নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাগজের তৈরি কাক

নকল কাক

নকল কাক

নকল কাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এ্যমবুশ ১১

০৬ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:০৪

হাইফা আক্রমণের নবম সপ্তাহ। জেরুজালেমের জাতীয় নিরাপত্তা সম্মেলনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী আইতান বারাকের কণ্ঠে এবার সেই আগের দৃঢ়তা নেই। গত দুই মাস ধরে একটানা কাজ - লেভিয়াথান এবং হাইফা বন্দর বিস্ফোরণের তদন্ত, বৈঠকে বৈঠকে নিরাপত্তা পর্যালোচনা, অর্থনৈতিক প্যাকেজ প্রণয়ন, আন্তর্জাতিক চাপ সামাল দেয়া - সবকিছুই যেন তার কণ্ঠে ভাঁজ ফেলেছে। তবু তিনি দাঁড়িয়ে আছেন, যেমন দাঁড়িয়ে ছিলেন গত নয় সপ্তাহ ধরে।

কিন্তু আজ কিছু যেন আলাদা।

বক্তৃতার মাঝপথে হঠাৎ তার কণ্ঠ আটকে যায়। হেঁচকি তুলে তিনি থেমে যান। কিছু বলতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বাম হাতটা ধীরে ধীরে উঠিয়ে বুকের বাম পাশে রাখেন - আঙুলগুলো অবশ হয়ে আসছে। চোখ কুঁচকে যায়, কপালে ফুটে ওঠে ঘামের বিন্দু।

"স্যার?" মঞ্চের পাশ থেকে একজন সিকিউরিটি অফিসার দ্রুত এগিয়ে আসে।

ঠিক তখনই বারাক ধপ করে মঞ্চের পাশে পড়ে যান।

হাইফা বিস্ফোরণের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহে বারাককে ঘিরে গড়ে উঠেছিল জাতীয় ঐক্য। কিন্তু ধীরে ধীরে বদলে যায় পরিস্থিতি। তদন্তে দেরি, শত্রু শনাক্ত করতে ব্যর্থতা, পাল্টা আঘাত হানতে অপারগতা - সব মিলিয়ে জনমনে জমা হতে থাকে হতাশা। ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভ, বন্দরশ্রমিকদের ধর্মঘট, সংবাদমাধ্যমের কঠোর প্রশ্ন - প্রতিদিনের চাপ তিনি গিলে নিয়েছেন, কিন্তু আজ শরীরই তাকে ছেড়ে দিল।

চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দেশের সেরা চার কার্ডিওলজিস্ট হাজির। আইসিইউতে অক্সিজেন মাস্ক, শরীরে দশটি তার, মনিটরে উঠানামা করা লাইন। রুমের বাইরে প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত সচিব, ভেতরে শুধু একজন - তালিয়া রেগেভ, তার পুরনো বন্ধু ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।

তারপর সাতদিন, প্রথম তিনদিন সংকটজনক। চতুর্থ দিনে সঙ্কট কেটে যায়, কিন্তু স্থায়ী ক্ষতি হয়েছে হৃদপিণ্ডের একাংশে। ষষ্ঠ দিনে চিকিৎসকরা তাকে জানিয়ে দেন “মি. প্রাইম মিনিস্টার, আপনি যদি এখনই দায়িত্ব থেকে না সরে দাঁড়ান, দ্বিতীয় আক্রমণ আপনাকে শেষ করে দেবে।”

সপ্তম দিনে, হাসপাতালের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বারাক দেখলেন ইসরায়েলের আকাশ, সেই শহর যার ভার এত বছর তিনি বহন করেছেন।

সেদিন বিকেলেই তিনি রাষ্ট্রপতিকে ফোন করেন। তার কণ্ঠ স্থির, কিন্তু কম্পন ছিল নিচে চাপা এক ক্লান্তির।

“আমি আপনাকে আজ রাতে আমার পদত্যাগপত্র পাঠাচ্ছি। আগামীকাল ভোরে ঘোষণাটা দিন। আমি আর পারছি না, শরীরও বলছে এবার থামো।”

রাষ্ট্রপতি একটু চুপ করে থাকেন। “আপনি বিকল্পের কথা ভেবেছেন?”

বারাক একটু থেমে বলেন, “তালিয়া রেগেভ। ও-ই ছিল সব রিপোর্টের মাঝখানে আমার ছায়া। ও জানে কীভাবে দেশ চালাতে হয় - নীরবে, ধারালো হাতে, আর সততার সঙ্গে।”

রাষ্ট্রপতি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। “আপনার সিদ্ধান্ত আমি মানি। আপনি এই দেশের ইতিহাসে রয়ে যাবেন।”

রাতে, হাসপাতালের বিশেষ স্যুট-এর ডেস্কে বসে প্রধানমন্ত্রী বারাক নিজের হাতে পদত্যাগপত্র লেখেন। কাগজে কাঁপা হাতে কলম ধরলেও শব্দগুলো ছিল স্পষ্ট, সুসংহত, যেমন ছিল তার নেতৃত্ব।

চিঠির শেষে তিনি লেখেন:

"আমার শারীরিক অবস্থা এখন আর আমাকে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয় না। বর্তমান সঙ্কটময় সময়ে, দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এমন একজনের প্রয়োজন, যিনি সুস্থ, প্রস্তুত এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি স্তরের সঙ্গে পরিচিত। এই পরিপ্রেক্ষিতে, আমি সুপারিশ করছি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও গোয়েন্দা সংস্থার বর্তমান পরিচালক তালিয়া রেগেভকে অন্তর্বর্তী দায়িত্বভার দেওয়া হোক, যতক্ষণ না পর্যন্ত পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।"

চিঠিটি সিল করে তিনি ব্যক্তিগত সহকারীর হাতে তুলে দেন, যিনি তা রাষ্ট্রপতির দফতরে পৌঁছে দেন রাতেই।

পরদিন সকাল আটটায়, রাষ্ট্রপতির দফতর থেকে এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়:

“প্রধানমন্ত্রী আইতান বারাক, স্বাস্থ্যগত কারণে, পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি এই পদত্যাগপত্র গৃহীত করেছেন এবং দেশ ও সরকারের স্বার্থে, অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পালনের জন্য তালিয়া রেগেভকে আহ্বান জানানো হয়েছে।”

গভীর নীরবতার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল এক যুগের অবসান দেখলো, একটি অধ্যায় শেষ হলো, যেখানে বারাক সবকিছু সঠিকভাবে বুঝে, পরিকল্পনা করে এগিয়েও শেষতঃ পরাজিত হন এমন এক যুদ্ধের কাছে যেটি শত্রুর চেয়ে বয়স ও সময়ের বিরুদ্ধে ছিল অনেক বেশি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.