নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিনোদন ও জাগরণের চেষ্টা। হরর, থ্রিলার, রম্য এই জাতীয় কিছু লেখার চেষ্টায় আছি। (০২/০২/১৭)

Nishi Chowdhuri

আমি মানুষ।

Nishi Chowdhuri › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পের নামঃ রহস্যের অন্তরালে সিরিজে কিডনি

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:১৭

সিরিজের নামঃ রহস্যের অন্তরালে
.
গল্পের নামঃ কিডনি
.
প্রথম দৃশ্য
জনির বাবা বেশ কিছুদিন ধরে খুব অসুস্থ। ডাক্তারের কাছে নেয়ার পর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানতে পারলো যে একটা কিডনি ৬০% ড্যামেজ। আরেকটা তো নেই। "নেই" শব্দটা শুনে জনি অবাক হল। কারণ আগে কখনো তার বাবার কিডনি নিয়ে আগে কোনো সমস্যা হয়নি। তাহলে অপরটি গেল কই? কিছুদিন আগে এক হাসপাতালে জনির বাবার টিউমারের অপারেশন করা হয়েছিল। তাহলে কি সেখানে………? জনি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রিপোর্ট গুলো নিয়ে হাসপাতাল কতৃপক্ষের সাথে কথা বলেও কোনো লাভ হল না। তাই বাধ্য হয়ে পুলিশের শরণাপন্ন হল। তাতেও কোনো লাভ হল না। হাসপাতাল কতৃপক্ষের ক্ষমতা ও টাকার সামনে জনি টিকলো না। জনিরা উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের। কিন্তু তাদের অপেক্ষায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনেক ক্ষমতাবান। হতাশ মনে চায়ের দোকানে বসে আছে জনি। তখনই জনির চোখ সপ্তাহখানেক আগের নিউজ পেপারের একটা টুকরোর উপর পড়ল। বড় বড় অক্ষরে লিখা "প্রাইভেট ডিটেকটিভ দ্বারা রাজবাড়ির রহস্য উন্মোচন হল।" টুকরোটিতে যতটুকু লিখা ছিল জনি সবটুকুই পড়ল। পড়ার পর জনির মনে মনে ভাবলো একবার যোগাযোগ করে দেখতে তো ক্ষতি নেই। কিন্তু যোগাযোগের কোনো মাধ্যম পেল না।
.
দ্বিতীয় দৃশ্য
আরজু তার প্রাইভেট কার্যালয়ে বসে আছে। একটু পর আবিদ এলো।
- এই নে মিষ্টি খা।
~ ভাই, পত্রিকায় ছবি উঠেছে এক সপ্তাহ আগে আর আপনি মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন এখন?
- এটা অন্য কারণে।
~ কোন কারণে ভাই?
- আমরা ডিটেকটিভের লাইসেন্স পেয়ে গেছিইইইইইই।
~ এটা তো দারুণ খবর। আরও দুটা দেন।
- এই নে। আর শুন। এই নে টাকা। আগামীকাল এই চারটা পত্রিকাতে যেন আমাদের বিজ্ঞাপন থাকে।
~ ওকে ভাই।
.
প্রথম দৃশ্য
পরেরদিন জনি সকাল সকাল উঠল। ইদানিং কিছু ভাল লাগছে না। বাবার জন্য চিন্তা হচ্ছে। একদিকে একটা কিডনি প্রায়ই ড্যামেজ আর অন্যদিকে অপর কিডনির ব্যাপারটা রহস্যময় থেকে গেল। জনি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা পানি করে অফিসে চলে গেল। অফিসে বসে পত্রিকায় আরজুদের বিজ্ঞাপন দেখল। দেখে মনের মধ্যে কেমন যেন আশার আলো জ্বলে উঠল। নাম্বারে কল দিল।
.
- হ্যালো প্রাইভেট ডিটেকটিভ আরজু ইসলাম বলছি।
>> আমি একটা ব্যাপারে আপনার সাথে সরাসরি কথা বলতে চাই।
- জ্বি আপনি আসবেন নাকি আমরা আসব?
>> আমিই আগামীকাল আসব।
- জ্বি আচ্ছা। ঠিকানাটি লিখুন।
>> জানি। পত্রিকায় দেখেছি।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
পরেরদিন জনি আরজুদের কার্যালয়ে এলো। তারপর সব খুলে বলল।
- ঠিক আছে। আমরা আগামীকাল আপনার শহরে এসে ইনভেস্টিগেশনের কাজ শুরু করব। প্রমাণ স্বরূপ আপনি ডাক্তারের সব রিপোর্ট রেডি রাখিয়েন।
>> জ্বি আচ্ছা।
.
জনি চলে গেল। একটু পরেই আবিদ এলো।
~ ভাই ভার্সিটিতে ছুটি দিয়েছে। ভাবছি বন্ধুরা মিলে পিকনিকে যাব।
আরজু মুচকি মুচকি হেসে ব্যাগ গুছাচ্ছে। আবিদ সন্দেহের চোখে তাকালো।
~ ভাই ওভাবে হাসছেন কেন?
- চল পিকনিকে যাই।
আবিদ বুঝে গেল।
~ ভাই ছুটির দিনগুলো তো ইনজয় করতে দেন।
- চল ইনজয় হবে। এবারের কেইসটা মজাদার।
~ ভৌতিক নয় তো?
- আরে না।
~ কি আর করা! চলেন তাইলে।
.
অতঃপর পরেরদিন দুজনই রূপতলী পৌছাল। জনিরা এই শহরেই থাকে। জনি এসে তাদেরকে রিসিভ করল। জনির অনুরোধে তারা জনিদের বাসাতেই উঠল। আরজু প্রথমে জনিকে নিয়ে সেই ডাক্তারের কাছে গেল যে ডাক্তার বলেছিল একটা কিডনি নেই। তার সাথে সম্পূর্ণ আলাপ আলোচনা করল। তারপর অন্য এক নামীদামি ডাক্তারের কাছে জনির বাবাকে নিয়ে আবার টেস্ট করালো। রিপোর্ট একই এলো।
.
আরজু জনিকে জিজ্ঞেস করলো
- আচ্ছা আপনার বাবার অপারেশন কোন ডাক্তার করেছিল?
>> এই নিন তার কার্ড।
কার্ড নিয়ে আরজু দেখল ডাক্তারের নাম রায়হান উদ্দিন দুর্জয় এবং হাসপাতালের নাম রূপতলী জেলা হাসপাতাল। আরজু কার্ডটা আবিদকে দিয়ে বলল
- আবিদ! এই ডাক্তারের ডিটেইলস বের কর এবং দু চারদিন ফলো কর।
~ আচ্ছা ভাই।
.
দু দিন পর
- কোনো ইনফরমেশন পেলি?
~ জ্বি ভাই। উনি টিউমার স্পেশালিস্ট। বেশ নাম রয়েছে। তাছাড়া হাসপাতালের সিনিয়র ডাক্তারদের একজন।
আরজু চিন্তায় পড়ল। একজন টিউমার স্পেশালিস্ট কিভাবে কিডনির অপারেশন করবে?
আবিদ আবার বলল
~ উনি বড় ডাক্তার হলেও অন্যান্য ডাক্তারদের মত ধনী নন। গরীবদেরকে বিনামূল্যে সেবাদান করেন। এজন্য লোকজন তাকে খুব সম্মানও করে।
- হুম। কেইসটা অনেক প্যাচালো। যাইহোক না কেন রহস্যটা হাসপাতালেই রয়েছে। যেভাবেই হোক আমাদেরকে হাসপাতালে ঢুকতে হবে।
~ হাসপাতালে তো যে কেউ ঢুকতে পারে।
- এভাবে নয়। হাসপাতালে কিছুদিন থাকতে হবে।
~ কিভাবে ভাই?
- চল দেখাই।
.
অনেক খোঁজাখুজির পর আরজু দুজন রোগিকে পেল। তাদেরকে নিজেদের আত্মীয় বানিয়ে রূপতলী জেলা হাসপাতালে ভর্তি করালো। তারপর আরজু ও আবিদ হাসপাতাল ঘুরে বিভিন্ন নার্স ও কর্মচারীদের জিজ্ঞেস করে কিডনি স্পেশালিস্ট ডাক্তারদের লিস্ট তৈরি করল। তারপর সেই লিস্ট অনুযায়ী সবার লাইফস্টাইলের লিস্ট তৈরি করল। অনেকেই ধনী। কারণ তাদের আবার নিজস্ব প্রাইভেট ক্লিনিকও আছে। আরজু কেইস সমাধানের কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছে।
.
পরেরদিন সকালে ঘুরাঘুরির সময় আরজু দেখল একজন মানুষ তার মোবাইল এক ডাক্তারের কেবিনের দিকে ছুড়ে মেরে হাউমাউ করে কান্না করছে। হাসপাতালের কিছু ওয়ার্ড বয় এসে লোকটাকে ধরল। আরজু সেখানে এসে জানতে পারলো যে লোকটার বাবা মারা গেছে। কিন্তু কেন? আর কেনইবা লোকটা ডাক্তারের কেবিনের দিকে মোবাইল ছুড়ে মেরেছে? কেউ কিছু বলছে না। জানার চেষ্টা করাতে একজন ওয়ার্ড বয় আরজুকে ধমক দিয়ে বলল, "তাতে আপনার কি? নিজের কাজে যান।"
.
আরজু লোকটাকে ফলো করতে লাগল। কিন্তু কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে না। আশেপাশে ওয়ার্ড বয় গুলো আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর আরজু সুযোগ পেল। কিন্তু লোকটা কথা বলার মত অবস্থায় নেই। কান্না করেই যাচ্ছে। তাই আরজু চুপচাপ পাশে দাড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর একজন মহিলা এসে লোকটাকে স্বান্তনা দিচ্ছে এবং নিজেও কান্না করতে। আরজু মহিলাটার কাছে এলো।
.
- কি হয়েছিল?
মহিলাটা কেদে কেদে বলতে লাগল
= চোখের অপারেশন করা হয়েছিল। ডাক্তার বলেছিল এটা কোনো সমস্যাই না। ছোট্ট অপারেশন করালেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু …… (কান্না শুরু)
আরজু কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। এমতাবস্থায় স্বান্তনা দেয়ার ভাষা আরজুর কাছে নেই। তখনই মোবাইলটা বেজে উঠল। আবিদের কল।
~ ভাই একটা জবরদস্ত খবর পেয়েছি।
- বল।
~ হাসপাতালে একটা রোগি মারা গিয়েছে।
- জানি। তারপর?
~ রোগিটা মারা যাওয়ার কারণ হল তার দুটা কিডনিই নাই।
- কি যাতা বলছিস? কিডনি ছাড়া মানুষ বাঁচে নাকি?
~আরে ভাই অপারেশনের আগে একটা ছিল। কিন্তু অপারেশনের পর অপরটাও নিয়ে ফেলা হয়েছে। তাই মারা গিয়েছে।
- ১০০% শিউর?
~ আরে ভাই হ্যা। আমি নিজের কানে ডাক্তার ও হাসপাতাল কতৃপক্ষের কথাবার্তায় এসব শুনেছি। ভিডিও রেকর্ডিংও করেছি।
- সাব্বাস। কেইস সমাধান। ওয়েট আমি আসছি।
.
আরজু ফোন রেখে মহিলাটাকে জিজ্ঞেস করল
- রোগির কি আগে কিডনির অপারেশন করা হয়েছিল?
মহিলাটা আরজুর দিকে অবাক হয়ে তাকালো।
- দেখুন যা বলার সত্য বলুন। আমি একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভ। (কার্ড দেখাল)
= হ্যা। আগে একটা কিডনি একজনকে ডোনেট করেছিল।
- ওকে। আপনারা আমার অনুমতি ছাড়া হাসপাতাল ত্যাগ করবেন না। এতে আপনাদেরই মঙ্গল। এটা একটা হত্যাও হতে পারে।
.
আরজু জনির মাধ্যমে পুলিশ ইন্সপেক্টরের নাম্বার নিয়ে পুলিশকে হাসপাতালে আসতে বলল। তারপর আবিদের কাছে এলো। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ মিস্টার জয়নাল ব্যাপারটা ধামাচাপা দিতে চাচ্ছে। আর যে ডাক্তারের রোগি মারা গিয়েছে তার নাম ডা. তানভীর আহম্মেদ।
.
কথাবার্তা শেষ করে মি. জয়নাল ও ডা. তানভীর রুম থেকে বের হল। আরজু - আবিদ বাইরে অপেক্ষা করছিল।
- হাই আমি প্রাইভেট ডিটেকটিভ আরজু ইসলাম। আর এ আমার এসিস্ট্যান্ট আবিদ মজুমদার। (কার্ড দেখাল)
মি. জয়নাল কিছুটা ঘাবড়ে গেল।
-- আপনাদেরকে কে ডেকেছে।
- সেটা মূল বিষয় নয়। মূল বিষয় হল এটা। (ভিডিওটা দেখাল)
তাদের চোখ কপালে উঠে গেল। ডা. তানভীর বলল
== দেখুন আমি সত্যিই বলছি আমি এই মৃত্যুর সাথে জড়িত নই। তাছাড়া আমি চোখের ডাক্তার। কিডনির নই।
.
আরজু একটু ভাবতে লাগল। তাছাড়া ভিডিওতেও ডা. তানভীর এই একই কথা মি. জয়নালকে অনেকবারই বলেছে। তাহলে আসল ঘটনা কি? এদিকে পুলিশ চলে এলো। আরজু ভিডিওটা দেখাল। লাশ পোস্টমর্টেমে পাঠানো হল। ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টায় ডা. তানভীর ও মি. জয়নালকে গ্রেফতার করল। রাতে আরজু ও আবিদ ডা. তানভীরের সাথে দেখা করতে থানায় এলো। অন্যদিকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মি. জয়নাল আগেই ছুটে গিয়েছে।
.
== আপনারা!
- কিছু জিজ্ঞেস করার ছিল।
== দেখুন আমি সত্যিই বলছি আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। আপনি আমার ক্যারিয়ার হিস্ট্রি দেখতে পারেন। আজ পর্যন্ত এমন কোনো কিছুই আমি করিনি।
- জ্বি জানি।
== উনার মৃত্যু হয়েছে দ্বিতীয় কিডনি সরিয়ে নেয়ার ফলে। কিন্তু আমি অপারেশন করেছি চোখের। আমি শিউর এটা আমাকে ফাসানোর ষড়যন্ত্র।
- কাউকে সন্দেহ হয়?
== না। কারণ আমি তেমন কারো সাথে মেলামেশা করি না।
- আপনি কি আগে থেকেই জানতেন উনার কিডনি একটাই।
== হুম। রোগির আত্মীয়স্বজনরাই বলেছিল।
আরজু আরও কিছু টুকিটাকি জিজ্ঞাসা করে চলে গেল। তারপর জনিদের বাসায় এলো। (সেখানেই থাকে)
.
এসে ফ্রেশ হয়ে আবিদ ও জনির সাথে কেইস নিয়ে ডিসকাশন শুরু করল। প্রথমে ডা. রায়হান উদ্দিন দুর্জয়ের বিষয়টা নিল।
- আপনার (জনি) বাবার অপারেশন ডা. রায়হান উদ্দিন দুর্জয় করেছিল। তিনি একজন হার্ট স্পেশালিস্ট। একজন হার্ট স্পেশালিস্ট অপারেশন করে কিভাবে কিডনি বের করবেন? করলেও এক্ষেত্রে রোগি বাঁচবে না। কিন্তু আপনার বাবা বেঁচে আছেন। তবু আমরা তাকে সন্দেহের তালিকায় রাখলাম।
.
এবার আরজু ডা. তানভীর আহম্মেদের ব্যাপারে বলা শুরু করল
- ডা. তানভীরের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই। তিনি একজন আই (Eye) স্পেশালিস্ট।
~ হুম ভাই। আরেকটা ব্যাপার হল। ডা. তানভীর কিন্তু আগে থেকে জানতেন যে রোগির কিডনি একটা। সুতরাং তিনি কখনো অপর কিডনিও সরানোর মত এত বড় ভুল করবেন না।
- গুড পয়েন্ট। আমার মনে হচ্ছে এসবের পিছনে মি. জয়নাল জড়িত। আপনার (জনি) কেইসটা তিনিই টাকা দিয়ে ধামাচাপা দিয়েছিলেন। আজকের ঘটনাটাও ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন।
~ হতে পারে।
- আচ্ছা আজ এইটুকুই বাকিটা সকালে দেখা যাবে।
.
অতঃপর ঘুমিয়ে পড়ল। সকালে জনির ডাকে তাদের ঘুম ভাংলো।
- কি হয়েছে ভাই? (ঘুমকাতুর কণ্ঠে)
>> পত্রিকায় খবর উঠেছে।
আরজু পত্রিকা হাতে নিয়ে হেডলাইন দেখল, "সেবাদানের নামে কিডনি পাচার চলছে রূপতলী হাসপাতালে।" তিনজনই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে হাসপাতালে এলো। হাসপাতালের সামনে ভিড় জমে আছে। নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এসেছে। আরজু ইন্সপেক্টরের সাথে কথা বলে আবিদ ও জনিকে নিয়ে ভেতর ঢুকলো। কিছুক্ষণ পর ভিড় কমে গেল। কিছুক্ষণ পর ইন্সপেক্টর তার সাথে একজন লোক নিয়ে এসে বলল, "উনারও সেইম কেইস। এই হাসপাতালে অপারেশন করিয়েছিলেন। পরে জানতে পারলেন একটা কিডনি নেই। কেইসটা আপনিই হ্যান্ডেল করছেন। তাই আপনার কাছে নিয়ে এলাম।" আরজু ইন্সপেক্টরকে ধন্যবাদ দিয়ে লোকটার কাছ থেকে সব জেনে নিল। ঘটনা একই তবে ডাক্তার অন্যজন এবং সেই ডাক্তার মেরুদন্ডের স্পেশালিস্ট।
.
আরজুর মনে সন্দেহ জাগলো যে হয়তো আরও অনেক রোগির সাথে এমন করা হয়েছে। তাই আরজু রিসেপশনের মাধ্যমে লাস্ট ছয় মাসে যেসব রোগিদের অপারেশন রূপতলী হাসপাতালে হয়েছে তাদের সকলের লিস্ট বের করে সবাইকে আর্জেন্ট খবর দিয়ে জানানো হল যে অপারেশনে কিছু একটা ভুল হয়েছে তাই রি-চেকআপ করার জন্য অতিদ্রুত হাসপাতালে আসুন। খুব দ্রুতই একে একে সবাই আসতে লাগল। সবার কিডনির টেস্ট করা হল। ৭ জনকে পেল যাদের অপারেশনের আগে দুটা কিডনিই ছিল কিন্তু এখন নেই। তারিখ মিলিয়ে দেখল এই কিডনির ঘটনাট গত দুমাস ধরে শুরু হয়েছে। আর যাদের কিডনি নেয়া হয়েছে তারা সবাই বর্তমানে বিভিন্ন অসুখে ভুগছে। কারণ কিডনি নেয়ার পর সেখানে সেলাই করে এক ধরণের চামড়া জাতীয় কিছু লাগিয়ে দেয়া হত। যার ফলে চোখে পড়ত না। কিন্তু সময়ের পর সেলাই না খুলার কারণে ইনফেকশন হয়েছে। এছাড়াও মাঝেমাঝে তাদের কিডনির সাইড ব্যাথা করত। কিন্তু সাধারণ ব্যাথা মনে করে ইগনোর করত।
.
বাসায় এসে আরজু ও আবিদ সব তথ্য নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে। সাথে জনিও আছে। তখন আবিদ বলে উঠল
~ ভাই একটা বড় তথ্য পেয়েছি।
- কই দেখা।
~ দেখেন গত বছরের ডিসেম্বরের ৭তারিখ থেকে এটা শুরু হয়েছে। তারপর ১৪, ২১,২৮ অর্থ্যাৎ ৭দিন পরপর একটা করে কিডনি চুরি করা হয়েছে। এই পর্যন্ত মোট নয়টা কিডনি চুরি করা হয়েছে।
- বাহ! তুই তো জিনিয়াস। এটা নিশ্চিত যে এই কাজ কোনো কিডনি স্পেশালিস্টের। কারণ সে নিখুঁতভাবে অপারেশন করে কিডনি বের করেছে। হাসপাতালের সকল কিডনি স্পেশালিস্টদের ফলো করতে হবে। এখন ঘুমা। সকালে এই ব্যাপারে ইন্সপেক্টরের সাথে কথা বলব।
~ আচ্ছা ভাই।
.
অতঃপর ঘুমিয়ে পড়ল। মাঝরাতে আবিদের ডাকাডাকিতে আরজুর ঘুম ভাংলো।
- কি হইছে? (ঘুম কাতর কণ্ঠে)
~ ভাই এমনও হতে পারে এই কাজটা হাসপাতালের কোনো কর্মচারীর। তাছাড়া এক ডাক্তারের রোগির অপারেশন থিয়েটার পারমিশন ছাড়া অন্য ডাক্তারের যাওয়া নিষেধ। একমাত্র নার্স কিংবা ওয়ার্ড বয় হাসপাতালের সব দিকে যেতে পারে।
আরজুর মাথা ঘুরে উঠল। আসলেই তো। এটাও তো হতে পারে। কিছুক্ষণ আবিদের দিকে তাকিয়ে রইল তারপর বলল
~ এত চিন্তা করিস না। এখন ঘুমা।
.
পরেরদিন সকালে ইন্সপেক্টরের সাথে হাসপাতালে এলো। তারপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতে বলল।
-- স্যরি অপারেশন থিয়েটারে কোনো ক্যামেরা লাগানো হয় না। তবে বাইরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। (মি. জয়নাল)
- ওকে তাহলে সেটাই দেখান।
.
অতঃপর গত বছরের ৭ ডিসেম্বর, ১৪ ডিসে, ২১ ডিসে এভাবে ধারাবাহিক ভাবে তারা অপারেশন টাইমের আগের ও পরের ভিডিও ফুটেজ দেখতে লাগল। ৭ ডিসেম্বরের ভিডিও দেখার পর আগে ও পরে যারা OTতে ঢুকেছিল তাদের নাম ও ডিটেইলস লিখে রাখল। এভাবে প্রতিটি ভিডিও দেখে তারা সবার নাম মিলালো। তারমধ্যে একজন ওয়ার্ড বয় "সুমন" যে প্রতিটি অপারেশনের পর থিয়েটারে ঢুকেছিল। কিন্তু তার কাজ হল ৪র্থ তালায়।
.
- That's it. কে এই সুমন?
মি. জয়নাল হাসপাতাল কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সুমনের ডিটেইলস আরজুকে দিল। আরজু রিসেপশনে জিজ্ঞেস করে দেখল গত তিনদিন ধরে সুমন আসছে না। আরজু আবিদ ও পুলিশবাহিনী নিয়ে সুমনের বাসায় গেল। কিন্তু এসে দেখল সেখানে সুমন নামে কেউ থাকে না। সুমন নিজের ডিটেইলস যা হাসপাতালে দিয়েছিল সব বানোয়াট।
.
পুলিশ স্টেশনে
-- আমাকে এখানে ডাকার কারণ? (মি. জয়নাল)
- আপনার হাসপাতালে কারও সম্পর্কে কোনো ডিটেইলস না নিয়েই নিয়োগ দেয়া হয়?
-- দেখুন এসব আমার হাতে না। এসব নিয়োগকর্তাদের হাতে।
অতঃপর নিয়োগকর্তাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জানতে পারল যে সুমন ঘুষ দিয়ে ঢুকেছে। তবে একজন ওয়ার্ড বয় সুপারিশ করেছিল।
.
অতঃপর সেই ওয়ার্ড বয়কে ধরে আনলো। অনেক মারধরের পর ওয়ার্ড বয়ের মাধ্যমে জানতে পারল যে এর আগে সুমন রূপতলী জাহানারা স্মৃতি হাসপাতালে ছিল। সেখানেই তাদের পরিচয় হয়েছিল। আরজু ও আবিদ সেখানে এসে জানতে পারল যে সুমন এখানে দু মাস কাজ করে চাকরি ছেড়ে চলে গিয়েছিল। এখানেও দু একটা কিডনির ঘটনা ঘটেছে। আরজু জাহানারা হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গত দুই মাসে অপারেশন হওয়া রোগিদের আর্জেন্টলি ডাকলো। সেই একই কথা বলা যে অপারেশনে সমস্যা হয়েছে তাই রি-চেকআপ করতে হবে। একে একে সবাই এলো। চেকআপ করার পর সেই একই রেজাল্ট বের হল। ৮জনের একটা করে কিডনি নেই।
.
~ ভাই কিছু বুঝলেন?
- আমার কাছে এটা খুব চালাক কিডনি পাচারকারী মনে হচ্ছে।
~ জ্বি ভাই। একে ধরতেই হবে। নয়তো আরও অনেকের ক্ষতি হবে।
.
অতঃপর আরজু পুলিশের সহায়তায় শহরের ভেতরে এবং সন্নিকটে থাকা সব হাসপাতালে সুমনের ছবি পাঠিয়ে দিয়ে বলল যে দেখা মাত্রই পুলিশকে ইনফর্ম করতে। আজ দুদিন ধরে আরজু, আবিদ এবং কিছু কনস্টেবল মিলে শহরের অনেক হাসপাতালে সুমনকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কোন সন্ধান পাচ্ছে না। তবুও আশা ছাড়েনি। তৃতীয় দিন বিকালে পুলিশ স্টেশনে একজন ফোন করে জানালো যে সে সুমনকে দেখেছে। তাদের হাসপাতালে জয়েন করার অ্যাপ্লিকেশন দিয়েছে। আরজু, আবিদ ও পুলিশবাহিনী দ্রুত সেখানে গেল। হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে বসে আছে সুমন। পুলিশ সুমনকে ধরার জন্য পা বাড়াল কিন্তু আরজু বাধা দিয়ে বলল,
- ওকে ধরলে হবে না। আমাদেরকে জানতে হবে ও এই কিডনি দিয়ে কি করে? কাদেরকে বেঁচে?
~ কিন্তু ভাই এতে একজন রোগির জীবন রিস্কে পড়বে।
- তা না হলে মূল চক্রান্তকারীদের ধরা যাবে না। তাতে আরও অনেকের জীবন রিস্কে পড়বে।
.
অতঃপর আরজু ও আবিদ সর্বক্ষণ সুমনকে নজরে রাখতে লাগল। কোথায় থাকে, কখন কি করে, কাদের সাথে মিশে ইত্যাদি। কিন্তু অবাক হল এটা দেখে যে সুমন একগুঁয়েমি টাইপের ছেলে। হাসপাতালে আসে-যায়। এর মধ্যে কারও সাথে তেমন কোনো কথা বলে না। তাহলে কিডনি গুলো কাকে দেয়? সুযোগ বুঝে একদিন আরজু ওয়াশার কর্মকর্তার নাম দিয়ে সুমনের ঘরের পাইপ লাইন ঠিক করার নামে কিছু সিসিটিভি লাগিয়ে দিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা ঘরেও সুমনের উপর নজর রাখতে পারছে।
.
আজ ফেব্রুয়ারির ৮তারিখ। হিসাব অনুযায়ী আজ সুমন একটা কিডনি চুরি করবে। আবিদ বেশভূষা বদলিয়ে হাসপাতালে সুমনের পিছু করছে। আরজু হাসপাতালের সিকিউরিটি রুমে বসে সিসিটিভির মাধ্যমে সুমনের উপর নজর রাখছে। দেখতে দেখতে এক অপারেশন থিয়েটারে ঢুকলো সুমন। কিছুক্ষণ পর বের হয়ে নিজের ড্রেস পরিবর্তন করে অসুস্থতার নাম দিয়ে হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। সর্বপ্রথম আরজু রিসেপশনে ফোন করে সেই রোগির রুম নাম্বার সহ কিডনির ব্যাপারটা বলে দিল। তারপর দুজন মিলে সুমনকে ফলো করতে লাগল। সুমন সোজা নিজের বাসায় চলে এলো। আরজু ও আবিদ সিসিটিভিতে সুমনের কর্মকান্ড দেখতে লাগল। সুমন কিডনিটা একটা কাঁচের বোতলে রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। বোতলে বরফও আছে। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেল। সুমন ঘুমিয়েই আছে। আরজু আবিদকে ঘুমাতে বলল। কারণ রাত জেগে একজন একজন করে সুমনকে পাহারা দিতে হবে। আবিদ কিছুক্ষণ ঘুমালো তারপর উঠল। এরপর আরজু ঘুমালো আবিদ পাহারা দিতে লাগল। এভাবে করতে করতে রাত ৩টা বেজে গেল। আবিদ পাহারা দিচ্ছে। দেখল যে সুমন জেগে উঠেছে। কিডনিটার দিকে তাকিয়ে আছে। আবিদ আরজুকে উঠাল। দুজনই দেখতে লাগল। সুমন বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে বোতল থেকে কিডনিটা বের করল। তারপর যা করল তাতে দুজনই ভয়ে কেপে উঠল।
.
সুমন কিডনিটা হাতে নিয়ে কচকচ করে খেতে লাগল। মুখে একটা বিভত্স হাসি। চোখে রাক্ষুসে চাহনি। হিংস্র প্রাণীত মত কিডনিটা কামড় দিতে কচকচ করে খেতে লাগল। সেই সাথে মুখ বেয়ে পড়া রক্ত আঙ্গুল দিয়ে তুলে আমার মুখে দিয়ে খেতে লাগল। সম্পূর্ণ ঘটনাটা দেখে দুজনই স্তম্ভিত হয়ে গেল। যেন দুটা পাথরের মূর্তি। মুহূর্তের জন্য দুজন দুজনকেই দেখে ভয় পেল। দুজনেরই সাহস হল না সেই মুহূর্তে সুমনকে ধরার। দুজনই অধীর আগ্রহে সূর্য উঠার অপেক্ষা করতে লাগল। কারও চোখেই ঘুম আসলো না। তাদের চোখে এখনো সুমনের সেই বিভত্স রূপটা ভেসে আছে। সময়ের সাথে সূর্যের কিরণ পড়ে চারদিকে আলোকিত হবার সাথেসাথেই আরজু ও আবিদ সুমনকে ধরে নিয়ে গেল পুলিশ স্টেশনে। সেখানে ভিডিও ফুটেজ দেখাল।
.
আশ্চর্য ব্যাপার হল সুমনকে মারধর করতে হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সুমন গলগল করে সব বলে দিয়েছে। সুমন খুব ট্যালেন্টেড মেডিক্যাল স্টুডেন্ট। কিডনি স্পেশালিস্ট। কিন্তু মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন। নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম কিডনি অপারেশনে সুমন তার রোগির দুটা কিডনিই বের করে খেয়ে ফেলে। সুমন অপারেশন শেষে সবাইকে "I'm sorry. আমি বাঁচাতে পারলাম না।" বলে কিন্তু আসল সত্যটা কেউ জানেনি। মানসিক অসুস্থতার কারণে সুমনের মধ্যে কিডনি খাওয়ার অদ্ভুত এক নেশা জন্ম নেয়। তাই সুমন ডাক্তারি ছেড়ে ওয়ার্ড বয়ের কাজ শুরু করে। কারণ তার হাতে রোগি মরতে থাকলে এক সময় সে ধরা পড়বে। প্রতি সপ্তাহে একটা করে কিডনি খাওয়ার জন্য সে একটি করে কিডনি চুরি করে। আর কোনো হাসপাতালে এক/দুই মাসের বেশি থাকে না। এভাবেই এক বছর ধরে সুমন এটা করে এসেছে।
.
আরজু - আবিদ ইন্সপেক্টরের হাতে সকল প্রমাণ দিয়ে বিদায় নিয়ে জনির কাছে এসে সেই ভিডিও ফুটেজের কপি দেখাল।
>> আমার বাবার কিডনি তো আর ফেরত আসবে না। তবুও এতেই খুশি যে অপরাধী ধরা পড়েছে। এই নিন আপনাদের চেক।
- ধন্যবাদ। আসি আমরা। ভাল থাকুন এবং সচেতন থাকুন।
.
আরজু আবিদ ব্যাগ গুছিয়ে নিজেদের গন্তব্যে রওনা দিল।
.
লিখাঃ Nishi Chowdhuri (রাত্রির আম্মু)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.