![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষ।
গল্পের নামঃ সাবধান হোন ও মনোবল শক্ত রাখুন।
.
স্মৃতি গ্রামের খুব সাধারণ একটি মেয়ে। মায়ের ফোন দিয়ে মাঝেমাঝে ফেবুতে ঘুরাঘুরি করছে। নোটিফিকেশন গুলো চেক করছে। সে নিয়মিত লেখালেখির পাশাপাশি ছবিও পাবলিশড করে। বেশ কিছুদিন ধরে একটা ছেলে তাকে বেশ কয়েকবার নক করেছে।
- হ্যালো (ছেলেটি)
> জ্বি ভাইয়া বলুন।
- এগুলো (কিছু ছবি) পাবলিশড হলে কেমন হবে?
ছবিগুলো দেখে স্মৃতির চোখ কপালে উঠে গেল। সব তারই অশ্লীল ছবি। ছবিগুলো অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ফটোশপের মাধ্যমে বানানো হয়েছে। ছবিগুলো দেখে স্মৃতি ঘাবড়ে গেল।
> এগুলো আমার না। বানোয়াট।
- এগুলো যদি বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করা শুরু করি তাহলে কি হবে?
> আমার ক্ষতি করে আপনার লাভ কি?
- আমার লাভের প্রয়োজন নেই। এগুলো এক শর্তে ডিলিট করতে পারি।
> কি শর্ত?
- (নোংরা প্রস্তাব)
> আমার এত বড় ক্ষতি করবেন না। প্লিজ ভাইয়া ছবিগুলো ডিলিট করে দিন।
- রাজি হলে ডিলিট নয়তো পাবলিশড হতে থাকবে। আগামীকাল এই সময়ে ফেবুতে আসবো। এখন বাই।
> প্লিজ আমি আপনার বোনের মত প্লিজ প্লিজ এমন করবেন না।
.
মেসেজ সীন হল না। স্মৃতি দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। কি করবে ভেবে পারছে না। পরেরদিন একই সময় ছেলেটি আবার মেসেজ দিল।
- রাজি?
> দেখুন ভাইয়া আমার এমন ক্ষতি করবেন না। প্লিজ ভাইয়া।
- বুঝেছি তোকে একটা নমুনা দেখাতে হবে।
> ভাইয়া আমি খুব সাধারণ পরিবারের মেয়ে। বাবা মা দেখলে মেরেই ফেলবে।
ছেলেটি একটি লিংক দিয়ে চলে গেল। স্মৃতি সেখানে যেয়ে দেখলো ফটোশপের একটা ছবি একটা নোংরা পেজে পাবলিশড করা হয়েছে। ধীরে ধীরে লাইক কমেন্ট শুরু হল। অশ্লীল মন্তব্যে ভরপুর। স্মৃতি পড়তে পারলো না। চোখ বেয়ে শুধু পানিই পড়ছে।
.
পরেরদিন,
- কেমন লাগল লিংকটি?
> আপনার ঘরে কি মা বোন নেই? আমার সাথে এমন করতে পারলেন?
- যদি আজকেত মধ্যে রাজি না হস তাহলে তোর বাড়ির আশেপাশে এই ছবিগুলো ছাপিয়ে দিব। আমি তোর বাড়ির ঠিকানা সব জানি। এই হল ***** (ঠিকানা)
> আমি আপনার পায়ে পড়ি প্লিজ আমার এত বড় সর্বনাশ করবেন না।
- এখন যাই। রাজি থাকলে এই নাম্বারে ফোন দিস। নয়তো আগামীকাল সকালে তোর ছবি সবার ঘরের দেয়ালে লাগানো থাকবে।
.
স্মৃতি ভয়ে শীতল হয়ে গেল। রক্ত চলাচল যেন বন্ধ হয়ে গেছে।
.
বেশ কিছুক্ষণ ধরে স্মৃতির রুম আটকানো। তার মা অনেকক্ষণ ধরে ডাকছে। কিন্তু সাড়া পাচ্ছে না। কুড়ের ঘর। কাঠির দেয়াল একটু ফাঁক করে দেখলো স্মৃতি মেঝেতে পড়ে আছে। মা চিতকার করে উঠলো। বাবা ভাই দৌড়ে এসে দরজা ভেংগে ভেতরে ঢুকে দেখলো স্মৃতির এক হাতে একটি চিঠি, অপর হাতে বিষ। শুরু হল সন্তান হারা আর্তনাদ। চিঠিটিতে স্মৃতি তার সাথে হওয়া ব্ল্যাকমেইলের ঘটনাটি উল্লেখ করে বলল, বিশ্বাস কর বাবা মা, আমি এমন কিছু করিনি যাতে তোমরা সবার সামনে ছোট হবা। আমি নিজ চোখে এটা দেখতে পারব না। তাই চলে গেলাম সবকিছু ছেড়ে।
.
ঘটনাটিতে মিডিয়া ও উচ্চ মহলের চোখ পড়ায় পুলিশ স্মৃতি ফেবু আইডি থেকে সব তথ্য সংগ্রহ করে ঐ ব্ল্যাকমেইলারের আইপি এড্রেস বের করে তাকে সনাক্ত করে ফেলল। অতঃপর সেই ছেলেটি পুলিশের হাতে গ্রেফতার। বিচার প্রক্রিয়া শুরু। বিচার কবে শেষ হবে তা জানা নেই।
.
এবার আসুন অন্য একটি গল্প পড়ি।
বিথী গ্রামের সাধারণ একটি মেয়ে। মায়ের মোবাইলে সুযোগ পেলে মাঝেমাঝে ফেবুতে ঢুঁ মারে। একদিন একটা ছেলে মেসেজ দিল।
- হাই।
> হ্যালো।
- এগুলো (কিছু ছবি) পাবলিশড হলে কেমন হবে?
> এসব করে আপনার লাভ কি?
- লাভক্ষতির চিন্তা আমি করি না। তবে তুমি চাইলে এগুলো ডিলিট দিতে পারব। তবে এক শর্তে?
> কি শর্ত?
- (অশ্লীল প্রস্তাব)
> আমার এত বড় ক্ষতি করবেন না। প্লিজ ভাইয়া ছবিগুলো ডিলিট করে দিন।
- রাজি হলে ডিলিট নয়তো পাবলিশড হতে থাকবে। আগামীকাল এই সময়ে ফেবুতে আসবো। এখন বাই।
> প্লিজ ভাইয়া আমি আপনার বোনের মত প্লিজ প্লিজ এমন করবেন না।
.
মেসেজ সীন হল না। বিথী পুরো ব্যাপারটা তার এক ক্লোজ বান্ধবীকে জানালো।
= দেখ একদম ভয় পাবি না। এগুলো সব ফটোশপের কারসাজি।
> তাতে কি? পাবলিশড হলে লোকে আমার দিকেই আঙ্গুল তুলবে।
= ওটা আমাদের সমাজের একটা চিরচেনা রোগ। আঙ্গুল তুলতে বা অপবাদ দিতে এরা একটুও ভাবে না। সত্য কি সেটা জানতেও চায় না। দেখা মাত্রই আঙ্গুল তুলা শুরু করে।
> আমি এখন কি করবে? ভয়েই মরে যাচ্ছি।
= শুন পুরো ব্যাপারটা আংকেল বা আন্টিকে জানা।
> তারা আমাকে মেরেই ফেলবে।
= একটু বকবে। বাট তারাই কিন্তু তোর সবচেয়ে আপন। আমাকে যেভাবে সব বলেছিস। ঠিক সেভাবেই তাদেরকে সব বল। আমি নিশ্চিত তারা খুব ভাল একটা সলিউশন দিবে।
> কিন্তু ………
= শুন বাবা মায়ের চেয়ে কেউই আপন না। আমিও না। চল আমি তোর সাথে যাব।
.
অতঃপর বিথী তার বান্ধবীকে নিয়ে বাসায় এলো। শত ভয়ভীতি এড়িয়ে অবশেষে বিথী তার মাকে সব খুলে বলল। তিনি বেশ বকাবকি করে বললেন, "আগেই বলেছিলাম এসব ফেসবুক টেসবুক বাদ দিয়ে পড়াশোনায় মন দে। খাল কেটে কুমির এনেছিস। আসুক তোর বাবা আজ তোকে উচিত শায়েস্তা দিতে হবে।" বিথীর মাও বেশ মেরেছেন। বান্ধবী বাঁচাতে এসেছে তাকেও ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।
.
বিথীকে ঘরে বেধে রাখলো। বিথী ভয়েই শেষ হতে লাগল। আজ বাবা ছাড়বে না। মেরেই ফেলব্র। বিথী ভাবতে লাগল এই সমাজে কি মেয়েদের বাঁচার অধিকার নেই? প্রতিনিয়ত একটা মেয়েকে হাজার রকমেত হ্যারেজের স্বীকার হতে হয়। কিন্তু কেন? আমরাও তো মানুষ। আমাদেরও তো স্বাধীন ভাবে বাঁচার অধিকার আছে। তবে কেন পদে পদে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের স্বীকার হতে হয়?
.
রাতে বিথীর বাবা এলো। বিথীকে হাজির করে তিনি সব খুলে বললেন। বিথীর বাবা দেখলেন বিথীর হাতে দাগ বসে আছে। ঐ যে মা মেরেছিল। তিনি বিথীর মায়ের উপর চটে বসলেন।
-- এভাবে কেউ মেয়েকে মারে?
>> কি করেছে তুমি তা শুননি?
-- এখানে বিথীর কি দোষ? ও তো খারাপ কিছু করেনি। দোষ ঐ ছেলের।
>> মেয়ের উকালতী করছ?
-- না আমি সত্যটা বলছি।
.
তিনি বিথীর হাত ধরে বললেন,
-- চল থানায় যাব।
>> থানায় কেন?
-- দোষ যে করেছে তার বিরুদ্ধে মামলা করব।
>> কিন্তু ……
-- তুমি কোনো কথা বলবা না। শুধু একটা জিনিস ভাবো আজ মেয়ে আমাদের চেয়ে তার বান্ধবীকে বেশি আপন ভাবে। তাই আগে বান্ধবীকে জানিয়েছে। আমাদের দেশের প্রায় প্রত্যেক ঘরেই এমন হয়। জন্ম তো দেই কিন্তু সত্যিকারের বাবা মা হতে পারি না। অনেক ছেলেমেয়ে ডিপ্রেশনে পরে সুইসাইড করে কারণ তাদের ডিপ্রেশন দূর করার মত লোক থাকে মা। সন্তানের বন্ধু হওয়া উচিত।
.
বিথীর বাবা একটু থেমে আবার বলল,
-- তাছাড়া এখানে আমাদের মেয়ের কি দোষ? বিজ্ঞানের আবিষ্কারের সহায়তা নিয়ে একটা ছেলে অন্যায় ভাবে আমাদের মেয়েকে ব্ল্যাকমেইল করছে। এখানে দোষ ছেলেটার। তাই তাকেই শাস্তি পেতে হবে। চুপ করে থাকলে আজ বিথীর সাথে হয়েছে আগামীকাল অন্য কারও সাথে হবে।
.
বিথীর বাবা বিথীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। বিথী অবাক হয়ে তার বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো। কারণ বিথী ভেবেছিল আজ বাবা তাকে জীবিত রাখবে না
.
অতঃপর তিনি বিথীকে নিয়ে পুলিশের মাধ্যমে সাইবার ক্রাইমে অফিসে যোগাযোগ করে প্রমাণ সহ সব জানালেন। পুলিশেরাও দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে দোষী ছেলেটিকে গ্রেফতার করলো।
.
এবার আসুন কিছু কথা বলি।
প্রথম ঘটনাটি সত্য। আজ সকালেই টিভিতে নিউজ দেখলাম কুমিল্লার একটি স্কুল ছাত্রী নাম স্মৃতি, গল্পের মত ঘটনার স্বীকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে। দ্বিতীয় গল্পটি কাল্পনীক। আমাদের সমাজে দ্বিতীয় গল্পটি অপেক্ষা প্রথম ঘটনাটিই বেশি পরিলক্ষিত। কারণ হল আমরা আমাদের বাবা মায়ের সাথে ফ্রি না। তাদেরকে সামান্য দোষের কথা বলতেও আমরা দ্বিধাবোধ করি। ফলে পরিণতি প্রথম ঘটনাটির মত হয়। বিথীর বাবার মত বাবা বর্তমানে খুবই বিরল। যান্ত্রিক এই জীবনে ক'জন বাবা তার সন্তানদের সাথে সময় নিয়ে মন খুলে আলাপ করে? এটা বাবাদের রুক্ষতায় নয়। এটা উনাদের ব্যস্ততা। এর সলিউশন কি তা আমার জানা নেই। সলিউশনটা বাবাদেরকেই বের করতে হবে। কারণ তারা বাবা।
.
প্রসাশনের উচিত স্মৃতির সাথে হওয়া ঘটনাটির যথাযথ শাস্তি প্রদান করে আগামী ভবিষ্যতের জন্য একটা দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ সৃষ্টি করা। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এই জঘন্য কাজ করার সাহস না পায়।
.
টিনএজদেরকে বলব একটু সর্তক থাকুন এবং মনোবল শক্ত করুন। হুমকি ধমকিতে ঘাবড়ে না যেয়ে সলিউশন বের করার চেষ্টা করুন। একটা কথা মনে রাখবেন আত্মহত্যা কখনোই কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না। আত্মহত্যা মহাপাপ।
.
যেকোনো সমস্যা বাবা-মা, ভাইবোনের সাথে শেয়ার করুন। বন্ধুবান্ধব অপেক্ষাও বাবা-মা, ভাইবোন অধিক আপন। এ যে রক্তের টান। আর বাবা মায়েরও উচিত সন্তানদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করা। যাতে দুঃসময়ে সন্তানেরা সর্বপ্রথম তাদের কাছে ছুটে আসে। অবসর সময়ে তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করুন। পারিবারিক আড্ডা দিন। তাদের খোঁজখবর রাখুন। আর সন্তানদেরও উচিত পরিবারে সময় দিয়ে আড্ডা দেয়া।
.
লিখাঃ Nishi Chowdhuri (রাত্রির আম্মু)
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫৬
ঋতো আহমেদ বলেছেন: ঠিক বলেছেন। এই পৃথিবীতে মা বাবা ভাই বোন এর চেয়ে আপন কেউ হয় না। লিখা টি ভালো লাগলো। শুভ কামনা রাত্রির আম্মু।