![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষ।
গল্পের নামঃ সাবধান থাকুন।
.
এক পা দু পা করে টুকিটাকি হাটতে পারে মিম। তৌসিফ ও মুমুর একমাত্র আদুরে মেয়ে, বয়স মাত্র ১৩ মাস। তাদের জীবনের আলো হয়ে এসেছে মিম। মুমু সারাক্ষণ মিমকে নিয়ে মেতে থাকে। মাঝেমাঝে তৌসিফের ব্যাপারে খেয়াল রাখতে ভুলে যায়। তবে এ নিয়ে তৌসিফের কোনো অভিযোগ নেই।
.
একদিন ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলে তৌসিফ দেখল যে তার পাশে মিম ও মুমু কেউই নেই। বুঝল যে বারান্দায় আছে। তাই হাত মুখ ধুয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখল মুমু মিমকে নিয়ে সূর্যের আলোর সামনে দাড়িয়ে আছে। সূর্যের আলোতে ভিটামিন ডি থাকে। আর ভোর সকালে সূর্যের আলোতে তাপমাত্রা কম থাকে।
.
মুমু তৌসিফকে দেখে মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে বলল
> আসসালামু আলাইকুম। শুভ সকাল। হাত মুখ ধুয়েছ?
- ওয়া আলাইকুমুস সালাম। তোমাদের দুজনকেও শুভ সকাল। হুম ধুয়েছি।
> যাও টেবিলে বস আমি নাস্তা দিচ্ছি।
- আচ্ছা।
.
তৌসিফ রেডি হয়ে টেবিলে বসলো। মুমু নাস্তা নিয়ে এলো। আর মিম এক পা দু পা করে হাটছে। মুমু মিমের সাথেই আছে। পরে গেলে ধরে ফেলে আবার সাহায্য করে হাটা শিখতে।
.
দেখতে দেখতে কেটে গেল দু মাসের মত। এখন মিম পুরোদমে হাটতে পারে। একটু আধটু দৌড়াতেও পারে। নিয়ন্ত্রণহীন দৌড় যাকে বলে। মিম এখন খুব দুষ্টু হয়েছে। পুরো ঘর একাই মাতিয়ে রাখে। এদিক সেদিক চারদিকে তার রাজত্ব। এখন এখানে তো পরমুহূর্তেই ওখানেই। ছুটাছুটির মধ্যেই থাকে।
.
একদিন সকালে
মুমু রান্নাঘরে তৌসিফের জন্য নাস্তা বানাচ্ছে। তৌসিফ রেডি হয়ে টেবিলে বসলো। মিম তৌসিফের কাছে এসে কিছুক্ষণ দুষ্টামি করলো। তারপর আবার রান্নাঘরে গেল। সেখানে কিছুক্ষণ দুষ্টামি করলো তারপর আরেক স্থানে গেল। এভাবেই মিমের দিনকাল কাটে। মুমু নাস্তা বানিয়ে এনে তৌসিফকে দিল। মিমও চলে এলো নাস্তা খাওয়ার জন্য। নাস্তা খেল কম ফেললো বেশি। ছোটরা এমনই।
.
মিম পানি নিয়ে খেলতে বেশি পছন্দ করে। তাই যখনই বাথরুমের দরজা খোলা পায় তখনই ঢুকে পরে এবং পানি নিয়ে খেলা করে। তাই মুমু সবসময়ই বাথরুমের দরজা লাগিয়েই রাখে। যাতে মিম বাথরুমে যেতে না পারে।
.
আজ মুমুদের ঘরে তৌসিফের অফিসের কিছু কলিগ আসবে। তাই মুমু খুব ব্যস্ত। মিমকে ঘুম পাড়িয়ে রান্নার কাজ শেষ করতে লাগল। সুযোগ বুঝে মিমের কাপড়চোপড়ও ধুতে বাথরুম গেল মুমু। কিছুক্ষণ পর পেসার কুকের বাশির আওয়াজ পেয়ে তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে এলো। পেসার কুকের শব্দে মিমেরও ঘুম ভেংগে গেল। মিমের ঘুম ভাংলে সে আগে মুমুকে খুঁজে। দেখা পেলে তারপর নিজের খেলায় মেতে উঠে। স্বভাবতই মিম ঘুম থেকে উঠে পাকঘরে এসে মুমুকে দেখল। কিছুক্ষণ সেখানেই দুষ্টামি করল। মুমু মিমের হাতে একটা বিস্কুট ধরিয়ে দিয়ে পাকঘর বরাবর রুমটাতে বসিয়ে দিল যাতে পাকঘর থেকে তাকালে দেখা যায়।
.
পিচ্চিরা কি আর এক জায়গায় বসে থাকে? কিছুক্ষণ পর মিম এদিক সেদিক গিয়ে খেলতে লাগল। আর মুমু রান্নায় ব্যস্ত। বেশ কিছুক্ষণ পর মুমুর অবচেতন মনে অদ্ভুত ভয় অনুভূত হল। তাই সে মিমকে ডাক দিল। কিন্তু সাড়া পেল না। বেশ কয়েকবার ডাকার পরেও কোনো সাড়া না পেয়ে সেই রুমে গেল কিন্তু দেখা পেল না। বেডরুমে খুঁজতে গিয়ে দেখল বাথরুমের দরজা খোলা। মুমু তাড়াতাড়ি বাথরুমে গিয়ে উকি দিল। তারপর যা দেখল তার জন্য মুমু মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তার আদরের একমাত্র মেয়ে বালতির পানিতে ডুবে আছে। তাড়াহুড়ো করে মুমু মিমকে তুলে কান্না করে বলতে লাগল, মিম মা আমার কথা বল মা। মিমের এই অবস্থা দেখে মুমুর জ্ঞান বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। এটাও ভুলে গেছে যে এমতাবস্থায় মিমকে হাসপাতালে নেয়া অতি জরুরী। মুমু মিমকে জড়িয়ে ধরে অনবরত চিত্কার করে কান্না করে যাচ্ছে। এতই জোরে কান্না করছে যে আশেপাশের ফ্ল্যাটের মানুষজনও চলে এসেছে।
.
অনবরত কলিংবেলের শব্দে মুমুর অবচেতন মন জেগে উঠলো। মুমু তাড়াতাড়ি মিমকে নিয়ে দরজা খুলে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। পাশের বাসার মহিলাটিও মুমুর সাথে এলো।
.
হাসপাতালে আসার পর মুমু কেঁদে কেঁদে তৌসিফকে সব জানালো। তৌসিফ ছুটে এলো হাসপাতালে। মুমু তৌসিফকে জড়িয়ে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগল
> এসবের জন্য আমি দায়ী। আমি তোমার মেয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে পারিনি।
তৌসিফ মুমুকে শান্তনা দিল। কিন্তু এমন অবস্থায় মায়ের মনকে কি শান্তনা দেয়া যায়? মুমু কেঁদেই চলেছে। কান্না থেমেছে যখন ডাক্তার এসে বলল মিম ঠিক আছে। ডাক্তারের কথা শুনে মুমু যেন নিজের দেহে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। উপর থেকে শক্ত ভাব দেখালেও তৌসিফের ভেতরটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে আছিলো। দুনিয়াটা যেন অন্ধকার লাগছিল। কিন্তু ডাক্তারের কথা শুনে তৌসিফের অন্ধকার দুনিয়াটা আলোকিত হয়ে গেল।
.
গল্পটা এখানেই সমাপ্ত করলাম। শুধু এইটুকুই বলব ছোট বাচ্চাদের প্রতি খুব খুব খুব সতর্ক থাকুন। তাদের প্রতিটি মুভমেন্টকে চোখে চোখে রাখুন। আর বিশেষ করে পাকঘর ও বাথরুম থেকে ছোটদেরকে দূরে রাখুন।
.
লিখাঃ নিশি চৌধুরী (রাত্রির আম্মু)
©somewhere in net ltd.