![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তেলআভিভের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নিচে ‘অপারেশন কক্ষ’। সময় রাত তিনটা ছুঁইছুঁই। ঘরের ভেতর আলো কম, শুধু স্ক্রিনের আলোতে চারজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বসে আছেন—টেবিলের ওপারে এনক্রিপ্টেড ভিডিও কলে কায়রোর গোয়েন্দা সদরদপ্তর।
কায়রো প্রান্তে পরনে ধূসর স্যুট, চোখে রিমলেস চশমা, মিশরের গোয়েন্দা সংস্থার ডেপুটি ডিরেক্টর হামদি আল-নাসের। পাশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা।
হামদি শুরুতেই বিনয়ের সুরে বলেন,
“আমরা পরিস্থিতির গভীরতা বুঝি, মি. আভিন। কিন্তু সহযোগিতার জন্য কিছু মৌলিক শর্ত আছে, আপনাদের জন্য হয়তো অস্বস্তিকর, কিন্তু বাস্তব।”
ইসরায়েলি উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা লিওর আভিন মুখ নিচু করে নোট নেন। পাশে বসে থাকা মোসাদের মিডল ইস্ট শাখার প্রধান চোখ সরু করে তাকিয়ে আছেন স্ক্রিনে।
“আপনি সরাসরি বলুন, হামদি। সময় আমাদের হাতে বেশি নেই,” আভিন কণ্ঠে ক্লান্তি ঢেকে রাখার চেষ্টা করেন।
“তিনটি বিষয়,” হামদি স্পষ্ট গলায় বলেন।
“প্রথমত, গাজার ওপর সব সামরিক হামলা তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, রাফাহ সীমান্ত দিয়ে একটি পূর্ণমাত্রার মানবিক করিডর খুলে দিতে হবে, সেখানে আমরা আমাদের রেড ক্রিসেন্ট, খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠাব। এবং তৃতীয়ত, আপনারা গাজা আক্রমনের এর আগের অবস্থা পুনঃস্থাপন করবেন। অর্থাৎ যুদ্ধ শেষ, অবরোধ সীমিত, বেসামরিক নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দিতে হবে।”
কথার শেষে কক্ষটা যেন হঠাৎ ভারী হয়ে উঠল। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকেন।
আভিন ঠাণ্ডা কণ্ঠে বলেন,
“আপনারা চাইছেন, যারা আমাদের সৈন্যদের কেটে ফেলেছে, যারা রকেট ছুঁড়েছে আমাদের শহরে, তাদের সঙ্গে যেন আমরা আবার সহাবস্থান করি, যেন কিছুই হয়নি?”
হামদি শান্ত গলায় জবাব দেন,
“আমরা চাই সংঘাত বন্ধ হোক। এবং সেটা তখনই সম্ভব, যখন উভয় পক্ষ ছাড় দেয়।”
মোসাদ কর্মকর্তা এবার হালকা গর্জে ওঠেন,
“আমরা ‘ছাড়’ দিয়েছি, তিন হাজার মৃত ইসরায়েলি, পাঁচটা ধ্বংস হওয়া যুদ্ধজাহাজ, একটা ক্যারিয়ার হারানো, হাইফা ছিন্নভিন্ন। এখন আপনি বলছেন, আমরা যেন ঘাড় নুইয়ে নিই?”
“আপনারা চাইলে সাগরের শত্রু খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারি,” হামদি নিরুত্তাপভাবে বলেন।
“কিন্তু তার বিনিময়ে আপনাদের মানবিক মূল্য দিতে হবে। বিশ্ব আপনাদের দিকে চোখ রেখেছে।”
আভিন তাকিয়ে থাকেন কয়েক মুহূর্ত। তারপর ঠাণ্ডা স্বরে বলেন,
“প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরব।”
হামদি মাথা নেড়ে বলেন, “তাড়াতাড়ি করুন। সময় আপনার পক্ষে নেই।”
ভিডিও কল বন্ধ হয়। কক্ষ নিস্তব্ধ।
কয়েক সেকেন্ড কেউ কিছু বলে না। তারপর হঠাৎ মোসাদের কর্মকর্তা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন,
“এই শুয়োরগুলো ভাবছে, আমাদের মাটি গিলে খাবে? গাজা যেন কোনো ধর্মশালা হয়ে গেছে ওদের কাছে!”
আভিন দাঁড়িয়ে জানালার দিকে তাকান। তার মুখে তিক্ততা।
“‘গাজা আক্রমনের আগের অবস্থান! সে তো যেন বলছে আমাদের সেনাদের কাটা হাত ভুলে যাও।”
আরেকজন কর্মকর্তা থেমে গিয়ে গলা নিচু করে বলে ওঠে,
“ওদের কেউ একটা খেলা খেলছে। ওদেরও সাগরের নৌকা ঘাটে ভিড়েছে। আমরা যদি এখনই মাথা না ঠাণ্ডা করি, ওরাই আমাদের শেষ ফাঁসিটা টেনে ধরবে।”
আভিন দাঁড়িয়ে থাকেন, চোখে ঘুমহীন ক্লান্তি। তারপর ঠোঁট চেপে বলেন,
“সবকিছু ভুলে গিয়ে ওদের সঙ্গে হাত মিলানো মানে নিজের ছেলেদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ওদের জন্য প্রার্থনা করা।”
আরেকজন বলে ওঠে,
“এইরকম ভদ্র মুখে বিষ ঢালা কথাবার্তা খুব ভালো পারে মিশরীয়রা। আমরা যদি আজ থেমে যাই, আগামীকাল মিসর-তুরস্ক একসঙ্গে জাতিসংঘে আমাদের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনবে।”
©somewhere in net ltd.