নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাগজের তৈরি কাক

নকল কাক

নকল কাক

নকল কাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এ্যমবুশ (-১)

২৭ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৩৫

(প্রথম পর্বের আগের কাহিনী)

ভূমধ্যসাগরের শান্ত জলরাশি চিরে এগিয়ে চলেছে বিশালাকৃতির যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী লেভিয়াথান। সূর্যের নরম আলো ঝিকমিক করছে বিশাল ধাতব শরীরে, বাতাসে ভেসে আসছে লবণাক্ত সমুদ্রের গন্ধ। নাকের ভেতর সমুদ্রের একটা টাটকা স্বাদ। হালকা ঠাণ্ডা হাওয়ায় উড়ছে সাদা পালকের বিশাল আলবাট্রস, ঢেউয়ের ফাঁকে ফাঁকে লাফিয়ে উঠছে উচ্ছ্বল ডলফিনের ঝাক, যেন লেভিয়াথান আর তার বিশাল বহরের সঙ্গে খেলে বেড়াচ্ছে।

চারপাশে ছড়িয়ে আছে ইসরায়েলের সম্পূর্ণ ক্যারিয়ার ব্যাটল গ্রুপ। চারটি ধারালো নাকওয়ালা যুদ্ধজাহাজ, যেগুলো দেখলেই বোঝা যায়, এগুলো মিসাইল থামাতে আর শত্রুকে ধরাশায়ী করতে তৈরি। এর সাথে আছে আরও একটা বড় জাহাজ, সাদা-ধূসর রঙের শক্তিশালী এইজিস ক্রুজার, যার মাথার ওপর থেকে যেন নজরদারি করছে এক অদৃশ্য চোখ। সমুদ্রের নিচে কোথাও, কোনো শব্দ না করেই, নিজেদের গা ঢাকা দিয়ে অপেক্ষা করছে দুটি সাবমেরিন, যেন অদৃশ্য হিংস্র শিকারি।

আজকের দিনটা বিশেষ। হেলিকপ্টারের ব্লেডের আওয়াজ মৃদু হয়ে আসতেই, হালকা রোদের তাপে উষ্ণ হয়ে ওঠা ডেকে পা রাখলেন আইতান বারাক। পরনে নেভি-ব্লু ব্লেজার, খাকি প্যান্ট, আর চোখে সূক্ষ্ম ফ্রেমের চশমা। সাধারণ, কিন্তু গাম্ভীর্যপূর্ণ। চারপাশে কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা। মাথার ওপর উড়ছে সামরিক পতাকা, আর ডেকের ওপরে চকচক করছে যুদ্ধবিমানের সারি। বাতাসে এক ধরনের নির্ভীকতার গন্ধ।

রিয়ার অ্যাডমিরাল ডেভিড লেভি এগিয়ে এসে স্যালুট করলেন, কণ্ঠে গর্বের হালকা কম্পন।
"স্যার, লেভিয়াথানে আপনাকে স্বাগতম। ইসরায়েলের গর্ব।"

আইতান হেসে বললেন, "শুনেছি, এটা নাকি আমেরিকার সবচেয়ে বড় ক্যারিয়ারের চেয়েও এগিয়ে গেছে?"

ডেভিড গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, "স্যার, শুধু এগিয়ে নয়, কিছু জায়গায় আমরা ইতিহাস তৈরি করেছি। আমাদের প্রতিরক্ষা এখন আকাশ থেকে সমুদ্র, সব দিক থেকে রক্ষা করার মতো শক্তিশালী। বিশেষ করে আমাদের ডিরেক্টেড এনার্জি ওয়েপন - ক্ষুদ্র নক্ষত্রের শক্তি ধারণ করে প্রতিটি লেজার সিস্টেম।"

আইতান সামান্য ভ্রু কুঁচকালেন।
"লেজার কামান, বললেন? ব্যয় কত ছিল?"

ডেভিড সাথে সাথে তেলতেলে ভঙ্গিতে মসৃণ কণ্ঠে জবাব দিলেন, "স্যার, জাতীয় নিরাপত্তার দামের হিসাব কখনোই টাকা-পয়সায় মাপা যায় না। তবুও বলব, প্রতিটি ইউনিট আমাদের বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেটের মাত্র ৫%। বিনিময়ে, কার্যকারিতায় ৫০০% লাভ।"

আইতান ধীরে ধীরে ডেকের ওপর দিয়ে হাঁটলেন। রোদের আলোয় চকচক করছে বিশাল ধাতব কাঠামো। সারি সারি যুদ্ধবিমান সাজানো, যেগুলো দেখতে একেকটা যেন উড়ন্ত ব্লেড। ছোট ছোট ড্রোনও দেখা যাচ্ছে, কিছু উড়ছে, কিছু দাঁড়িয়ে আছে যেন যাত্রার অপেক্ষায়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, "এই প্রযুক্তিগুলো বাস্তবে কতটা কাজে আসবে?"

ডেভিড একটু মুচকি হেসে বললেন, "স্যার, পরীক্ষায় আমরা এমনকি অতিদ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্রকেও কয়েক সেকেন্ডে ধ্বংস করেছি। আর বাস্তব যুদ্ধ হলে... শত্রুরা আমাদের অস্তিত্বের খবর পাবে, হামলার অনেক পরে।"

আইতান কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তার ভ্রু সামান্য কুঁচকে গেলো। রাজনীতিকের চোখে তিনি ভাবলেন, "প্রযুক্তি তো ঠিক আছে, কিন্তু যুদ্ধের আসল চিত্র সবসময় ভিন্ন।" একটানা এগিয়ে যেতে যেতে তিনি আবার প্রশ্ন করলেন,
"আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু যদি আজকেই হামলা করে? ইরান? হিজবুল্লাহ? এই একটা জাহাজ কি যথেষ্ট?"

ডেভিড গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, "স্যার, এই একটা জাহাজ নয়। এর সঙ্গে পুরো ব্যাটল গ্রুপ আছে। প্রতিটি ডেস্ট্রয়ার, প্রতিটি সাবমেরিন, প্রতিটি বিমান, সব একেকটা ভ্রাম্যমাণ দুর্গ। আমরা আকাশ, পানি, পানির নিচ - তিনটা দিক থেকেই প্রতিপক্ষের জবাব দিতে পারি।"

আইতান একটু হাঁটলেন, মাথা নিচু করে যেন চিন্তা করছেন। চারপাশের সমুদ্রের নীল আকাশ, হালকা বাতাসের ছোঁয়া, আর ডলফিনের লাফ তার মনটা কিছুটা হালকা করে দিলো।

এরপর ডেভিড তাকে কন্ট্রোল টাওয়ারে নিয়ে গেলেন। ভিতরে ঢুকতেই এক ঘোর লাগা পরিবেশ। বড় বড় স্ক্রিনে ঝিলমিল করছে নানা ধরনের তথ্য। কোথাও রাডারের সবুজ রেখা, কোথাও ছোট ছোট লাল বিন্দু, কোথাও আবার চক্রাকারে ঘুরছে টার্গেট মার্ক। এক তরুন অফিসার হাসিমুখে ব্যাখ্যা করলেন কিভাবে এখানে বসেই পুরো আকাশ, সমুদ্র, এমনকি পানির নিচ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

আইতান চারপাশে তাকিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলেন,
"এই তরুণ ছেলেমেয়েরা, যারা এগুলো চালাচ্ছে, তারা কি সত্যিকারের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত?"

ডেভিড এবার একটু নরম স্বরে বললেন,
"স্যার, এখানে যারা আছে, তাদের প্রত্যেকের ৪০০ ঘণ্টারও বেশি বাস্তব যুদ্ধ অনুশীলনের অভিজ্ঞতা আছে। প্রযুক্তি ছাড়া মনোবলও আমাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র।"

আইতান মাথা নাড়লেন। এই কথায় যেন একটু বেশি সন্তুষ্ট হলেন।

তারপর সবাই নেমে গেলেন নিচের ডাইনিং এরিয়ায়। সেখানে একদম নিরিবিলি পরিবেশ, মৃদু আলো, সামান্য ঢেউয়ের আওয়াজ, আর জানালার বাইরে অসীম জলরাশি। মেনুতে আজ ছিল ইসরায়েলি স্টাইলের গ্রিলড সামুদ্রিক মাছ, অলিভ অয়েলে হালকা ভাজা সবজি, আর টাটকা ফলের সালাদ।

আইতান একটু হেসে বললেন, "নৌবাহিনী এত সু্স্বাদু লাঞ্চ পায়, এটা আমি আগে জানতাম না।"

ডেভিড মৃদু হেসে জবাব দিলেন, "স্যার, শক্তি এবং সম্মান একসঙ্গে তৈরি হয়। মানুষ যতই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকুক, তারা মানুষই তো।"

খাওয়া শেষে, সবাই যখন কফির কাপ হাতে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে, আইতান আবার এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন, যেন হালকা কথোপকথনের মাঝে গা ডুবিয়ে দিতে চান, "সব মিলিয়ে, আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী জানেন, অ্যাডমিরাল?"

ডেভিড সোজা তাকিয়ে বললেন, "বিশ্বাস, স্যার। প্রযুক্তির ওপর, সৈনিকের সাহসের ওপর, আর নেতৃত্বের দূরদৃষ্টির ওপর। যুদ্ধের আগে সবকিছু কাগজে ঠিকঠাক থাকে, কিন্তু আসল যুদ্ধ হয় মন আর মাটির ওপর।"

আগের পর্বগুলি:
এ্যমবুশ ১
এ্যমবুশ ২
এ্যমবুশ ৩
এ্যমবুশ ৪
এ্যমবুশ-০
এ্যমবুশ (-১)
এ্যমবুশ ৫
এ্যমবুশ ৬
এ্যমবুশ ৭

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:১৩

সামরিন হক বলেছেন: শেষে এই ইসরাইল নিয়ে লিখলেন !!!
তবে লেখা ভালোই
শুভেচ্ছা রইল

২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩৭

নকল কাক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। সবগুলো না পড়তে চাইলে, পর্ব ১ এবং পর্ব ৭ পড়ে দেখতে পারেন। লেখা শুধু ইসরাইল নিয়ে না।

২| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৩

Sulaiman hossain বলেছেন: ভালো

২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০০

নকল কাক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.