নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পুরো নাম মুহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম রনি, জন্ম- যশোর, পৈত্রিক নিবাস- ঝিনাইদহ। পড়ালেখা করছি বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ। ঠিকানা- https://www.facebook.com/nasirul.rony

এন ইসলাম রনি

এন ইসলাম রনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস : আধো আলো আধো ছায়া (part - 3)

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫২

আছিয়া খাতুন কথায় কথায় সারা দিন ই

তাকে খ্যাপাতে চেষ্টা চালাচ্ছেন বুড়ো বুড়ো বলে

তিনি প্রতি উত্তর দিচ্ছেন হাসিতে এতে মনে হয় তিনি খুশি ই |



প্রথম জীবনে যে বাড়ি টা কিনেছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তা বেদখল হয়ে যায়, শুধু বাড়ি নয় ঘরের প্রতিটি জিনিস ই

শীল পাটা চামচ ঘটি বাটি কিছুই বাদ যায় নি|

৭১এর মে মাসেই সব ফেলে আছিয়া আর ৩ছেলে মেয়েকে গ্রামের ভেতর সম্পূর্ণ এক অপরিচিত মানুষের বাসায় রেখে তিনি কর্মস্থলে ফিরে গেলেন

তখন তার বড় মেয়ে অরুর বয়স ৭, মেজোর ৪ আর ছেলেটা কথা বলায় শেখেনি |

পাকিস্থান সরকার তখন অনুপস্থিত

সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী দের মুজিব পন্থি বলে ঘোষনা করেছে|

তিনি ইচ্ছা করলে বর্ডার পার হয়ে চলে যেতে পারতেন কিন্তু যান নি|



যশোরের আশ পাশ সব রণহ্মেত্র,

বিহারীরা বাঙ্গালী যাকে পাচ্ছে তাকেই মুসলমান কিনা পরীহ্মা করার নাম করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে তার পরটা সবার ই জানা... তিনিও তাদের খপ্পরে পড়লেন

পাসকার্ড দেখালেন কিন্তু তারা কিছু শুনলো না, তাদের এক ই কথা তারা গোপন অঙ্গ দেখেই নিশ্চিত হবে হিন্দু না মুসলমান | কপাল গুনেই শাকিল কে দেখতে পান সেসময়,ওরা ছিলো তার

প্রতিবেশী,পাঞ্জাবী| ওর বাবা এদেশে ব্যাবসা করতে এসে এখানেই বাড়ি বানিয়েছিলেন, যশোর শহরে ওদের ২টি বড় কাপড়ের দোকান ছিলো |

রাস্তাথেকে বিহারীরা তাকে ধরে নিয়ে যাবার সময় দূরে শাকিল কে দেখেই তিনি চিত্কার করে তাকে ডাকতে থাকেন | এপ্রিলের প্রথমেই

বাঙ্গলীরা শাকিলের বড়

ভাইকে পিটিয়ে মেরে ফেলে যদিও

সে ছিলো ভদ্র ও অমায়িক, এ জন্য

বাঙ্গালীদের প্রতি তার ও তার পরিবারের ঘৃণা ছিলো,তবু সে দিন শাকিল ই দেবদূত রূপে আর্বিভূত হলো |

সে তেমন কিছু করেনি উগ্র বিহারীদের, সে শুধু ১টা কথা বলেছিলো "এ লোক মুসলমান হ্যায়"



জুলাই মাসের ১৭ তারিখের

কথা দিনটা ছিলো মেঘলা থমথমে তিনি যশোর ফ্রায়ার ব্রিগেডির সামনের আছিয়ার ছোট খালার বাসায় তাদের খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন, ইনা রাও ৪৭ এর

পরে এ দেশে স্থায়ী হয়েছেন| ছোট

খালাকে মশিয়ার সাহেব শাশুড়ির মতোই সম্মান করতেন ওনার

স্বামী কলকাতা হাইকোর্টের উকিল

ছিলেন পরে যশোর কোর্টের,৪ছেলে| বড় জন ব্যারিস্টারী পড়তে এ বছর ই

লন্ডনে যাবার কথা ছিলো,মেজ জনের উকালতি পড়াও প্রায় শেষ অন্য ২জনের ১জন কলেজে আর ছোট ছেলেটা স্কুলে পড়তো|

যুদ্ধ শুরু হলে আছিয়ার খালু ফয়েজ মাহমুদ ব্যাংক লুট হয়ে যাবে এই ভয়ে ব্যাংক থেকে সব টাকা তুলে নিজের বাসাতেই অবস্থানের সিদ্ধান্তনেন, এই সময়

সুযোগ সন্ধানী কিছু লোক মুক্তিযুদ্ধা সেজে ব্যাংক লুট করছিলো কিন্তু ফয়েজ সাহেবের

মতো ১জন ঝানু উকিল হয়তো ১ম এবং শেষ বারের মতো বুদ্ধির চালে মার খেলেন, এক দুপুরে মিলিটারী আর সিভিল ড্রেসে কিছু লোক তার বড় ২ছেলে ও তাকে জীঙ্গাসাবাদের নাম করে ধরে নিয়ে যায়, সেজ ছেলে এর আগেই কারো কোন কথা না শুনেই ভারতে চলেগিয়েছিলো যুদ্ধের ট্রেনিং নিতে, ছোট ছেলে রঞ্জু তখন সিক্সে পড়ে এ সময় সে দরজার কপাটে লুকিয়ে ছিলো তাকে মিলিটারীরা দেখলে কি হতো কে জানে |

আছিয়ার খালা নূরজাহান বেগমের তখন পাগলের মতো অবস্থা মশিয়ার সাহেব বহু বুঝিয়ে ছিলেন তাদেরকে ভারত বা গ্রামের দিকে যেতে কেও রাজি হয়নি সে দিন ও তিনি এসেছিলেন ওনাদের দু জনকে নিয়ে যেতে কিন্তু নূরজাহান বেগমের এক ই কথা, "ওদের তো হাত কড়া পড়িয়ে নিয়ে যায়নি,ভদ্র ভাবে জিপে উঠিয়ে নিয়েগেছে আর ওনাকে তো শহরের সবাই চেনে কারো সাথে পাচে থাকেন না ওদের কিছু হয়নি ওরা বেঁচে আছে ফিরে আসবে..."

যুদ্ধের বাকি সময় নূরজাহান বেগম এই আসা নিয়েই ছিলেন, পরে পীর ফকির ধরেছেন হাসপাতাল মাজার দরগাতে বোরখা পড়ে একা ছুটা ছুটি করেছেন তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে পর্যন্ত দেখা করেছিলেন কেও

তাকে আশা দিয়েছে কেও নিরাশ.. তবু তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বিশ্বাস করতেন ওরা সবাই ফিরে আসবে,এটা হয়তো বিশ্বাস নয় নিজেকে সান্তনা দেওয়ার

চেষ্টা ছিলো|

সেজ ছেলে সাতহ্মীরার

রণাঙ্গনে নভেম্বরে শহীদ হয় এ খবর ও তিনি জীবনদ্দশায় কখনো বিশ্বাস করেন নি, এক বার এক সংগঠন তাকে শহীদ জননী হিসাবে সম্মাননা দিতে চেয়েছিলো তিনি নেন নি|

ছোট ছেলে রঞ্জু বাপ ভায়ের শোকে ১ম দিকে পাগল মতো হয়ে যায় স্বাধীনতার পরে তাকে রাস্তায় গান

গেয়ে গেয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যেতো,

সব মিলিয়ে এই পরিবারের উপর দিয়ে ইতিহাসের কঠিনতম ঝড় বয়েগেছে|

রঞ্জুদের বাসার থেকে ফেরার

পথে মশিয়ার সাহেব গোলা গুলির

মধ্যে পড়ে যান ১টা সেল তার পাঁজরের মাঝে ঢুকে যায়, ১টা আঘাত করে হাটুতে প্রচন্ড রক্ত হ্মরণ তার পর কিছু মনে নেয় সব অন্ধকার|

২দিন পর ঙ্গান ফিরে এলে তিনি নিজেকে আবিষ্কার করলেন হাসপাতালের ১টা বড় ঘরে,যেখানে মাছি ধরার জায়গা পর্যন্ত নেই, আহত মানুষের অর্তনাদ আর বিলাপ চার দিকে|

ঘরের ভেতর কেও করুন সুরে বিলাপ করছে তার কথা গুলো পুঁথি পড়ার মতো,

"দুহাতে অন্ন টেনেছি কতো পাপ

জমলো শত শত, দৃষ্টি কেড়ে নিল আল্লাই সেই আসিলায় রে সেই আসিলায়..."

সে পাক সেনাদের খাদ্য সরবরাহ

করতো কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস আতঙ্কিত পাক সেন তাকে দেখেই বোমার বিস্ফোরন ঘটায়, প্রাণে বাঁচলেও বারুদে এখন তার চোখ দু'টি ই নষ্ট|

মশিয়ার সাহেবের পাশের জনের কন্ঠ নালীতে গুলি লেগেছে এর পরও সে বেঁচে আছে এটাই বিস্ময়, সে সব সময় বলছে এটা খাব ওটা খাব কিছুই খেতে পারছে না, পানি মুখে দিলেও জখম দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে সে দৃশ্য দেখার মতো নয়|



একটা অল্প বয়স্ক মেয়ে তার মাথার কাছে বসে সারা দিন ই

কাঁদছে হয়তো নতুন

বিয়ে হয়েছিলো তাদের, অনেক স্বপ্নের ১টা সংসার|

নার্স ডাক্তার ছুটা ছুটি করছে এক

জনকে ডিঙ্গিয়ে অন্য জনকে দেখতে হচ্ছে, ঔষধ পত্রের

সরবরাহ নেই জরুরী অপারেশন দরকার, তাও করা যাচ্ছে না প্রতি বেলাতে ই কারো না কারো জীবন যুদ্ধ শেষ হচ্ছে, আগমন ঘটছে নতুন কোন মৃত্যু পথযাত্রীর |



মশিয়ার সাহেবের পাশের ছেলেটা মারা গেল দু দিন পর ফজরের নামাজের কিছু আগে, সাথের মেয়েটি পাথরের মতো বসেছিলো সকাল পর্যন্ত শেষ মুহূর্তে তাকে কেও কাঁদতে দেখেনি হয়তো সে সমুদ্রের লোনা জল ফুরিয়ে গিয়েছিলো

(to be continued)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪৫

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: গুড, চালিয়ে যান, প্রিয়তে রেখে দিলাম....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.