![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষ।
গল্পের নামঃ বুঝতে পারা।
.
> আমার না খুব ভয় করছে। (প্রিয়া)
- আরে ভয়ের কিছু নেই। আমি আছি তো। (হৃদয়)
> দেখ এসব এখন না করলে হয় না?
- আমাকে তোমার বিশ্বাস হয় না?
> আমি সেটা বলিনি। আগে বিয়েটা হোক।
- তারমানে তুমি আমাকে বিশ্বাস করছো না এই তো?
> আমি তোমাকে বিশ্বাস করি কিন্তু আমার ভয় লাগছে।
- ভয়ের কিছু নেই। আমি তোমার পাশেই আছি।
> আমাদের বিয়ে হবে তো?
- কি যে বল না? আগামী মাসে প্রমোশন পাওয়ার সাথেসাথেই বাবা মাকে নিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিতে তোমার বাবার কাছে আসব।
> সত্যি?
- সত্যি সত্যি সত্যি। এখন ঘুমিয়ে পড় নয়তো শরীর খারাপ করবে।
> আচ্ছা।
.
প্রিয়া শুয়ে পড়ল। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না। বারবার ভাবছে যা করতে যাচ্ছে তা কি ঠিক হবে? আবার ভাবে নাহ হৃদয় তার পাশেই আছে। অসুবিধা হবে না। কিছুদিন পর তো বিয়ে হবেই।
.
অন্যদিকে কল রাখার পর হৃদয় এক হোটেলের ম্যানেজারকে ফোন করল
- আমার রুমটা বুক করা হয়েছে তো?
= জ্বি স্যার।
- আমরা কাল সন্ধ্যার পর আসব।
= ওকে স্যার।
.
ফোনটা রেখে হৃদয় শুয়ে পড়ার কিছুক্ষণ পরেই দরজায় নক পড়ল।
~ ভাইয়া আমি। (হৃদিতা)
- ভেতরে আয়।
~ এই নে চা।
- উরি বাবা মনে আছে তাহলে?
~ তোর মত স্বার্থপর না। (চলে যাচ্ছে)
- শুন।
~ কি?
- কি না জ্বি বলে।
~ বলবি নাকি চলে যাব?
- এই নে (টাকা)
~ কি করব?
- আমি সময় পাব না। তুই তোর পছন্দের দুটা ঝুমকো কিনে নিস।
~ থাংকু ভাইয়া।
- যা এখন। আর জ্বালাইস না।
~ শয়তান। (দিল দৌড়)
.
হৃদিতা হল হৃদয়ের একমাত্র আদুরে ছোট বোন। দুজন সারাক্ষণ খুনসুটির মধ্য দিয়ে দিন কাটায়। অন্যান্য ভাইবোনের মত তাদের মধ্যেও ভালবাসার কোনো কমতি নেই। দুজন যখন ঘরে থাকে তখব পুরো ঘর মাথায় তুলে রাখে। একজনের শূণ্যতা অন্যজনকে একা করে দেয়। টম এন্ড জেরির মত। সারাক্ষণ দুষ্টামি, মারামারি, ঝগড়াঝাঁটি করবে। তবুও একে অপরকে লাগবে। হৃদয় চা খেতে ভালবাসে। তাই হৃদিতা ঘুমানোর সময় হৃদয়ের জন্য চা নিয়ে আসে। আবার অন্যদিকে হৃদয় যতটুকু পারে হৃদিতার ছোটখাটো ইচ্ছেগুলো পূরণ করার চেষ্টা করে।
.
চা দিয়ে হৃদিতা চলে যাওয়ার পর হৃদয় ঘুম দিল।
.
ঘুম থেকে উঠে হৃদয় প্রিয়াকে ফোন করে কথাবার্তা বলল।
- আচ্ছা তো এখন রাখি। বিকালে চলে এসো কিন্তু।
> হুম।
.
অফিসে গিয়েই হৃদয় বিকালে ছুটি নেয়ার ব্যবস্থা করল। তারপর সময় দেখতে দেখতে বিকাল হয়ে গেল। হৃদয় অফিস থেকে বেরিয়ে প্রিয়াকে ফোন দিল,
- কোথায়?
> এইতো বের হচ্ছি।
- আমিও বেরিয়ে পড়েছি। তাড়াতাড়ি এসো।
> হুম।
.
অতঃপর নির্ধারিত স্থানে দেখা করলো। তারপর এদিক সেদিক ঘুরাফেরা করতে লাগলো। এভাবে বিকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা হল। হৃদয় প্রিয়াকে নিয়ে হোটেলে এলো।
> তুমি একটু ওয়েট কর। আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি।
- আচ্ছা।
.
হৃদয় ম্যানেজারের সাথে কথাবার্তা বলে রুমের চাবি নিলো। হঠাৎ একটা দৃশ্য দেখে হৃদয়ের চোখ আটকে গেল। আর সেটা হল হৃদিতাকে একটা ছেলের সাথে লিফটে উঠতে দেখল। হৃদয় নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। কারণ যে ছেলেটাকে হৃদিতার সাথে দেখেছে ছেলেটা তাদের পরিবারের কেউই না। হৃদয় দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলো। এদিক সেদিক খুঁজতে লাগল। কিন্তু কোথায় পাচ্ছে না। অবশেষে অনেক খোঁজাখুঁজির পর পেল।
.
হৃদয় পিছন থেকে অনেকবার ডাক দিল। কিন্তু হৃদিতা একবারও পিছে ফিরে তাকায়নি। হৃদয় দৌড় দিয়ে ধরতে গেল। কিন্তু ততক্ষণে হৃদিতা ছেলেটার সাথে রুমে ঢুকে গিয়েছে। হৃদয় ক্রমাগত দরজায় বাড়ি দিতে লাগলো। এক পর্যায়ে ভেংগে ফেলল। হৃদয় দেখল ছেলেটা হৃদিতাকে নিয়ে নোংরামিতে মেতে উঠেছে। হৃদয় থামাতে গেল কিন্তু পারলো না। এক পাও যেন সামনে বাড়াতে পারছে না। মনে হচ্ছে সামনে কাঁচের দেয়াল দেয়া আছে। হৃদয় অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু ব্যর্থ হল। অতঃপর হৃদয় কান বন্ধ করে সেখানে বসে পড়ল। কিছুক্ষণ পর হৃদয়ের চোখের সামনে দিয়েই হৃদিতা ও ছেলেটি হেটে চলে গেল। হৃদয় সেখানেই পড়ে রইলো।
.
"কিরে মন খারাপ কেন?" কথাটা শুনে হৃদয় সামনে তাকালো। এ কি! এ তো সে নিজেই। হৃদয় ভয়ে আতকে উঠলো।
- কে আপনি?
-- আমি তোর বিবেক। তুই কানছিস কেন?
- (চুপ)
-- তুই প্রিয়ার সাথে যা যা করতে চেয়েছিস তোর বোনের সাথে তা তা-ই হল। প্রিয়াও তো কারো না কারো বোন। তবে তোর চোখে পানি কেন?
.
হৃদয় উঠে দৌড় দিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়ল। সোজা বাসায় চলে এলো। আসার পর দেখল বাবা মা হৃদিতার দরজার সামনে চিল্লাচিল্লি করছে। "মা দরজাটা খোলা।" হৃদয়ের কাছে ব্যাপারটা ভাল ঠেকলো না। তাই সে দরজা ভেংগে দিল। তারপর যা দেখলো তাতে চোখ হৃদয় ও তার বাবা মা চিত্কার দিয়ে উঠলো। হৃদিতা পাখার সাথে ঝুলে আছে।
.
হৃদয়ের বাবা মা হৃদিতার লাশ ধরে কান্না শুরু করে দিল। কিন্তু হৃদয়ের সাহস হল না হৃদিতার লাশটা ধরার। সে দেয়ালের সাথে এক পাশে দাড়িয়ে রইলো। টেবিলের পাশে দুটা ঝুমকো দেখলো। হৃদয় ঝুমকো দুটা হাতে নিয়ে "হৃদিতা" বলে আত্মচিৎকার দিয়ে উঠল।
.
~ কি হইছে ভাইয়া, দরজা খুল।
"বাবা হৃদয় কি হইছে?" বাবা মা এক সাথেই বলল।
.
হৃদয় দেখল সে তার নিজ রুমে। দরজার ওপাশ থেকে তার বাবা মা ও বোনের কণ্ঠ শুনা যাচ্ছে। হৃদয় দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে হৃদিতাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল। বাবা মা বুঝল যে নিশ্চয়ই কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছে। হৃদয়ের মা লবণ পানি আনতে গেল।
.
~ কি হইছে ভাইয়া? ভয় পেয়েছিস কেন?
- কিছু না।
হৃদয়ের মা লবণ পানি খেতে দিল। হৃদয় কিছুটা শান্ত হল। বাবা মা বুঝিয়ে চলে গেল।
~ কি হইছে ভাইয়া? এভাবে চিত্কার দিয়েছিলি কেন?
- ভুতের স্বপ্ন দেখেছিলাম।
.
হৃদিতা অট্টহাসি দিয়ে উঠলো। হৃদয় সেই হাসির দিকে তাকিয়ে আছে। কি নিষ্পাপ হাসি।
~ তুই কি পিচ্চি নাকি?
- বাদ দে। সকালে কোথাও যাওয়ার প্ল্যান আছে?
~ হুম বান্ধবীরা মিলে ঘুরতে যাব।
- যেতে হবে না।
~ কেন?
- আমি বলছি তাই।
~ এমনিতেই তো সময় পাই না। কাল একটু পেলাম তাতেও বাধা?
- ঘুরতে ইচ্ছে করছে এই তো?
~ হুম।
- আমি নিয়ে যাব।
~ আচ্ছা। মনে থাকে যেন। পরে পল্টি খেলে কিন্তু আর জীবনেও চা খাওয়াবো না।
- প্রমিস পল্টি খাব না।
~ ঠিক আছে। ঘুমিয়ে পড়।
.
হৃদিতা লাইট অফ করে চলে গেল। হৃদয়ের ঘুম আসছে না। রাত ৩টা বাজে। হৃদয় ভাবতে লাগল গতকাল যা প্ল্যান করেছিল তা সব বাতিল করবে। হৃদয় নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দিল। সকালে উঠে হোটেলে ফোন করে রুম বুকিং ক্যান্সেল করলো। তবে ৫০% পেমেন্ট করতে হয়েছে। হৃদয় আজ অফিসে গেল না।
~ এই নে তোর চা। কিরে এখনো রেডি হলি না যে অফিসে যাবি না?
- নাহ।
~ কেন?
- ভাল লাগছে না।
~ ভয় পাসনে তোকে রাস্তায় ভুতে ধরবে না।
- এখান থেকে যাবি নাকি মার খাবি?
হৃদিতা দৌড় দিল।
.
সময় গড়িয়ে বিকাল হল। প্রিয়ার ফোন এলো।
> কি হল তোমার আজ সারাদিনেও খবর নেই কেন? সবকিছু ঠিক আছে তো?
- ব্যস্ত ছিলাম। তুমি বের হয়েছ?
> হচ্ছি। আর কিছুক্ষণ লাগবে।
- আচ্ছা।
.
ফোন রেখে দিল। এদিকে হৃদিতা অনেক আগে থেকে রেডি।
- তোর সাজা হয়েছে?
~ হুম চল।
হৃদয় হৃদিতাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। যথাসময়ে নির্ধারিত স্থানে চলে এলো। ওই তো প্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
.
প্রিয়া দূর থেকে হৃদিতাকে দেখে অবাক হল। হৃদিতাকে প্রিয়া চিনে। কিন্তু হৃদিতাকে আনার কারণ কি? হৃদয়ের পরিচয় করিয়ে দিল।
- এই হল তোর ভাবি প্রিয়া।
~ আচ্ছা এই কথা? এইজন্য বুঝি আমাকে এখানে নিয়ে আনা হয়েছে?
- হুম।
.
অতঃপর হৃদিতা ও প্রিয়া আড্ডায় মেতে উঠল। হৃদয় চুপচাপ বসে রইল। মাঝেমাঝে হু হা হুম করে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে। হৃদিতা ও প্রিয়া বেশ হাসিমুখে কথা বলে যাচ্ছে। হৃদয় মনে মনে ভাবছে এর চেয়ে সুখের সময় আর কিছু হতে পারে না। অন্যদিকে প্রিয়ার মনের মধ্যে যে ভয়টা ছিল তা কেটে গেছে। কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়ার পর হৃদয় বলল
- সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। এখন যাওয়া উচিত।
বাকি দুজন হুম বলল। হৃদয়ের হৃদিতাকে বলল
- তুই একটু বস। আমি ওকে (প্রিয়া) রিক্সায় তুলে দিয়ে আসি।
~ আচ্ছা।
.
হৃদয় প্রিয়াকে নিয়ে কিছুটা দূরে এসে বলল
- আমি অত্যন্ত লজ্জিত।
> কেন?
- ভালবাসার নাম দিয়ে আজ যেটা করতে চেয়েছিলাম তার ক্ষমা হয় না।
> দোষটা আমারও। আমার নিজের স্থানে শক্ত থাকা উচিত ছিল।
- না তোমার দোষ না। মেয়েরা এমনই ভালবাসার মানুষটির সব কথা খুব সহজেই মেনে নেয়।
> আচ্ছা বাদ দাও।
.
হৃদয় প্রিয়ার সামনে বসে পড়ে ক্ষমা চাইতে লাগল।
> এই এই এই কি করছো? হৃদিতা দেখছে তো।
- আগে বল আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছ।
> হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ করেছি। এবার উঠ।
.
প্রিয়া হৃদয়কে উঠালো। কিছুক্ষণ নীরবতা। তারপর প্রিয়াকে রিক্সায় তুলে দিয়ে হৃদিতার কাছে ফিরে এলো। হৃদিতা মুচকি মুচকি হাসছে। হৃদিতা ভেবেছে তার ভাই প্রিয়াকে প্রপোজ করেছে।
- হাসছিস কেন?
~ এমনিই। আচ্ছা ভাইয়া প্রপোজ কি আজই করেছিস নাকি আগেও।
- চুপচাপ হাট।
~ (ভেংচি)
.
অতঃপর তারা বাসায় চলে এলো। যে যার যার স্থানে ভাল ভাবে পৌছালো।
.
ভালবাসাকে ভাল রাখুন।
এটা আপনার দায়িত্ব।
যেখানে সম্মান নেই সেখানে ভালবাসা থাকে না।
অন্য নারীর সাথে অসদাচরণ করার আগে মনে রাখুন, আপনার ঘরেও নারী আছে।
.
লিখাঃ Nishi Chowdhuri (রাত্রির আম্মু)
©somewhere in net ltd.