![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১.
বিকাল ৪টা ৫১
মিছিলের শব্দ আসছে, মিছিলের এক এক অংশ এক এক স্লোগান দিচ্ছে বলে এ ঘর থেকে বোঝা যাচ্ছে না ঠিক কোন দলের
মিছিল| জুঁথি ধরপর করে জেগে উঠলো, ঘর অন্ধকার, দুপুরে দরজা জানালা বন্ধ করে সে ঘুমিয়ে পড়েছিলো ঘরের বাতাস এতে গরম হয়ে গেছে জুঁথির ঘেমে গোসল হয়ে যাবার অবস্থা, তার দম বন্ধ হয়ে আসছে বুক হাপড়ের
মতো উঠানামা করছে
আজকাল মিছিলের শব্দ শুনলেই তার এমনটি হয়|
খাট থেকে নেমেই সে দৌড়ে বেড়িয়ে এলো শোবার ঘর থেকে|
জেবা রান্না ঘরের সামনের বাঁরান্দায় টুলে বসে বাবুর মা র সাথে তালের শাঁস বার করছিলেন তিনি জুঁথিকে ডাকলেন,
"জুঁথি এ দিকে আয়তো..শোন মা....."
কিন্তু জুঁথির এ দিকে খেয়াল নেই সে সিঁড়ি বেয়ে ছুটে গেল ছাদের দিকে..
মিছিলটা এখনো পুরো তাদের বাসা পার হয়নি বেশ বড় মিছিল অনেক লোক অধিকাংশ ই স্কুল কলেজের উঠতি ছেলে তারা নিজেদের মতো স্লোগান দিচ্ছে নিজেদের ভেতর ঠ্যালা ঠ্যালি করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে এটা যেন একটা মজার কোন শোভা যাত্রা |
জুঁথি রেলিং থেকে আর একটু ঝুকে দেখতে চেষ্টা করলো পুরো মিছিলটা কে, কিছু ছেলে তাকে দেখে শিটি বাজালো কিন্তু স্লোগানের শব্দে তা চাপা পড়ে গেল
জুঁথির এ সবে খেয়াল নেই|
এই জনস্রোতে তার চোখ খুঁজছে একজন কে|
তার চঞ্চল চোখের দৃষ্টির সাথে মস্তিষ্কে ও দ্রুত চিন্তার ঝড় চলছে, উনি মিছিলের সামনে ছিলেন না তো, নাহ সামনে সব আধবুড়ো নেতা রা থাকে ওখানে থাকার কথা নয় তবে....
"জুঁথি.."
টগর তাকে ডাকলো, সে একটা কাঠের চেয়ারে ছাদের কোনের কবুতরের ঘরের সামনে বসে আছে ,তার ডান পায়ের গোড়ালী প্লাস্টার করা গত ৪দিন হয় সাইকেল থেকে পড়ে তার পায়ের এ হাল,ডাক্তার তাকে দেড় মাস
রেস্টে থাকতে বলেছে|
জুঁথি টগরের দিকে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকিয়েই আবার মিছিলের দিকে মন দিলো, এই তো উনাকে দেখা যাচ্ছে মিছিলের মাঝের দিকের অবিন্যস্ত লাইনকে ঠিক করার চেষ্টা করছেন|
টগর ক্রাচে ভর দিয়ে বোনের পাশে এসে দাড়ালো
-কিরে মিছিলে যাবি নাকি, মিছিল হলেই ছুটে চলে আসিস ছাদে?
এ কথায় জুঁথি কোন উত্তর দিলো না সে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া মিছিলটার দিকে চেয়ে আছে
-নিচে যা, মিছিল এলেই আর যেন ছুটে ছাদে আসবি না
-কেন কি হয়েছে?
-কিছু হয় নি, হতে কতহ্মণ মিছিলে কত আজে বাজে ছেলে থাকে জানিস?
-আজে বাজে ছেলে থাকে তো আমার কি?ওরা কি করবে শুনি?
-কতো রকম ভাবে জ্বালাতে পারে বড় হচ্ছিস কিছু বুঝিস না?
টগর জুঁথির থেকে প্রায় ৫বছরের বড়,কলেজে উঠের পড় থেকে তার ভেতর জুঁথির উপর বড় ভাই সুলভ একটা কতৃত্ব দেখাবার ভাব এসেগেছে সে আজকাল পারিবারিক ব্যাপারেও একটু আধটু কতৃত্ব দেখায়| টগর জুঁথির বাবা রাকিব সাহেব ও যেন এটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছেন,তিনি রাত করে বাড়ি ফিরলে,সময় মত পড়তে না বসলে আগে ছেলেকে বকা ঝকা করতেন
আজকাল করেন না আর জেবা তো অনেক আগের থেকেই ছেলের মতামত নিয়ে কাজ করেন|
-ও আমি বড় হয়েছি এটা যখন চোখ মেলে দেখতে পেয়েছো তবে এখন থেকে দয়া করে আমাকে আপনি করে ডাকবে বুঝলে
-যা ভাগ, ওনাকে আপনি করে ডাকবে
-যা ভাগ ওনাকে আপনি করে ডাকবে(বলে জুঁথি ভেংচি কাটলো)
শোন ভাইয়া মিছিলে আজে বাজে ছেলে মাঝে মাঝে ঠিক ই থাকে তবে আজ ছিলো না কারন বাজে ছেলেটা ট্যাং ভেঙ্গে এখন তার বোনের সাথে ঝগড়ার চেষ্টা করছে ..
এটা বলে টগর ক্রাচ তুলে তাড়া দেবার আগেই জুঁথি হাসতে হাসতে ছুটে নেমেগেল দোতালায়|
জেবা দাড়িয়ে ছিলো সিড়ির কাছে তিনি থমথমে গলায় বললেন, "টিচার এসেছে হাত মুখ ধুয়ে পড়তে যাও, আর সব সময়
না গায়ে ওড়না দিতে বলেছি,দেওনি কেন ?"
তার কথায় রাগের সুর স্পষ্ট,জুঁথি ভেবে পেল না এতো রাগের কি ঘটলো| সে জেবার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়েই মাথা নিচু করে চলে গেল মায়ের সামনে থেকে |
২.
কবির বেশ অনেকহ্মণ ধরে বসে আছে পড়ার ঘর টাতে| এটাকে ঘর বলা যাবে না দোতালার দহ্মিণের বারান্দাটা কে ঘিরে একটা ঘর মতো বানানো হয়েছে, গ্রীল খুলে ফেলে ১টা ছোট কাঠের
জানালা লাগানো হয়েছে বাইরের দিকের দেয়ালে,ওদিক টা প্লাস্টার করা এখনো রং দেওয়া হয়নি, জানালাটার ওপাশে ১ফুট পরেই সোজাসুজি নতুন উঠা পাশের বাড়ির দেওয়ালের নিরাবরণ ইটের গাঁথুনি এর ফাক দিয়েই ঘর টাতে সামান্য আলো আসছে|
ঘরে আসবার বলতে ১টা টেবিল আর ২টা চেয়ার,১টা বড় প্লাস্টিকের ড্রাম ও রয়েছে এক কোনে চাল টাল রাখা হয়তো|
ইলেক্ট্রেসিটি নেই ঘরে গুমট আবহাওয়া| কবির হাত ঘড়িটা আর এক বার দেখলো, সে এসেছে প্রায় ১২মিনিট ছাত্রীর দেখা নেই| এই মেয়েটা রোজ ই পড়তে আসতে দেরি করে তাকে একা একা বসে থাকতে হয় এই খুপড়ি ঘরে এদিকে ছাত্রীর মা তাকে প্রায় ই মনে করিয়ে দেন তাকে সময় দিয়ে পড়াবার কথা কিন্তু এভাবে সময় নষ্ট করলে তার তো চলবে না এর পর ও তাকে ৩টা বাসায় পড়াতে যেতে হবে তার নিজের ও অনার্সের পড়া রয়েছে এক বাসাতেই যদি ২০-৩০মিনিট সময় নষ্ট যায় তবে তার মেসে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই রাত ১০টা বেজে যাবে|
কবির অধর্য্য হয়েগেল, সে রোজ ই
ভাবে মেয়েটাকে একটা ধমক দিতে হবে কিন্তু দিওয়া হয়ে ওঠে না|
-ওমা, স্যার আপনি অন্ধকারে বসে আছেন যে!
-হু, কারেন্ট নেই কি করবো, বসে পড়
গতকালের হোম ওয়ার্ক গুলো দেখি আর আজ না অংক পরীহ্মা নেওয়ার কথা ছিলো ?
-হ্যা
-বাসাই অংক করেছো? বই বার কর
বাবুর মা ১টা ট্রেতে করে ১বাটি পায়েস আর এক গ্লাস পানি দিয়ে গেল,কবির সেদিকে খেয়াল করলো না সে বই নিয়ে অংক দাগাতে থাকলো| জুঁথির এ ব্যাপারটা খুব লজ্জা লাগে, মা যে কি একটা রোজ রোজ এক ই পায়েস পাঠায় স্যারের জন্য উনি বাইরে বন্ধুদের সাথে নিশ্চয় হাসাহাসি করেন এ নিয়ে..
জেবা ঘরে ঢুকলো এর একটু পর ই , কবির তাকে সালাম দিলো|
-"কবির ওর রোজ রোজ
পরীহ্মা না নিয়ে ওকে একটু অংক
শেখাও, অংকটাতে ও খুব কাঁচা প্রথম সাময়িকিতে ৭৬ পেয়েছে দেখেছতো?"
কবির এ কথার উত্তরে শুধু বললো, "জি আচ্ছা"
-"এ ঘরতো অন্ধকার চার্জার দেয়নি কেন,এমন আলোতে পড়শুনাকরলে তো চোখের সমস্যা হয়ে যাবে দাড়াও আমি চার্জার পাঠিয়ে দিচ্ছি"
জেবা চলে গেল কিন্তু জুঁথি জানে স্যারের কাছে পড়ার পুরো সময়টা সে দরজার ওপাশেই থাকবে, কবিররের সাথে পড়ালেখার
বাইরে কোন কথা বলেলেই
তাকে পরে জবাবদিহি করতে হবে...... (চলবে)
©somewhere in net ltd.