নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিস্পাপ

নিস্পাপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার কিছু বিক্ষিপ্ত অভিজ্ঞতা বাংলা ভাষা নিয়ে।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৬:০৮

আমার এক জেঠাত ভাই এর কথা বলব। রসিক মানুষ , আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়।



কিন্তু ওনার সাথে যখন আমাদের আড্ডা চলত তখন বয়স এর বিষয় টা মাথায় থাকতনা । বাড়িতে যখন বেড়াতে যেতাম দিন এবং রাতের বেশিরভাগ সময় ওর সাথেই কাটত। অল্প শিক্ষিত মানুষ। মুখস্ত করা বেশ কিছু ইংলিশ বাক্য, কবিতার লাইন , এবং অনেক গুলো ইংলিশ গল্পের কিছু গুরত্ত্পুর্ণ লাইন ওনার জানা ছিল। সময় সুযোগ পেলে আড্ডার মাজে মুখস্ত করা লাইন গুলো বাণীর মত ছেড়ে দিত , লাগুক আর না লাগুক। আমরা মাজে মাজে বেশ আস্চায্য হয়ে যেতাম উনার মেধার কারিশমায়। লোকটির সিনেমার প্রতি খুব আসক্তি ছিল।



বিশেষ করে হিন্দী ছবির প্রতি অন্য ধরনের এক টান।প্রচুর পরিমানে হিন্দী মুভি দেখত , জীবিকার তাগিদে মধ্য প্রাচ্যের অনেক দেশে ই ছিলেন উনি। মধ্য প্রাচ্যে নাকি আবার হিন্দী মুভির রমরমা অবস্থা। কাজ শেষে বাংলাদেশীদের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম নাকি হিন্দী ছবি দেখা। আমার ওই ভাই টি কে দেখে আমার ও তাই মনে হত। ছবির কাহিনী গুলো হড় হড় করে বলে দিতে পারত , এমনকি নায়ক অথবা ভিলেনের সংলাপ গুলো এমন ভাবে আমাদের বলত ,যেন আমাদের সামনে কোনো হিন্দী ছবির নায়ক অথবা ভিলেন সরাসরি অভিনয় করছে। নায়কদের কথা বলার স্টাইল , ভিলেন দের ইয়াহু ডিসুম সব ই অবলীলায় বলতে পারত। আমরা তাকে জিগ্যেস করতাম , আচ্ছা ভাই আপনি বাংলা ছবি দেখেন না কেন ? ওনার উত্তর থাকত , আরে দূর বাংলা ছবির না আছে কাহিনী , না বাজেট না অভিনয়। আর দেখ নায়িকা দের অবস্থা যেন এক একটা জল হস্তি , না নাচতে পারে না গাইতে পারে, আর চরম অশ্লীলতা , দেখলেই ঘেন্না হয়।



আমরা রীতিমত অবাক ভাই এর কথায়। আচ্ছা ভাই হিন্দী ছবি তে কি নায়িকাদের খোলা মেলা দেহ দেখানো হয়না ?



হয় , তাতে কি ওগুলো হচ্চে আর্ট। স্লিম বডি তে ওগুলো মানায়।



বুজতে আর বাকি থাকেনা ভাই এর কাছে অশ্লীলতার সজ্ঞা। মোটা দেহের খোলামেলা দেখলে ঘেন্না হয় , আর স্লিম দেহের খোলামেলা হয়ে যায় আর্ট।



২০০১/২০০২ এর দিকের ঘটনা। ভার্সিটির হলে থাকতাম সবার কাছে তখন কম্পিউটার ছিলনা।



যারা কম্পিউটার বিষয়ে পড়ালিখা করত , সাধারণত তাদের ই কয়েকজন ডেস্কটপ ইউজ করত।



তো রাত ১১ টার পর শুরু হত হিন্দী ছবি দেখার মহত্সব। নতুন কার কাছে কি সংগ্রহ আছে সেটি নিয়ে চলত আলোচনা। আর নতুন কোনো ছবি দেখার পরত ওই ছবি নিয়ে আলোচনা ই চলত কয়েকদিন। কি খাওয়ার রুমে , পত্রিকা রুমে সর্বত্র , সালমানের অভিনয় কেমন হলো , কিংবা কারিশমার নাচটা কেমন মোহনীয় হলো। তো একদিন হলের বন্ধুদের বললাম , তোরা যেভাবে হিন্দী ছবি দেখিস বলত সে অনুপাতে বাংলা ছবি কয়টা দেখিস ?



দূর ব্যাটা ওগুলো দেখা যায় , না আছে অভিনয় , না আছে কাহিনী। দেখিস না নায়িকা গুলো জলহস্তির মত শরীর নাচায়, অস্লিলতায় ভরা দেখা সম্ভব? আর দেখ কারিশমার কেমন স্লিম দেহ



নাচটা কেমন উহ !



ওই নাচে কি অশ্লীলতা নাই ? আরে ছাগল ওটা অশ্লীল নয় , ওটা হচ্ছে আর্ট।



ঠিক আমার সেই জেঠাত ভাই এর উত্তর। পার্থক্য শুধু এখানে আমার ওই ভাই টি একজন অল্প শিক্ষিত মানুষ আর আমার বন্ধুরা ভার্সিটি তে পড়ুয়া একদল শিক্ষিত মানুষ।



আমি বললাম ঠিক আছে তোরা হুমায়ুন আহমেদ , কিংবা ফারুকির বাংলা ছবি গুলো তো দেখতে পারিস। আরে দূর ! ওগুলো ছবি নাকি , ৩ ঘন্টার বাংলা নাটক।



আমার এই বাংলা অশ্লীলতা বিরোধী বন্দুদের কে আবার দেখতাম হলের কোনো নিরিবিলি রুমে রাত ১২ টার পরে একত্রিত হতে। পরে খোজ নিলে জানতে পারতাম ওরা ওই সময়ে দেখত বাংলা থ্রী এক্স , অথবা বাংলা ছবির কোনো অশ্লীল কাট পিস।



একসময় আসলাম প্রবাসে , উঠলাম এক বাংলাদেশী ভাইদের মেসে। সবাই উচ্চ শিক্ষিত , এবং এখনো পড়ছে। দিনের বেলায় কাজ অথবা ক্লাস শেষ করে এসেই শুরু হত রাতের বেলায় হিন্দী ছবির বিনোদন। কোন ছবিটি আজ মুক্তি পেল , কে কত দ্রুত কোন সাইট হতে ডাউনলোড করবে তার প্রতিযোগিতা। একদিন ভয়ে ভয়ে একজন কে বললাম আপনারা কি বাংলা ছবি টবি দেখেন না ? আমার কথা শুনে তো লোকটি তো থ। বল কি তুমি একটা ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড দেশে এসে ও তোমার রুচি বদল হলনা ? আরে মিয়া আমাদের দেশের ছবি দেখা যায় , অশ্লীল অশ্লীল যত্তসব বিশ্রী কাহিনী।



বললাম, সব ছবি তো একরকম না।



বাংলা ছবির অশ্লীল খোজা ভাইদের কে দেখতাম , পর্ণ নায়িকা সানি লিউনের , অথবা বিপাসা বসুর ছবির মুক্তির অপেক্ষায় থাকতে।



আমার বেশ কিছু দিন ছুটি চলছে। কাজের কারণে আমাকে বাংলাদেশী ভাইদের ছেড়ে অনেক দুরে একাকী থাকতে হয়। তাই ছুটি পেয়ে চলে এলাম স্বদেশী ভাইদের নিকট একটি বাংলাদেশী মেসে।



সবাই মোটামুটি কাজ এবং লেখা পড়ায় ব্যস্ত। রাতের বেলায় বাসায় এলে যে গল্প করব তার ও সুযোগ নাই। সবাই ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যেত। বেশিভাগের ই ব্যস্ততা থাকত নতুন কোনো হিন্দী ছবি দেখা নিয়ে। আমার কপাল টাই খারাপ , যেটি অপছন্দ সেটি বারেবার ধরা দেয় আমার কাছে।



যাক অপেক্ষা করছি রোববারের জন্য , ঐদিন সবার ই ছুটি থাকার কথা। বিকেলে সবাই কে নিয়ে একটু বের হব , ঘুরব এদিক সেদিক। রোববার বিকেল বেলা সবাই আমার আগেই রেডি।



এই তোমরা কই যাও , তোমাদের নিয়ে একটু বাইরে যাব। অনেক দিন ঘুরা হয় নাই।



না ভাই আজকে তো ঘুরা যাবেনা। কেন কি জন্য?



সরি ভাই , সালমান খানের একটা রিসেন্ট ছবি এই দেশের একটা হলে রিলিজ হলো আজ।



আমরা সবাই ওই ছবি দেখতে যাচ্চি, আপনি ও চলেন।



হাসি মুখে বললাম নো প্রবলেম তোমরা যাও।



গত কয়েকদিন ধরে হিন্দী ছবি গুন্ডে নিয়ে বেশ সমালোচনা চলছে ব্লগে , ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে। হিন্দী ছবি আমার দেখা হয়না বলে , বিভিন্ন ব্লগ পড়ে এই ছবির কাহিনী মোটামুটি জেনে নিলাম।



রাতের বেলায় আমার মেসের সব সদস্য হাজির হলো। খাওয়ার টেবিলে জিগ্যেস করলাম সবাইকে। আচ্ছা তোমারা কি গুন্ডে ছবিটা দেখেছ ? সবাই একসাথে বলে উঠলো দেখি নাই মানে। রিলিজ হওয়ার দিন ই আমরা নেটে ছবি টা পেয়ে গেছি। একজন বলল ভাই তুমি দেখবা আমার কাছে একদম ফ্রেশ প্রিন্টের ছবি ডাউনলোড করা আছে।



না না দেখা লাগবেনা , আচ্ছা ছবিটার মূল কাহিনীটা কি একটু সংক্ষেপে বলা যাবে?



হু এইত বাংলাদেশের সাধীনতা যুদ্ধের কাহিনী আছে এতে। কি বলা আছে ছবিটা তে ?



মানে ওরা বাংলাদেশের যুদ্ধ কে কিভাবে মূল্যায়ন করলো ? কিভাবে করলো মানে ?



আমি তখন তাদের সংক্ষেপে বললাম , এই ছবিটার মাধ্যমে ইন্ডিয়া আমাদের স্বাধীনতা কে চরম ভাবে অব মূল্যায়ন করেছে, অস্বিকার করা হয়েছে লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ কে। বাংলাদেশের জন্ম কে ইন্ডিয়া আর পাকিস্তানের যুদ্ধের ফসল বলা হয়েছে।



আমার বক্তব্যকে ওরা বিভিন্ন ভাবে ব্যাক্ষা দেয়ার চেষ্টা করলো। মনে হয় কেউ বিশ্বাস করলনা। কারণ ওদের বদ্ধ মূল ধারণা ইন্ডিয়া এই রকম করতে পারেনা। আর করলেই বা কি কথা তো মিথ্যা নয় , ওরা তো আমাদের যুদ্ধে সাহায্য করেছে। এমন টি তাদের ভাবসাব।



কিন্তু এই ছবির মূল বক্তব্য ওদের বুজার ক্ষমতা তখন ও হয় নি।



আমি একটি ছোট্ট ফাস্ট ফুড সপে কাজ করি। শপের মালিক না থাকলে আমি শপের মূল দায়িত্বে থাকি। প্রায় সময় কাজ খুজতে প্রচুর বিদেশী ছাত্র আসে। আজ কে ও সে রকম একটা লোক আসলো আমার সপে। বয়স মোটামুটি ২৭/২৮ হবে দেখতে বাঙালি চেহারা। ছেলেটি ভিতরে ডুকে ইতস্তত করছিল , আমাকে দেখে এগিয়ে আসলো। আমি ও হাসি মুখে তার দিকে তাকালাম।



কারণ বাংলাদেশী চেহারার লোকজন এখানে খুব একটা দেখা যায় না। ছেলেটি আমার দিকে তাকিয়ে জিগ্গেস করলো হিন্দিতে তুমি কি ইন্ডিয়ান ? না আমি বাংলাদেশী , ইংলিশ এ উত্তর দিলাম। ছেলেটি হিন্দিতে আবার বলল তুমি কি হিন্দী জাননা ? আমি বললাম না। ছেলেটি কেমন জানি খুব একটা অবাক হয়ে গেল। আমার দিকে তাকিয়ে হিন্দিতে বলল ছেলেটি ,অসম্ভব। আমি না বুজার ভান করে বললাম , বুজি নাই ইংলিশ এ বলো। এইবার ছেলেটি ইংলিশ এ বলল কোনো বাংলাদেশী হিদী জানেনা এটি অসম্ভব। আমি তার উত্তরে বললাম তুমি কি বাংলা জানো? বলল না, আমি ও বল লাম এটি ও আমার কাছে অসম্ভব। হা করে ছেলেটি আমার দিকে কিচুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। আর কিছুই বললনা ছেলেটি , যে কাজ খুজতে এসেছিল সেটি না বলে চুপচাপ সপ থেকে বেরিয়ে গেল।



আজ বাংলাদেশে মহান শহীদ দিবস। বাংলা ভাষার জন্য জীবনদান করি সকল শহীদ এর আল্লাহর কাছে সর্বচ্চো পুরস্কার কামনা করছি। সাথে সাথে মহান স্বাধীনতার জন্য জীবন উতসর্গকারী সকল এর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।



আর শিক্ষিত , অশিক্ষিত সবার প্রতি অনুরোধ , দেশ কে ভালবাসুন। দেশের ভাষা , সংস্কৃতি কে ভালবাসুন অন্য দেশের চেয়ে অনেক অনেক বেশি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.