার মধ্যে মারামারি ঘুরে তাই না? চোখ দুটা একটু বন্ধ কর।
.
করলাম। বাট হালকা করে। ;-)
~ এবার খুল।
চোখ খুলে দেখলাম একটা ফুল গাছের চারা। ছাদে আমার ছোট একটা ফুলের বাগান আছে।
> ওয়াও! সো নাইস। বাট হঠাৎ এত দরদ কেন? কিছু লাগবে নাকি?
~ ধুর তুই সবকিছুতে মতলব খুজিস। আরে ভাইবোনের মাঝে দেনা পাওনা থাকে না।
.
আমি ফুলের চারাটি নিয়ে একটু সামনে যেতেই অলিন বলল
~ দুদিন পর আমার বার্থডে। বন্ধুরা পার্টি চাচ্ছে। তুই যদি একটু ম্যানেজ করে দিতি।
আমি ঘুরে তাকালাম।
> কত লাগবে?
~ বেশি না ২০০ হলেই চলবে।
> খুব ভাল। ১০টাকার চারা দিয়ে ২০০টাকার বাশ।
.
অলিন বুক ফুলিয়ে বলল
~ চারার দাম ১০ টাকা হতে পারে। কিন্তু ভালবাসার কোনো দাম হয় না। আমি চারাটা ভালবেসেই এনেছি।
.
যদিও কথাটা ও ভাব নিয়ে বলেছে। কিন্তু কথাটা সত্য।
> হইছে আর ডায়ালগবাজি করতে হবে ন। সকালে টাকা দিয়ে দিব।
~ তোর মত আপু হয় না।
> হইছে আর পাম দিতে হবে না।
.
আমি আম্মু থেকে টাকাটা চেয়ে নিলাম। হঠাৎ ভাবলাম অলিনের জন্মদিন। এর আগে কখনো কারোই জন্মদিন নিয়ে মাতামাতি হয় নায়। তবে এবার একটু করলে মন্দ হয় না। শত হোক ভাই তো।
.
অতঃপর ওর জন্মদিনের তারিখে ভোর ৬টা বাজে উঠে কেক বানালাম। জানি তেমন ভাল হয়নি। তবে চেষ্টা করেছি খুব। অলিনের রুমটা চারদিকে বেলুন দিয়ে সাজালাম। আব্বু কাজে চলে গেছে। আমি আর আম্মু দরজার পাশে লুকিয়ে ওর উঠার অপেক্ষায় আছি। আজ ডাকবো না। কিছুক্ষণ পর ও উঠল।
.
অলিন উঠার সাথেসাথেই ফোনটা বেজে উঠলো। ভয়েস মেসেজ।
"শুভজন্মদিন অলিন। আল্লাহ তোকে অনেক অনেক সুখী রাখুক। ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করুক। পরিবারের সাথে হাসিমুখে যেন সারাজীবন থাকতে পারিস এই দোয়াই করি। ফ্রম তোর ঝগড়াটে আপু নিশি।" :-*
.
মেসেজ শুনে অলিন অবাক হয়ে গেল। রুম দেখেও অবাক হল। বিছানা থেকে নেমে আম্মু! আপু! বলে ডাকতে ডাকতে দরজার সামনে এলো। সাথেসাথেই আমি একটা বেলুন ফুটিয়ে বললাম,
.
> হ্যাপি বার্থডে ভাইয়া।
ও প্রথমে একটু ভয় পেয়েছে। তবে বেশ অবাক হয়েছে।
> কিরে ওভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? ভুত দেখলি নাকি?
~ না মানে এতসব? হঠাৎ কিভাবে?
> আরে এসব আমার বা হাতের ব্যাপার। আয় সামনের রুমে আয়।
.
ওকে সামনের রুমে নিয়ে এসে কেক দেখালাম। উপরে বেকা ত্যাড়া করে লিখা "শুভজন্মদিন অলিন।"
> যা মুখ ধুয়ে আয়।
.
মুখ ধুয়ে এসে কেক কাটলো।
> মজা হয়নি তাই না? এই প্রথম তো তাই।
~ ভালবাসার কোনো টেস্ট হয় না।
আমি দেখলাম ওর চোখে জল ছলছল করছে।
~ আপু তুই খুব ভাল। আমি এতো সারপ্রাইজ পাব ভাবতেই পারি না।
আমিও কেদে দিব। তাই তাড়াতাড়ি ওর হাতে ২০০টাকা দিয়ে পাঠিয়ে দিলাম। মনে মনে বললাম, তোর কথাগুলো চোখে জল এনে দেয়। বুঝতে শিখেছিস। আল্লাহর একটাই প্রার্থনা তোর ভবিষ্যৎ যেব উজ্জ্বল হয় এবং তুই যেন বিপদগামী না হস।
.
ভালবাসার টেস্ট নেই।
ভালবাসা দেখা যায় না।
ছোঁয়া যায় না।
প্রকাশ করেও শেষ করা যায় না।
শুধু অনুভব করা যায়।
তবে সেই অনুভূতি শেয়ার করে শেষ করা যায় না। :-)
.
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:০১
ঋতো আহমেদ বলেছেন: Lucky Aulin