নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিনোদন ও জাগরণের চেষ্টা। হরর, থ্রিলার, রম্য এই জাতীয় কিছু লেখার চেষ্টায় আছি। (০২/০২/১৭)

Nishi Chowdhuri

আমি মানুষ।

Nishi Chowdhuri › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পের নামঃ বন্ধুত্বের জয়।

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:১৯

গল্পের নামঃ বন্ধুত্বের জয়
.
পারুল, রাসেল ও আবির তিন বন্ধু। রাসেল ও আবির ছোটকাল থেকেই বন্ধু। পারুলের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে ভার্সিটিতে উঠে। পারুলের ছেলে বন্ধু বলতে শুধু রাসেল ও আবিরই। এছাড়া অনেক বান্ধবী আছে। পারুল ছেলেদের সাথে খুবই কম মিশে। বন্ধুত্বের হাত রাসেল ও আবিরই আগে বাড়িয়েছিল। পারুল না করে দিয়েছিল। কারণ ছেলেরা প্রথমে বন্ধুত্ব করে, পরে প্রেম। আর পারুল ভীষণ প্রেম বিদ্বেষী। প্রেম, ভালবাসা শব্দগুলো শুনতেও পারে না। রাসেল ও আবির কথা দিয়েছিল যে তারা বন্ধুত্বের উপর যাবে না। তবুও পারুল রাজি ছিল না। কারণ সবাই প্রথমে না বলে পরে ঠিকই প্রেমে পড়ে। পারুলের বান্ধবীরা বলেছিল যে আবির ও রাসেল দুজনই বন্ধুত্বের খুব সম্মান করে। তাই পরে পারুল তাদের বন্ধুত্বের হাত ধরেছিল। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১বছর ধরে বন্ধুত্বের মধ্যেই মেতে আছে তিনজন। আবির ও রাসেল একই হোস্টেলে এক রুমে থাকে।
.
একদিন পারুল ক্যাম্পাসে বসে আছে। একটু পরেই আবির এলো। হাতে ব্যান্ডেজ।
> কিরে তোর হাতে কি হয়েছে? (পারুল)
- বাস থেকে পড়ে ব্যাথা পেয়েছি। উফফফ! মরে গেলাম রে!
> সাবধানে চলতে পারিস না?
- ভাগ্য খারাপ হলে সাবধানতাও বাঁচাতে পারে না। ভাবতেছি প্রফেসর গিয়াসউদ্দিনের এসাইনমেন্ট কিভাবে করব?
> আমাকে দিস আমি করে দিব।
- তুই পারবি?
> হুম দে। আর তুই বাসায় যা।
.
আবিরের এসাইনমেন্টের খাতা দিয়ে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর রাসেল এলো। তারও একই অবস্থা। হাতে ব্যান্ডেজ।
> তোর আবার কি হইছে?
~ দোস্ত সিড়ি থেকে পড়ে হাতে প্রচন্ড ব্যাথা পাইছি। তুই একটু আমার এসাইনমেন্ট করে দিতে পারবি? (এসাইনমেন্টের খাতা পারুলের দিকে বাড়িয়ে দিল)
.
এবার পারুল বুঝল যে এসবই আবির ও রাসেলের চালাকি যাতে এসাইনমেন্টটা পারুলের হাতে করাতে পারে। পারুল এসাইনমেন্টের খাতাটা হাতে নিয়ে উঠেই রাসেলের হাতে ঘুষি মেরে দিল। রাসেল বুঝল যে সে ধরা খেয়ে গেছে। তাই তাড়াতাড়ি দৌড়ে পালালো। পারুল আবিরকে ফোন করল।
> কই তুই?
- এই তো বাসায় যাচ্ছি।
> জরুরি কথা আছে এক্ষুনি ক্যাম্পাসে যায়।
.
একটু পরেই আবির এলো।
- বল।
পারুল পাশে থাকা লাঠি নিয়ে আবিরকে দুটা বাড়ি দিল। আবির কিছুটা ব্যাথা পেয়েছে তাই তাড়াতাড়ি লাঠিটা ধরে ফেলল।
- আগে বল কি হইছে?
> আগে তোর হাত ভাংবো তারপর কথা। তুই আমাকে মিথ্যা বললি কেন?
আবির বুঝল যে তার চালাকি ধরা পড়ে গেছে তাই আবিরও সেখান থেকে পলায়ন করল।
.
দুজনই পালিয়েছে কিন্তু তাদের এসাইনমেন্ট খাতা পারুলের কাছে। পরেরদিন তারা ভার্সিটিতে এসে পারুলের কাছে গেল।
.
- এসাইনমেন্ট করতে হবে না। খাতা দে। (আবির)
> আগে মিথ্যা বলার শাস্তি পেতে হবে। তারপর খাতা। (পারুল)
~ কি শাস্তি? (রাসেল)
> তোরা দুজন অর্ধেক অর্ধেক করে আমার এসাইনমেন্ট করে দিবি তারপর খাতা পাবি।
.
আবির ও রাসেল "এএএএ" করে উঠলো।
> হ্যা। আর শুন। ভালমত করতে হবে। নয়তো খাতা পাবি না।
.
কিছু করার নেই। পারুলের এসাইনমেন্ট না করা পর্যন্ত নিজেদের খাতা পাবে না। পারুল সবদিকে ছাড় দিলেও মিথ্যার ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয় না। নিজেদের এসাইনমেন্ট করা থেকে বাঁচতে গিয়ে উল্টা পারুলের এসাইনমেন্ট তাদেরকেই করতে হচ্ছে। অতঃপর এসাইনমেন্ট শেষ করে পারুল থেকে নিজেদের খাতা নিয়ে নিল।
.
- এক মাঘে শীত যায় না।
> আরে যা যা, ভাগ।
~ আমাদেরও সময় আসবে।
> আগে ঘড়ি কিন তারপর দেখা যাবে।
এভাবেই খুনসুটিতে চলে তাদের বন্ধুত্ব।
.
একটা নদীর পাড়ে ছোট একটা বেঞ্চ আছে। সেই স্থানটাই তিনজনের ফেভারিট প্লেস। প্রায়ই তিনজন সেখানে ঘুরতে যায়। বন্ধুত্বের জাল পেরিয়ে আবির পারুলকে ভালবেসে ফেলে। কিন্তু ঐযে শুরু থেকেই ওয়ার্নিং ছিল। তাই আবির বন্ধুত্ব নষ্টের ভয়ে মনের কথা জানাতে পারে না। অন্যদিকে পারুলও একই ভুল করেছে। নিজের দেয়া ওয়ার্নিং নিজেই ভুলে গিয়ে আবিরকে ভালবেসে ফেলেছে।
.
আবির খুব দুষ্টু টাইপের ছেলে। কখন কোন দুষ্টামি করে বসে তা কেউই বলতে পারে না। একদিন তিনজন মিলে একটা পুরাতন রাজ মহলে ঘুরতে গেল। প্ল্যানটা আবিরের। অনেকটাই ভুতুড়ে মহল। তবে তারা কেউই ভুতে বিশ্বাসী ছিল না। সাধারণত আমরা কেউই ভুতে বিশ্বাসী নই। কিন্তু ভুতুড়ে স্থানে যদি আপনি যদি অস্বাভাবিক কিছু দেখেন তবে আপনার অবচেতন মন এমনিতেই ভুত ভুত বলে দৌড় দিবে। ঠিক এমনই এক ঘটনা ঘটেছে তাদের তিনজনের সাথে। হঠাৎ তারা সাদা কাপড় পড়া অস্বাভাবিক কিছু দেখে দৌড় দেয়। তাড়াহুড়ো করে দৌড় দেয়ার সময় একেকজন একেক দিকে চলে যায়।
.
আবির-রাসেলকে না দেখে পারুল আরও বেশি ঘাবড়ে যায়। এদিক সেদিক দৌড়াতে থাকে। হঠাৎ সেই অস্বাভাবিক জিনিসটা পারুলের সামনে চলে আসে। পারুল চোখ বন্ধ করে দিল দৌড়। যার ফলে রাসেলের সাথে ধাক্কা খেল। ভয়ে রাসেলকে জড়িয়ে বলতে লাগল, "ওটা আমার পিছু নিয়েছে।" রাসেল স্তব্ধ হয়ে গেল। রাসেলের মনে হল সময়টা যেন থমকে গেছে। অবচেতন মনে রাসেলও পারুলকে জড়িয়ে ধরল।
.
একটু পর পারুলের জড়তা কাটলো। সে আস্তে করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। রাসেলও ছেড়ে দিল। ব্যাপারটা যাতে সিরিয়াস কিছু না হয় তাই পারুল বলল
> এখান থেকে চল।
পারুলের কথায় রাসেলরও জড়তা কাটলো।
~ আরে এসব কিছু না। সব আবিরের প্ল্যান। ও আগে থেকে একজনকে এসব করার জন্য রেডি করে রেখেছিল।
.
আবিরও তাদের কাছে এসেই হাসিতে ফেটে পড়ল এবং বলতে লাগল
- কিরে ভুতকে নাকি ভয় পাস না। তাহলে এখন এই অবস্থা কেন?
.
পারুল আবিরের কাছে গিয়ে খুব জোরে একটা থাপ্পড় মেরে বলল
> তোর কমনসেন্স নাই? জানিস মানুষ ভয় পেয়ে মারাও যায়?
আবির গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রইল। পারুল রাগে কটমট করছে। রাসেল মিটমিট হাসছে। একটু পর আবির বলল
- দোস্ত তুই কি কুংফু শিখেছিস?
কথাটা শুনে রাসেল অট্টহাসি দিল।
> তোকে একটা দিব? (রাসেলকে)
রাসেল চুপ হয়ে গেল। অতঃপর তারা সেখান থেকে চলে এলো।
.
সেদিনের পর থেকে রাসেলের অবচেতন মন পারুলকে নিয়ে ভাবে। পারুলের জড়িয়ে ধরা সেই দৃশ্যটা রাসেলের চোখে ভেসে উঠে। পারুলকে নিয়ে ভাবতে ভালই লাগে রাসেলের। সকালে ঘুম থেকে উঠিয়ে চা এনে দিবে। অফিসে যাওয়ার আগে টাই-টা বেঁধে দিবে ইত্যাদি ভাবতে থাকে। পরক্ষণেই রাসেল সেসব ভাবনা মুছে দেয়। সেই ওয়ার্নিংয়ের ভয়ে। এভাবে কিছু দিন যেতে যেতে রাসেল পারুলের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া শুরু করে। কিন্তু বন্ধুত্ব হারানোর কারণে কিছু বলতে পারে না।
.
একদিকে আবিরের ভালবাসা, অন্যদিকে রাসেলের ভালবাসা। আবার অপরদিকে পারুলের ভালবাসা। তিনজনের ভালবাসাই বন্ধুত্ব হারানোর ভয়ে এগোতে পারছে না। আবিদ তার ভালবাসা শুধুমাত্র নিজের বুকের মধ্যেই রেখেছে। রাসেলকে বলেনি। যদি দুষ্টামিতে কিংবা বন্ধুর হেল্প করতে গিয়ে পারুলকে বলে দেয় আর পারুল যদি বন্ধুত্বের ইতি ডেকে দেয়? এই ভয়ে আবির ভালবাসার কথাটা রাসেলকেও জানায়নি। ঠিক একই কারণে রাসেলও আবিরকে কিছু জানায়নি।
.
এভাবে কেটে গেল ২টা বছর। আজ নবীনবরণ। ভার্সিটিতে আসা নতুনদের জন্য আয়োজন। পারুল ও তার কিছু বান্ধবীরা ম্যাচিং করে শাড়ি পড়েছে। পারুলকে দেখে আবির-রাসেল দুজনই হা করে তাকিয়ে রইল। অত্যন্ত সুন্দর দেখাচ্ছে পারুলকে। কথায় আছে না বাঙ্গালী নারীকে শাড়িতেই ভাল মানায়। তবে ব্যাপারটা পারুল লক্ষ্য করার আগেই দুজনই চোখ সরিয়ে নিল। পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে দুজনই পারুলের দিকে তাকিয়ে ছিল। তবে পারুল বুঝেনি।
.
দুজনেরই অবস্থা একই। কেউই বলতে পারছে না। আবার না বলেও থাকতে পারছে না। অন্যদিকে পারুল অপেক্ষা করছে ভার্সিটির শেষ দিনের জন্য। সেদিনই আবিরকে মনের কথা জানাবে। তাতে যা হবার হবে। এভাবে কেটে গেল তাদের ভার্সিটি লাইফ।
.
আজ ভার্সিটির শেষ দিন। আবির এবং রাসেল দুজনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেভাবেই হোক আজ পারুলকে মনের কথা জানাবে। কারণ আজের পর সবাই আলাদা হয়ে যাবে। আবির শহরে যাবে চাকরির খোঁজে, রাসেল গ্রামের যাবে মা বাবার কাছে। পারুলকে মনের কথা জানানোর এটাই শেষ সুযোগ।
.
অন্যদিকে পারুলও অপেক্ষায় আছে আবিরকে মনের কথা জানানোর জন্য। পারুল ফোন আবিরকে সেই নদীর পাড়ে আসতে বলল। আবির একটা কাজে শহর থেকে একটু বাইরে গেল। তাই বলল আসতে একটু দেরি হবে। কিন্তু পারুল বিশ্বাস করল না। ভাবল হোস্টেলে বসে রাসেলের সাথে শেষ সময়টা কাটাতে চাচ্ছে। শত হলেও তারা বেস্ট ফ্রেন্ড। তাই পারুল হোস্টেলে চলে এলো। যেভাবেই হোক আবিরকে আজ মনের কথা জানাবে।
.
আবির ও রাসেলের রুমের কাছাকাছি এসে পারুল একটা কথা শুনে থমকে গেল।
"হ্যাঁ আমি পারুলকে ভালবাসি। খুব ভালবাসি। নিজের থেকেও বেশি ভালবাসি।" পারুল বরফের মত জমে গেল। কারণ কণ্ঠটা রাসেলের। তবুও উকি দিয়ে দেখল। হ্যাঁ রাসেলই বলেছে কথাগুলো। অন্য এক ফ্রেন্ডের সাথে। আজ তো শেষ দিন। ভালবাসার কথা জানুক সবাই। অনেকদিন চাপিয়ে রেখেছে। আজ আর পারছে না।
.
রাসেলের কথা শুনে পারুল ঠাই হয়ে দাড়িয়ে রইল। মাথায় যেন আকাশ ভেংগে পড়ল। ভাবতে লাগল, রাসেল তাকে ভালবাসে।! পারুল আরও শুনতে পেল।
~ আমি পারুলকে গত ৩বছর ধরে ভালবেসে এসেছি। কিন্তু বলতে পারিনি। যেভাবেই হোক আজ বলবই।
বন্ধুঃ যদি পারুল না করে দেয়।
~ আমার বিশ্বাস ও না করবে না। আমি ওকে বুঝিয়ে বলব যে আমি ওকে কতটা ভালবাসি। তাহলে হয়তো ফিরিয়ে দিবে না।
বন্ধুঃ অল দ্যা বেস্ট।
.
পারুল দৌড়ে চলে গেল। কি থেকে কি হয়ে গেল! রাসেল তাকে ভালবাসে। আর সে আবিরকে ভালবাসে। রাসেল আবির একে অপরের বেস্ট ফ্রেন্ড। কি করবে এখন পারুল? পারুলের দুনিয়া যেন অন্ধকার হয়ে আসছে। পারুল সেই নদীর পাড়ে এসে নীরবে চোখে পানি ফেলছে। তার প্রথম ভালবাসার অনুভূতি গুলো অপ্রকাশিত থেকে যাবে।
.
অন্যদিকে রাসেল রেডি হয়ে হাতে পারুলকে দেয়ার জন্য কেনা রিংটা নিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেকেই বলল, "যদিও পারুলের সামনে তোর চেহারা মানাবে না। তবে ভালবাসা মানাবে।"
.
রাসেলের পারফিউম শেষ। তাই সে আবিরের ড্রয়ার খুলে পারফিউম বের করতে গেল তখনই ড্রয়ারে একটা গিফট প্যাকেট দেখল। উপরে লিখা "প্রিয় পারুল।" রাসেলের মন আনচান শুরু করে দিল। এই "প্রিয়" শব্দটির আসল অর্থ জানার জন্য রাসেল খুব সর্তকভাবে গিফটটা খুলল। একটা চিঠি পেল। যেটা পড়ে রাসেল জানতে পারল আবিরও পারুলকে ভালবাসে।
.
রাসেল স্তব্ধ হয়ে গেল। সবকিছু যেন এলোমেলো হয়ে গেল। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ বসে থেকে রাসেল সিদ্ধান্ত নিল সে পারুলকে ভুলে যাবে। আবিরের সুখে হাত দিবে না। রাসেল গিফটা ঠিক করে যথা স্থানে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ল। উদ্দেশ্য হল নদীর পাড়। মন খারাপ থাকলে সেখানেই যায়।
.
অন্যদিকে কিছুক্ষণ পর আবির হোস্টেলে চলে এলো। এসে সেই বন্ধুকে (যাকে রাসেল পারুলের ব্যাপারে বলেছিল) জিজ্ঞেস করল, "রাসেল কই।" বন্ধুটি বলল, "রাসেল পারুলকে প্রপোজ করতে গেছে। পারুলকে নাকি অনেক ভালবাসে পারুলকে। তাও আবার তিনবছর ধরে।"
- মজা করিস না।
বন্ধুটা কসম খেয়ে বলল সে মজা করছে না। আবিরের মাথায় আকাশ ভেংগে পড়ল। একটু ভেবেচিন্তে আবির সিদ্ধান্ত নিল সে পারুলকে মনের কথা জানাবে না। ভালবাসার কাছে বন্ধুত্বকে হারতে দিবে না।
.
আবির রাসেলকে ফোন দিয়ে জানল যে রাসেল নদীর পাড়ের দিকে যাচ্ছে। বুঝল যে প্রপোজ ওখানেই করবে। আবিরও সেখানের উদ্দেশ্যে দৌড় দিল অভিনন্দন দেয়ার জন্য।
.
রাসেল নদীর পাড়ে এসে পারুলকে দেখল। একটু অবাক হল। কিন্তু সামনে যেতে ইচ্ছে করছে না। রাসেলের এক হাতে গোলাপ অন্য হাতে সিগারেট। গোলাপটা ফেলে দিতে ভুলে গিয়েছে। আবির-রাসেল সিগারেট খায় না। তবে আজ রাসেল কষ্টের যন্ত্রণায় সিগারেট নামক মরণব্যাধিকে হাতে নিয়েছে। জ্বালিয়েছে ঠিকই কিন্তু এখনো মুখে দেয়নি। রাসেল পারুলের ঠিক কিছু কদম পিছনেই দাড়িয়ে আছে। কিন্তু ডাক দিচ্ছে না।
.
সিগারেটের বিষাক্ত গন্ধ পেয়ে পারুল পিছে তাকালো। পারুলের সাথে রাসেলের চোখাচোখি হতেই রাসেল সিগারেট ফেলে দিল। পারুল সিগারেট লক্ষ্য করেনি। লক্ষ্য করেছে রাসেলের হাতের গোলাপটি। পারুলের প্রিয় ফুল গোলাপ। কিন্তু আজ কেন যেন গোলাপটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে ফুল লাগছে পারুলের। পারুল ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে গোলাপটির দিকে।
.
আবিরও চলে এসেছে। দূর থেকে রাসেলের হাতে গোলাপ দেখে আড়ালে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেল রাসেল-পারুল কেউই নিজ নিজ স্থান থেকে নড়ছে না। আবির মনে করল রাসেল সাহস পাচ্ছে না। তাই আবির সাহস দেয়ার জন্য সামনে গেল।
.
- কিরে গোলাপ হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছিস কেন? (আবির)
রাসেল নিজের হাতে গোলাপ দেখে ছুড়ে ফেলে দিল। যেন ওটা গোলাপ নয় সাপ ছিল।
- কিরে কি হল? কাটা ফুটেছে?
~ ইয়ে মানে হ্যা।
.
রাসেল মনে মনে ভাবল আবিরই পারুলকে এখানে ডেকেছে প্রপোজ করার জন্য। আমার এখন যাওয়ার উচিত।
~ আচ্ছা দোস্ত তোরা থাক। আমি যাই। আমার ট্রেন ধরতে হবে।
কথাটা বলেই রাসেল আবিরকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল। আবিরও। ওদের কান্না দেখে পারুলেরও চোখ বেয়ে পানি নামতে লাগল।
.
- ফোন দিস। যোগাযোগ রাখিস।
~ হুম। (চোখের পানি মুছে) তোরা ভাল থাকিস।
রাসেল পারুলের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল
~ ভুলবি না তো?
পারুল রাসেলের চোখে হারানোর বেদনা দেখতে পাচ্ছে। পারুল রাসেলকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল এবং বলল, "তোদের মত বন্ধু হয় নারে। কখনোই তোদেরকে ভুলব না।" রাসেল আবিরকেও জড়িয়ে নিল। তিনজন তিনজনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। এ যেন বিদায়ের শেষ কান্না। তারপর রাসেল চলে গেল।
.
রাসেল যাওয়ার একটু পর আবির পারুলকে "আসি। ভাল থাকিস তোরা" বলে বিদায় নিয়ে চলে গেল। পারুল আবিরের চোখেও হারানোর বেদনা দেখতে পেল। পারুল চুপ করেই রইল। আবির অশ্রুসিক্ত চোখে চলে গেল।
.
আবির মনে করলো রাসেল আগেই প্রপোজ করে দিয়েছে। হয়তো রাসেল নিজ পায়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পারুলকে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করবে। তাদের বিয়েতে দাওয়াত অবশ্যই পাবে। ভালবাসা হারিয়েছে তবুও বন্ধুত্বকে হারতে দেয়নি। কিন্তু নিজের চোখের সামনে নিজের ভালবাসা অন্যের হয়ে যেতে দেখতে পারবে না। তাই আবির নিজের সিম কার্ডটা রাস্তায় ফেলে দিয়ে মনে মনে বলল, "তোরা সুখে থাক দোস্ত। এই দোয়াই করি।"
.
এদিকে ট্রেনে উঠে রাসেল ভাবতে লাগলো, "এতক্ষণে আবির নিশ্চয়ই তার ভালবাসার কথাগুলো প্রকাশ করেছে। পারুলকে নিয়ে ভালবাসার নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে। কিন্তু রাসেল তার নিজের মনের ভিতরে থাকা ভালবাসাটা চিরতরে মেরে ফেলতে পারবে না। পারুলকে দেখলে ভালবাসা জেগে উঠতে পারে। যোগাযোগ হতে থাকলে সেটা ভবিষ্যতে বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার কারণ হতে পারে। তাই রাসেল তার সিম কার্ডটা ট্রেনের জানালা দিয়ে ফেলে দিল এবং মনে মনে বলল, "তোদের জীবন সুখে শান্তিতে ভরে উঠুক।"
.
অন্যদিকে পারুল ভাবছে ভালবাসার জন্য এত বছরের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব নষ্ট করা অন্যায় হবে। এরচেয়ে ভাল বন্ধুত্ব এভাবেই থেকে যাক। রাসেলের সাথে যোগাযোগ হতে থাকলে রাসেল তার প্রতি আরও দূর্বল হতে পারে এবং আবিরের সাথে যোগাযোগ হতে থাকলে সে (পা) হয়তো একদিন তার মনের কথা আবিরকে বলে দিতে পারে। এতে বন্ধুত্ব নষ্ট হতে পারে। তাই পারুল তার সিম কার্ডটা নদীর পানিতে ফেলে দিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে হাটা দিল এবং মনে মনে বলল, "আমাদের এই বন্ধুত্ব থমকে থাকুক। তবুও নষ্ট না হোক।"
.
তিনজনেই নিজ নিজ ভালবাসা মনের মধ্যে রেখে দিল। তবুও বন্ধুত্বকে হারতে দিল না। তারা নিজেদের ভালবাসাকে বিসর্জন দিয়ে বন্ধুত্বকে জয়ী করে রেখেছে।
.
লিখাঃ Nishi Chowdhuri (রাত্রির আম্মু)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.