![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১.
শুভ্র হাতে চায়ের কাপ নিয়ে বারান্দায় বসে আছে তার কানে ইয়ারফোন তবে তার পিন লাগানো নেই, আইপড টা রয়েছে সামনের টুলে,
সকালের রোদ সরাসরি এসে পড়ছে তার মুখের উপর |
ঘড়িতে ৯টা বেজে ৪৩ রোদ যথেষ্ট তেতে উঠেছে আজ, এতে মুখের চামড়া জ্বালাপোড়া করার
কথা তবে তাকে দেখে তেমন কিছু
মনে হচ্ছে না, সে বেশ খোশ মেজাজে আছে |
মনে হচ্ছে মিউজিকের তালে তালে পায়ের পাতা একটু একটু নাড়াচ্ছেও |
টগর দরজার কাছে দাড়িয়ে বেশ
অনেকহ্মণ ধরে তাকে লহ্ম করছে, এর মাঝে তাকে সে একবার ও চায়ের কাপে চুমুক দিতে দেখেনি| শুভ্র সম্পর্কে তার বেশ উচ্চ ধারনা, তার মন বলছে ইয়ার ফোনের পিন লাগানো না থাকলেও ডিভাইস থেকে ঠিক ই মিউজিক তড়িত্ চৌম্বক জাতিয় কোন তরঙ্গে পাস হচ্ছে|
সে পা টিপে টিপে শুভ্রের চেয়ারটার পিছনে এসে দাড়ালো|
শুভ্র এদিকে না তাকিয়েই বললো, তোর হাতের ওয়াটার গান টা আমার খাটের তলে রেখে যা |
টগর এতে খুব একটা বেশি অবাক হলো না, হিমুরা সব কিছুই টের পাই, তার ছোট মামা বছর খানেক আগে হিমু হবার চেষ্টা শুরু করেছিলো তখন একটা হলুদ পাঞ্জাবী ও পরতো, কোন এক অঙ্গাত কারনে এখন সে ওটা পরে না তবে টগরের বিশ্বাস এতো দিনে সে নিশ্চয় হিমু হয়েগেছে,
যে কোন দিন দেখা যাবে তার ছোট মামা খালি পায়ে রাস্তায় দাড়িয়ে করিম মিয়ার দোকানের চা খাচ্ছে কোন রিকশাওয়ালা বা ঠেলাওয়ালার সাথে গল্প করতে করতে, টগর এই দিনের
অপেহ্মাই আছে |
সে যে নীলুর নতুন ওয়াটার গান
টা চুরি করে নিয়ে এসেছে এ ঘরে লুকাতে এটা তার মামার মত একজনের জানা কোন রহস্য ই না |
আজ কয়েক দিন ই সে তক্কেতক্কে ছিলো ওয়াটার গান টা গায়েব করার, নীলুর মত এত বড় একটা মেয়ে সারাদিন পানি দিয়ে মাছি মারার জন্য মাছির পেছনে পেছনে ছোটাছুটি করছে এটা তার পছন্দ
নয়
সে আবার প্রথমে টগরকে ই টার্গেট
করেছিলো, টগর তাকে বুঝিয়েছে টার্গেট হ্মুদ্র হওয়া ভালো এতে হাতের টিপ ভালো হয় যেমন হাতিকে টার্গেট করলে তার বিশাল পর্বতসম দেহের কোন না কোন জায়গাতে লাগানো যাবে কিন্তু এতে হাতির কিছু হবে না, তাকে মারতে হলে শূট করতে হবে তার চোখে | যে সব শিকারী হাতির গায়ে শূট
করে সে হাতি তো নয় ই একটা টুনটুনি ও মারতে পারে না |
নীলু তার এ কথা গুলো শুনে চোখ বড় বড় করে জিঙ্গাস করেছিলো কেন কেন
টগরের ধারনা সে একটু বোকা সোকা টাইপ সিস্টেম করে যা বোঝানো হবে তাই বুঝবে |
টগরের সাথে নীলুর সে দিনের কথা বার্ত্রা অনেক টা এমন
-কোন কেন নেই পাকা শিকারীরা প্রথমেই রুই কাতলা ধরে না প্রথমে চুনো পুঁটি ধরার প্রাকটিস করে এটাই নিয়ম
-তাহলে আমি কি টাগেট করবো
-মশা টাগেট করা যেতে পারে
-মশা তো কোথাও বেশিহ্মণ বসে না
-তাই তো চিন্তার ব্যাপার
-তাহলে টুকুদের বিড়াল, ওটা প্রায় আমাদের রান্না ঘরের জানালা দিয়ে হানা দেয় আজ ও মাছের টুকরা চুরি করে নিয়েগেছে
-গুড আইডিয়া ওটাকে টার্গেট করলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে তবে ওটা সেকেন্ডারী টাগের্ট
আরো ছোট কিছু যেমন মাছি..
-মাছি? ওটা ও তো একজায়গাতে বেশি সময় বসে না
-বসে না তবে বসানো যায়
এজন্য সুগন্ধি কিছু ছড়াতে হবে
-আম্মুর বডি এস্প্রে ছড়ালে হবে
-হতে পারে তবে কাঁঠালের রস হলে ভালো হয়,ভাত ছড়ালে যেমন কাকের অভাব হয় না কাঁঠাল ভাঙ্গলেও হয় না মাছির
টগরের এ বুদ্ধি দানের পর থেকেই
নীলু কাঁঠাল খাব কাঁঠাল খাব করে জ্বালায় মারছে, কার্তিক
মাসে কাঁঠাল মার্কেট আউট কিন্তু নীলু নাঁছোর বান্দা, গত তিন দিন হয় সে এই অজুহাতে স্কুলে যায় নি ঠিকমত খায় ও নি তবে সে বেশ মজায় আছে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে সারাদিন হিন্দি সিরিয়াল দেখছে, খসরু চাচা বিদেশে যেয়ে তার পোয়া বার
সে তার কম্পিউটার টিভি কার্ড সব হাতিয়েছে|
নীলুর কাঁঠাল রাগ নামাতে টগরদের বরিশালের গ্রামের বাড়িতে খবর পাঠানো হয়েছে সেখানের কোন গাছে নাকি অসময়ে কাঁঠাল ধরে, সেই কাঁঠাল অতিসত্তর ঢাকায় চালান দিতে|
খবর পাওয়া গেছে কাঁঠাল পথে আছে, কাঁঠাল এসে গেলেই তার
মাছি মেরে টার্গেট প্যাকটিস শুরু
হবে|
-"টগর চায়ের কাপটা নিয়ে যা"
টগর যে শুভ্রের খাটের তলে ওয়াটার গান টা রেখে আবার বাঁরান্দায় তার পেছনে এসে দাড়িয়েছে এটা শুভ্রের জানার কথা না, টগর এবার আরো বেশি সতর্ক ছিলো কিন্তু তা কাজে দেয়
নি |
-চা কি করবো?
-বেসিনে ফেলে দিয়ে আয়
-কেন
-কেন আবার আমি কি আধা ঘন্টা আগের শরবত খাব
টগর চায়ের কাপ নিয়ে চলে এলো সে ভেবেছিলো শুভ্র চাইলেই তার হাতের চা হাতেই ফুটিয়ে বাস্প
করতে পারে, সেদিন টিভিতে দেখাচ্ছিলো ইন্দোনেশিয়ার কোন ভিহ্মু হাতের তাপেই ভাত রান্না করছে | ছোট মামা যে কি এত
হ্মমতা অথচ....
শুভ্র চা কে শরবত বলেছে এটা ঠিক, অজিবা বুয়া চা বানালে সেটা শরবত ই বলা যায় |
এ বাড়িতে তার কাজের প্রথম দিন সে চা বানিয়ে টগর নীলুর বড়
চাচা আজমল সাহেব কে দিয়ে ছিলো
তিনি চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, ফাস্ট ক্লাস একে বারে অমৃত
-জি চাচা জি সবাই তাই বলে,আগের যে বাড়ি কাজ করতাম সে বাড়ির খালু জান তো আমার হাতের চা ছাড়া মুখে দিতেই পারতেন না
একথার পর ই আজমল সাহেব হঠাত্রে গে গেলেন কড়া গলায় বললেন, যাও আর কখনো তোমার অমৃত চা নিয়ে আমার দিতে আসবে না,আমি তোমার আগের বাড়ির খালুজান ফালুজান নই
-জি আচ্ছা এবার বকশিস দেন
-কিসের বকশিস?
-চা বানায় খাওয়ালাম বকশিস দিবেন না ?
-get out, get out
অজিবা বুয়া আরো কিছুহ্মণ ঘ্যান ঘ্যান করতো কিন্তু আজমল সাহেবের কুঞ্চিত ভুরু দেখে সেদিন তার দাবি বেশি জোরদার হয়নি তবে তার স্বভাব ই হচ্ছে কথায় কথায় বকশিস চাওয়া, এ নিয়ে সে সব সময় যথেষ্ট বিরক্ত করে | তার উপর বিরক্ত হয়ে এই
বাড়ির এক এক সময় এক এক জন তাকে বিদায়ের প্রস্তাবে মিটিং এর আয়োজন করে, শেষ মেষ দেখা যায় কাপ প্রতি হাফ
কেজি চিনি দিয়ে অজিবা বুয়া আবার সবাইতে চা দিচ্ছে আর তার হাতের অমৃত সদৃশ রসগোল্লার ঝোল টাইপ চা রন্ধনের জন্য বকশিস ও চাচ্ছে এবং মুখ বিকৃত করে এই চা পান করেই সেই সব মিটিং শেষ হচ্ছে |
(to be continued)
©somewhere in net ltd.