নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার চারপাশের মানুষ গুলো অনেক ভাল।

নিথর শ্রাবণ শিহাব

মাটির মানুষ ভিজলে কাদা হয় না কেন প্রশ্ন জাগে, মানুষ গড়া অন্যকিছুয় আমার শুধু এমন লাগে।

নিথর শ্রাবণ শিহাব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভ্রম

০৫ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:৩৯

“আমার কাঁধের দিকটায়, মানে শার্টের কলারের নিচে মানুষের মুখের মত কিছু একটা গজিয়ে উঠছে ডাক্তার। আই ক্যান ফিল ইট!” হাবিব উত্তেজিত মুখে বলে সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে এসে।
সামনে বসে থাকা পঞ্চাষোর্ধ খ্যাতিমান ডাক্তার ইকবাল আফসারি চশমার ওপর দিয়ে সহজ স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকালেন। রোগীদের এই ধরণের উত্তেজিত আচরণ, নিজের বক্তব্য সঠিক প্রমাণ করতে চাওয়ার চেষ্টা, জোর দিয়ে বুঝাতে চাওয়া অনেক পুরনো তাঁর কাছে। গলা খাকারি দিলেন, “আপনি বলতে চাচ্ছেন আপনার শার্টের কলারের নিচের দিকে, পেছনে মানুষের ফেসের মত কিছু তৈরি হচ্ছে। নিজে নিজে?”
“জ্বি। আপনি মনে হচ্ছে আমার কথা বিশ্বাস করছেন না। আমি শার্ট খুলবো স্যার?” হাবিব শিরদাঁড়া সোজা করে বেশ স্পষ্ট গলায় বলে। তার দাবী যে অমূলক নয় সেটা বোঝাতে ইকবাল সাহেবের কিছু বলে ওঠার আগেই শার্টের বোতামে হাত দেয়।
ইকবাল সাহেব চেয়ারে পেছন দিকে কাত করে হেলান দেন। কফির মগটায় আরেক চুমুক দিয়েই মুখটা সামান্য কুঁচকে ফেলেন। তাঁর সেক্রেটারি নার্গিস যাচ্ছে তাই কফি বানায়। মুখে দিলেই বাজে উৎকট একটা স্বাদ এসে ধাক্কা মারে। পানি দেয়া নেই টেবিলে। বলতে ভুলে গেছেন পানির কথা। তেতো মুখেই হেলান দিলেন। হাবিবের শার্ট খোলার কথাটার উত্তর দিতে দেরি হল সামান্য। হাতের কলমটা দুই হাতের তর্জনীর আগায় ধরে রেখে বলেন, “দেখাতে পারেন।” না বললেও যে এই পেশেন্ট তাঁকে শার্ট খুলে কাঁধ দেখিয়েই ছাড়বে এ ব্যাপারে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। তাই ঘাটাতে চাইলেন না শুরুতেই। আগে খুলুক। যখন দেখাতে পারবে না। তখন বুঝিয়ে দেয়া যাবে। আসলেই ফিজিক্যাল প্রবলেম হলে তাঁর কাছে কেন আসবে? তিনি তো সাইকিয়াট্রিস্ট। এই রোগীর ওয়াইফ বাহিরের দরজার ওপাশে বসে রয়েছে। সে’ই ধরে বেঁধে নিয়ে এসেছে। তার মানে মানসিক সমস্যা। হাবিব রুমে ঢোকার আগে তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী নীলা ভেতরে এসে স্বামীর রোগের ধরণ সম্পর্কে বলে গেছে। সঙ্গে এটাও অনুরোধ করে গেছে কাতর গলায়, “স্যার, আপনি আমার বাবার বয়সী। আপনার মেয়ের যদি বিয়ের পর শুনতেন যে নতুন জামাইয়ের এরকম মানসিক সমস্যা আছে- আপনি কি করতেন বলুন? আমাকে প্লিজ হেল্প করুন স্যার। আমি এই মানসিক চাপ আর নিতে পারছি না। প্রত্যেকটা দিন হাবিব রাতের বেলা ঘুম থেকে উঠে নিজের ঘাড় চুলকাতে থাকে অপ্রকৃতস্থের মতো। বলতে থাকে যে রান্নাঘর থেকে ছুরি নিয়ে আসো, কাধের চামড়া কেটে ফেলি! অথচ বাতি জ্বালিয়ে হাজার বার দেখেছি আমি, কিচ্ছু নেই। কিচ্ছু না। পুরো সুস্থ মানুষ!... স্যার, দেড় বছরের প্রেম আমাদের। আত্মীয় স্বজনদের অনেক কষ্টে ম্যানেজ করে বিয়েটা করেছি। হাবিবের চাকরি বাকরি ছিল না। কোনোমতে একটা জুটিয়েছে, সাথে সাথে বিয়েটা করে ফেললাম গত মাসে। কিন্তু এখন সবাই যদি শোনে যে ওর এমন অবস্থা, আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকবে না……”

হাবিবের শার্ট খোলা দেখছেন বসে বসে ডাক্তার ইকবাল। ছেলেটা আসলেই অসংলগ্ন আচরণ করছে। হাত কাঁপছে ভীষণ রকমের। উত্তেজিত হয়ে আছে, নাকের আগায় ঘাম জমেছে বিন্দু বিন্দু। দ্রুত হাতে বোতাম খুলতে খুলতে একটা বোতাম ছিঁড়েই ফেলল।
“আমি জানি আমার কথা কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। আপনিই দেখুন?” বলে শার্ট সরিয়ে অন্যদিকে মুখ করে পিঠ ঘুরালো ইকবাল সাহেবের দিকে।
দুই তর্জনীর আগায় আলগাছে ধরে থাকা কলমটা আপনা আপনি খসে পড়ে গেল। হা হয়ে গেছেন ইকবাল আফসারি। জমে গেছেন বরফের মতো! কারণ চোখের সামনে যেটা দেখতে পাচ্ছেন, সেটা কোনো ভাবেই সুস্থ দৃশ্য হতে পারে না!
সামনে দাঁড়িয়ে পিঠ, কাঁধ বের করে রাখা হাবিবের গলার পেছনে এবং ঘাড়ের মাঝা মাঝি সত্যি সত্যি একটা মানুষের মুখের মতো বেরিয়ে রয়েছে! অবিশ্বাস্য হলেও সত্য- মুখটা অবিকল একটু আগেই কথা বলা নীলা নামের সেই মেয়েটার মতো দেখতে!
কাঁধের কাছটায় শিরশির করে উঠল ইকবাল আফসারির! অবিশ্বাসী গলায় বলে ফেললেন, “ও মাই গড! আপনার পিঠের… ঠিক আপনার ওয়াইফ নীলার মতো দেখতে ফেসটা…… কীভাবে সম্ভব?”
ঝট করে ফিরে তাকালো হাবিব, সতর্ক শিকারীর মতো দৃষ্টি দুই চোখে, “কী বললেন ডাক্তার সাহেব?”
“নীলা, আপনার ওয়াইফের নাম বললাম? তার চেহারার সঙ্গে আপনার কাধের ফেসটার অদ্ভুত মিল রয়েছে……” ইকবাল আফসারি বিভ্রান্ত গলায় বললেন।
ধীরে ধীরে এক কদম এগিয়ে এলো হাবিব। ধারাল একটা দৃষ্টি ফুটে রয়েছে চোখের মাঝে, কিন্তু একই সাথে কেমন যেন ছন্নছাড়া, বেপরোয়া ভাব, “আমার ওয়াইফের নাম নীলা এটা আপনি জানলেন কেমন করে? আমি তো একবারও আপনাকে বলিনি!”
“আ-আপনার স্ত্রীই তো নিয়ে এসেছে আপনাকে। কেন? আপনি রুমে ঢোকার আগেই তো আপনার স্ত্রী ভেতরে এসে কথা বলে গেল আমার সঙ্গে!” বিমূঢ়ের মতো বললেন ইকবার আফসারি।
হাবিব মাথা সামান্য কাঁত করে তাকিয়ে রইল বিচিত্র ভঙ্গীতে। অস্বস্তিকর একটা চাহুনি। ঘরের এসির শ শ শব্দ ছাড়া পিন পতন নীরবতা।
“নীলা নামে তো কাউকে বিয়ে করিনি আমি! তবে আমার পিঠের এই ফেসটা দেখতে নারী চেহারার কারণে আমি মনে মনে কিছুদিন আগে একটা নাম আউড়েছিলাম। কিছু ভেবে তো করিনি। ঘুমের মাঝে কাঁধের মুখটাকে সাবকশাসলি আলাদা মানুষ মনে হচ্ছিল, নাম ধরে ডেকেছিলাম একবার। নীলা…… কিন্তু আপনি? আপনি কীভাবে এই নাম জানলেন? আমি তো একবারও উচ্চারণ করিনি নামটা!”
ইকবাল আফসারির অসুস্থ মতো লাগছে। তিনি কাঁপা হাতে বাহিরের কাউন্টারের ফোন দিলেন রিসিভার তুলে, “হ-হ্যালো? নার্গিস? বাহিরে নীলা নামের যে মেয়েটা অপেক্ষা করছে, তাকে ভেতরে পাঠাবে? এখন যে রোগী দেখছি, হাবিবুর রহমান। তার স্ত্রী নীলা।”
“স্যার, এখানে তো কেউ নেই। আর হাবিব সাহেব কে? রোগী দেখার সময় শেষ হয়ে গেছে আধা ঘণ্টা হল। কেউ তো নেই! শেষ রোগী চলে গেছে আরো বিশ মিনিট আগে।” ইন্টারকম থেকে নার্গিসের অবাক গলা ভেসে এলো।
চমকে উঠলেন ইকবাল আফসারি, চাপা গলায় বলে উঠলেন, “আমার সামনেই তো হাবিবুর রহমান দাঁড়িয়ে আছে! একটু আগেই তো ঢুকলো!”
সামনে শার্ট ছাড়া দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা ধীর পায়ে হেঁটে সামনের চেয়ারটায় গিয়ে বসল। পিঠের মুখটা কুৎসিত, বীভৎস একটা ভাব এনে দিয়েছে কাঁধে। শার্টটা তুলে গায়ে দিচ্ছে কোনো কথা না বলে। শান্ত, শীতল দৃষ্টি। মাটির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সরাসরি তাকাচ্ছে না ডাক্তার ইকবালের দিকে।
আঁঠারোতে দেয়া রয়েছে এসি। তার মধ্যেও কুল কুল করে ঘামতে শুরু করেছেন ইকবাল আফসারি। রিসিভার ধরে রেখেছেন তখনো তিনি। অন্যপাশ থেকে নার্গিসের দৃঢ় গলা ভেসে এলো আবারও, “স্যার গত আধাঘণ্টায় একটা রোগীও আসেনি এখানে। আজকের যত এপয়েন্টমেন্ট ছিল সব শেষ। ভেতরে কে যাবে! আমি তো দরজার সামনেই বসে আছি তিন ঘণ্টা ধরে…”
ওপাশে নার্গিস আর কি কি বলল শোনার ধৈর্য্য রাখতে পারলেন না আর তিনি। ঈষৎ কম্পিত হাতে ফোনটা ক্রেডেলে রেখে দিয়ে ফিরে তাকালেন হাবিবের দিকে। “আ-আপনি ভেতরে কীভাবে এসেছেন?”
হাবিরের খানিক আগের অস্থির চোখের তারায় কোনো চঞ্চলতা নেই। কেমন শান্ত আর খানিকটা হাসি মিশে গেছে দৃষ্টিটায়, “স্যার আমাকে চিনতে পারেননি?”
“আপনাকে চেনার কোনো কারণ কি আছে? হেঁয়ালি রেখে ভাল করে কথা বলুন।” গলার স্বর যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন ইকবার আফসারি। কিন্তু ঢাকতে পারছেন না উৎকণ্ঠাটুকু।
“স্যার আমি আপনাকে নিতে এসেছি।”
“ম-মানে!” চমকে উঠলেন ইকবার সাহেব।
“আজব, আপনি সত্যিই আমাকে আগে দেখেননি? কেন? আপনার স্ত্রীকে না জানিয়ে বাহিরের একটা মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করেছিলেন যে? পাহাড় থেকে গাড়িসহ ফেলে দিয়েছিলেন মনে নেই? আমিও তো সেই গাড়িতে ছিলাম।”
“ক-কি যা তা বলছেন এই সব!” স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। কারণ এই ঘটনা তাঁর স্ত্রী নাহার পর্যন্ত জানে না! কারও জানার কথা না!
“আচ্ছা বাদ দেন। ছোটবেলায় মক্তবের হুজুরকে থান ইট মেরে কুয়ার মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন যে? মনে আছে? আমি সেই কুয়াতেও ছিলাম। আপনি কিন্তু আমাকে দেখেছিলেন। ভুলে গেছেন হয়ত!”
ইকবাল সাহেব আতংকিত অনুভব করছেন। কারণ সত্যি সত্যি কুয়ার মাঝে একজনকে ছোটবেলায় দেখতে পেতেন তিনি। এমনকি সোনিয়া নামের সেই প্রাক্তন পিএকে পাজেরোতে করে শহরের বাহিরে নিয়ে পাহাড় থেকে অজ্ঞান অবস্থায় গাড়িসহ ঠেলে ফেলে দেয়ার সময় গাড়ির ভেতর আরো কাউকে আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। কিন্তু তখন আর উপায় ছিল না থামানোর। গাড়ি খাদে পড়ে যায়।
হাবিব সামনের দিকে ঝুঁকে এসে রহস্যময় গলায় বলে, “আমার এত অদ্ভুত সব আচরণের পড়েও চিনতে পারলেন না? আমি তো ভাবলাম আমাকে শুরুতেই চিনতে যাবে! মনে আছে? আপনার শাশুড়ি মারা যাবার সময় ঘরের কোণায় দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি?”
ইকবাল আফসারির বুকের ভেতর তীব্র ব্যাথা হওয়া শুরু করেছে। কারণ তিনি সত্যিই এখন মনে করতে পারছেন, তাঁর শাশুড়ি আয়েশা খাতুন মারা যাবার রাতে আসলেই তার অন্তিম শয্যার অপর মাথায় আবছা অন্ধকারে এরকমই কেউ দাঁড়িয়ে ছিল……
“আমি কে চিনতে পারছেন স্যার…”
ইকবাল আফসারি উচ্চারণ করতে পারলো না… হিস্ট্রোরিয়া রোগীর মতো কাঁপতে শুরু করেছেন এর মধ্যেই। স্পষ্ট ভাবে কিছু চিন্তা করতে পারছেন না। দৃষ্টি ঘোলা হয়ে আসছে দ্রুত। হাবিব ধীরে ধীরে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। টেবিলের ওপর দুই হাত রেখে সামনের দিকে লম্বা হয়ে উবু হয়ে এলো, “স্যার, আমি আপনাকে নিতে এসেছি। যাবেন না?”

ইকবাল আফসারির বুকের ব্যথাটা অসহ্য রকমের পর্যায়ে চলে গেল খুব দ্রুত। নার্গিসকে ডাকার জন্য টেলিফোনের দিকে হাত বাড়াতে গেলেন, কিন্তু পারলেন না। বরফ শীতল একটা হাত বাড়িয়ে হাবিব তাঁর হাতটা ছুঁয়েছে। মানুষের হাত এত ঠাণ্ডা হতে পারে না…… ঘোর লাগানো কণ্ঠে হাবিব বলল, “স্যার, চলেন। যাই। সময় শেষে…”

বুকের ভেতর রক্তের মতো কোনো বিস্ফোরণ ঘটল ইকবাল আফসারির। চোখের পাতা আধবোজা রেখে ঢলে পড়লেন চেয়ারের একদিকে। ভারী শরীরটার আচমকা এই ছেড়ে দেয়া ওজন রাখতে পারলো না রিভলভিং চেয়ারটা। চেয়ার সহ কাঁত হয়ে প্রায় শব্দহীন ভাবে ওপাশের পুরু কার্পেটের ওপর আছড়ে পড়লে ইকবাল আফসারির নিষ্প্রাণ দেহটা……

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

টেবিলটা ঘুরে এসে ফোন তুলে ডায়েল করল হাবিব। ওপাশে রিং হচ্ছে। রাতের প্রায় দশটাই বাজে এখন। পুরো শহর ঘরে ফিরছে, নয় খেয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ওপাশে কেউ একজন ফোন তুলল, নারী কণ্ঠে বলল, “কী খবর?”

“কাজ হয়ে গেছে। ডেড। ভেতরে আসতে পারেন।” হাবিব শান্ত গলায় বলল।
দরজা খুলে গেল প্রায় সাথে সাথে। আধা ঘণ্টা আগে এই রুমে আসা, হাবিবের স্ত্রীর পরিচয় দেয়া নীলা নামের মেয়েটা, নার্গিস এবং ইকবাল আফসারির স্ত্রী নাহার দাঁড়িয়ে আছে।
কাঁধের পেছনে হাত দিয়ে শার্টের নিচ থেকে রাবারের মতো মুখটা টেনে ছোটাতে গিয়ে ককিয়ে উঠল হাবিব, “উফ! এত কড়া গাম দিয়ে এই ফেসটা পিঠে বসানোর কোনো দরকার ছিল ম্যাম? কফিতে ওষুধের ডোজটা বাড়িয়ে দিলেই তো হত। ভয় পাইয়ে মারার কষ্ট আর করতে হতো না। এই মেক আপ ছোটাতে ছোটাতে জান বেরিয়ে যাবে আমার!”
নাহার গম্ভীর মুখে বলল, “কফিতে ডোজ বাড়ানোর উপায় ছিল না। পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে চলে আসতে পারতো। এজন্য ভয় ধরানোর কাজটা করতে হয়েছে, যাতে হার্ট এটাক করে… ওর মরা জরুরি ছিল খুব।”
“কিন্তু ম্যাম, কেউ যদি বুঝতে পারে?”
“বুঝলে বুঝবে! এই ক্রিমিনালকে বাঁচিয়ে রাখার চেয়ে মেরে জেলে যাওয়ায় ভাল। তোমাদের এত চিন্তার কি আছে? যদি ফেঁসে যাও আমার নাম বলে দেবে। সব দায় আমার সিম্পল! এইরকম ঠাণ্ডা মাথার খুনির সংসার করার চেয়ে ফাঁসি হয়ে গেলেও আমার শান্তি। আমি স্বপ্নেও ভাবিনি এই লোক আমার মাকে মেরে সব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি দখল করবে! আমার অজান্তে বাহিরের আরেকটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক করবে! সেই মেয়েকে প্রয়োজন ফুরানোর পর মেরেও ফেলবে! ছোট থেকেই ক্রিমিনাল! সাইকো একটা!”
হাবিব ক্লান্ত স্বরে বলল, “আপনাদের যত আলাপ আছে পরে করবেন। আমার আর নীলার চেকটা দিয়ে দিন। বিদায় করুন …”
“হ্যাঁ হ্যাঁ! নিশ্চই…” তাড়াতাড়ি হ্যান্ড ব্যাগ থেকে চেক বই বের করে সই করতে লাগলেন, “শহর ছেড়ে পালাতে হবে তোমাদের দুজনকেই। হাসপাতালের কম করে হলেও ছয় সাতটা সিসি ক্যামেরাতে তোমাদের চেহারা রেকর্ড হয়েছে। সব জায়গা আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। ঘুণাক্ষরেও যদি পুলিশ হদিস পায়……”
“আমাদের চেহারা নিয়ে ভাবার কিছু নেই ম্যাম।” নীলা এতক্ষণে মুখ খুলল, “আমরা ক্লায়েন্টের সঙ্গেও নোন ফেসে কথা বলি না। আপনি নিজেও আমাদের চিনতে পারবেন না। এই শহরের দুই কোটি মানুষের মাঝে মিশে যাব এক ঘণ্টা বাদেই।” কথা না বাড়িয়ে নার্গিস এবং নাহারকে রেখে হাবিবকে নিয়ে নীলা বেরিয়ে এলো। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে চেকের পাতাটা উলটে পালটে দেখে গম্ভীর মুখে বলল নীলাকে, “এরেস্ট কি কাল করতে চাও? নাকি আরেকটু ঘোল খাইয়ে দু চারদিন পর?”
একটা নিঃশ্বাস ফেলে নীলা বলল, “এত দ্রুত এরেস্ট করতে গেলে বুঝে যেতে পারে যে আমরাই পার্ট টাইম টাকা ইনকাম করতে নার্ভের ওপর প্রেশার ফেলে মেরে বেড়াচ্ছি লোকজন শহর জুড়ে। পুলিশের চাকরিতে পোষাচ্ছে না, আবার ছাড়াও মুশকিল। ক্রাইম নিজেই করে সেটাকে সলভ করার স্বাদই আলাদা!”
হাবিব হাসতে লাগলো, “সেটা মন্দ বলোনি। কিন্তু কিলার অন হায়ার নামটা পালটে অন্যকিছু রাখা যায় কিনা ভেবে দেখেছো? বেশি স্বস্তা নাম হয়ে গেছে।”
“পরে দেখা যাবে। আগে বাসায় গিয়ে চেহারার এই আট মিলির মেকআপ তুলতে হবে। নাহলে পুলিশের চেহারাটা বেরিয়ে আসবে না। সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করে দেয়ার মতো মেকআপ দিয়েছিলাম। আজকে রাত যাবে এই কাজের পেছনেই!”
হাবিব চেকটা ভাঁজ করে পকেটে রেখে দিতে দিতে বলল, “হিপ্নোটিসমের উপর এমস্টার্ডামে নাকি একটা বেশ ভাল কোর্স হবে তিন সপ্তাহ পর। যাওয়া দরকার কি বল?”
“শিখতে যেতে চাচ্ছো নাকি শেখাতে!” নীলা হাসতে লাগলো। “যেভাবে সম্মোহিত করে ইকবাল সাহেবের নাড়িভুঁড়ি টেনে বের করে আনলে! দেখার মতো ছিল।”

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০২

এম এ হানিফ বলেছেন: সুন্দর

০৫ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৬

নিথর শ্রাবণ শিহাব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। সুস্থ থাকুন।

২| ০৫ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫২

আজাদ প্রোডাক্টস বলেছেন: টুইস্ট এর উপর টুইস্ট, খুব ভালো লিখেছেন।

১১ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১০:১০

নিথর শ্রাবণ শিহাব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ :) সুস্থ থাকুন

৩| ০৫ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:২২

অচেনা সমুদ্রের নাবিক বলেছেন: এক কথায়.... অসাধারন ..........

১১ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১০:১০

নিথর শ্রাবণ শিহাব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ :) সুস্থ থাকুন

৪| ০৫ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৩০

কোজাগরীররাত বলেছেন: ভালো লাগলো।

১১ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১০:১১

নিথর শ্রাবণ শিহাব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ :) সুস্থ থাকুন

৫| ০৫ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১১:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: আসলেই ভ্রম।

১১ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১০:১২

নিথর শ্রাবণ শিহাব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ :) সুস্থ থাকুন

৬| ০৬ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১২:১২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

১১ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১০:১২

নিথর শ্রাবণ শিহাব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ :) সুস্থ থাকুন

৭| ১০ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৭

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: চমৎকার টুইস্ট।

১১ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১০:১১

নিথর শ্রাবণ শিহাব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ :) সুস্থ থাকুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.