![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি জানি মানুষ এর কিছু থাকুক আর না থাকুক, “মান” আর “হুঁশ” থাকে। এই দুইটি জিনিস থাকার কারনেই একজন পরিণত মানুষকে প্রকৃতির অন্যান্য পশুদের থেকে আলাদা করা যায়। কিন্তু মানুষ আজকাল ক্রমাগত হুঁশ হারিয়ে চলেছে। তাহলে কি মানুষ দিন দিন জানোয়ার হয়ে যাচ্ছে। থাক, জানোয়ারের কথা বলে মানুষকে আর ছোট না-ই বা করলাম। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যখন কোনও কিছু সহজভাবে বুঝতে না পেরে, মানতে না চেয়ে শিশুদের মত অন্যায় আবদার করে বসে, পেন্সিল বক্সকে খেলনা গাড়ি বানানোর ন্যায় গোটা দেশকেই খেলনা বানিয়ে ফেলার মত স্পর্ধা যারা দেখিয়েছে, তাদেরকে বড় বাচ্চা না বলে আর উপায় কি?ছোট বাচ্চারা অনেক সময় না জেনে, না বুঝে অবুঝের মত কাজ করে ফেলে, তার মানে শিশু অবস্থায় তাদের হুঁশ ততটা Developed না, কিন্তু পূর্ণবয়স্ক মানুষরা যখন শিশুসুলভ কাজ করে থাকে, তখন তাদেরকে কি বলা যায়??? বড় বাচ্চা!!!!!
ছোটবেলায় কোনও দুষ্টামি অথবা মায়ের চোখে অপরাধ করলে মা সুন্দর ,মসৃণ আর মোলায়েম(!) বেত দিয়ে বেত্রাঘাত করতেন আর মায়ের বেত্রাঘাতের ভয়ে সেই দুষ্টামি পুনরায় আর করতাম না। ছোট বাচ্চাকে না হয় এভাবে শাসন করা যায়, কিন্তু বড় “বাচ্চারা” যখন অতি বাড় বাড়ন্ত বেড়ে গিয়ে বড় বড় “দুষ্টামি” আর “নষ্টামি” করে তখন তাদেরকে কি করা যেতে পারে? যখন তারা পরিবার আর সমাজের নাম ডুবিয়ে নিজের সত্তাকে বিসর্জন দিয়ে বড় বড় নিষিদ্ধ এবং স্ববিরোধী কাজ করতে যায় তখন কি বেত্রাঘাত করে তাদেরকে শুধরানো যাবে?
নিজেদের ছোটবেলার দিকে যদি একটু ফ্ল্যাশব্যাক করেন তাহলে দেখবেন বাবা অথবা মায়ের কাছে আমরা অন্যায় আবদার কিন্তু কম করিনি। আর সেই অন্যায় আবদারের জন্য মাঝে মাঝে বকুনি খেয়েছি, মাঝে মাঝে বাবা আদর করে বুঝিয়ে দিতেন “এটা করা ভালো না, ওটা করা ভালো না” (যদি বাবার মাথা ঠাণ্ডা থাকত!)। কিছু মানুষ আপনি সমাজে দেখতে পাবেন যারা এখনও ছোটবেলার সেই পুরনো অভ্যাসটা ছাড়েননি, তাহলে আপাতদৃষ্টিতে তাদের কি বলা যেতে পারে... বড় বাচ্চা! তাদেরকে কি বকুনি দিয়ে ঠিক করা যেতে পারে? বড়বেলার বড় বাচ্চাদের তো আর চকলেট খাইয়ে বুঝ দেয়া যাবেনা... তবে তারাও যেহেতু মানুষ...তাদের ও যেহেতু উন্নত মগজ আছে,তাহলে তাদের মাথায় অবস্থান করা অবুঝ ধারণাগুলো দূর করার একটা পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। পদক্ষেপ টা কি হবে সেটা ভাবার জন্য দেশে অনেক জ্ঞ্যানী গুনী নীতিনির্ধারক আছেন তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন,তাই সেটা আর এখানে আলোচনা করলাম না।
“I think there is a part, part for the comedians, that is still childlike”-Bob Newhart এর এই কথাটি শুনলে সেই “বড় বাচ্চা”দের কর্মকাণ্ড গুলো হাস্যকরই মনে হয়। শিশুরা না বুঝে নির্বোধ হয়, আর “বড় শিশু”রা বুঝেও নির্বোধ হয়। একটা মানুষ, যে কোনও একটা নির্দিষ্ট ব্যাপারে যদি না জেনে থাকে, তবে তাকে শুরু থেকে সুন্দর করে বুঝিয়ে শেখানো যায়, কিন্তু কেউ যদি ঐ নির্দিষ্ট ব্যাপারে ভুলটা জেনে থাকে, তাকে হাজার চেষ্টা করেও সঠিকটা বোঝাতে পারবেন না... দুঃখটা সেখানেই, আর সেই কারণেই সেই বড় বাচ্চারা অমানুষের পর্যায়েও পড়ে, কারণ তারা জানে, কিন্তু ভুল জানে, বুঝে কিন্তু ভুল বুঝে, তাদেরকে আপনি হাজার চেষ্টা করলেও তাদের মান আর হুঁশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে পারবেন না কিছুতেই।
একটু খেয়াল করলে দেখবেন শিশুরা সাধারণত যুক্তির ধার ধারতে চায় না, তাদের সব কাজ অনুভূতিপ্রবণ এবং স্পর্শকাতর আর তারা যুক্তির বোঝেই বা কি! তবে একটু আদর করে ওদের বোঝালে তারা বুঝে এবং মোটামুটি সমঝোতায় আসে। এই যে সমঝোতায় আসার যে প্রবণতা, তা বড় হতে হতে লোপ পেতে থাকে এবং লোভ লালসা, ব্যাক্তিগত স্বার্থ হয়ে ওঠে যুক্তি দেখানোর অন্যতম মাপকাঠি। যেখানে যুক্তি তুলে ধরে সত্যটাকে, সেখানে ব্যাক্তিস্বার্থ যুক্তি পরিমাপের মুখ্য মাপকাঠি হতে পারেনা। বড় বাচ্চারা শিক্ষিত হয়ে যুক্তির নামে ব্যাক্তিস্বার্থ রুপায়নের নতুন নতুন বাহানা খুঁজতে থাকে, এর ফলে শুরু হয় হানাহানি, মারামারি যেগুলো একজন পরিণত মানুষের কাছ থেকে কাম্য নয়।
ছোটবেলায় যাতে পড়তে বসতে না হয়, সেইজন্যে অনেকে নিশ্চয় নানান রকমের ভনিতা করতেন, কেউ অসুখের ভান করে শুয়ে থাকতেন, হয়ত অনেকে সকালে ঘুম থেকে উঠেও চোখ খুলতেন না পড়তে না বসার জন্যে। ওগুলো ছিল সহজ সরল ভনিতা। এরপর বড় হতে হতে মানুষ ভনিতার নতুন এবং পরিণত একটা রুপকে খুব সহজে আয়ত্ত করে, তার নাম হচ্ছে “ঢং”; ভদ্র মানুষ নামক “সঙ” সেজে “ঢং” করার কি প্রয়োজন! মুখোশের আড়ালে থাকলেই কোনও নরপশু মানুষ হয়ে যায়না। যাই হোক Upgraded শিশুরা Upgraded ভনিতা যে কতটুকু করতে পারে, তার প্রমাণ আমাদের চোখের সামনেই আছে, একটু চেষ্টা করলেই খুঁজে পাবেন।
আমরা নিজেরাও হয়ত জানিনা ছোটবেলায় আমরা কতো নিষ্পাপ এবং নিষ্কলুষ ছিলাম। কিন্তু আমরা যতোই বড় হতে থাকে, ততো কৃত্রিম হতে থাকে। যদি ভেবে দেখি, কৃত্রিমতার অন্ধকার ছায়া কেন আমাদের গ্রাস করে, তাহলে তার অন্তরালে আমাদের কুটিল মনের সরল উচ্চাভিলাসের গোপন আস্তানা খুঁজে পাই। আমি বলছি না মনের ভেতর কুটিলতা জিনিসটা রাখা খারাপ, কারণ বর্তমানে যে যুগ এসেছে, মনকে কুটিল আর সন্দেহপ্রবণ বানিয়ে রাখতে আমরা বাধ্য। কিন্তু একটু সহজভাবে চিন্তা করুন, শিশুদের মত সহজ সরল মন মানসিকতার অধিকারী যদি হতে পারত সমাজের তাবৎ মানুষ, সমাজে রাজনীতির নামে নোংরা খেলা থাকত না। মানুষ বয়সে যত পূর্ণ হয়, ততো তার মন মানসিকতা আরও গোছালো এবং আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাও তার বেশি হওয়ার কথা! কিন্তু বাস্তব চিত্র তার সম্পূর্ণ উলটো কথা বলছে, একটি শিশুকে যদি বাড়ির একটা ঘরকে দেশ বানিয়ে “দেশ দেশ” খেলা খেলতে দেয়া হয়, আর সেই দেশে যদি সাধারণ নাগরিক হিসেবে কয়েকটি শিশুকে খেলতে দেয়া হত, তাহলে কি হতো? একটিবার কল্পনা করুন... নিশ্চয় তুলনামূলক ভাবে অনেক ভালো মনে হবে তাদের ঘর নামক দেশ পরিচালনার কাজ আর নাগরিক হিসেবে ঐ শিশুদের কাজকর্ম দেখে। কারণ শিশুদের মাঝে এমন কিছু আছে যা বড়দের মাঝেও নেই এবং তার ফলে শিশুদের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে ঐ বড়দের আরও অপরিণত মনে হয়। তার মানে বড় বাচ্চারাও ছোটদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে। চলুন জানা যাক, সেই গুণাবলী কি কি!
প্রথমত, যে গুণটি আমরা ছোটদের কাছ থেকে শিখতে পারি, তা হচ্ছে “সমঝোতায় আসার মানসিকতা", এই গুণটি বড় বাচ্চাদের অত্যন্ত দরকার। একটা সমীকরণ সমাধান করতে গেলেও আপনাকে এই সমঝোতায় আসতে হবে যে “ax+by+c is equal to 0”, এই ন্যূনতম সাধারণ বোধ যাদের কাজ করেনা তাদের বড় বাচ্চা বলব না তো কি বলব? (ছাগু বলার ইচ্ছা নাই)
দ্বিতীয়ত, একাগ্রতা জিনিসটা যার মধ্যে নেই, সে কোনও সংশ্লিষ্ট কাজে কতটুকু নিষ্ঠাবান তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। কোনও শিশুকে দেখবেন, যে কাজটি করতে সে পছন্দ করে সে ঐ কাজ নিয়েই লেগে থাকে, যে খেলা সে খেলতে পছন্দ করে, ঐ খেলায় প্রতিপক্ষের কোনও ক্ষতি করার মানসিকতা তার তো থাকেই না, বরং নিজের ভালো খেলার উপর তার খেয়াল থাকে বেশি। কিন্তু বড় বাচ্চাদের দেখুন, কি যে “দুষ্টু” তারা! নিজের কাজকর্ম, নৈতিকতা উন্নত করার চাইতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে উপরে উঠতে ব্যস্ত তারা। এভাবে কোনও দেশ উন্নতি করতে পারেনি কোনদিন, পারবেও না।
তৃতীয়ত, ‘সবসময় ভালো কিছু আশা করা’ আর ‘হতাশ না হয়ে নিজের ওপর আস্থা রাখা’, আজকালকার তরুণ বড় বাচ্চাদের মন খারাপের প্রবণতা বেশি। সেসব বড় বাচ্চাদের জন্য প্রেসক্রিপশন হচ্ছে ছোটদের কাছ থেকে এই দুইটি ওষুধ নেয়া।
চতুর্থত, আমি একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম, মানুষ যত ছোট থাকে, ততো মুক্তমনা থাকে, যত বড় হতে থাকে ততো নিকৃষ্ট আর ছোট মন মানসিকতার হতে থাকে। আমার সমস্যা হচ্ছে, মুক্তমনা মন মানসিকতা বড় হতে হতে উধাও হতে হবে কেন? কোনও কিছুকে বিচার করতে গেলে আগে সে অবস্থানে যেতে হবে, তারপরই সবকিছুর উর্ধে থেকে নিরপেক্ষ বিচার করা সম্ভব, অন্যথায় নিজ অবস্থানে দাঁড়িয়ে অন্য কোনও কিছুকে বিচার করা শুধু ভুলই হবেনা, অনুচিত হবে।
যাইহোক, বেশি কথা আর না বলি, নয়তো বড় বাচ্চারা আবার ক্ষেপে যেতে পারে। আমি এতক্ষণ পর্যন্ত যা বললাম, তার একটাই সারমর্ম হচ্ছে আমাদের চালচলন, চিন্তা চেতনায় যে ভুলত্রুটি আছে তা কিঞ্চিৎ তুলে ধরা আর সমাজে শান্তি স্থাপন করার লক্ষ্যে মানুষকে তৃণমূল পর্যায় থেকে পরিবর্তনের জন্যে চালচলনে যেসব পরিবর্তন দরকার তার একটু আভাস দেয়া মাত্র।
©somewhere in net ltd.