নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি হচ্ছে প্রেমে পড়ার মতন একটা ব্যাপার, কোনো ধরনের কর্তৃত্ব জাহির করা নয়।
আচ্ছা, এক লাখ টাকা যদি পঞ্চাশ হাজার টাকার মূল্যে পাওয়া যায়, তবে কেমন হবে বলেন তো। পঞ্চাশ হাজার টাকা বেশি মনে হচ্ছে? তবে ঠিক আছে পচিশ হাজার হলে চলবে? নাহ! তাতেও আপনার আপত্তি ঠিক আছে বারো হাজার টাকার কম দিয়েন না ভাই। এর কম হলে বিক্রেতার কিছু থাকে না। পুরান কাস্টমার, পাইকেরি নিবেন! ঠিক আছে এক জবান প্রতি বান্ডিল আট হাজার নিয়ে যান। না, আপনি স্বপ্ন দেখছেন না, বাস্তবে টাকার দরদাম শুনছেন।
হ্যাঁ, এতক্ষণ আপনি টাকার দরদাম-ই শুনছিলেন। তবে এগুলো বিশেষ টাকা। এই টাকার জন্ম গাজিপুরে অবস্থিত টাকা ছাপানোর মেশিনে নয়। এর জন্ম ব্যক্তিমালিকানাধীন টাকা বানানোর কারখানাতে।যাকে জাল টাকা বললে সবাই চিনে। পাঁচবার হাত বদল হয় এই জাল টাকা ছড়িয়ে পড়ে বাজারে। ১ম ধাপ আট হাজার টাকা> ২য় ধাপ বারো থেকে তের হাজার টাকা> ৩য় ধাপ বিশ থেকে পচিশ হাজার টাকা> ৪র্থ ধাপ চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার> ৫ম এবং সর্বশেষ ধাপে রয়েছে মুল ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ।
ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ অসচেতনতা বশত টাকার আসল কিংবা নকল নোট চিনতে পারেন না। যারা ঘটনা ক্রমে টাকার বান্ডিলের সাথে এক বা একাধিক নোট পান তারা ব্যক্তিগত ক্ষতির কথা চিন্তা করে টাকাটি হাত বদল করে ফেলেন। যুক্তি অকাট্য “জাল টাকা তো আমি বানায়নি, তাহলে আমি কেন ভুক্তভোগী হবো!”। কিংবা অনেক ক্ষেত্রেই শত-শত, হাজার হাজার নোটের মধ্যে এটা খুঁজে বের করা আসলেই মুশকিল, কোনটা আসল নোট আর কোনটা নকল।
একসময় টাকাতে জরির সুতা দেখে চেনা যেতো আসল ও নকল নোটের পার্থক্য। অসাধু ব্যবসায়ীরা সেই সমস্যা সমাধানে পাঁচ টাকার নোট থেকে জরির সুতা রেখে বাকি অংশবিশেষ জোড়া দিয়ে কাগজের মান ঠিক রেখেই অনায়েশে বানিয়ে ফেলছেন একশত টাকার জাল নোট। অবশ্য পাচশ একহাজার টাকার নোটই বাজারে বেশি পাওয়া যায়।
সাংকেতিক নামে মূলত জাল টাকার অর্ডার দেয়া হয়-
এক হাজার টাকার বান্ডিলের জন্য জন্য বলা হয় “এক বান্ডিল জুব্বা লাগবে”।
পাঁচশ টাকার বান্ডিলের জন্য বলা হয় “এক বান্ডিল পাঞ্জাবী লাগবে”।
একশ টাকার বান্ডিলের জন্য বলা হয় “এক বান্ডিল গেঞ্জি লাগবে”।
ইতিহাসে চোখ ফেরানো যাক, ১৯৭২ সালের ৪ঠা মার্চ নিজস্ব মূদ্রা প্রচলন হয় বাংলাদেশে। ঠিক সেই বছরই জাল টাকার সন্ধান পায় বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’। ১৯৯০ সালের দিকে জাল টাকার বিস্তার শুরু হয় রাজধানী ঢাকাসহ অনন্যা শহর গুলোতে। এরপরই বাজার জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ‘জাল টাকা’। এমন কি বাংলাদেশ ব্যাংকের আটটি শাখার ভল্ট থেকেও বেরিয়ে আসে ১০০ ও ৫০০ টাকার জাল নোট। এমন কি ATM বুথ থেকেও বেরিয়ে আসে জাল নোট।
অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাত এর মতে, বাজারে বর্তমানে এক হাজার কোটি টাকার জাল নোট আছে। সেগুলো যদি দিনে গড়ে পাঁচবারও হাত বদল হয় তবে তার মূল্য দাঁড়ায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা।
বানানোর প্রক্রিয়া কেমন?
দুই পদ্ধতিতে নকল বা জাল টাকা বানানো হয়।
একটি পদ্ধতি উন্নত মানের প্রিন্টারে হুবহু প্রিণ্ট করে। এবং দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলো কাস্টিং পদ্ধতি। এতে যেকোন কিছু পরিষ্কার হয়। আসল একশ টাকা কে প্রথমে জাল দেয়া হয়। তারপরে ঘষে্ মেজে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়। শুকিয়ে নিয়ে রং করে নেয়া হয়। যা দেখতে হয় অবিকল আসল পাচশত বা হাজার টাকা নোটের মত। তবে দুই প্রক্রিয়াতেই লাগে ৩৩ ধরনের রাসয়নিক পদার্থ।
আইন- ১৯৭২ সালের আইনে টাকা জাল করার সর্বোচ্চ শাস্তি ছিলো মৃত্যুদন্ড।১৯৮৯ সালে সে আইন সংশোধন করে আর্থদন্ড ও যাবজ্জীবন সাজার বিধান করা হয়।
সারা বাংলাদেশে জাল টাকা সংক্রান্ত মামলা আছে ৫,১২৯ টি (২০১২)।৮ বছরে গ্রেফতার হয়েছে ৫০ কারিগর এবং ৭০০ ব্যবসায়ী। ধরা পড়ার পর আইনের ফাঁক গলিয়ে ঠিকই অপরাধীরা বের হয়ে যায়। এবং প্রায়শই ফিরে যায় পুরনো পেশায়। ২০১১ সালে গোয়েন্দা পুলিশ রাজধানী তে খুঁজে বের করে এক ডজন জাল টাকার কারখানা। প্রতিটি কারখানা থেকে দিনে পাঁচ/ছয় লাখ নকল টাকা বানানো হতো।
পিকচার আভি বাকি হে মেরে দোস্ত! জ্বি হ্যাঁ। ২টি আসল পাচশত টাকার বিনিময়ে যদি আপনি একটু বুদ্ধি খরচ করে ৩টি আসল পাচশত টাকার নোট পান, তবে কেমন হয় বলুন তো। অবাক হবেন না প্লিজ। এবার তাহলে শুনুন ছেঁড়া ফাড়া টাকার কারসাজি নিয়ে এক্কেবারে আসল গল্প। ছেঁড়া টাকার ৬৫/৭০ ভাগ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিলেই আপনি পেয়ে যাবেন একই মূল্যমানের টাকা। ব্যাংকের আইনে এমনটাই নিয়ম। সেই নিয়মের সুযোগে কিছু অসাধু লোক বছরের পর বছর ধরে দুইটি নোট কে দাঁত দিয়ে কেটে তিনবারে তিন ৬৫ ভাগ জমা দিয়ে ব্যাংক থেকে ৩বার টাকা তুলে আনেন। যাতে একহাজার টাকা হয়ে যায় দেড় হাজার টাকা, এক লাখ টাকা হয়ে যায় দেড় লাখ টাকা এর এক কোটি টাকা হয়ে যায় দেড় কোটি টাকা।
দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধির পেছনে জাল টাকার ভূমিকাকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। বাজারে মূদ্রার অনিয়ন্ত্রিত যোগান একদিকে যেমন মূদ্রাস্ফিতী বাড়াচ্ছে তেমন জাতীয় অর্থনীতির মেরুদন্ডও ভেঙ্গে দিচ্ছে। সরকারের সজাগ দৃষ্টি এবং সতর্কতা ছাড়া এই দূর্যোগ মোকাবেলা সম্ভব নয়। আসুন সচেতন হই এবং নিরাপদ থাকি।
তথ্যসূত্র- তালাশ (ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশন)
০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২৪
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন:
২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪৮
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: টাকা গুলো চেনাও যায় না। অনেকের কাছ থেকে টাকা চেনার উপায় শিখেছি। তারপরও মাঝে মাঝে ধোঁকা খেয়ে যেতে হয়। এত নিখুঁত জাল টাকা বাংলাদেশে আর তৈরি হয়নি। এই জাল টাকা ব্যবসা যারা করে, তারা অনেক টাকার মালিক এখন।
তার জালগুলোকে খুঁচরাভাবে ছাড়ে বা ১০০টাকার সদাই কিনে ১০০০টাকা দেয়। অবশিষ্ট ৯০০ আসল। যেহেতু তাদের ব্যবসা তাদের চিনতে তো অসুবিধা নেই। সেইগুলো জমায়। একবান্ডিলে এভাবে হিসাব করে দেখেন। চিন্তা করতে গেলে মাঝে মাঝে মাথা ঘুরায় - কী হচ্ছে এসব!!!
আপনার পোষ্টে অনেক কিছুই লেখা আছে। আমার এইটা নিয়ে কয়েকদিন পর একটা অ্যাসাইনমেন্ট আছে, সেইখানে কাজে লাগবে। প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩০
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: দিন দশেক আগের কথা, জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে খামার বাড়ির রাস্তাটাতে এক নিন্মবিত্ত ছেলে ৫০০টাকার নোট দিলো এক বোতল পানি কিনতে। পানি বিক্রেতা ৪৫+ এক লোক তিনি বার বার টাকাটা পরীক্ষা করছিলেন আর বোকা বোকা হাসি দিচ্ছিলেন। ৫ মিনিট এমন টা চলার পর ছেলে টা এক ঝাড়ি দিয়ে পানির বোতল ফেরত দিয়ে টাকা নিয়ে চলে গেলো। তখন আমি রিক্সায় বসে দৃশ্যটা দেখে আন্দাজ করলাম, পানি বিক্রেতা আগেই বোধহয় এমন কোনো জাল টাকাতে ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন।
সাধারণ মানুষ কি করবে? কোথায় যাবে??
৩| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫০
বিপরীত বাক বলেছেন: তাইলে আমরা যামু কই? পথ বাতলে দিন??
যেসব মানুষের মাসিক আয় ৩০০০-৪০০০ তাদের হাতে যদি ১০০০ বা ১৫০০ টাকার জালনোট পড়ে তা কি মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক আর করুণ ঘটনা।।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩২
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: সরকারের এই ব্যাপারে জরূরী পদক্ষেপ নেয়া দরকার ........... ধন্যবাদ
৪| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৬
বাংলার জামিনদার বলেছেন: আপনার গল্পে একটু ভুল আছে। ২টি নোট কেটে প্রতিবার ৬৫ভাগ জমা দেওয়া সম্ভব না।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩৭
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: বাংলার জমিনদার,
প্রথমত এটা গল্প নয়, এটা জাল বা নকল টাকার বর্তমান হালচাল
দ্বিতীয়ত, ১টা টাকা কে ১০০ ভাগ ধরলে; ২টা টাকার নোটে দাঁড়ায় ২০০ ভাগ
তিন ৬৫ ভাগ যোগ করলে হয় ১৯৫ ভাগ।
তাহলে ভুলটা কোথায়, আমি বুঝতে পারলাম না।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৮
গেম চেঞ্জার বলেছেন: হায়রে লোভ!! হায়রে বিবেক!