নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাগজের তৈরি কাক

নকল কাক

নকল কাক

নকল কাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এ্যমবুশ ৫

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০১

ইয়োয়াভ গটম্যান, মোসাদের স্ট্র্যাটেজিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান, ধীর পায়ে হাঁটছিলেন সাইলেন্স রুমের ধূসর মার্বেলের মেঝেতে। তার কপালে ভাঁজ, মুখে অন্যমনস্ক চিন্তার ছাপ। রুমটা ঠান্ডা, বাইরে রাত, কিন্তু ভিতরে যেন আরও গা ছমছমে কিছু জমে আছে—ধোঁয়াশা, সংশয়, আর হারানো নিয়ন্ত্রণের গন্ধ।

কেন্দ্রে রাখা অর্ধচক্রাকার টেবিল ঘিরে বসেছিলেন চারজন। রিমা ব্লাউস্টাইন, সিনিয়র স্যাটেলাইট বিশ্লেষক, এক হাতে কফির কাপ, অন্য হাতে ল্যাপটপের কীবোর্ডে দ্রুত টাইপ করছিলেন। চোখে ক্লান্তি, কিন্তু মুখে অদ্ভুত এক দৃঢ়তা। তার পাশে ইলা খাজুর, সাইবার ও সিগন্যাল গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান, সামনে খোলা ছিল একাধিক ন্যারোব্যান্ড সিগন্যালের এনক্রিপশন রেকর্ড। ড. গেদালিয়া মোর, সেন্সর এবং স্টিলথ প্রযুক্তির শীর্ষ গবেষক, তার সামনে নকশা এবং রসায়ন বিশ্লেষণের কাগজ বিছিয়ে রেখেছেন। এবং শেষ মানুষটি—ক্যাপ্টেন রন স্যামুয়েল, সাবেক নৌ-অধিনায়ক, এখন উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ সামুদ্রিক হুমকি বিশ্লেষক।

"ঘটনার তিন ঘণ্টা আগে," রিমা বললেন, স্ক্রিনে একটি ফ্রেম জুম করে দেখিয়ে, "TerraSAR-X পাসের সময় ১৮ সেকেন্ডের জন্য একটা অস্বাভাবিক ঢেউ দেখা যায়। জাহাজ নয়, ছায়াও নয়। শুধু সামান্য জলীয় অস্থিরতা। যে রকম সাধারণত পাওয়া যায় না, যদি না কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে রাডার প্রতিফলন ছড়িয়ে দেয়।"

"বিসমিল্লাহ-২," ক্যাপ্টেন রন কাঁধ সোজা করে বললেন, “পুরনো মাছ ধরার ট্রলার। কোনো লাইসেন্স নেই, ট্রান্সপন্ডার বন্ধ, কোনো আইডেন্টিফায়ার নেই। কিন্তু ঠিক হামলার আগমুহূর্তে একবার রেডিওতে আসে—মাত্র ১২ সেকেন্ড, 'ইঞ্জিন নষ্ট, ড্রিফট করছি'—তারপর পুরোপুরি নিঃশব্দ।”

“হেলিকপ্টার পাঠানো হয়,” ইলা ঠাণ্ডা গলায় বললেন, “দুইটা সি-হক, সঙ্গে ছিল FLIR সেন্সর আর থার্মাল ক্যামেরা। ধ্বংসস্তূপের আশেপাশে সার্চ করা হয়েছিল। কোনো তাপমাত্রার সিগন্যাল পাওয়া যায়নি। শুধু কিছু ভাসমান কাঠ, ট্রলারের ধ্বংসাবশেষ।”

ড. গেদালিয়া কাঁপা গলায় বললেন, “আমি ধ্বংসাবশেষের প্রতিটা ছবি বিশ্লেষণ করেছি। এটা কোনো সাধারণ কাঠের ট্রলার না। গলে যাওয়া রাবার, আর ছিঁড়ে যাওয়া এপোক্সি লেয়ারও পাওয়া গেছে। সম্ভবত ট্রলারটির বাইরের সারফেস ডিজাইন করা হয়েছে রাডার, থার্মাল এবং ইলেকট্রোম্যাগনেটিক সিগন্যাল শোষণ করার জন্য।”

“অস্ত্র?” গটম্যান মুখ তুলে তাকালেন।

“অপটিক্যাল তারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত টর্পেডো,” ধীর কণ্ঠে বললেন ড. গেদালিয়া। “ধাতুশূন্য, কার্বন-পলিমার দিয়ে তৈরি শরীর। এর প্রোপালসন ছিল তরলচাপ-নিয়ন্ত্রিত অথবা অতিশীতল ব্যাটারি সেলচালিত। সম্পূর্ণ নিঃশব্দ, তাপমুক্ত। সোনার, ইনফ্রারেড, বা ফ্লেয়ার—কোনো সেন্সরেই ধরা পড়ে না। ট্রলার থেকেই অপটিক্যাল তারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সরাসরি চোখে লক্ষ্যবস্তু দেখে ছোঁড়া হয়েছে—পাঁচটি টর্পেডো, একসাথে তিনটি ভিন্ন জাহাজে।”

“তাহলে সাবমেরিনের কোনো ভূমিকা নেই,” রন বললেন, “এটা আসলে একটা মোবাইল লঞ্চ প্ল্যাটফর্ম ছিল।”

“ঠিক তাই,” ইলা মাথা নাড়লেন, “কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ—ওরা কখন কথা বলবে, কখন চুপ থাকবে, কখন স্যাটেলাইট আসবে—সব জানত। যেন আমাদের প্রতিটি নজরদারি প্যাটার্ন ওরা আগে থেকেই জানত। এমনকি সেই ১২ সেকেন্ডের বার্তাও সম্ভবত পরিকল্পিত।”

রিমা নিচু গলায় বললেন, “হয়তো ট্রলারটাকে নিজেরাই ধ্বংস করেছে। যেন কোনো ট্রেস না থাকে। যেন ধ্বংসস্তূপই একমাত্র প্রমাণ।”

ইয়োয়াভ গটম্যান একেবারে সামনে এসে দাঁড়ালেন স্ক্রিনের পাশে। রিমোট টিপে ধ্বংসাবশেষের ছবিগুলো একে একে দেখালেন—পোড়া কাঠের মধ্যে গলে যাওয়া ফাইবার শীট, কিছু অ্যালুমিনিয়াম পাত, আর ধোঁয়া ওঠা ছিন্ন রাবার। সবাই নীরব। বাইরে রাত আরও ঘন হয়ে এসেছে।

“ইয়েমেন এবং সোমালিয়ার উপকূলের প্রতিটি গ্রুপের উপর নজরদারি বাড়াতে হবে,” গটম্যান কণ্ঠ শক্ত করে বললেন। “এই ট্রলারের ডিজাইন কে তৈরি করেছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। কারণ এটা কোনো সাধারণ জিনিস না। এটা একটা মেসেজ।”

রিমা ধীরে জিজ্ঞেস করলেন, “কি মেসেজ?”

গটম্যান কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। স্ক্রিনে আগুন আর ধোঁয়ার মাঝে দুলতে থাকা ট্রলারের ছিন্ন কাঠের অংশটা যেন তাকিয়ে ছিল তাদের দিকে। তিনি ধীরে বললেন, “যে আমরা নিরাপদ নই। কেউ আমাদের দুর্বল জায়গা জানে। এবং তারা শুধু শুরু করছে।”

কেউ কিছু বলল না, কেবল স্ক্রিনে জ্বলন্ত ধ্বংসাবশেষের পাশে ভেসে থাকা লালচে ঢেউগুলো যেন চুপচাপ বলে যাচ্ছিল—এই সমুদ্র এখন আর আগের মতো নেই।

আগের পর্বগুলি:
এ্যমবুশ ১
এ্যমবুশ ২
এ্যমবুশ ৩
এ্যমবুশ ৪
এ্যমবুশ-০




মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩১

প্রত্যাবর্তন@ বলেছেন: +

১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:১২

নকল কাক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

২| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:২৩

Sulaiman hossain বলেছেন: ভালো লাগল। লিখতে থাকুন

১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:১২

নকল কাক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

৩| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৩৪

অপলক বলেছেন: অনেক ধৈর্য্য আপনার...

১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:১৩

নকল কাক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, আপনার প্রশংসার চেয়ে সমালোচনা আমার বেশি কাজে লাগবে।

৪| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৫৬

শায়মা বলেছেন: খুব সুন্দর লেখা তোমার ভাইয়া.....

২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৭

নকল কাক বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৩

সামিয়া বলেছেন: ভালো হয়েছে, তবে চ্যাট জিপিটি দিয়ে লেখা বোঝা যায়।

২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৮

নকল কাক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.