নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিনোদন ও জাগরণের চেষ্টা। হরর, থ্রিলার, রম্য এই জাতীয় কিছু লেখার চেষ্টায় আছি। (০২/০২/১৭)

Nishi Chowdhuri

আমি মানুষ।

Nishi Chowdhuri › বিস্তারিত পোস্টঃ

রহস্যের অন্তরালে সিরিজের রাজবাড়ি

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৪৪

সিরিজের নামঃ রহস্যের অন্তরালে
.
গল্পের নামঃ রাজবাড়ি
.
(গল্প, কাহিনী, চরিত্র, স্থান সব কাল্পনিক)
.
ছেলেটার নাম আরজু ইসলাম। একজন ডিটেকটিভ। দু বছর আগে পুলিশে জব করেছিল। কিন্তু স্বাধীন ভাবে কাজ করতে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় জব ছেড়ে এখন ডিটেকটিভের কাজ শুরু করেছে। তার সাথে আছে তার এক পরিচিত ছোট ভাই আবিদ। পার্টটাইম জব হিসেবে সে আরজুর সাথে কাজ করে। মাস শেষে নিজের হাত খরচ ও আবিদের বেতন জোগাড় হয়ে যায়। বাবা গ্রামের জমিদার। তাই পরিবারের চাপ আরজুর কাঁধে নেই।
.
আরজু প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কার্যালয়ে বসে। আর আবিদ বিকালে আসে। ছোট একটা রুম ভাড়া নিয়েছে। সেটাই তাদের কার্যালয়।
.
কার্যালয়ে
~ ভাই একজন এসেছে আপনার সাথে কথা বলতে চায়। (আবিদ)
- ভেতর আন। (আরজু)
লোকটা ভেতরে এলো। নাম সুজন।
>> আপনার সাথে একটা কেইসের ব্যাপারে কথা বলঅতে এসেছি।
- জ্বি বসুন।
আরজু কেইস সম্পর্কে জেনে নিল। মূলত কেইসটা হল একটি মেয়ের মৃত্যু নিয়ে। খুলনার বাগেরহাটের মেদিনীপুর এলাকার বেশ পুরাতন একটি বাড়িতে একটি মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। বাড়িটার নাম রাজবাড়ি।
.
বেশ মোটা অংকের টাকার প্রস্তাব দিল সুজন। যা দিয়ে এই মাস কেন আগামী ৬/৭ মাস আরামে দিন কাটাতে পারবে আরজু ও তার এসিস্ট্যান্ট আবিদ। তাই আরজু হ্যা বলে দিল। দুদিন পর সেখানে যাবে বলে দিল। সুজনও সাথে যাবে।
.
দুদিন পর তারা তিনজনই মেদিনীপুর পৌছাল। তারপর একটি হোটেলে উঠল। ফ্রেশ হয়ে আরজু কেইসের ব্যাপারে থানার ইন্সপেক্টরের সাথে আলাপ করতে গেল। আর আবিদকে বলে গেল রাজবাড়ির আশপাশের লোকজন থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য।
.
থানায় এসে
- আমি রাজবাড়ির ঘটনাটি সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।
= দেখুন কেইসটা নিয়ে এখনো কাজ চলছে। তাই কোনো ইনফরমেশন দেয়া যাবে না। (ইন্সপেক্টর)
- আমি শুধু মেয়েটি সম্পর্কে জানতে চাই।
= আপনি তিন নাম্বার টেবিলে যান। ওখানে মেয়েটির ইনফরমেশন পাবেন।
.
আরজু তিন নাম্বার টেবিলে যেয়ে মেয়েটির ডিটেইলস নিয়ে হোটেলে চলে এলো।
- কোনো ইনফরমেশন পেলি?
~ ভাই কেইসটা ছেড়ে বাসায় চলেন।
- কেন? কি হইছে?
~ ভাই এলাকার মানুষের কথা অনুযায়ী ওই বাড়ি ভুতের বাড়ি।
- কি! (হাসি দিয়ে)
~ হ্যাঁ ভাই। ওই বাড়ির সবাই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। আর যে মার্ডারটা হয়েছে সেটা নাকি ওই ভুতেই করেছে।
- তুই শিক্ষিত হয়ে এসব বলছিস?
~ ভাই শিক্ষিত দিন পর্যন্ত। রাত হলে শিক্ষা মাথায় থাকে না। থাকে ভুতের ভয়।
- শুন এসব কিছুই না। এসব হল গুজব। যা দিয়ে সত্য ঢাকার চেষ্টা করা হয়।
~ ভাই আরেকবার ভাবুন।
- চুপ।
.
হোটেলে এসে দুটা রুম নেয়া হয়েছিল। একটাতে আরজু ও তার এসিস্ট্যান্ট আবিদ। অপরটিতে সুজন। সকালে উঠে আরজু morning walk করতে বের হল। রাজবাড়ির আশেপাশে হাটতে লাগল। বেশ বড় এলাকা জুড়ে বাড়িটা তৈরি। চারদিকে বাগান ও খোলা মাঠ। মাঝখানে বাড়িটা। সত্যিই রাজবাড়ি। কোনো এজ রাজা এই বাড়িটা তৈরি করেছিলেন।
.
হাটাহাটির এক সময় আরজু একজন বৃদ্ধ লোককে দেখল। তিনিও হাটাহাটি করছে।
- আসসালামু আলাইকুম আংকেল।
-- ওয়া আলাইকুমুস সালাম। তোমাকে তো আগে কখনো দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না।
- আমি একটা কাজে কিছুদিনের জন্য এখানে এসেছি।
-- ও!
- বাড়িটা খুব সুন্দর। কিন্তু ভেতরে কাউকে দেখা যায় না। কাদের বাড়ি?
-- রাজ সাহেবের। বাড়ির সবাই শহরে উঠে গেছে তাই কেউ থাকে না।
- এটলিস্ট একটা কেয়ারটেকার রাখলেও তো পারে। নয়তো নষ্ট হয়ে যাবে।
-- কেউ থাকতে চায় না। দুদিন থাকে তারপর পালিয়ে যায়।
- কেন?
-- সবাই বলে বাড়িতে নাকি অদ্ভুত শব্দ শুনা যায়। তাছাড়া কিছুদিন আগে একটা মেয়ের লাশ পাওয়া গেছিল।
- ও! কি হয়েছিল?
-- তা জানি না। আচ্ছা আমাকে এখন যেতে হবে।
- আচ্ছা। বাই।
.
অদ্ভুত শব্দ! কথাটা আরজু মাথায় রাখল। আরজু হোটেলে চলে এলো।
~ ভাই একজন এসে এই খামটা দিয়ে গেছে। (আবিদ)
কনস্টেবলকে ঘুষ দিয়ে কেইসের একটা কপি আনা হয়েছে। আরজু খাম খুলে ভেতরে থাকা কাগজটা বের করে পড়তে লাগল। মূলভাব হল - একদিন এলাকার লোকজন রাজবাড়ি থেকে খুব বাজে একটা দূর্গন্ধ পাচ্ছিল। সময়ের সাথে দূর্গন্ধ বাড়ল। অতঃপর পুলিশকে ফোন দেয়া হল। পুলিশ এসে বাড়িটা সার্চ করল। তারপর মেয়েটির লাশ পেল। মেয়েটির নাম ইয়াসমিন।
.
আরজু ও তার এসিস্ট্যান্ট ইয়াসমিনের বাসায় গেল। সেখানে যেয়ে জানতে পারল ইয়াসমিন রহস্যপ্রিয় মেয়ে। যেখানে এসব ভুতের রহস্য থাকে। সেখানে ইয়াসমিন তার বন্ধুবান্ধব নিয়ে পরিদর্শনে যায়। আরজু খোঁজখবর নিয়ে ইয়াসমিনের কিছু বন্ধুদের খুঁজে বের করে জিজ্ঞাসাবাদ করল। তারা সবাই বলল বাড়িটাতে ভুত আছে। আর সেটা তারা নিজ চোখে দেখেছিল। দেখার পর তারা সবাই ভয়ে বেরিয়ে গেছিল। কিন্তু ইয়াসমিন বের হয়নি। যার পরিনামে তাকে জীবন দিতে হয়েছে। আরজু আরও জিজ্ঞাসা করল যে ইয়াসমিনের কোনো শত্রু আছে কিনা। সবাই বলল না। ইয়াসমিন খুব ভাল মেয়ে। সবার সাথেই বন্ধুত্ব রাখে।
.
অতঃপর আরজু ও আবিদ মেদিনীপুর ফিরে এলো। সুজনের সাথে দেখা হল। সুজন জিজ্ঞেস করল, "কতদূর এগিয়েছেন?"
- যেখানে ছিলাম সেখানেই আছি। অর্থ্যাৎ খালি হাত। তবে খুব শীঘ্রই সব বের করব।
.
আরজু ও আবিদ অনেক খোঁজাখুঁজির পর কয়েকজন কেয়ারটেকারের খবর পেল। যারা আগে রাজবাড়ির কেয়ারটেকার ছিল। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করায় তারাও বলল যে রাত ১১টা বাজলেই নুপুরের শব্দ শুরু হত। তাই তারা পালিয়েছিল।
.
অতঃপর আরজু ও আবিদ নিজ রুমে এসে ফ্রেশ হল।
~ ভাই শুনলেন তো সবাই নিজ চোখে ভুত দেখেছে।
- শুন ভুত বলতে কিছু নাই। তবে বাড়িটাতে কিছু একটা তো আছেই। আর সেটাই বের করতে হবে। চল রেডি হ। আজ আমরা রাজবাড়ির চারপাশ পরিদর্শন করব।
~ ভাই! (ভয় + আতংক)
- চল। (রাগ)
.
সন্ধ্যার পর রাজবাড়ির দিকে কেউ আসে না। আরজু ও আবিদ বাড়ির সামনে খোলা মাঠে একটা তাবু তৈরি করল। ঘড়ির কাটা নিজ ছন্দে চলতে লাগল। ৮টা, ৯টা, ১০টা। সবকিছু ঠিকই আছে। কিন্তু ১১টার পর আরজু ও আবিদ কিছু একটা শুনতে পেল। আবিদ কেপে উঠল।
~ ভাই শুনছেন! (ভয়)
- তুই চুপ থাকলে তো শুনব। একদম চুপ।
.
দুজনই চুপচাপ মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগল। কিছুক্ষণ পরপর নুপুরের শব্দ শুনা যাচ্ছে।
~ ভাই এখনো সময় আছে ফিরে চলেন।
- চল বাড়ির ভেতরে যাই।
~ কি বলেন ভাই! তাছাড়া কোনো সমস্যা হলে পুলিশ আমাদেরকে ধরবে।
- ঠিক বলেছিস। আগে পারমিশন নিতে হবে।
.
সারারাত দুজন সেখানেই ছিল। সারারাত ধরে কিছুক্ষণ পরপর সেই নুপুরের শব্দ শুনেছিল তারা। পরেরদিন সকালে আরজু রাজবাড়ির মালিকের বাসায় এলো। পুলিশের নাম দিয়ে।
.
জ্বি বলুন। (ইলিয়াস)
- বাড়িটা ছেড়ে এখানে কেন উঠলেন?
আমাদের সবকিছুই এখানে। ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজ, আমাদের অফিস।
- বাড়িটার দেখাশোনার জন্য কাউকে রাখেন না কেন? বাড়ি তো নষ্ট হয়ে যাবে।
অনেককেই রেখেছিলাম। দুদিন থেকে পালিয়ে যায়।
- অনেক কেয়ারটেকার বলেছে রাত হলে বাড়িটাতে কিছু শব্দ শুনা যায়।
আমি এই ব্যাপারে কিছু জানি না।
- আচ্ছা যে মেয়েটার লাশ পাওয়া গেছে। সে কি আপনাদের রিলেটিভ?
না।
- ঠিক আছে। আমি আসি। প্রয়োজন হলে আবার আসব।
.
অতঃপর আরজু তার এক পরিচিত পুলিশ বন্ধুর সহায়তায় মেদিনীপুর থানার ইন্সপেক্টর থেকে রাজবাড়িতে ইনভেস্টিগেশনের অনুমতি নিল। তারপর হোটেলে এসে সুজনের সাথে দেখা করল। তাকে বলল যে আজ রাজবাড়িতে থাকব। আশাকরি শব্দের রহস্য বের করতে পারব।
.
(দুপুর)
রুমে এসে আরজু আবিদকে বলল
- রেডি থাক। আজ রাত রাজবাড়িতে থাকব।
~ ভাই আপনার জন্য একটা সুখবর এনেছি।
- কি?
~ রাজবাড়ির পুরাতন এক কাজের লোককে খুঁজে বের করেছি। তিনি ২০ বছর ধরে সেখানেই কাজ করেছেন।
- কই?
~ এইতো ৫মিনিটের পথ।
.
অতঃপর তারা সেই লোকের কাছ থেকে গেল। প্রথমে কিছু বলতে চায়নি লোকটা। পরে জেলের হুমকি দেয়ার পর সব বলে দিল। সেগুলো হল - রাজবাড়িতে এসব অদ্ভুত কান্ড শুরু হয়েছে সোনিয়ার আত্মহত্যার পর। সোনিয়া হল রাজ পরিবারের ছোট মেয়ে। একটা ছেলেকে ভালবাসত। কিন্তু পরিবারের লোকজন মেনে না নিয়ে জোর করে অন্যকারো সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছিল তাই সোনিয়া পাখার সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেছিল। তারপর থেকে এসব শুরু হয়েছে। সোনিয়ার আত্মা বাড়িতে ঘুরত। যার ফলে বাড়ির লোকজন রাতে ঘুমাতে পারত না। একে একে বাড়ির সবাই সোনিয়ার আত্মাকে দেখেছিল। যার ফলে সবার মাঝে ভয় জন্মেছিল। তাই সবাই বাড়ি ছেড়ে শহরে উঠেছে।
.
আরজু তথ্যগুলো ইন্সপেক্টরকে জানাল। কিন্তু ইন্সপেক্টর এই কেইস নিয়ে আগাতে চাচ্ছে না। তাই আরজু নিজেই রাজবাড়ির লোকজনের সাথে আবার কথা বলতে গেল।
.
(বিকাল)
আপনি আবার? (ইলিয়াস)
- কি করব বলেন! সত্য লুকিয়ে রাখলে তো সেটা বের করার জন্য আসতেই হয়।
কিসের সত্য?
- আপনার ছোট বোনের মৃত্যু কিভাবে হয়েছিল?
দু…দু…দূর্ঘটনায়।
- হুম। আজকাল দূর্ঘটনায় মানুষ পাখার সাথে ঝুলে যায় তাই না?
.
ইলিয়াস কিছুক্ষণ চুপ করে ছিল। তারপর সব বলে দিল সাথে এটাই বলল যে পরিবারের দুর্নাম যেন না হয় তাই সবাই এই ব্যাপারটা ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল।
বাড়িটা বিক্রি করে আমরা এই শহর ছেড়েই চলে যাব।
- কেইস সমাধান না হওয়া পর্যন্ত শহরের বাইরে যাবেন না।
জ্বি আচ্ছা।
.
আরজু হোটেলে ফিরে এসে রাতের প্রস্তুতি নিতে লাগল। আজ রাত তারা রাজবাড়িতে থাকবে। সুজনও সাথে যাবে।
.
অতঃপর সন্ধ্যার হল। তিনজনই রাজবাড়িতে এলো। ভেতরে ঢুকল। এমন পরিবেশে সবার গা একটু ছমছম করে উঠে। তাদেরও হল। আবিদ তো রীতিমতো ঘাবড়ে আছে। ভেতরে ঢুকলো। বাতি জ্বালানোর চেষ্টা করল কিন্তু বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। টর্চলাইট দিয়ে এদিক সেদিক দেখতে লাগল। ইয়াসমিনের লাশ যে রুমে পাওয়া গিয়েছিল সেই রুমে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েছে তিনজন কিন্তু তেমন কিছু পেল না। দেখতে দেখতে ১১টা বেজে গেল। আর শুরু হল নুপুরের ঝুমঝুম শব্দ।
.
~ ভাই এখনো সময় আছে। চলেন বাড়ি যাই।
- চুপ থাকবি নাকি তোকে বেঁধে রাখব?
~ (মুখে আঙ্গুল দিল)
.
আরজু ও সুজন শব্দের পিছু করতে লাগল। কোত্থেকে আসছে এই শব্দ তা বের করার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু শব্দ এক দিক থেকে আসছে না। একেকবার একেক দিক থেকে শব্দ আসছে। এভাবে কেটে গেল রাত।
.
সকালে হোটেলে এসে রুমে ঢুকে তিনজনই ফ্রেশ হয়ে ঘুম দিল। দুপুরে উঠে খাওয়া দাওয়া করে কেইস নিয়ে বসল। অতঃপর সিদ্ধান্ত নিল আজও যাবে। বাজারে যেয়ে ভাল ও উজ্জ্বল আলোর তিনটা লাইট কিনল।
.
অতঃপর আবার সন্ধ্যায় সবাই রাজবাড়িতে ঢুকল। ১১টার অপেক্ষায় বসে রইল। কারণ ১১টার পরেই এবনরমাল একটিভিটি শুরু হয়। ঠিক ১১টার পরে নুপুরের শব্দ শুরু হয়। লাইট মেরে দেখতে লাগল। কিন্তু কিছুই বুঝছে না। "চলে যা। চলে যা।" হঠাৎ এই কথাটা শুনে সবাই থমকে গেল। আবিদ তো রীতিমতো ভয়ে আরজু ও সুজনকে জড়িয়ে ধরল। আরজু এবং সুজনও চিন্তায় পড়ে গেল। কারণ এলাকাবাসীর মতে শুধুই শব্দ শুনা যায়। কিন্তু একটু আগে যা শুনল তাতে সবাই অবাক হল। সময়ের সাথে শব্দের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে লাগল। সেই সাথে "চলে যা। চলে যা।" কথাগুলোও শুনা যাচ্ছে। কিন্তু শব্দের কোনো উত্স খুঁজে পাচ্ছে না।
.
কেটে গেল এই রাতও। হোটেলে এসে ঘুম দিল। ঘুম থেকে উঠে সবাই বেশ চিন্তায় আছে। তবে কি সত্যিই ভুত বলতে কিছু আছে? আজ যাবে কিনা তা নিয়ে সবার মধ্যে একটু জড়তা আছে। আরজু নিচ থেকে সবার জন্য কোল্ডড্রিংস্ক আনতে গেল।।
.
কোল্ডড্রিংস্ক নিয়ে আসার পর
- কি হল সবাই উদাসীন হয়ে আছ কেন?
~ ভাই কেইস ছেড়ে দিবেন? ভুতের বিপক্ষে প্রমাণ পাবেন কই?
- কেইস তো সলভড।
সুজন লাফিয়ে উঠল।
>> কেইস সলভড!!!
- হুম।
~ কিভাবে ভাই?
- একটু আগে আমাকে একজন ফোন করে ধমকি দিয়েছে রাজবাড়ির পিছু ছেড়ে দেয়ার জন্য। তারমানে ভুত টুত কিছুই না। এসব মানুষেরই কাজ। সব অটো রেকর্ড হয়েছে। আমাদেরকে শুধু শব্দের রহস্যটা বের করতে হবে। আজকেই। তোমরা রেডি হও। আমি একটু আসছি।
.
অতঃপর সন্ধ্যার পর সবাই রাজবাড়িতে এলো। ১১টা বাজলো।
- শুন সবাই সাবধান থাকিও। আমাদের উপর অ্যাটাকও হতে পারে।
কিছুক্ষণ পর পর নুপুরের শব্দ শুনতে লাগল। সেই সাথে "পালা নয়তো মরবি।" এটাও শুনতে লাগল।
.
~ ভাই ভুতে তো হুমকি দিচ্ছে।
- তুই এখনো বুঝলি না?
~ কি?
- গতরাতে শুধু "চলে যা" শুনেছি। আজ "পালা নয়তো মরবি" এটা শুনছি। আসলে এসব হল রেকর্ড সিস্টেম। তাই এক কথাই বারবার শুনি। আমাদেরকে যাস্ট স্পিকার গুলো বের করতে হবে।
.
সবাই মিলে ভালমত খুঁজতে লাগল। হঠাৎ যা হল তাতে সবাই ভয়ে আতকে উঠল। তাদের সামনে একটি মেয়ে সাদা কাপড়ে দাড়িয়ে আছে। আবিদ ভয়ে কাপতে কাপতে পড়ে গেল। আরজুও ভয়ে থমকে গেল। নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। সুজনেরও একই অবস্থা। আরজুর হাত থেকে লাইট পড়ে গেল। মেয়েটিও হঠাৎ গায়েব হল গেল। পরিবেশ বেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ রইল। তারপর আরজু টিপটিপ পায়ে সামনে যেয়ে লাইটটা তুলে দাড়াল। আর সাথে সাথেই মেয়েটি আরজুর এক ইঞ্চি সামনে উদীয়মান হল। ভয়ে আরজুর শরীর ভিজে গেল। ভয়ে এক কদমও সামনে - পিছনে দিতে পারছে না। আবিদ এবং সুজন তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি গায়েব হয়ে গেল। আবিদ দৌড়ে এসে বলল
~ ভাই কেইস বাদ দেন। চলে যাই এখান থেকে।
.
আরজু বসে পড়ল। একটু আগে যা ঘটেছে তা কিছুতেই নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। কিন্তু চোখের সামনে দেখা জিনিস বিশ্বাস না করেও তো উপায় নেই। তখনই আরজুর মনে পড়ল ম্যাজিকের কথা। ম্যাজিক তো সবার সামনেই দেখানো হয়। প্রথমে ম্যাজিক মনে হয়। কিন্তু শেখানোর পর জানা যায় আন্তরালের রহস্য। আরজু উঠে দাড়াবে তখনই মনে পড়ল লাইট পড়ার সাথেসাথে মেয়েটিও গায়েব হয়ে গেছিল। কিন্তু লাইট তুলার পরপরই হাজির হয়েছিল। আরজু মেঝেতে লাইট মেরে ঝুকে ভালমত তাকাল। খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ একটা ছোট্ট ছিদ্র দেখতে পেল। আরজু আরও মনোযোগ দিয়ে দেখল বাকিদেরকেও দেখাল।
.
- বুঝলি কিছু?
~ Reflection? প্রতিচ্ছবি?
- হুম। এই ছিদ্র থেকে একটা আলো এসে মেয়েটির ছবি প্রদর্শন করেছিল। যেমনটা প্রজেক্টের দ্বারা করা হয়।
~ তারমানে ……
হঠাৎ কিছু লোক তাদের উপর আক্রমণ করল। তারা নিজেদের বাঁচানোর লড়াই করে যাচ্ছে। একটু পরেই পুলিশ হাজির। সবাইকে ধরে ফেলল।
.
~ ভাই পুলিশ আসল কিভাবে? আমরা তো কল দেই নাই।
- আমি বিকালে ইন্সপেক্টরকে সেই রেকর্ডটা শুনিয়েছিলাম এবং এই বাড়ির বিভিন্ন রুমে সিসিটিভি লাগিয়ে রেখেছিলাম। পুলিশের একটা গ্রুপ পাশে একটা ঝোপের আড়ালে বসে এসব দেখছিল। তাই তাড়াতাড়ি এসেছে।
~ বাহ! ভাই চমৎকার বুদ্ধি। নয়তো আজ মরতেও পারতাম।
- কলের ধমকির সাথে বুদ্ধিটা এসেছে।
= থ্যাঙ্কস মিস্টার আরজু। আপনার জন্য কেইসটা সলভড করার পথ পেলাম।
- ওয়েলকাম। কোনো তথ্য পেলে আমাকে জানাবেন প্লিজ।
= ওকে।
.
পুরো বাড়ি সার্চ মেরে দেয়ালের গায়ে সাদা রংয়ের কিছু ছোট্ট ছোট্ট স্পিকার পেল পুলিশ ও আরজুরা।
.
অতঃপর আরজুরা হোটেলে এসে রুমে যেয়ে ঘুম দিল। সকালে মোবাইলের রিংটোনে আরজুর ঘুম ভেংগে গেল। ইন্সপেক্টরের কল। থানায় আসতে বলল। আরজু ফ্রেশ হয়ে থানায় এলো। তারপর যে তথ্য পেল তাতে আকাশ থেকে পড়ল। যাদেরকে রাতে ধরা হয়েছে তারা আসল ক্রিমিনাল নয়। তবে আসল ক্রিমিনালের নামটা জানা গেছে। তবে নামটা শুনে বেশ অবাক হল। আরজুর সুজনকে কল করে থানায় আনলো।
.
টিংটিং
আরে আপনারা? (ইলিয়াস)
- কেইসটা সলভড হয়েছে তাই এলাম।
তো এখানে আসার মানে বুঝলাম না।
- কেইস সলভড হয়েছে কিন্ত আসামিকে এখনো গ্রেফতার করা হয়নি।
যা বলার সরাসরি বলুন। ফ্যামিলি পার্টি চলছে। আমার তাড়া আছে।
- তাহলে তো বেশ ভালই হল।
.
আরজু ও পুলিশের লোকজন ভেতরে ঢুকল।
- জানেন মিস্টার ইলিয়াস আপনাদের বাড়ি ওসব শব্দ ও আত্মার দেখার কারণ কি?
কি?
- সায়েন্স।
মানে?
- মানে হল আপনাদের বাড়ির চারদিকে ছোট ছোট স্পিকার লাগানো ছিল। যার মাধ্যমে এই আওয়াজ গুলো শুনা যায়। যিনি এই কাজটা করেছেন তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান। তিনি ভয়টা বাড়ানোর জন্য এক ধরণের প্রজেক্টরের আলো ব্যবহার করেছেন। যা নির্দিষ্ট দূরত্বে যেয়ে প্রতিফলিত হয়। সায়েন্সের ভালই প্রয়োগ করেছেন তিনি।
কে সে?
- সে হল আপনার চাচা।
== এসব কি ধরণের ফাইজলামি? (চাচা)
- ফাইজলামি নয় সত্য। আপনার চামচারা আমাদের কাছে গ্রেফতার আছে।
.
আমি বিশ্বস করি না। চাচা এসব কেন করবেন? তাছাড়া চাচা আমাদেরকে অনেক সাপোর্ট করেন।
- এসবের কারণ হল টাকা পয়সা। আপনি যদি সেদিন বাড়ি বিক্রির কথাটা না বলতে তাহলে হয়তো পুরো রহস্যটা উন্মোচন হতে আরও সময় লাগত। আপনাদের রাজবাড়ির জমির মূল্য ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু ভুতের বদনামের কারণে তা কেউই কিনতে রাজি হয় না। আপনার চাচার বন্ধু ২৫০কোটির টাকায় কিনতে রাজি হয়েছে।
এতে তো আমাদেরই উপকারই হয়েছে।
- তা আপনার দৃষ্টিতে। কিন্তু আসলে আপনার চাচার ২৫০কোটি টাকার লাভ হয়েছে। আর এই সেই প্রমাণ। (এক লোক)
আরে উনিই তো আমাদের বাড়ি কিনতে রাজি হয়েছেন।
- মুখ খুল। (লোকটাকে)
.
লোকটাঃ আসলে আমি আপনার চাচার লোক। তিনিই আমাকে বলেছিলেন বাড়ি কেনার প্রস্তাব দিতে। টাকাটাও তিনিই দিবেন। আমি হলাম শুধুমাত্র একটা মাধ্যম।
চাচা আপনি এমন করলেন কেন?
- কারণ আপনার চাচা চাচ্ছে ওই বাড়ির জায়গাতে ফাইভ স্টার হোটেল করবে। আপনার বোনের আকস্মিক মৃত্যুকে তিনি হাতিয়ার বানিয়ে গুজব রটিয়ে সবাইকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেছিলেন। তারপর সুযোগ বুঝে বিক্রয়ের প্রস্তাব এনেছিলেন। আপনার চাচা খুব চালাক মানুষ। কিন্তু ভুল করেছিলেন ইয়াসমিনের হত্যা করে। নয়তো আমার আসা হত না। আর উনারও ধরা পড়তে হত না।
.
আরজু একটু থেমে আবার বলল
- আচ্ছা আপনি ইয়াসমিনকে কেন মারলেন?
চাচাঃ অতিরিক্ত সাহসী মেয়ে। যেখানে সবাই প্রতিচ্ছবি দেখে ভয়ে পালালো। আর সেখানে ইয়াসমিন প্রতিচ্ছবি ধরার জন্য চলে এসেছিল। যার ফলে ও সত্য জেনে গিয়েছিল। তাই ওকে মেরে পাখার সাথে ঝুলিয়ে দিতে হয়েছিল।
.
অতঃপর পুলিশ ইয়াসিনের চাচাকে ধরে নিয়ে গেল। ইন্সপেক্টর আরজু ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেল। আরজুও হোটেলে ফিরে এলো।
.
>> এই নিন আপনার চেক। পরিশেষে সব রহস্যই উন্মোচন করলেন। অসাধারণ!
- এখনো একটা রহস্য বাকি আছে।
>> কি?
- আপনার রহস্য। আপনি এই এলাকার নন। আপনার সাথে রাজবাড়ির কোনো সম্পর্কও নেই। তাহলে কেন আপনি এই কেইস সলভ করার জন্য এত টাকা খরচ করলেন।
>> যার জীবনই ওপারে চলে গেছে। সে টাকা দিয়ে কি করবে?
- বুঝলাম না।
>> ইয়াসমিন ছিল আমার জীবন। দু বছরের রিলেশন ছিল আমাদের। চাকরির প্রমোশনটা পেলেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতাম। কিন্তু তা আর হল না। পুলিশ কেইসটা নিয়ে উদাসীন ছিল। তাই আপনাকে এনেছিলাম। বিয়ের জন্য যে টাকা জমিয়েছিলাম তা দিয়ে এই কেইস সলভ করেছি। এখন আর কোনো বোঝা নেই। আর মিস্টার আবিদ একটু সাহসি হবেন। তাহলে অনেক দূর যেতে পারবেন।
~ জ্বি চেষ্টা করব।
>> চলি আল্লাহ হাফেজ। এই নিন আপনাদের বাসের টিকিট।
আবিদ টিকিট দুটা নিল।
.
সুজন চলে যাচ্ছে। আরজু স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে। একটু পর "সুজন ভাই" বলে ডাক দিল আরজু।
>> জ্বি। (দূর থেকে)
আরজু দৌড়ে এসে
- এই নিন। (চেকটা)
>> এটা তো আপনার।
- না ভাই। এই টাকার বোঝা আমি উঠাতে পারব না। আপনি আমাকে ১৫ হাজার দিন তাতেই হবে।
.
সুজন কিছুক্ষণ আরজুর দিজে তাকিয়ে রইল। তারপর ১৫ হাজার টাকার চেক দিয়ে আল্লাহ হাফেজ বলে চলে গেল। অতঃপর আরজু এবং আবিদও নিজ নিজ গন্তব্যে হাটা দিল।
.
লিখাঃ Nishi Chowdhuri (রাত্রির আম্মু)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.