নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যান্বেষী, সত্যভাষী, মনে যা আসে তাই লিখি। তবে কাউকে কষ্ট দিয়ে নই

শাহজাহান নবীন

শাহজাহান নবীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোটা সুবিধা মেধাবীদের জন্য নয় কেন?

২২ শে জুন, ২০১৭ রাত ১:২২



সংবিধান আইনের সমতার কথা বলে। আইনের দৃষ্টিতে সকল নাগরিক সমান অধিকারভোগী। সংবিধানের এই আর্টিকেল গুলো শুনে বা দেখে আত্মতুষ্ট হওয়ায় যায়। কিন্তু এসবের বাস্তবিক প্রয়োগ কতটুকু বাস্তব? আসলেই কি আইনের চোখে সকল নাগরিক সমান? হ্যা, একটা দিক দিয়ে আমরা আইনের দৃষ্টিতে সমান। সেটি হলো আইনানুগ প্রক্রিয়াগুলো সবার জন্য সমান। যেমন ধরুন, মামলা করার আগে পুলিশকে ঘুষ দেয়া। আদালতের উকিলের পিয়ন থেকে শুরু করে হুকুমদাতা পর্যন্ত রসদ পৌছানোর নিয়ম। কিভাবে অন্যায়কে ন্যায় বানিয়ে ফায়দা তোলা যায়। এসব ব্যাপারে সকল নাগরিকের জন্য প্রক্রিয়াটা একই। রসদে তারতম্য হলেও লাইন এক। তবে আইনের আশ্রয় নিয়ে প্রতিকার দাবি করার পর তার ফলাফল নাগরিকের অর্থবিত্ত, রাজনৈতিক-সামাজিক অবস্থান ও প্রভাব ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কথাটা আরেকটু পরিষ্কার করে বলি। দেশের অনেক অপরাধী কারাভোগ করছে। অনেকে অপরাধ না করেও মাসের পর মাস বিচার না পেয়ে কারাগারে বন্দি। কিন্তু এরকমও তো দেখা যায়, সাঁজাপ্রাপ্ত শীর্ষ দূর্নীতিবাঁজ, সন্ত্রাসীরা অর্থবিত্ত ও রাজনৈতিক, সামাজিক প্রভাব ব্যবহার করে দিনের পর দিন হাসপাতালে রোগী সেঁজে নাম মাত্র কারাভোগ করছে। এগুলো প্রায়ই খবরের কাগজে বের হয়। কয়েকদিন আগেও কোন এক খ্যাতনামাকে হাসপাতাল থেকে ফের কারাগারে ঢুকানো হলো। দেশে কোন কিছুই অসম্ভব না। মূল কথায় আসি, সরকারী চাকরিতে সুযোগের সমান অধিকারের কথা বলে সংবিধান। বৈষম্য দূরীকরণে সংবিধানের ২৯ আর্টিকেলে দিকনির্দেশনা দেয়া আছে। আর্টিকেল ২৯ এর (খ) তে বলা হয়েছে, কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হবে না বা সেই ক্ষেত্রে তার সাথে বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না। তবে ২৯ এর (গ) তে বলা হয়েছে, নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা যাবে। এছাড়া কোন ধর্মীয় বা উপ-সম্প্রদায়গত প্রতিষ্ঠানে উক্ত ধর্মাবম্বী বা উপ-সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য নিয়োগ সংরক্ষণের বিধান সংবলিত যে কোন আইন কার্যকর করতে পারবে রাষ্ট্র।

এছাড়া আরো বলা হয়েছে যে, কোন বিশেষ কর্মের প্রকৃতি নারী বা পুরুষের জন্য অনুপযোগী সেই কর্মের জন্য নারী ও পুরুষের পদ সংরক্ষণের ক্ষমতা রাষ্ট্রের থাকবে। সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ থেকে খুব নিরপেক্ষ ও বাহবা পাওয়ার মত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা আমাদের সামনে চিত্রিত হয়। দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে সরকারী কর্মে তাদের সুযোগ দেয়া উচিত বলে আমিও মনে করি। হয়তো আপনিও দ্বিমত করবেন না। তবে সেই সুযোগ অবশ্যই সংখ্যার হিসেবে নয়। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মৌলিক সুযোগ নিশ্চিত না করে শুধুমাত্র কর্মে সুযোগ দেয়ার জন্য বিশেষ রাস্তা তৈরী কি আহাম্মকি নয়? পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করলেই তো হয়। একই শিক্ষাক্রমে পড়াশুনা করে একই প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে তারা যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে কর্মে জায়গা করুক। সেটাই তো সাবলীল। দৌড় প্রতিযোগীতায় সমস্ত রাস্তা সবাই একই সুবিধা নিয়ে পাড়ি দিয়ে একজন লাল ফিতা ছুঁয়েও প্রথম হতে পারলেন না। কারণ উচ্চতার মাপকাঠিতে অন্য কাউকে সুযোগ দিতে গিয়ে তাকে ছিটকে পড়তে হলো। এটা কেমন না? একজন ৯০ পেয়ে যা, আরেকজন ৭০ পেয়েও তা? এটা কি বৈষম্য নয়? সংবিধানের আর্টিকেল ২৯ কি ঠিক থাকলো? আমার ছোট মাথায় অসঙ্গতিই প্রতিয়মান। প্রসঙ্গত, সদ্য প্রকাশিত ৩৮তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ অন্যান্য কোটায় পদ আছে ১০৩৪ ও মেধায় পদ রাখা হয়েছে ৯৯০ টি। যার মধ্যে ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সব মিলিয়ে ৫৫ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, শারীরিক প্রতিবন্ধীর পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নাতি-পুতিদেও জন্য রাখা হয়েছে অর্ধেকেরও বেশি পদ সংখ্যা। যেখানে সাধারন প্রতিযোগীদের জন্য ৪৫ শতাংশ। এই কোটা পদ্ধতি রাখার সুবাদে কোটাধারীরা কোন রকম প্রিলিমিনারী ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই সোনার হরিণ হাতের মুঠোয়। কোটাধারীদের কতজনই বা কৃতকার্য হয়? যেগুলো হয় সেগুলো আর বাদ যায় না। কারণ সেখান থেকে যাচাই বাছাইয়ের সুযোগ থাকেনা সংখ্যা বা প্রতিযোগী না থাকার কারণে।

এছাড়া এধরনের প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় প্রতি বছরই প্রায় দেখা যায় কোটা নির্ধারিত পদ শূণ্য থেকে যায়। যোগ্য ব্যক্তি না পাওয়ায় ওসব পদ খালি রেখে। আবার নতুন করে পরবর্তি সারক্যুলারে তাদের পদ সংখ্যা যোগ করা হয়। এর ফলে তারা কখনোই হতাশ হয় না। এবার একটু বলি, দেশের সূর্য্য সন্তানরা দেশ গড়ার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। অবশ্যই তারা ভাতা নিয়ে, নাতি-পুতিদের চাকরির আশায় মুক্তিযুদ্ধ করেননি। তবে কেন এই অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোটা? যেখানে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ও নারী কোটা মাত্র ১৫ শতাংশ। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা কোটা কেন ৩০ শতাংশ? এটা কি ন্যূনতম ১০ শতাংশ রাখলেও রাখা যায় না। এতে করে সাধারর প্রতিযোগীদের মধ্য থেকে অনেক মেধাবীকে কি রাষ্ট্রীয় কর্মশালায় যুক্ত করা যেত না? এসব প্রশ্নের উত্তর অনেক পুরনো। এসব কথায় এখন আর কেউ টলে না। কারণ এগুলো এমন একটা পর্যায়ে পৌছে গেছে যে, পরিবর্তন করলে ভাসুর বেজার হওয়ার মত আর কি। যেখানে প্রতিনিয়ত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। যে দেশে কর্মক্ষম যোগ্য জনবল থাকা সত্বেও কাজের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়, সে দেশে আর যাইহোক কোটার মাধ্যমে বিশেষ লটারী পদ্ধতি মানায় না। ভেবে দেখুন তো, কেন মেধাবীরা হতাশ? কোটা সুবিধার ফায়দা নিয়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে তুলনামুলক কম মেধাবীরা কি জায়গা নিচ্ছে না? প্রশাসনসহ দেশের সমস্ত দপ্তরে আজ শৃংখলা নেই। কোন নিয়ম নেই। দূর্নীতি কমেনি, বরং তার ধরণ পাল্টেছে। কেন এগুলো হচ্ছে? নীতি নির্ধারকদের ভেবে দেখার সময় হয়েছে। তুলনামুলক কম মেধাবীদেরকে কোটার পালকিতে তুলে মেধাবীদের স্বপ্নকে আর অনিশ্চয়তার জালে জড়াবেন না। যার কোন কোটা নেই তার কি প্রজাতন্ত্রে পদ লাভের অধিকার নেই? সংবিধান যেখানে বলছে কোন বিশেষ গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়কে এগিয়ে নিতে রাষ্ট্র বিশেষ ভাবে তাদের কর্মে সুযোগ দিতে পারেন। তবে কেন মেধাবীরা সেই সুযোগ পাবে না? রাষ্ট্রযন্ত্রকে বলি, মনে করুন যাদের কোন কোটা নেই, তারা সবাই মিলে একটা সম্পদ্রায়। একটা অনিশ্চিত রথযাত্রার সারথী তারা। তাহলেও কি তারা একটু ভিন্নতর কোটা সুবিধা পেতে পারে না?

মোদ্দাকথা হলো, আমার জানা মতে চাকরি বাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রে নেই। আজব দেশ এই বাংলায় ডানে বামে সব জায়গায় কোটা। সরকারী বাসে মাত্র পাঁচ টাকা ভাড়া দেয়া থেকে রেহায় পাওয়ার জন্য যখন একজন বুটস্যূট পরীহিত ভদ্রলোক মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়পত্র বের করেন তখন খুব লজ্জা লাগে। সূর্য সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের কাজ কি শেষ? দেশ গঠনে কি তাদের আর কিছুই করার নেই? তারা কি এখন অবসরে! কোটা ব্যবস্থা বাতিল অথবা শতাংশটা কমিয়ে আনা কি খুব অসম্ভব? সেটা কি অসম্মানজনক মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য? আমার তো তা মনে হয় না। বরং আমরাই লজ্জিত হই।
তাই সময় হয়েছে কোটা পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাবনার। তা না হলে মেধাবীরা হতাশ হয়ে রাষ্ট্রের ঘাঁড়ে বোঝা হয়ে রবে আজীবন। আর তখন তা দূর্গন্ধ ছড়াবে। আর দূর্গন্ধ অবশ্যই কোন জাত শ্রেণী বিভেদ না করে সকলের নাসারন্ধ্রে সমান ভাবে প্রবেশ করে। আর তা কখনোই সুখকর নয়। হোক সেটা আজ অথবা কাল!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.