![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষ।
গল্পের নামঃ মা - সন্তানের ভালবাসার জয়
.
সাবা শপিং করছে। আশেপাশের মানুষ গুলো তার দিকে অন্যরকম ভাবে তাকিয়ে আছে। শুধু ছেলেরা তাকালে এক কথা কিন্তু মেয়েরাও তাকাচ্ছে। তাই ব্যাপারটা খটকা লাগল। সাবা তার বোনকে জিজ্ঞেস করল
> আমার ড্রেসআপ ঠিক আছে তো?
= হুম।
হঠাৎ একটা মহিলা সাবা বলল, "কেমন মা তুমি? এইটুকু একটা বাচ্চাকে কেউ হাটায়? তাও এই ভীড়ের মধ্যে?
সাবা আকাশ থেকে পড়ল। বিয়েই তো করল না। সাবা মহিলাটির ইশারার দিকে লক্ষ্য করে দেখল একটা পিচ্চি মেয়ে তার পিছনেই দাড়িয়ে আছে। সাবা মেয়েটিকে যাওয়ার জন্য পথ দিল। কিন্তু গেল না। সাবার পাশেই দাড়িয়ে রইল। আশেপাশে ভীড় জমে গেছে। পিচ্চি মেয়েটা সাবার কোলে উঠার জন্য হাত বাড়িয়ে দিল। আরেক মহিলা বলে উঠল, "স্বামীর সাথে ঝগড়া হলে বুঝি সন্তানকে কষ্ট দেয়? এত পাষাণ? সাবা কিছু বলল না। কারণ এত ভীড়ের মধ্যে মুখ খুলে বিপত্তিতে পড়তে চায় না। সাবা হাটা দিল। পিচ্চি মেয়েটাও সাবার পিছু হাটা দিল। তাড়াতাড়ি হাটতে যেয়ে পড়ে গেল এবং কান্না শুরু করল। শত হলেও সাবা একটি আবেগী মেয়ে। তাই এসে কোলে তুলে নিল। তারপর একটা রেষ্টুরেন্টে বসল।
.
> তোমার নাম?
~ সুবা।
সাবা ও তার বোন বেশ অবাক হল। নাম শুনে যে কেউই ভাববে মা মেয়ে।
> তোমার বাবা মা কোথায়?
সুবা সাবার দিকে আঙ্গুল তুলল।
সুবার বোন সন্দেহজনক ভাবে জিজ্ঞেস করল
= আপু এটা কি সত্যিই ………
> এক থাপ্পড় দিব। তুই আমাকে চিনিস না?
.
সাবা সুবাকে নিয়ে পুলিশ স্টেশনে গেল। তারপর পড়ল আরও মহা বিপদে। কারণ সুবাকে যখন পুলিশ জিজ্ঞেস করল তোমার মা কোথায়? সুবা সুন্দরমত সাবার দিকে আঙ্গুল তুলে দিল। ইন্সপেক্টর তো রেগেমেগে আগুন। "পারিবারিক ঝামেলা পুলিশ স্টেশনে নিয়ে আসেন কেন? দেখতে তো ভদ্র ঘরের মনে হয়।" আরও অনেক কথা শুনাল। সাবা বলল
> আমি এখনো বিয়েই করিনি।
অতঃপর সাবার ফ্যামিলিকে ডাকা হল। যদিও ফ্যামিলির সবাই বলল সাবা অবিবাহিত তবুও ইন্সপেক্টর মানতে নারাজ। কারণ শিশুরা মিথ্যা বলতে জানে না। তারওপর নামও মিল। তাই ইন্সপেক্টর অর্ডার দিল সুবাকে নিয়ে যেতে এবং বলল আগামী তিন মাস পর্যন্ত শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে সরকারি কর্মকর্তা এসে সুবার খবর নিবে।
.
সবার মাথায় বাশ পড়ল। বাসায় এসে সবাই সাবার উপর ফেটে পড়ল। সাবাও ফেটে পড়ল।
> একদম চুপ। তোমরা আমাকে চিন না? এত বড় অপবাদ দেয়ার আগে ভাব না? সব কয়টার মাথা ফাটিয়ে দিব।
সাবার মা বাবা সাবার উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাসী। আজ পর্যন্ত মেয়েটা এমন কোনো কাজ করেনি যাতে বাবা মা ছোট হবে। সেখানে এত বড় কান্ড তো করতেই পারে না। হয়তো সুবার মা সাবার মতই দেখতে। কিন্তু এসব তো ছবিতে হয়। তাছাড়া সাবার কোনো জোড়া বোন নেই।
.
অন্যদিকে সুবা কাদতে লাগল। সবাই সুবার কান্না থামতে ব্যস্ত হয়ে গেল। কিন্তু থামছে না। সাবার মা বলল, "তুই নিয়ে দেখ।" সাবা কোলে একটু পরেই থেমে গেল। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
.
সাবার মা সুবার জন্য তরল খাবার আনল। কিন্তু তার হাতে খাচ্ছে না। সাবার মা বলল, "তুই একটু দেখ না?" বাধ্য হয়ে সাবা খাওয়াতে লাগল। সুবা বেশ আনন্দের সাথেই খেল। সবাই আবারও অবাক।
> আমি কিন্তু সব কয়টার চোখ উপড়ে ফেলব।
সবাই সরে গেল। সুবা খেয়ে দেয়ে সাবার কোলেই ঘুমিয়ে পড়ল।
.
অন্যদিকে কিছুদিন পরপর সরকারি দুজন কর্মকর্তা এসে পর্যবেক্ষণ করতেছে। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর সাবা নিজ থেকেই সুবার সব কিছু খেয়াল রাখতে লাগল। ধীরে ধীরে সাবা সুবার মায়ে পরিণত হল। অর্থ্যাৎ একজন মা যা যা করে। সাবাও তাই তাই করতে লাগল। সবাই ব্যাপারটাকে স্বাভাবিকভাবেই নিল। কারণ বাকিরাও সুবার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গেছে। পিচ্চিরা এমনই। সবাই তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।
.
সুবাকে নভেম্বরে পেয়েছিল। সুবা স্পষ্ট ভাবে কথা বলতে পারে। তাই বছর ফুরাতেই সুবাকে স্কুলে ভর্তি করাল। সাবার বাবার বন্ধুর স্কুল। তাই সুবার বাবার নাম নিয়ে ঝামেলা হল না। অদ্ভুত ব্যাপার হল সাবা তার বাবার জন্য কান্নাকাটি করে না। সুবা প্রথম প্রথম জানতে চাইত তোমার বাবা কি করে কোথায় থাকে ইত্যাদি। কিন্তু এখন আর জানতে চায় না।
.
একদিন সাবার বাবা সাবাকে জিজ্ঞেস করল, "তোর ফিউচার প্ল্যান কি?"
> এইতো একটা ব্যাংকে এপ্লাই করেছি। ঠিক হলেই জয়েন করব।
-- তুই এতদিন পড়তে চেয়েছিস। আমি পড়িয়েছি। কখনো বিয়ের কথা বলিনি। কিন্তু এখন তোর বিয়ে দেয়াটা আমার জন্য ফরজ হয়ে দাড়িয়েছে।
> কিন্তু বাবা সুবার কি হবে?
-- ওকে কি এতিমখানায়………
> এটা কিভাবে ভাবলে বাবা? আমি সুবাকে ছাড়া থাকতে পারব না।
-- তোর নিজেরও তো একটা জীবন আছে।
> সুবাই আমার জীবন।
.
সাবা উঠে চলে গেল। ব্যাংকে জব শুরু করল। সারাদিন সাবার বোন সুবার দেখাশুনা করে। এভাবে কেটে গেল এক মাস। আজ সাবা তার প্রথম বেতন পেয়েছে। তাই সবার জন্য কিছু না কিছু এনেছে।
~ আমার জন্য কি এনেছ?
> এই নাও তোমার গাড়ি।
সুবা গাড়ি নিয়ে সারা বাড়ি দৌড়ে বেড়াচ্ছে। সুবার মুখে হাসি দেখে সাবা খুশি হল।
.
সাবার বাবা সুবাকে সাবার থেকে আলাদা করার চেষ্টায় আছে। নয়তো মেয়ের বিয়ে দিতে কষ্ট হবে। একদিন শীতের সকালে সাবার বাবা দেখল সাবা সুবা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে সোফায় ঘুমিয়ে আছে। সে এক অপরূপ দৃশ্য। এদিক সেদিক বেশ কিছু খেলনা পড়ে আছে। বুঝলেন যে মা মেয়ে খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়েছে। সাবার বাবা একটা কম্বল এনে তাদের গায়ে দিয়ে দিল। তার মনটা গলে গেল। কে বুঝবে সুবা সাবার আপন মেয়ে না? সাবা এখন একজন মায়ের মতই সুবাকে ভালবাসে। নিজের সন্তানই ভাবে। আর সন্তানকে মায়ের কোল থেকে আলাদা করা মহাপাপ। এই পাপের ক্ষমা নেই। তাই তিনি নিজের চিন্তাভাবনা বদলে ফেললেন।
.
-- তোর জন্য একটা ছেলে দেখেছি। বিকালে *** রেষ্টুরেন্টে দেখা করিস। তোর পছন্দ হলে কথা আগে বাড়াব।
> সুবার কথা বলেছ?
-- ছেলে তোকে - সুবাকে চিনে।
সাবা বেশ অবাক হল। বিকালে সাবা জব থেকে এসে সুবাকে রেডি করতে লাগল।
-- তুই একা গেলে হয় না?
> সুবাও আমার লাইফের অংশ। তাই ওকে নিয়ে যাওয়ার খুব দরকার।
-- তোর ইচ্ছা।
.
অতঃপর মা মেয়ে রেষ্টুরেন্টে হাজির।
> তুই?
- হুম। এনি প্রব্লেম? (সাহেদ)
> ও আচ্ছা মনে মনে তুই এসব লালন পালন করে রেখেছিস?
- তোকে অনেক ভালবাসিরে। সুবাকেও বাসি।
> একটু সময় দে।
.
সাবা সাহেদকে আগ থেকে চিনে। ভার্সিটিতে এক সাথেই পড়ত। ভার্সিটির সব ক্লোজ ফ্রেন্ডরা সুবাকে চিনে।
.
সাবা রাজি হল। বাট বিপত্তি বাধলো সুবাকে নিয়ে।
~ উনি আমার বাবা না। না না না।
> স্যরি রে। সুবা তার বাবাকে চিনে। তাই ও রাজি হচ্ছে না।
.
সাহেদ সুবার কাছে যেয়ে বসল। কিছু বলতেই যাবে সুবা উঠে চলে গেল। সাবাও চলে এলো। তারপর বাসায় চলে এলো। সাবার বাবা জানার পর রাগারাগি করল। সাবা কিছু বলল না। সাহেদ প্রতিদিন সাবার বাসায় এসে সুবার সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু সুবা সাহেদকে একটুও দেখতে পারে না। দেখলেই ভেংচি দিয়ে ফুপ্পির (সাবার বোন) কাছে চলে যায়। সাবা জবে থাকে।
.
-- ছেলেটা খুব ভাল। তোকে খুব ভালবাসে।
> জানি কিন্তু সুবা সাহেদকে বাবাকে হিসেবে মেনে নিতে রাজি না। আর পরিবারে সুবাই তো গুরুত্বপূর্ণ হবে। আশাকরি আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
-- আল্লাহ জানে কবে আমি আমার দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাব।
.
সাবা সুবাকে নিয়ে লেকে ঘুরতে এল।সাহেদও আসবে। সুবা খেলা করতেছে। কিছুক্ষণ পর এসে বলল
~ আম্মু আম্মু! বাবা এসেছে।
সাবা বুঝল সাহেদকে দেখেছে।
> তুমি মেনে নিয়েছ?
~ তাড়াতাড়ি চল।
.
সুবা সাবাকে একটু অন্যদিকে নিয়ে এসে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বলল
~ ওই দেখ বাবা।
সাবা বেশ অবাক হল। কারণ এটা তো অন্য কেউ। সুবা দৌড় দিল। সাবাও পিছু এলো। সুবা যেয়েই লোকটাকে জড়িয়ে ধরে বলল
~ বাবা বাবা!
.
লোকটা সুবাকে দেখে পরম আদরে জড়িয়ে ধরে অঝোর বেগে কান্না শুরু করল।
~ বাবা, দেখ আমি আম্মুকে নিয়ে এসেছি।
লোকটা সাবাকে দেখে যেন আকাশ থেকে পড়ল।
.
সাবার দুনিয়াটা অন্ধকার হয়ে গেল। চোখে যেন সব ঝাপসা দেখতেছে। কি করবে বুঝেই উঠতে পারতেছে না।
~ বাবা চল না বাসায় যাব।
> তুমি আমার সাথে যাবে না?
~ আমরা এক সাথে যাব।
সাবা লোকটাকে প্রশ্ন
> আমাকে একটু বলবেন সুবার মা কে?
.
লোকটা যা বলল তার সারমর্ম হল সুবার মা পরকীয়া করে চলে গেছে। তাই রাগে দুঃখে অভিমানে সুবার বাবা সুবাকে অন্য এক মেয়ের ছবি দেখিয়ে বলতো এই তোমার মা। রাগ করে লুকিয়ে আছে। খুজে বের করতে হবে। ভাগ্যক্রমে সেই ছবিটা সাবার। যার ফলে সুবা সাবাকে মা বলে। সেদিন শপিংমলে সুবা সাবাকে দেখে চুপিচুপি পিছে চলে এসেছিল। কারণ সুবা বাবার ভালবাসা থেকে বঞ্চিত ছিল। ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য মেয়েকে সময় দিতে পারত না। যখন ঘরে থাকত রাগারাগি করত। যার ফলে সুবা তার মায়ের সাথে (ছবি অনুযায়ী সাবাই তার মা) চলে এসেছিল।
.
> দেখুন আমি আপনাকে সরাসরি বলে দিচ্ছি। আমি সুবাকে এতদিন মায়ের স্নেহ মমতা দিয়ে লালন পালন করেছি। ও আমার কাছেই থাকবে।
~~ আপনি বোধহয় আমাকে চিনেন না। আমি জিহান খান।
> আপনাকে চিনে আমার কোনো লাভ নেই। চল মামনি। আমরা আমাদের বাসায় যাব।
.
সাবা সুবাকে নিয়ে যেতে লাগল কিছু লোক (বডিগার্ড) সাবাকে আটকে ধরে সুবাকে ছাড়িয়ে নিতে লাগল। সাবা বাঁচাও বাঁচাও বলে চিতকার করল। লেকের লোকজন সেখানে জমা হল। কিছু লোক সাবার সাহায্যে এগিয়ে এল। জিহান খান সবাইকে বলতে লাগল, "ও আমার স্ত্রী। পরকীয়া করে এখন আমার মেয়েকে নিয়ে ভেগে যাচ্ছে।"
> মিথ্যা বলতে লজ্জা করে না?
~~ বিশ্বাস না হলে আমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করুন।
.
লেকের লোকজন সুবাকে জিজ্ঞেস করল, তোমার বাবা মা কে? সুবা, জিহান ও সাবার দিকে ইশারা দেখাল। অতঃপর লোকজন সাবাকে পরকীয়ার নাম দিয়ে লাঞ্ছনা দিতে লাগল। জিহান সুবাকে নিয়ে যেতে লাগল। সুবা যেতে চাচ্ছে না। কান্নাকাটি শুরু করল। অন্যদিকে কোলাহল দেখে সাহেদও এদিকে চলে এল। এসে সব শুনে বন্ধুদের ফোন দিল। পাশেই তাদের আড্ডাখানা। জিহান সুবাকে নিয়ে গাড়িতে উঠতেই যাবে তখনই একদল ছেলে এসে হামলা দিল। সুবাকে কেড়ে নিল। অনেক ছেলে হওয়ায় জিহান কিছু করতে পারল না। কিন্তু একজন বডিগার্ডকে সাবার পিছনে পাঠাল।
.
সাবা সুবাকে নিয়ে বাসায় এসে ব্যাগ গুছাতে লাগল। বাবা জিজ্ঞেস করায় সব খুলে বলল।
-- তো এখন কি করবি?
> আমি সুবাকে নিয়ে অন্য শহরে যাব।
~ চল আম্মু তাড়াতাড়ি চল। আমি বাবার কাছে থাকব না। বাবা পচা। আমাকে তোমার কাছ থেকে আলাদা করতে চায়।
> কেউ তোমাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না।
.
হঠাৎ ঘরে পুলিশ চলে এলো। তারপর সুবাকে নিয়ে গেল। সাবা অনেক চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। সাবা কাদতে কাদতে বেহুঁশ হয়ে গেল। অন্যদিকে সুবারও একই অবস্থা। সাহেদ থেকে জানতে পারল জিহান অনেক ধনী লোক। অনেক উপরে তার হাত রয়েছে। তার সাথে পেরে উঠা যাবে না।
.
সুবার শোকে সাবা না খেতে খেতে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হল। বেশ কিছুদিন হয়ে গেল তবুও সাবার অবস্থার উন্নতি হল না। একদিন হাসপাতালে জিহান খান এলো। সাবার বাবা রাগে ফেটে পড়ল।
-- টাকার জোর দিয়ে মায়ের কোল থেকে সন্তানকে কেড়ে নিয়েছেন। এই পাপের শাস্তি একদিন না হয় একদিন পাবেনই।
~~ জি আংকেল ঠিক বলেছেন। শাস্তি পেয়েছি। আজ আমার মেয়ে আমার চেহারাও দেখতে চায় না। ভুলটা শোধরাতে এসেছি। এই নিন আপনাদের সুবা।
.
সাবার বাবা দেখল সুবা এসেছে। এসেই তাকে জড়িয়ে ধরে বলল
~ নানু ভাই আম্মু কোথায়? আমি আম্মুর কাছে যাব।
.
সুবার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে সেও এতদিন খাওয়া দাওয়া ঠিক মত করেনি। কিছুক্ষণ পর সাবার জ্ঞান ফিরল।
-- তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে।
আড়াল থেকে সুবা বের হল। সাবা উঠেই হাত বাড়িয়ে দিল। সুবা সাবার কোলে ঝাপিয়ে পড়ল। সাবা - সুবা কেদে উঠল। জিহানকে দেখে সাবা ভয়ে সুবাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
~~ ভয় নেই। আমি সুবাকে নিতে আসিনি। আপনার মেয়ে আপনার কাছেই থাকুক। এই নিন। (কাগজপত্র)
> এগুলো কি?
~~ সুবার অধিকার। আমার সম্পত্তির অর্ধেক। আমি দেশ ছেড়ে চলে যাব। এখানে থাকলে হয়তো সুবাকে আবার কেড়ে নিতে চাইব। বাবার মন কখন আবার স্বার্থপর হয়ে উঠবে কে জানে। তাই সব ছেড়ে চলে যাচ্ছি। জানি আপনি সুবাকে অনেক ভালবাসা দিবেন। তাই এই ব্যাপারে কিছু বললাম না।
.
জিহান চলে গেল। সাবা দেখল সুবার মুখটা কেমন যেন হয়ে আছে। সাবা সাহেদের সাথে একা কথা বলতে চাইল।
.
> তুই আমাকে কতটুকু ভালবাসিস?
- হিসাব করা সম্ভব না।
> সুবার প্রতি আমার ভালবাসা তার চেয়েও লক্ষ কোটি বেশি।
- জানি।
> তুই আমাকে ভুলে যা। কারণ সুবা জিহান খানকেই বাবা হিসেবে চিনে।
- সুবার প্রতি তোর ভালবাসার কাছে আমার ভালবাসা কিছুই না। তোরা ভাল থাক এই দোয়াই করি।
.
পরেরদিন এয়ারপোর্টে
~~ আপনি এখানে?
> সুবা তার বাবাকে ছাড়া থাকবে কিভাবে?
~~ ও তো আমাকে দেখতেই পারে না।
> কারণ আপনি ওকে আমার কাছ থেকে আলাদা করতে চেয়েছিলেন। সুবাকে ছাড়া থাকতে পারবেন?
জিহান চুপ করে রইল। চোখ টলমল করছে।
> আমার কাছে একটা উপায় আছে। আপনিও সুবার সাথে আনন্দে থাকতে পারবেন।
~~ বুঝলাম না।
> শুনেন ……………
.
৫ বছর পর
> এই তুমি এখনো উঠতেছ না কেন? সুবাকে স্কুলে নিয়ে যাবে কে?
~~ আমি আর কে। (জিহান)
> যাও উঠে ফ্রেশ হও।
.
অন্যদিকে পিচ্চির কান্নার শব্দ।
> তোমাকে ডাকতে ডাকতে রিয়ান উঠে গেল। অসহ্য আর পারি না তোমাদেরকে নিয়ে।
.
সাবা রিয়ানকে কোলে নিতে এসে দেখল সুবা রিয়ানকে কোলে নিয়ে খেলা করছে। সাবা তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর জিহান এসে বলল
~~ এবার তুমি কোথায় হারালে?
> দেখ। (সাবা রিয়ানের দিকে ইশারা করল)
~~ হুম ভাইবোনের ভালবাসা। সব তোমার জন্য সম্ভব হয়েছে। তোমার ঋণ আমি কখনোই শোধ করতে পারব না।
> ন্যাকামী না করে তাড়াতাড়ি রেডি হও।
.
কিছুক্ষণ পর রেডি হয়ে জিহান সুবাকে নিয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। সুবাকে স্কুলে দিয়ে জিহান অফিসে যাবে। একটা সুখী পরিবার তাদের।
.
সেদিন এয়ারপোর্টে সাবা জিহানকে বিয়ের করার কথা বলল। এতে দুজনই সুবার কাছে থাকতে পারবে। তাই জিহানও রাজি হল। বিয়ের একটা নিয়ম হল স্বামী স্ত্রী একে অপরের প্রেমে পড়বেই। কিছু মাস পর সেটাই হল।
.
মা সন্তানের সুখের জন্য সকল প্রকার ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকে। তাই তো সেদিন সাহেদকে ভালবাসার পরেও সুবার খুশির জন্য জিহানকে বিয়ে করল।
.
লিখাঃ নিশি চৌধুরী (রাত্রির আম্মু)
©somewhere in net ltd.