![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষ।
গল্পের নামঃ হঠাৎ বিয়ে ও পরিশেষে শুভসূচনা।
.
তুষারের ঘরে বড়সর করে আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। তুষারের বিয়ের আয়োজন। বড়সর হবে না কেন? তুষার চৌধুরী বাড়ির ছেলে আর চৌধুরী বাড়ির সবকিছুই বড়সর করে হয়। পুরো এলাকাবাসীকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। মেয়ে তুষারের বেশ পছন্দ হয়েছে। তাদের মতই উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে। নাম আরশি। তুষার অফিসের কাজে বের হচ্ছে। এ কি! আরশি এখানে?
~ হাই। (আরশি)
- আসসালামু আলাইকুম। আপনি হঠাৎ এখানে? (তুষার)
~ আন্টি (তুষারের মা) বলেছিল আসতে তাই এলাম। ও হল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তিশা।
> আসসালামু আলাইকুম। (তিশা)
- ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আচ্ছা আপনারা ভেতরে যান। আমি একটু কাজে যাচ্ছি।
~ আচ্ছা।
.
তুষার চলে গেল। আরশি ও তিশা ভেতরে গেল। মূলত গহনা, শাড়ি ও কসমেটিকস দেখানোর জন্যই ডাকা হয়েছে। চৌধুরী বাড়ির বউ বলে কথা। আরশি তিশাকে নিয়ে তার ননদীর সাথে পুরো বাড়ি ঘুরে দেখল। বলতে গেলে রাজ মহল। গহনা ও বাকি সব দেখে পছন্দ করে আরশি তিশাকে নিয়ে চলে গেল।
.
তুষার হল চৌধুরী পরিবারের একমাত্র ছেলে। এলাকাজুড়ে তাদের বেশ নাম ও সম্মান রয়েছে। আরশি হল নামী বিজনেস ম্যানের একমাত্র মেয়ে। আর তিশা হল এতিম। টিউশনি ও পার্ট টাইম জব করে নিজের পড়ালেখা ও অন্যান্য খরচ চালায়। আত্মীয়স্বজন বলতেও কেউ নেই তিশার। আরশিদের বাসায় প্রায়ই আসা যাওয়া হয়।
.
বিকালে তিশা আরশিদের বাসায় এলো।
> আসসালামু আলাইকুম আন্টি কেমন আছেন?
= এইতো মা ভালই আছি। তুমি?
> আমিও। আরশি কোথায়?
= হয়তো ছাদে আছে।
.
তিশা ছাদে গিয়ে দেখল আরশি মোবাইলে কথা বলছে।
> আবার সুমনের সাথে কথা! (রাগে)
আরশি ঘুরে দাঁড়াল।
~ আরে না না। অন্য এক ফ্রেন্ড।
> দেখি তো।
~ ইয়ে মানে ……… আসলে ওর সাথে আজ সব শেষ করে দিচ্ছি।
> দেখ আংকেলের দ্বিমত হইস না।
~ না না। আমি তো বিয়ে করবই।
তিশা নিচে নেমে গেল।
.
আজ তুষারের বিয়ে। ব্যান্ড, বাজনা, আত্মীয়স্বজন সব নিয়ে পাত্রী পক্ষের বাড়ি এসে হাজির হয়েছে। আয়োজন বেশ বড়সর। পাত্রী পক্ষ কোনো কিছুতে কমতি রাখেনি। একমাত্র মেয়ে বলে কথা। আরশিকে সেজেগুজে রেডি করানো হল। তিশা অন্যান্য বন্ধুবান্ধবীদের সাথে কথা বলছে। তখন একটা পিচ্চি এসে বলল যে আরশি তাকে ডাকছে।
.
তিশা আরশির রুমে এলো
> বাহ! বেশ সুন্দর লাগছে তো তোকে। বর দেখলে পাগল হয়ে যাবে। তো কেন ডেকেছিস?
~ একটা প্রব্লেম হয়েছে।
> কি?
~ সুমন দেখা করতে চাচ্ছে। দেখা না করলে এখানে এসে আমাদের কথা সবাইকে দিবে।
> কি বলছিস এসব? এখন উপায়?
~ শুন ………………………………… (প্ল্যান)
> না না আমি পারব না। কিছু হলে আমি ফেঁসে যাব।
~ আরে ফাঁসবি না। আমি আছি তো।
> ধুর কি যে মুশকিল!
~ প্লিজ দোস্ত। এই হেল্পটা কর। এই ব্যাপারে তোকে ছাড়া অন্য কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না। প্লিজ তিশা প্লিজ।
> আচ্ছা।
.
বিয়ে হয়ে গেল। চৌধুরী বাড়ির বউ বলে কথা তাই বিয়ের সময় বিশাল ঘোমটা ছিল। কেউই চেহারা দেখেনি। আরশি এখন চৌধুরী বাড়িতে। বাসরঘরে বসে আছে। পিছনের জানালা বেয়ে তিশা উঠে আরশিকে ডাক দিল। তিশাও বউ সাজে সেজে আছে।
~ তুই বস। আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি।
> যদি তোর বর এসে যায়?
~ তুই যাস্ট কিছুক্ষণ ঘোমটা মাথায় রেখে টাইম পাস করবি। আমি এসে সব ম্যানেজ করে নিব।
> আমার ভীষণ ভয় করছে।
~ ধুর ভয় কিসের? আমি যাব আর সুমনকে সব বুঝিয়ে আসব।
> যদি সুমন উল্টাপাল্টা কিছু করে?
~ আরে নাহ। আমার সামনে ভয়ে কিছু বলতেই পারে না। শত হলেও এক সময় ভালবাসতো। আচ্ছা যাই।
> তাড়াতাড়ি আসিস।
.
আরশি জানালা বেয়ে নেমে গেল। আসলে সেদিন আরশি পুরো বাড়ি ঘুরেছিল পালানোর পথ সেট করার জন্য। আরশি সুমনকে ভালবাসে। কিন্তু বাবা জানতে পারলে সুমনকেই গায়েব করে দিবে। তাই আরশি চুপে চুপে সুমনের সাথে এসব প্ল্যান করেছিল। প্ল্যানে আরও বেশি সুবিধা হয়েছে কারণ তুষারের রুমটা বাড়ির একদম শেষের দিকে তাই নিরিবিলি। জানালার ওপাশে মানুষজন থাকে না বললেই চলে।
.
তিশার বুক ভয়ে ধুকধুক করছে। ঠিক তখনই দরজায় ঠকঠক শব্দ করে উঠলো। তিশা ভয়ে আতকে উঠলো। ফোনটা বের করে আরশিকে কল করে দেখল আরশির মোবাইল বন্ধ। তিশার মাথা ঘুরিয়ে উঠলো। মনে মনে ভাবল নিশ্চয়ই সুমন আরশির সাথে কিছু করেছে। কিন্তু এখন তার কি হবে? হুম পালাতে হবে। তিশা বারান্দার দিকে যাবে তখনই দরজা খুলে তুষার ঢুকলো।
- আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন? কিছু লাগবে?
ভয়ে তিশার পা থমকে গেল। কি করবে, কি বলবে ভেবেই পাচ্ছে না। তুষার সামনে এসে বলল
- কি হল কিছু বলছেন না যে? ও বুঝেছি চাঁদ দেখার জন্য উঠেছেন?
তিশা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না, হাত পা কাপছে, হৃদপিণ্ড লাফালাফি করছে।
.
তুষার তিশার কাছে গিয়ে হাত ধরলো। তিশা ভয়ে কেপে উঠলো। হাত ছাড়িয়ে বলল
> আমাকে একদম ছুবেন না। আমি আরশি নই।
তুষারের চোখ বড় হয়ে গেল। কি বলে! গাড়ি করে তো আরশিকেই এনেছিলাম তবে কিভাবে কি হল? তুষার ঘোমটা সরালো। একি! এ তো তিশা!
- আ…আ…আপনি এখানে কেন?
ভয়ে তিশা গলগল করে সব বলে দিল।
রাগে তুষারের চেহারা লাল হয়ে গেল। যা দেখে তিশা ভয়ে থরথর করে কাপছে।
> দেখুন আমার মনে হয় সুমন আরশিকে তুলে নিয়ে গেছে।
তুষার ঠাস করে থাপ্পড় মেরে দিল।
> একদম চুপ। কোনো কথা বলবি না। বললেই মেরে ফেলব। একদম চুপ।
তিশা গালে হাত দিয়ে কাঁদতে লাগল। তুষার বেশ কিছুক্ষণ নীরব থাকলো আর তিশা কেঁদেই যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর তুষার উঠে তিশার হাত ধরে রুম থেকে বেরিয়ে পরলো। তিশা বারবার বলতে লাগল হাত ছাড়ুন প্লিজ। কিন্তু তুষার কোনো কথা না শুনে রুমের বাইরে নিয়ে এলো। তারপর বাড়ির সবাইকে ডাকলো। সবাই এসে হাজির হলো। অতঃপর সবাইকে সব খুলে বলা হলো।
.
এখন কি করবি? ব্যাপারটা জানাজানি হলে মান সম্মান সব যাবে। (তুষারের বাবা)
- আমাদের বংশের মান সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলা এত সোজা নয়। বন্ধুর হেল্প করার খুব সখ তাই না? আজ থেকে তুইই এই বাড়ির বউ হয়ে থাকবি।
> কি!!! কি বলছেন এসব?
- বাবা কাজি ডাকো। আবার বিয়ে হবে।
> আমি বিয়ে করব না।
.
তুষার দেয়ালে ঝুলানো চাবুকটা নিয়ে তিশার দিকে তেড়ে এলো। তুষারের মা এসে বাধা দিল। তারপর তিশাকে আলাদা নিয়ে গিয়ে বুঝালো যে বিয়ে ছাড়া অন্যকোনো উপায় নেই। কারণ এটা চৌধুরী বাড়ির মান সম্মানের ব্যাপার। তিশার আগে পিছে কেউ নেই যে এই বিপদের মুহূর্তে এগিয়ে আসবে। তাই নিরুপায় হয়ে তিশা নিয়তি মনে করে মেনে নিল। অতঃপর চুপিচুপি কাজি ডেকে আবার বিয়ে করানো হল। তিশা বাসরঘরে বসে আছে। তিশা বিশ্বাসই করতে পারছে না কি থেকে কি হয়ে গেল। তুষার রুমে এসে তিশার পাশে বসলো।
- শুনো পালানোর চেষ্টা একদম করবা না। তাহলে হাত পা ভেংগে বসিয়ে রাখবো। এমন কোনো কাজ করবা না যাতে আমাদের বংশের নামে কলংক লাগে। কথাগুলো মনে রাখবা।
.
কথাগুলো বলে তুষার ঘুমিয়ে পরলো। তিশাও ঘুমিয়ে পরলো। বিয়ের পরেরদিন তুষার তিশার সাহায্য সহযোগিতার জন্য দুটা মেয়ে নিয়োগ করেছে। মেয়ে দুটার হাবভাব দেখেই তিশা বুঝেছে যে এই মেয়ে দুটা তার পিছনে গোয়েন্দাগিরি করছে। তিশা বুঝেও কিছু বলল না। কি বলবে কাকেই বা বলবে? তিশা কোথায় যায়, কি করে না করে, কার সাথে কথা ইত্যাদি সব কিছুর খবর মেয়ে দুটা নিয়মিত তুষারকে দেয়। এমনিতেও তিশা বাড়ির বাইরে যেতে পারে না। বন্ধীর মত সারাদিন ঘরে শুয়ে থাকে। তিশা রুমে বসে কাঁদছে। তখন তিশার শ্বাশুড়ী এলো। তিশা দ্রুতগতিতে চোখের পানি মুছে ফেলল।
.
~ কাঁদিস না মা। মেয়েদের জীবনটাও এমন। আমার বিয়েও আমার দ্বিমতে হয়েছিল। শুরুতে তো কারও অনুমতি ছাড়া বিছানা থেকেও নামতে পারতাম না। কিন্তু এখন সবাই আমার অনুমতি ছাড়া এক পাও নড়ে না। তুষার বদরাগী কিন্তু খুব ভাল। মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা কর তাহলে আর কোনো কষ্ট থাকবে না।
.
এই কিছুদিনে এটা ঠিকই বুঝেছে যে তুষারের মনটা খুব উদার ও ফ্রেশ। মানুষের উপকার করতে পিছপা হয় না। সবসময়ই দান খয়রাত করে থাকে। অসহায় কেউ সাহায্য চাইলে না করে না।
.
তিশা নিজ দায়িত্ব পালন করতে লাগল। তুষারের সবকিছুর খোঁজখবর ও দেখাশোনা করতে লাগল। তুষার যেটাই খুঁজে পায় না তিশা তা খুঁজে দেয়। এক রাতে তুষার পার্টি করে অনেক লেইট করে ফিরেছে। মেইন গেটের ডুপ্লিকেট চাবি তুষারের কাছে আছে। তুষার সেটার মাধ্যমে ঢুকে পরলো। কারণ মা জানতে পারলে খবর আছে। চুপিসারে রুমে যাওয়ার সময় হঠাৎ লক্ষ্য করল ডাইনিং টেবিলে কেউ বসে আছে। একটু সামনে যেতেই তুষার দেখল তিশা প্লেট পাশে ঘুমিয়ে পরেছে। তুষার বুঝলো যে তিশা ডিনার নিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পরেছে। তুষারের খারাপ লাগলো। কারণ তিশা কখনো তার আগে খায়নি। তারমানে আজ না খেয়েই ঘুমিয়ে পরেছে। তুষার একবার ভাবলো ডেকে তুলবে আবার ভাবলো ঘুমটা নষ্ট করা ঠিক হবে না। তিশার ঘুমন্ত চেহারার দিকে চোখ পরতেই তুষার মনে মনে বলল, "বাহ! মাশাল্লাহ মেয়েটা তো একটা মায়াবী পরী।" মনের অজান্তেই তুষার তিশাকে কোলে করে বেডরুমে নিয়ে শুইয়ে দিল।
.
সকালে তিশা চোখ খুলে দেখল তুষার প্লেট হাতে তার সামনে বসে আছে। তুষারের হাতে প্লেট দেখে তিশা ভাবলো নাস্তার জন্য বসে আছে।
> ইসস আজ উঠতে দেরি হয়ে গেছে। আপনি একটু অপেক্ষা করুন আমি এক্ষুনি নাস্তা বানিয়ে আনছি।
তিশা উঠতে লাগলো। তুষার হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বলল
- নাস্তা বানিয়েই এনেছি।
তিশা দেখলো প্লেটে নাস্তা আছে।
> ইয়ে মানে ……
- যাও হাত মুখ ধুয়ে এসো।
.
তিশা ওয়াশ রুমে গিয়ে হাত মুখ ধুতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো, "আমি তো টেবিলে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। তবে বেডরুমে কিভাবে এলাম!" যাইহোক তিশা হাত মুখ ধুয়ে বেরিয়ে এলো।
- এদিকে এসে বসলো।
তিশা চুপচাপ এসে বসলো।
- হা কর।
> আমি খেয়ে নিতে পারব।
- আমার হাতে খেলে কোনো সমস্যা?
তিশা চুপচাপ মুখ খুলে হা করলো। তুষার নাস্তা খাইয়ে দিতে লাগলো। তিশাও এক টুকরো নিয়ে তুষারের দিলে এগিয়ে দিলো। তুষার কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো তারপর স্বাচ্ছন্দ্যে খেয়ে নিলো। নাস্তা শেষে তুষার রেডি হয়ে অফিসে চলে গেল। যাওয়ার আগে সেই দুটা গোয়েন্দাগিরি করা মেয়ে দুটাকে তুষার পাঠিয়ে দেয়।
.
এখন প্রতিরাতে তুষার যথাসময়ে ঘরে চলে আসে। প্রায় রাতেই সে ঘুম থেকে উঠে তিশার ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকে। এতে এক অদ্ভুত শান্তি পায় সে।
.
এভাবে কেটে গেল কিছু মাস। দুজন একে অপরকে খুব বুঝতে শিখেছে। আপনি থেকে সম্পর্কটা তুমিতে এসেছে। কিন্তু ভালবাসার কথা এখনো বলা হয়নি। তুষার বলতে দ্বিধাবোধ করে। কারণ বিয়ে ও তাদের বৈবাহিক জীবনটা যেভাবে শুরু করেছিল তাতে তুষার আজও লজ্জাবোধ করে। আর তিশা মেয়ে তাই লজ্জায় কিছু বলতে পারে না। তবে অধিকার খাটাতে ভুল করে না। পুরো চৌধুরী বাড়ি এখন তিশা দেখাশোনা করে। এখন তিশার কথা ছাড়া কেউ এক পাও নড়ে না। বলতে গেলে শ্বাশুড়ী সাংসারিক কাজ থেকে রিটায়েড নিয়েছে। সব দায়ভার এখন তিশার উপর।
.
এক রাতে
- একটা কথা বলি যদি কিছু মনে না কর।
> জ্বি বল।
- বলছিলাম যে তুমি তো সারাদিন ঘর সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকো। বাইরের পরিবেশটা অনেকদিন ধরে দেখ না।
> এতো না ঘুরিয়ে যা বলার সরাসরি বল।
- চল না আমরা দূর কোথাও থেকে ঘুরে আসি।
> আর ঘর সংসার কে দেখবে শুনি? বাবা মায়ের কি হবে?
- মা সব সামলে নিবে।
> না হবে না। কাছে কোথাও যেতে পারব বাট দূরে নয়।
.
তুষার বুঝলো তিশাকে বুঝিয়ে লাভ হবে না। তাই তুষার তার মাকে বুঝিয়ে বলল। পরেরদিন সকালে ব্রেকফাস্টের সময় তিশার শ্বাশুড়ী বলল
~ যা তোরা ঘুরে আয়। আমি সব সামলে নিব। ওতোটা বুড়ি এখনো হয়নি।
> কিন্তু মা………
~ কোনো কিন্তু না। যা বলেছি তা শুন।
.
অতঃপর পরেরদিন বিদায় নিয়ে তারা বেরিয়ে পরলো।
> বুদ্ধি তো ভালই আছে তোমার।
তুষার মিটমিট করে হাসলো।
> আল্লাহ জানে বাবা মা কিভাবে সব দেখেশুনে রাখবে! চাকর বাকর দিয়ে কি সব হয়!
- আসলে তুমি অনেক মহান। আমার বাবা মাকে নিজের বাবা মা-ই মনে কর।
> তারা আমারও বাবা মা। তাদের দেখাশোনা করা আমার দায়িত্ব। এতে মহানের কিছুই নেই।
.
তুষার ও তিশা ঘুরতে শহরের বাইরে এলো। দুজন একটা রেষ্টুরেন্টে বসে আছে। হঠাৎ তুষার আরশিকে দেখতে পেল।
- এই দেখ দেখ ওটা আরশি না?
তিশা ঘুরে তাকিয়ে দেখল। হ্যাঁ আরশিই। তিশার মনটা এক বিষণ্ণতায় ভরে উঠলো। এতদূর থেকেও তুষার আরশিকে চিনে ফেলল? তিশার অবচেতন মনে হিংসায় দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো। এটা মেয়েদের স্বভাবগত একটা বৈশিষ্ট্য যা ভালবাসাকে দৃঢ় করে। তিশা রেগেমেগে বলল,
> হুম তো কি হইছে?
- অনেকদিন পর আজ পেলাম।
> মানে কি? (রেগে)
- ওর সাথে কিছু কাজ আছে।
> কিসের কাজ?
.
তুষার বুঝলো তিশার মনে হিংসা জ্বলে উঠেছে। তাই ইচ্ছে করে তুষার বলল
- সেটা তোমাকে বলে কি হবে?
> কি হবে মানে? আমি তোমার বিবাহিত স্ত্রী। আর তুমি আমার সামনে অন্য মেয়েকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করবা আর আমি চুপ থাকব? কখনোই না। চল আমরা অন্য কোথাও যাব।
- আগে কাজটা সেরে আসি।
তুষার উঠে আরশির দিকে হাটা দিল। তিশাও পিছুপিছু এলো। দুজনই এসে আরশির সামনে হাজির হলো। তাদেরকে দেখে আরশির চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। আরশি ভয়ে তোতলাতে লাগল।
.
- কেমন আছ?
~ ইয়ে মানে তো…তো…তোমরা এখানে!
- তোমার সাথে কিছু কাজ ছিল।
~ কি…কি কাজ?
- তালাক দেয়া।
~ স্যরি বুঝলাম না।
> কিসের তালাক? (তিশা)
- সেদিন বিয়ে তো আরশির সাথেই হয়েছিল। যদিও সে পালিয়েছিল। কিন্তু ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী আরশি আমার স্ত্রী। তাই তালাক দিয়ে সেটা সরাতে চাই।
.
আরশি ও তিশা দুজনই তুষারের দিকে তাকিয়ে আছে। তুষার আরশিকে তালাক দিয়ে দিল। তারপর ফোন করে কিছু কথাবার্তা বলল। কিছুক্ষণ পরেই দুজন লোক (উকিল) এসে কিছু কাগজপত্র দিল।
- এই নাও ডিভোর্স পেপার। সাইন কর।
আরশি চুপচাপ সাইন করে দিল।
- চলি আল্লাহ হাফেজ। আর হ্যাঁ অনেক অনেক ধন্যবাদ। সেদিন তুমি না পালালে তিশার মত বউ পেতাম না। আমি তিশার সাথে খুব সুখেই আছি। তিশা আমালে খুব ভালবাস, আমিও খুব ভালবাসি। জীবনে এত সুখী আগে কখনো হইনি। এসবই তোমার জন্য হয়েছে। তাই ধন্যবাদ।
.
তুষার তিশার হাত ধরে হাটা দিল। তিশা চুপচাপ তুষারের সাথে চলে এলো। বাড়ির উদ্দেশ্যে তারা রওনা দিলো। রেষ্টুরেন্ট থেকে বের হবার পর থেকে দুজনের কেউই কোনো কথা বলেনি। জড়াতাটা তুষারই ভাংলো।
- কি হইছে? এত চুপচাপ কেন?
> নাতো কিছু না। (রাগ)
- রেগে আছ কেন?
> ………… (চুপ)
- আমি কি কোনো ভুল করেছি?
> গাড়ি থামাও।
- কেন?
> আমি বলেছি তাই।
.
তুষার গাড়ি থামালো। তিশা গাড়ি থেকে নেমে গেল। তুষারও নেমে গেল।
- আরে কোথায় যাচ্ছ?
তিশা একটু দূরে গিয়ে থামলো। পাহাড়ি রাস্তা। চারদিকে খোলা আকাশ। রাস্তার পাশ থেকে শহরের রংবেরঙের বাতির আলো দেখা যাচ্ছে। অসাধারণ এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।
.
- কি হল চুপ করে দাঁড়িয়ে আছ কেন?
> একদম চুপ। (রাগ)
তুষার থতমত খেয়ে গেল। কারণ রাগ করার মত কোনো কাজই তো করেনি।
- ইয়ে মানে রাগের কারণটা কি?
.
তিশা অত্যন্ত ক্ষ্যাপাটে ভাব নিয়ে বলল
> আমাকে তো কখনো ভালবাসার কথা বলনি। আজ আরশির সামনে কেন বললে?
- ইয়ে মানে ………
> কিসের মানে মানে? কাকে ভালবাস?
- ইয়ে মানে…… তোমাকে।
> কবে থেকে?
- অনেক আগে থেকেই।
> তো বলনি কেন?
- তুমি বলনি কেন?
> ইয়ে মানে আমি কি বলব? ভালবাস তুমি। সুতরাং তোমার বলা উচিত ছিল।
- তুমি বাস না?
> ইয়ে মানে………
- এখন মানে মানে করছ কেন?
তিশা চুপ হয়ে গেল।
.
তুষার তিশার পাশে এসে দাঁড়ালো।
- পরিবেশটা খুব দারুণ তাই না?
> হুম। (আস্তে করে বলল)
- আসলে ভুলটা আমারই হয়েছে। ভালবাস এই কথাটা আগে তোমাকে বলা উচিত ছিল।
> সেটাইতো। বলনি কেন?
তুষার হাটু গেড়ে বসে কানে ধরে বলল
- স্যরি। আর এমন ভুল করব না।
> এই এই কি করছ এসব? উঠ বলছি।
- আগে তোমার মনের কথাটা বল।
> সব কি বলতে হয়? বুঝ না?
- আমি অবুঝ তো তাই বুঝি না।
> আমি এই অবুঝটাকে খুব ভালবাসি।
.
কথাটি বলে তিশা লজ্জায় অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ালো। তুষার দাঁড়িয়ে তিশার হাত ধরে বলল
- আমিও খুব ভালবাসি।
> এভাবে সবসময় হাত ধরে পাশে থাকবে তো?
- জ্বি মহারানী। কিন্তু এখন রাত অনেক হয়েছে। আমাদের যাওয়া উচিত।
> তো চলুন মহারাজা।
.
তুষার হঠাৎ করেই তিশাকে কোলে তুলে নিলো। তিশা মোটেও প্রস্তুত ছিল না। লজ্জায় লাল হয়ে গেল।
> এই কি করছ ছাড়। কেউ দেখে ফেলবে তো।
- এত রাতে এমন হাইওয়ে রোডে গাড়িই চলে না তো কে দেখবে? আর দেখলে দেখুক। আমি আমার ভালবাসাকে কোলে নিয়েছি তাতে কার কি?
.
তিশা লজ্জায় আর কিছু বলতে পারলো না। নিজের লজ্জা মাখা মুখটি তুষারের বুকে গুজে দিলো। তুষার তিশাকে কোলে নিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাচ্ছে তারা নতুন একটি শুভসূচনার দিকে।
.
লিখাঃ Nishi Chowdhuri (রাত্রির আম্মু)
©somewhere in net ltd.