নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাগজের তৈরি কাক

নকল কাক

নকল কাক

নকল কাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এ্যমবুশ-০

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:৫০

(প্রথম পর্বের আগের কাহিনী)

ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই জামশেদ তার পুরানো কম্পাসটা ঘুরিয়ে দেখছে। প্লাস্টিকের কেসের ভেতর সূঁচটা একটু কাঁপছে, তবুও দিক ঠিকই দেখাচ্ছে। "আজ আমাদের আরও পূর্বে যেতে হবে," সে মুসাকে বলে, গায়ে লাগানো সস্তা জিপিএস ট্র্যাকারের দিকে তাকিয়ে। ডিভাইসটা মাঝে মাঝে কাজ করে, মাঝে মাঝে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় - আজ সকালে অন্তত পাঁচটা উপগ্রহের সংযোগ পেয়েছে।

সামানি ডেকের এক কোণে বসে জাল সেলাই করছে। "কাল রাতে যে মাছগুলো ধরলাম, দেখেন তো কেমন?" সে জিজ্ঞেস করল। জামশেদ ঝুড়ির দিকে তাকাল—অনেকগুলি রূপালি টুনা মাছ, কয়েকটা এখনও একটু নড়ছে। "ভালো," সে মাথা নাড়ল, "ডলফিনগুলোকে খাইয়ে দে।"

ট্রলারের পিছনে, পাঁচটা ডলফিন পানিতে লাফাচ্ছে। মুসা ঝুড়ি ভর্তি মাছ তাদের দিকে ফেলল। ডলফিনগুলো কাড়াকাড়ি করে সেগুলো মুখে নিয়ে নিল।

বিসমিল্লাহ-২ এর গায়ে লাগানো বিশেষ প্রলেপ আজকের সূর্যের আলোয় একটু অন্যরকম দেখাচ্ছে। জামশেদ গর্বিতভাবে ডেকের প্রলেপের গায়ে হাত বুলাল, "ইনশাআল্লাহ এই চারকোল আর রাবারের প্রলেপই আমাদের স্যাটেলাইট রাডারের চোখে অদৃশ্য করে রাখবে।" ট্রলারটির পুরো শরীরে চার স্তরের প্রলেপ - প্রথমে চারকোল-রাবারের মিশ্রণ, তারপর নারকেল তন্তু আর এপোক্সির শক্ত স্তর, তারপর মুলতানি মাটি আর কার্বন ব্ল্যাকের প্রলেপ। সবশেষে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের স্তর।

"একেবারে হাতের কাছের জিনিস দিয়ে বানানো," সামানি মনে মনে ভাবল, ইন্জিনের তেলের পাইপ ঠিক করতে করতে, "কিন্তু কাজ করে সিনথেটিক এ্যপারচার রাডারের চোখ এড়াতে।"

দুপুরের রোদ যখন জলের উপর পড়ে, তখন সমুদ্র যেন এক টুকরো কাঁচের মতো চকচক করছে। জামশেদ নোটবইটা খুলে বসেছে, কিছু হিসাব করছে। "আজ রাতেই আমাদের দিক বদলাতে হবে," সে বলল, "TerraSAR-X স্যাটেলাইটের চোখ এড়াতে। যদিও কোন রাডার সিগনালই, এল-ব্যান্ড হোক বা কেইউ-ব্যান্ড, আমাদের ট্রলারকে ধরতে পারার কথা না, তার পরও সাবধানের মার নেই"

সন্ধ্যা নামলে তারা ইন্জিনের গতি একটু বাড়িয়ে দিল। সমুদ্র এখন কালো, শুধু ঢেউয়ের শব্দ। ডলফিনগুলো ট্রলারের পাশে সাঁতার কাটছে, মাঝে মাঝে লাফ দিয়ে পানি ছিটাচ্ছে।

"আজ রাত কিছুটা নিরাপদ," মুসা ফিসফিস করে বলল, "আকাশে মেঘ জমেছে।"

জামশেদ নোটবইটা বন্ধ করে ডেকের রেলিংয়ে হেলান দিল। "আমাদের কোনো ট্রেস রাখা যাবেনা," সে বলল, "এমনভাবে যেতে হবে, যেন আমরা কখনোই এখানে ছিলাম না।"

দিনের পর দিন অত্যন্ত ধীর গতিতে তারা এগোচ্ছে। কখনো মাছ ধরে, কখনো শুধু জলের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাতের বেলায় তারা খানিকটা দ্রুত এগোয়, ডলফিনগুলো আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়।

যখন তারা হর্ণ অফ আফ্রিকার কাছাকাছি, একটা বড় জাহাজের আলো দূর থেকে দেখা গেল। সবাই নিঃশব্দ হয়ে গেল। জামশেদ ইঞ্জিন বন্ধ করে দিল। তারা শুধু দাঁড়িয়ে দেখল, কিভাবে সেই জাহাজ তাদের পাশ কাটিয়ে চলে যায়।

"ধরা পড়িনি," মুসা অনেকক্ষণ পর বলে উঠল।

"কেউ আমাদের খুঁজে পাবেনা," জামশেদ বলল, "এমনকি এক বছর পরেও, যদি কেউ সব স্যাটেলাইটের আর্কাইভ থেকে ছবি বের করে একসাথে বিশ্লেষন করে, সে শুধু সমুদ্রের ঢেউই দেখবে। আমাদের দেখবেনা। আমরা কোথা থেকে এসেছিলাম, কেউ বের করতে পারবে না"

সকাল হলে দেখা গেল, বিসমিল্লাহ-২ এর চারপাশে শুধু নীল জল। কোনো চিহ্ন নেই, কোনো রেখা নেই। সমুদ্র সব গল্প গিলে নিয়েছে, যেন কিছুই ঘটেনি।

"আমরা এখন কোথায়?" সামানি জিজ্ঞেস করল।

জামশেদ হাসল, "এডেন উপসাগরের কাছাকাছি।"

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:২২

সোনালি কাবিন বলেছেন: সূচনাপর্ব ভাল্লাগ্লো।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:১৩

নকল কাক বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.