![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১।
সন্ধ্যায় আলো পড়ে এলেই তুমি উদাসী বাউলের মত চুল খোলা হাওয়াল চলে যাও চাঁদ জ্বলা মাঠের দিকে
যেখানে দ্বিতীয় কারো প্রবেশাধিকার নেই,
কেন জানি নিজেকে অন্তঃসারশূন্য লাগে তখন
মনে হয় ভোরের স্থায়ীত্ব খুব স্বল্প- শিশিরের ও তা,
কাছের মানুষের অস্বচ্ছ উপস্থিতি থেকে অনুপস্থিতি ই ভাল
সেখানে থাকে না অস্পষ্টতা।
২।
যদি এভাবে ভাল থাকা যায় থাকো,
উদ্ধত চাহনীতে চেনা শহরে অচেনা হয়ে
ঘুরে ফিরে হেসে স্বপ্ন ও বোধের সুতোগুলো ছিঁড়ে
অহং সীমায় গড় সুউচ্চ প্রহরী প্রাসাদ।
ভাল আছো ধরে ই ভোর গুলো পেড়িয়ে যাচ্ছে দুপুর
একাকী জ্যোত্স্না রাত,
শীত পেড়িয়ে যাচ্ছে বসন্ত
বর্ষা ডিঙিয়ে আর এক শীতে,
থাকো, যদি এভাবে ভাল থাকা যায়,
স্মৃতির ধুলো মেখে বসে আছো
ভাল থাকতে আর কিই বা লাগে।
৩।
মাঝে মাঝে বেঁচে থাকা অসম্ভব মনে হয়
অথচ পৃথিবীর ক্লান্ত আকাশে চাঁদ উঠে এলে ঝিঁঝি রা ডেকে উঠে নিজস্ব কোরাসে
সূর্যের পরাজিত আলোয় এসে দাঁড়ায় জোছনা
নির্জীব একলা বাউল নদী তখন ডেকে উঠে দক্ষিণের চরে
সুর তুলে চৌরাশিয়া বাঁশিতে জীবন হাতছানি দেয়
নির্দয় ক্ষমাহীন এ পৃথিবীর ই পরে!
৪।
নিঃসঙ্গ সব রাতে রক্তের পিপাসা নিয়ে উঠে এলে চাঁদ
দরজায় হামলে পড়ে ঘাতক পূর্ণিমা
স্বপ্নের জগতে নেমে আসে ঘোলাটে কুয়াশা
পড়ে থাকে এক ভীষণ গভীর রাত,
এক ভীষণ গাঢ় তলিয়ে যাওয়া নির্জনতা।
৫।
কি করে যে এক একটা মানুষ উঠে যায় দেয়ালের ফ্রেমে
এক একটা প্রিয় মুখ চলে যায় বিস্মরণে..!
চৈতন্য ফিরে দেখি উধাও! ম্যাজিক !
শুধু গোরের মাটির ঘ্রাণ লেগে থাকে পায়ে
হাত ভরে থাকে আঁতরের গন্ধ,
ভাবি সব দুঃস্বপ্ন, আর দুঃস্বপ্নের ভেতর ই সকাল দুপুর সন্ধ্যা গুলো পালাবদল হতে থাকে..
কি করে যে এক একটা মানুষ দেয়ালের ফ্রেমে স্থায়ী হয় বোবা আসবাব এর মতন,
কি করে যে অজান্তে পেরোয় বছর....!
৬।
দেয়াল খোলার মত অস্তিত্বের সমস্ত ইট খুলে বসে থাকি রাজমিস্ত্রির অপেক্ষায়,
অথচ সে সব ইটে উঠে যায় অভেদ্য প্রাচীল।
তবু ঘর হবার সাধ! তাই বসে থাকি।
কখন সময় হবে? কখন আসবে সুখেন কারিগর?
৭।
কারো কারো কোন ঘর নেই যার উঠানে নিজেকে ফেলে আসা যায় অন্তিম বিকালের আগর আর লোবানে।
সবার কি থাকে?
সবাই কি আমন্ত্রণ পাই নদীর?
জলের ছাপ নিয়ে ভেসে যায় আকাশ আর আক্ষেপে পোড়ে মরা চরের বালি
মেঘের চোখে চোখ রেখে পড়ে থাকে ধবল জ্যোত্স্নায়,
গুড়ো হয় মৃত শালিকের সফেদ কঙ্কাল
মেশে শামুকের চূর্ণ খোলে,
কে কার ফাঁরাক খোঁজে দিন শেষে?
তবু কেউ কেউ গোলাপ জল
ফেনা তোলা উষ্ণ স্নান পাবে, পাবে শুভ্র বসন,
কেউ পাবে না, তাকে কেউ চিনবে না অন্তিম বিকালে!
৮।
ছেলেটা ব্যাক ব্রাশ করা চকচকে কালো চুল গুলো হারাচ্ছে,
আগ্রাসী নদীর মত পাড় ভাঙছে প্রশস্থ কপাল;
কোমড় বন্ধনীর ঘাট বাড়তে বাড়তে দশ মাসের পোয়াতী।
কিংবা মেয়েটা হারাচ্ছে লাবন্য;
ঘন চুল গুলো পাতলা হচ্ছে,
একটা দু'টো করে কাশফুল মাথা তুলছে সবুজ চরের ভেতর।
তবুও তারা ভালবাসছে!
ভালবাসায় এমন কিছু আছে অন্ধত্বের মত, নয়তো কি করে সম্ভব !
ভালবাসা আসলে একটা দীর্ঘ স্বপ্নের মতই,
যে স্বপ্নের বয়স বাড়ে না, নয়তো ভালবাসা কি আদৌ সম্ভব?
৯।
সেই কবে থেকে হাঁটছি
শুধু মানুষের চিত্কার শুনে
নাম ধরে ডাক শুনে
শিশুর কান্না শুনে
জনবসতির কোলাহল উত্সবের আহ্বান শুনে
নদীর কল্লোল শুনে
হাঁটছি, হাঁটছি স্বপ্নহীন গন্তব্যহীন।
আলোর দিকে হাঁটছি, অন্ধকারের দিকে হাঁটছি;
কেউ এসো বললেই
কেউ ফিরে যাও বললেই
কেউ চলো বললেই
মানুষের তৈরী পথ ধরে
দিক চিহ্নহীন প্রান্তর ফুঁড়ে হাঁটছি,
অথচ চারদিকে কাঁটাতার
একটা মানচিত্র ও পেরোনো গেল না !
১০।
এক হায়েনা তাড়াতেই আর এক হায়েনা আসে,
স্বপ্নের প্রথম ভাগেই দুঃস্বপ্নের বাস্তব থাবায় রক্তাত্ব হয় মানচিত্র।
সব সাভানায় ই গৃহপালিত হায়েনা থাকে,
সময় আবিষ্কার করে তাকে- নিজেদের ভেতর
কিংবা হয়তো নিজের ই ভেতর।
১১।
মাকরশা যেমন জাল বোনে
তুমি তেমন জাল বুনে ধরলে এক আস্ত মানুষ,
শিকার যত ছাড়াতে যাচ্ছে নিজেকে
প্যাঁচাচ্ছে তত সুঁতো, বাধা পড়ছে চার হাত পা।
অনেক তো হলো ফাঁদে ফেলে শিকার নিয়ে খেলা
এবার রাজভোগে এসো
চুমু দিয়ে শুরু করো এ ঠোঁটে
কসম কোন দাবী রাখবো না।
১২।
এগিয়ে আসছে মরুভূমি আর একটা একটা করে সবুজ হারিয়ে যাচ্ছে
সেখানে জ্বলে উঠছে একটা করে উজ্জ্বল বাতি
বৃক্ষের নিজস্ব দেয়াল এর বদলে সামনে দাঁড়াচ্ছে মসৃণ প্লাস্টার-
হলুদ মনুষ্য বসত,
সামনের বাগান গুলো হারাতেই বসে পড়ছে বাহারী দোকান,
মাঝের সবুজ টুকু হারাতেই বাড়িগুলো এগিয়ে যাচ্ছে একে অন্যের দিকে নিবিড় বন্ধনে
অথচ ভেতরের মানুষ গুলো সরে যাচ্ছে ব্যাস্তানুপাতে হাজার ক্রোশ।
©somewhere in net ltd.