নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যে কোনো ভূমিকায় সমানে লড়ে যাই, আপনি যেমন চান আমি ঠিক তাই।

নান্দনিক নন্দিনী

লেখালেখি হচ্ছে প্রেমে পড়ার মতন একটা ব্যাপার, কোনো ধরনের কর্তৃত্ব জাহির করা নয়।

নান্দনিক নন্দিনী › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'ইন্টারভিউ উইথ হিস্টরী\'

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০৫



ওরিয়ানা ফ্যালাচি, ইতালীর বিখ্যাত নারী সাংবাদিক। রোম থেকে প্রকাশিত “এল ইউরোপিও” পত্রিকার হয়ে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। সত্তর দশকের প্রায় পুরোটা সময় জুড়ে বিশ্বের বিতর্কিত বহু রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকার গ্রহন করেন। ওরিয়ানা যাদের সাক্ষাৎকার গ্রহন করেছেন তাদের অধিকাংশ-ই আজ আর বেঁচে নাই, তাদের কেউ কেউ নিহত হয়েছেন অভ্যত্থানে।আর কেউ দেশ থেকে নির্বাসিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। ক্ষমতা হারানোর পর উত্তরাধিকারী সরকারের আমলে আদালতের রায়ে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয়েও অনেকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ওরিয়ানা স্বাধীনতার পক্ষে ও বিপক্ষে জড়িত চার ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। তারা হচ্ছেন স্বাধীনতার প্রধান নায়ক শেখ মুজিবুর রহমান, সার্বিক সমর্থন ও সহযোগিতা দানকারী ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, স্বাধীনতার প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভুট্টো, এবং স্বাধীনতার ঘোর বিরোধী যুক্তরাষ্ট্রের হেনরী কিসিঞ্জার। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা ভালো যে, উপমহাদেশের তিন প্রধান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বই হত্যাকান্ডের শিকারে পরিনত হয়েছেন।


২৪ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ ওরিয়ানা ফ্যালাচি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটা সাক্ষাৎকার নেয়া শেষ করে দেশে ফিরে যান। প্রথম দিন বঙ্গবন্ধুর বাস ভবনে গিয়ে কথা হয় তার সাথে। কিন্তু ফ্যালাচি চাইছিলেন এমন কোনো অফিস কক্ষ যেখানে বসে বঙ্গবন্ধু অন্যদের সাথে কথা বলেন। তাই পরের মিটিং টা নির্ধারিত হয় বঙ্গবন্ধুর অফিসে। ৪ ঘন্টা অপেক্ষা করার পর দেখা হয় শেখ মুজিবের সাথে।

- মিস্টার পাইম মিনিস্টার, গ্রেফতারের সময় কি আপনার উপর নির্যাতন করা হয়েছিল?
- “নো ম্যাডাম নো। তারা জানতো, ওতে কিছু হবে না। তারা আমার বৈশিষ্ট্য, আমার শক্তি, আমার সম্মান, আমার মূল্য, বীরত্ব সম্পর্কে জানতো, আন্ডারস্ট্যান্ড?”
- তা বুঝলাম। কিন্তু আপনি কি করে বুঝলেন যে তারা আপনাকে ফাঁসিতে ঝুলাবে? ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কি মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়?
- নো, নো ডেথ সেণ্টেন্স। আমি এটা জানতাম। কারন ১৫ ডিসেম্বর ওরা আমাকে কবর দেয়ার জন্য গর্ত খনন করে।
- কোথায় খনন করা হয়েছিল সেটা?
- আমার সেলের ভিতরে।
- আমাকে কি বুঝে নিতে হবে যে গর্তটা ছিল আপনার সেলের ভিতরে?
- ইউ মিস আন্ডারস্ট্যান্ড।
- আপনার প্রতি কেমন আচরণ করা হয়েছে মিঃ প্রাইম মিনিষ্টার?
- আমাকে একতা নির্জন প্রকোষ্ঠে রাখা হয়েছিল। এমনকি আমাকে সাক্ষাৎকারের অনুমতু দেয়া হতো না, সংবাদপত্র পাঠ করতে বা চিঠিপত্রও দেয়া হতো না, আন্ডারস্ট্যান্ড?
- তহলে আপনি কি করেছেন?
- আমি অনেক চিন্তা করছি, পড়াশুনা করেছি।
- আপনি কি পড়েছেন?
- বই এবং অন্যান্য জিনিস।
- তাহলে আপনি কিছু পড়েছেন?
- হ্যাঁ, কিছু পড়েছি।
- কিন্তু আমার ধারনা হয়েছিল, আপনাকে কোনকিছুই পড়তে দেয়া হয়নি
- ইউ মিস আন্ডারস্টুড।
- তা বটে মিঃ প্রাইম মিনিষ্টার। কিন্তু এটা কি করে হলো যে, শেষ পর্যন্ত ওরা আপনাকে ফাঁসিতে ঝুলালো না।
- জেলার আমাকে সেল থেকে পালাতে সহায়তা করেছেন এবং তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন।
- কেন, তিনি কি কোন নির্দেশ পেয়েছিলেন?
- আমি জানি না। এ ব্যাপারে তার সাথে আমি কোন কথা বলিনি এবং তিনিও আমার সাথে কিছু বলেন নি।
- নীরবতা সত্ত্বেও কি আপনারা বন্ধুতে পরিনত হয়েছিলেন?
- হ্যাঁ, আমাদের মধ্যে বহু আলোচনা হয়েছে এবং তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, আমাকে সাহায্য করতে চান।
- তাহলে আপনি তার সাথে কথা বলেছেন?
- হ্যাঁ, আমি তার সাথে কথা বলেছি।
- আমি ভেবেছিলাম, আপনি কারো সাথেই কথা বলেননি।
- ইউ মিস আন্ডারস্টুড
- তা হবে মিঃ প্রাইম মিনিষ্টার। যে লোকটি আপনার জীবন রক্ষা করলো আপনি কি তার প্রতি কৃ্তজ্ঞতা অনুভব করেন না?
- এটা ছিল ভাগ্য। আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি।

এরপর বঙ্গবন্ধু ভূট্টো সম্পর্কে বলেন “ ভূট্টো সত্যিই একজন ভদ্রলোক। তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার কাছে কিছু প্রস্তাব পেশ করেছিলেন”। ওরিয়ানা ফ্যালাচি বলেছিলেন “ আমার কাছে বলার প্র্যোজন নেই মিঃ প্রাইম মিনিষ্টার, আপনি বলবেন ইতিহাসের কাছে”। মুজিব বললেন, “আমিই ইতিহাস। আমি ভূট্টোকে থামিয়ে বললাম, যদি আমাকে মুক্তি দেয়া না হয়, তাহলে আমি আলাপ করবো না। ভূট্টো অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে উত্তর দিলেন, আপনি মুক্ত যদিও আপনাকে শীঘ্র ছেড়ে দিচ্ছি না। আমাকে আরো দুই বা তিনদিন অপেক্ষা করতে হবে। এরপর ভূট্টো পশ্চিম পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সম্পর্কে তার পরিকল্পনা তৈরী করতে শুরু করলেন। কিন্তু আমি অহংকারের সাথেই জানালাম, দেশবাসীর সাথে আলোচনা না করে আমি কোন পরিকল্পনা করতে পারি না”।


“তার চোখের সামনে শুরু হয় স্বাধীনতা সংগ্রাম। বন্ধুদের জন্য বাড়ির দরজা খুলে বলতে হতো, ‘ দুঃখিত বাটিতে কেউ নেই। আমার বাবা, মা, ঠাকুর্দা, ঠাকুরমা,পিসী সবাই জেলে’। এ অবস্থার কারনে মাত্র আট বছর বয়সে তাকে পড়াশুনার জন্য সুইজারল্যান্ডে পাঠানো হয়। কিন্তু তের বছর বয়সে দেশে ফিরে এসে তিনি ক্ষুদে গেরিলা বাহিনী গঠন করেন। তারা বার্তা বহন করতো- কখনো কখনো বৃটিশ ব্যরাকে হানা দিতো। তিনি জেল খেটেছেন তের মাস। অক্সফোর্ডে পড়াশুনার সময় বোম্বের তরুন আইনজীবী ফিরীজ গান্ধীর সাথে সাক্ষাৎ হয়। ১৯৪২ এ তাদের বিয়ে হয়। এর ছ’মাস পর বৃটিশ সরকার দু’জন কেই গ্রেফতার করেন। ১৯৪৭ সানে নেহেরু প্রধানমন্ত্রী হলে ইন্দিরা পিতার সাথে বসবাস করতে থাকেন। বিপত্নীক পিতার দেখাশুনার দায়িত্ব নেন। ফিরোজ গান্ধী ১৯৬০ সালে ইহলোক ত্যাগ করেন। পিতা-কন্যা একত্রে ভ্রমন করতেন, রাষ্ট্র প্রধানদের অভ্যর্থনা জানাতেন। ১৯৬৪ সালে পিতার মৃত্যুর পর ইন্দিরা তার স্থলাভিষিক্ত হলেন”।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদান এবং দুই দেশের বন্ধুত্ব নিয়ে ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, “ জীবন সব স্ময় বিপদে পরিপূর্ন এবং আমি মনে করিনা যে, কারো পক্ষে বিপদ এড়ানো সম্ভব। যা সঠিক মনে হয়, একজনের তাই করা উচিত এবং সেই যথার্থ কাজ করতে যদি বিপদ আসে তাহলে বিপদের ঝুঁকি অবশ্যই নিতে হবে। এটাই আমার সবসময়ের দর্শন। আমি পরিণতির কথা ভেবে পদক্ষেপ নেই না। পরিণতি গুলো পরে পরীক্ষা করে দেখি। যখন কোন নতুন পরস্থিতির উদ্ভব হয়, আমি তা মোকাবেলা করি”। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবস্থান কে তিনি বিপদজ্জনপক মনে করেন নাই। এবং এতে তিনি কোন ঝুঁকিও দেখেন নাই। তিনি মনে করতেন। যদি ঝুঁকি বাস্তবে পরিণত হয়, তাহলে তিনি বাস্তবতার আলোকেই পদক্ষেপ নেব।

বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্ব প্রসঙ্গে তিনি মনে করতেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। অবশ্যই তা একতরফা বন্ধুত্ব হবে না। প্রত্যেকেরই কিছু দেবার ও নেবার থাকে। আমরা যদি বাংলাদেশকে কিছু দিতে চাই তাহলে স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশও আমাদের কিছু দিতে চাইবে এবং বাংলাদেশ কেন তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারবে না। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ সম্পদে পরিপূর্ণ এবং নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম। রাজনৈতিক ভাবে আমার মনে হয়, দেশটা যোগ্য লোক দ্বারা পরিচালিত। শরণার্থী, যারা এখানে (ভারতে) আশ্রয় নিয়েছিল তারা বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ২০ লাখ ফিরে গেছে। তারা দ্রুত ফিরে যাচ্ছে। দ্রুততার সাথে। আমার ধারনার চেয়েও বেশি।

ওরিয়ানা প্রশ্ন করেছিলেনঃ মিসেস গান্ধী, আপনি বলেছেন, যুদ্ধ এড়ানোর জন্য আপনি ইউরোপ ও আমেরিকা সফর করেছেন। আপনি কি সত্যি বলবেন কি ঘটেছিল? নিক্সনের সঙ্গে কি আলোচনা হয়েছিল?
ইন্দিরা গান্ধীর উত্তর ছিলোঃ আমি জেনে শুনেই সফরে বেরিয়েছিলাম যে আমার অবস্থা শিশুর মতো, গর্তে অঙ্গুলি প্রবেশ করাচ্ছি এবং সেখানে কি আছে আমি জানি না। সত্যটা হলো, আমি স্পষ্টভাবে নিক্সনকে বলেছি সেই একই কথা যা আমি হীথ, পম্পিডো, ব্রাণ্ডটকে বলেছি। আমি বলেছি, আমাদের পিঠের উপর এক কোটি শরণার্থী নিয়ে আমরা আর পারছি না। এবং এ ধরনের একটা অসহনীয় পরিস্থিতি আর সহ্য করা যাচ্ছে না। মিঃ হীথ, মিঃ পম্পিডো, মিঃ ব্রাণ্ডট আমার কথা ভালোভাবেই উপলব্ধি করলেন; কিন্তু মিঃ নিক্সন বুঝলেন না। অন্যেরা যা বুঝে নিক্সন তা বুঝেন না। আমি সন্দেহ করেছিলাম্ নিক্সন পাকিস্তানের সমর্থক অথবা বলা যায়, আমি জানতাম, আমিরিকানরা সবসময় পাকিস্তানের পক্ষে এবং ভারতের বিপক্ষে। নিক্সনের সাথে সাক্ষাতে আর যাই হোক, যুদ্ধ এড়ানো যায়নি। এতে আমারই ভালো হয়েছে। অভিজ্ঞতায় আমি দেশেছি যখন কেউ তোমার বিরুদ্ধে কিছু করে, তাহলে তোমার পক্ষে কিছু সুবিধা চলে আসে। এটা জীবনের বিধান।

ইন্দিরা গান্ধীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি কি কখনো অনুতাপ করেছেন, দুঃখ করেছেন? কিংবা ভয়? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “না কখনো না। যে কোন ভয় আসলে সময়ের অপচয়, দুঃখবোধের মতোই”।


চমকে দেয়ার মতো আমন্ত্রন। এসেছিল জুলফিকার আলী ভূট্টোর তরফ থেকে এবং বুঝে উঠার কোন উপায় ছিল না। আমাকে বলা হলো যত শীঘ্র সম্ভব আমাকে রাওয়ালপিন্ডি যেতে হবে। অবাক হলাম, কেন? কিন্তু স্বপ্ন যুক্তিহীন এবং সন্দেহে তার পরিসমাপ্তি। শিক্ষিত ও ভদ্রলোক বলে ভূট্টোর সুনাম আছে। এ ধরনের লোকারা সাধারণত তাদের আমন্ত্রিত অতিথিকে হত্যা করে না। আমার অনুমান বলছে তিনি চান আমি তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি।

এ মানুষটি সম্পর্কে পূর্ব ধারনা করা যায় না। অসম্ভব গোছের। নিজের মর্জিতে এবং অদ্ভুত সিদ্ধান্তে পরিচালিত হন। তীক্ষন বুদ্ধিমান। ধূর্ত, শিয়ালের মতো বুদ্ধিমান।মানুষকে মুগ্ধ করতে, বিভ্রান্ত করতেই যেন তার জন্ম। শহুরে আভিজাত্য তার জন্মাবধি। প্রাচুর্যের মধ্যে বড় হয়েছেন, সে কারনে তার কাছে কিছুই অসম্ভব ছিল না। অভিজাত জমিদার পরিবারে তার জন্ম। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া- বার্কেলীতে এবং পরে বৃটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। তিনি ডিগ্রী নিয়েছেন আন্তর্জাতিক আইনে। ত্রিশ বছর বয়সের পর-ই তিনি আইয়ুব খানের মন্ত্রী হন। চল্লিশের কিছু কম বয়সে ইয়াহিয়া খানের মন্ত্রী হয়ে ছিলেন। বেদনাদায়ক ধৈর্যের সাথে তিনি প্রেসিডেন্টের পদ পযর্ন্ত পৌঁছান। কিছু সহযোগীর দ্বারা এ পরযন্ত আরোহণ ঙ্কে তিনি নিষ্কণ্টক রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।

ক্ষমতা প্রেমের চেয়েও অনেক বেশি আবেগের বস্তু। যারা ক্ষমতা ভালোবাসে তাদের পেট শক্ত, নাকটা আরো শক্ত। বদনামে তাদের কিছু আসে যায় না। ভূট্টোও বদনামের তোয়াক্কা করতেন না। তিনি ক্ষমতা ভালোবাসেন। ভূট্টোকে আবেগপ্রবণ, দূর্বোধ্য এবং জটিল সহ আরো অনেক কিছু বলা যায়। তবে নিজের সম্পর্কে ভূট্টোর মূল্যায়ন হল; “ আমার মধ্যে অনেক বৈপরীত্য রয়েছে- আমি সে সম্পর্কে সচেওতন। আমি এ সবের মধ্যে আপোসের চেষ্টা করি, সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করি। কিন্তু আমি সফল হতে পারি না।। ফলে আমি এশিয়া এবং ইউরোপের অদ্ভুত মিশ্রণ হিসেবেই রয়েছি। আমার মনটা পাশ্চাত্যের কিন্তু আত্মা প্রাচ্যের। আমার দুই স্ত্রী সম্পর্কে আমি কি করতে পারি? অভিভাবকরা আমার মামাত বোনের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন তের বছর বয়সে। আমার বয়স ছিল মাত্র তের, আর আমার স্ত্রীর তেইশ বছর। এমন কি আমি জানতামও না যে একজন স্ত্রী থাকার অর্থ কি। যখন তারা আমাকে এটা বুঝানোর চেষ্টা করলো, আমি রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আমি কোন স্ত্রী চাইনি। আমি ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিলাম। আমি ক্রিকেটের দারুন ভক্ত ছিলাম। আমাকে শান্ত করতে দু’টি নতুন ব্যাট দিতে হয়েছিল। অনুষ্ঠান শেষ হওয়া মাত্র আমি ক্রিকেট খেলতে যাওয়ার জন্য দৌড় দিয়েছিলাম। আমার দেশে এমন অনেক কিছু আছে, যা আমাকে অবশ্য-ই পরিবর্তন করতে হবে। আমি যখন আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রেমে পড়লাম, তখন আমার বয়স তেইশ বছর। সেও ইংল্যান্ডে পড়াশুনা করছিল। যদিও সে একজন ইরানী অর্থাৎ তার দেশে বহু বিবাহ একটি রীতি, আমাকে বিয়ে করার জন্য তাকে রাজী করাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। মাত্র দুটি কথা ছাড়া তাকে বুঝানোর মতো যুক্তি আমার ছিল না, “তাতে কি, ওসব বাদ দাও”। আমার প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ধারনা কখনো আমার মাথায় আসেনি। সে যে আমার মামাত বোন, সে কারনে নয়, কারণ তার প্রতি আমার একটি দায়িত্ব আছে।

ভূট্টো ২৫ মার্চের নারকীয় হত্যাকান্ড সম্পর্কে বলেন, ২৫ মার্চের দুঃখজনক ঘটনায় আমি হতভম্ব হয়েছিলাম। ইয়াহিয়া খান আমাকেও বোকা বানিয়ে ছেড়েছিল। মুজিব কখনোই বুদ্ধিমান ছিলো না। সে নিজেকে কোণঠাসা করে রেখেছিল। মর্জি হলে মুজিব ঢালাও ভাবে কথা বলে। যেমন, সে বলে ত্রিশ লাখ মানুষ মরেছে। সংবাদপত্র গুলো আবার তার কথা পুনঃপ্রচার করে, “ত্রিশ লাখনিহত, ত্রিশ লাখ নিহত”। ভারতীয়রা সংখ্যাটা বলেছিল দশ লাখ। সে এটাকে দ্বিগুন, এরপরে তিনগুন করলো। আমি সংখ্যা কমাতে চাইনা, আমি তাদের কে বাস্তবে ফিরিয়ে আনতে চাই। শরণার্থীদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটেছে। মিসেস গান্ধী বলেন এক কোটি লোক। এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, তিনি তার প্রতিরোধের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করাতে এবং পূর্ব পাকিস্তানে অভিযান চালানোর জন্য এই সংখ্যা দিয়ে শুরু করেছিলেন। কিন্তু আওমরা যখন বিষয়টা তদন্ত করার জন্য জাতিসংঘকে আমন্ত্রণ জানালাম, ভারতীয়রা তার বিরোধিতা করলো। কেন তারা বিরোধিতা করেছিল? সংখ্যাটা যদি সঠিকই হতো, তাহলে তো তদন্তের প্রশ্নে তাদের ভীত হওয়ার কথা নয়। ঘটনাটা হলো, আসলে এক কোটি নয়, বিশ লাখ লোক গিয়েছিল। নিহতের সংখ্যা বলায় আমার ভুলও হতে পারে, কিন্তু শরণার্থীদের সংখ্যার ক্ষেত্রে নয়।
মিঃ ভূট্টো বিশ্বাহ করেন না যে , মহিলারা ধর্ষিতা ও নিহত হয়েছে। তিনি এতা নিশ্চিত যে বাড়াবাড়ির কোন কমতি ছিল না। কিন্তু জেনারেল টিক্কা খান বলেছেন যে, ঐ দিন গুলোতে তিনি জনগনকে আহবান করেছেন দুর্ব্যভার সম্পর্কে সরাসরি তার কাছে রিপোর্ট করতে। এবং তার কাছে মাত্র চারটি ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে।

২৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহন করেন জুলফিকার আলী ভূট্টো। এরপর তিনি সাক্ষাৎ করেন ইয়াহিয়া খানের সাথে। খান ছিলেন উন্মত্ত, মাতাল। তিনি ভূট্টো কে বললেন, “ আমার জীবনের সবচেয়ে মারাত্মক ভুল ছিল মুজিবর রহমান কে মৃত্যুদন্ড না দেয়া। আপনি মনে করলে তা করতে পারেন”। আমি বললাম যে, আমি তা করবো না, এবং অনেক ভেবে চিন্তে, আমি মুজিব কে মুক্তি দিতেই প্রস্তুত হলাম। জানুয়ারীর একটি দিন মুজিব আমার হাত ধরে অনুনয় করেছেন, “আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান”। তার জন্য আমি আসলেই করুনা অনুভব করি। বেচারী মুজিব-বেশি দিন পারবে না। আট মাস, বড়জোর এক বছর- এরপরই তাকে অরাজকতা, বিশৃংখলা ইত্যাদি হজম করতে হবে। তিনি যদি গুছিয়ে উঠতে পারেন তাহলে তো কথা নেই, কিন্তু পারবেন বলে মনে হয় না।

ইন্দিরা গান্ধী সম্পর্কে ভূট্টোর অভিমত হল, ইন্দিরা একজন নগন্য মহিলা। যার বুদ্ধিশুদ্ধিও অতি সাধারণ। উদ্যোগে ও কল্পনা শক্তি শূন্য এবং তিনি তার পিতার অর্ধেক মেধাও পাননি।

ভূট্টোর অভিমত, “শুধু হাসি ঠাট্টার জন্য কেউ রাজনীতি করে না। রাজনীতি করার উদ্দেশ্যই হলো ক্ষমতা হাতে নেয়া এবং তা রক্ষা করা। এর উলটো যদি কেউ বলে তাহলে সে মিথ্যুক। রাজনীতিবিদরা সবসময় আপনাকে এ বিশ্বাস দিতেই সচেষ্ট যে তারা ভালো, নৈতিক এবং ভারসাম্যপূর্ন। কিন্তু কোনদিন কোন তাদের ফাঁদে পা দেবেন না। ভালো, নৈতিক ও ভারসাম্যপূর্ন বলে কিছু নেই। রাজনীতি হলো দেয়া নেয়ার বিষয়। আমার পিতা বলতেন, “কারো দ্বারা দু’বার আঘাতপ্রাপ্ত হবার প্রস্তুতি না নিয়ে কখনো কাউকে আঘাত করবে না”।


“একজন রাষ্ট্র প্রধানের জন্যে বুদ্ধিমত্তা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। যে যোগ্যতা একজন রাষ্ট্র প্রধানের থাকা জরুরী তা হলো শক্তি, সাহস এবং ধূর্ততা”- হেনরী কিসিঞ্জার এমনটাই মনে করতেন। ১৯২৩ সালে জার্মানীর এক ইহুদী পরিবারে হেনরী কিসিঞ্জারের জন্ম। কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পরিবারের ১৪জন সদস্য মারা যাবার পর হেনরী কিসিঞ্জার তার পিতা-মাতা ও ভাইয়ের সাথে পালিয়ে প্রথমে আসেন লন্ডনে এবং সেখান থেকে নিউইয়র্কে। তার বয়স তখন পনের। হেনরী পড়াশুনায় এতটা ভালো ছিলেন যে, তিনিড হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ পান। পরে তিনি হার্ভার্ডেই পফেসর হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।

তার রাজনীতির হাতে খড়ি জার্মানীতে। পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কেনেডি ও প্রেসিডেন্ট জনসনের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সময় তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় শক্তিধর ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হন।তাকে ছারা নিক্সনের ভূমিকা ছিল না। সেজন্যে কিসিঞ্জারের দ্বিতীয় নাম দাড়িয়েছিল ‘নিক্সিঞ্জার’। নিক্সনের প্রতিটি পদক্ষেপ প্রতিটি সিদ্ধান্তে কিসিঞ্জারের ভূমিকাই ছিল মূখ্য। তিনি একাধারে অ্যামব্যাসেডর, সিক্রেট এজেন্ট, মুখ্য আলোচক, প্রকৃ্ত প্রেসিডেন্ট; যিনি হোয়াইট হাউস কে ব্যবহার করতেন নিজের বাসভবন হিসেবে। কিসিঞ্জার হোয়াইট হাউসে ঘুমাতেন না। কারন সেখানে নারী নিয়ে আসার অনুমতি ছিল না। প্রেসিডেন্ট নিক্সন যখন্ লজ্জায় ও ধিক্কারে পদত্যাগ করেন, তখন অনেকে বলেছিলেন, কিসিঞ্জারেরও পতন হবে। তা হয়নি। তিনি যেখানে ছিলেন সেখানেই থাকলেন, প্রেসিডেন্ট ফোর্ডের ক্ষমতাশালী পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে। কোন কম্পন থাকে স্পর্শ করেনি। শিরার মতই তিনি অবিনাশী অথবা ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য। আসলে কিসিঞ্জার নিজেই এক রহস্য।

হেনরী কিসিঞ্জার একজন ইহুদী ও জার্মান। তিনি এমন এক দেশে বাস করতেন যে দেশ ইহুদী ও জার্মান্দের এখনো সন্দেহের চোখে দেখে। তিনি বয়ে বেড়িয়েছেন স্ববিরোধিতার বোঝা, ক্ষোভ এবং লুক্কায়িত মানবতা। আমাদের বিস্মৃত হলে চলবেনা যে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যর্থ ও নিন্দুত, প্রেসিডেন্টের আমলেই কিসিঞ্জজারের সাফল্য এসেছে। নিক্সন একজন প্রবঞ্চক ও মিথ্যাবাদী। রুগ্ন স্নায়ু ও অসুস্থ মনে ব্যক্তি। ভুললে চলবে না যা কিসিঞ্জার আসলে নিক্সনেরই সৃষ্টি। নিক্সনের অস্তিত্ব না থাকলে আমরা জানতামই না যে, কিসিঞ্জারের জন্ম হয়েছিল। হেনরী বহু বছর ধরে আরো দু’জন প্রেসিডেন্টের সাথে কাজ করেছেন। কিন্তু তাদের কেউই তাকে অতোটা গুরুত্ব দেননি। কিন্তু নিক্সনের যখন দুর্দিন, তখন অবলীলায় কিসিঞ্জার পরিত্যাগ করেছিলেন নিক্সনকে। ক্যালিফোর্নিয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিক্সন কে দেখতেও যাননি।

কিসিঞ্জার একজন উচ্চাভিলাষী বুদ্ধিজীবী।।কিন্তু তার সাফল্য আকস্মিক। তার দেয়া সমাধান, আশাবাদ কোথাও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তার বড় ধরনের ভুলও ধরা পড়েছে। ভিয়েতনামে তার শান্তি প্রচেষ্টা সমস্যা নিষ্পত্তি বা যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেনি। কম্বোডিয়ায় তার শান্তি চুক্তি ভুয়া- নিক্সনের মুখ রক্ষার জন্য করা হয়েছিল। যখন তিনি মধ্যপ্রাচ্যে দৌড়াদৌড়ি শুরু করলেন তখন উত্তেজনা রূপ নিলো যুদ্ধে।

ওরিয়ানা প্রশ্ন করেছিলেন- ড. কিসিঞ্জার, আপনি কি বিয়ে বিরোধী? হেনরী কিসিঞ্জার বলেছিলেন, “ বিয়ে করবো কি করবো না, নীতির প্রশ্নে সেই সংকট নিরসন করা সম্ভব। হতে পারে যে, আমি পুওনরায় বিয়ে করবো………… হ্যাঁ, তা হতেই পারে। কিন্তু আমার মতো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে কারো সাথে বাস করা এবং একত্রে ঘর করা খুবই মুশকিল। অনিবার্য ভাবেই জতিল। একজনকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। এই বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া আমি একজন রিপোর্টারকে বিশ্বাস করার মতো লোক নই। আমি তোমাকে বলবো না, আমি কি। আমি কাউকে সে কথা বলিনি”।



গোল্ডা মায়ার এর জন্ম রাশিয়ার কিয়েভে ১৮৯৮ সালে। তার নাম ছিল গোল্ডা মেবোভিজ। আমেরিকার মিলওয়কিতে তিনি বড় হন। সেখানে ১৯১৭ সালে মরিস মায়ারসন কে বিয়ে করেন। ১৯১৮ সালে তিনি ফিলিস্তিনে চলে যান। স্ট্যালিনের আমলে তিনি মস্কোতে রাষ্ট্রদূতের দায়িতে পালনের পর থেকে তার সাফল্যের শুরু হয়। দিনে কমপক্ষে ষাটটি সিগারেট ধ্বংস করেন তিনি। কফির উপর দিন কাটিয়ে দেন। কাজ করেন ১৮ ঘন্টা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি মাসে আয় করতেন মাত্র চারশ ডলার (১৯৭২)।

গোল্ডা মায়ার একাকী বাস করতেন। রাতে ঘুমানোর সময় একতা কুকুরও থাকতো না তাকে দেখার জন্য। শুধু তার বাস ভবনের প্রবেশ পথে প্রহরী থাকে। যদি কাউকে ডিনারে ডাওয়াত করতে চাইতেন, তবে গোল্ড মায়ার নিজে হাতে রান্না করতেন।এবং ডিনারের পর সব কিছু নিজে হাতে পরিষ্কার করতেন। তিনি প্রতিদিন ঘম থেকে উঠতেন সকাল সাতটায়। তারপর সংবাদপত্র পাঠ করতেন এবং রেডিওতে খবর শুনতেন। সকাল আটটায় জেনারেলদের সাথে মত বিনিময় করেন আর নয়টায় মন্ত্রীদের সাথে বৈঠকে মিলিত হতেন। দশটার দিকে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন। চুয়াত্তর বছর বয়সে রাতে মাত্র সাড়ে তিন ঘন্টার নিদ্রা যথেষ্ট নয়।

বছরের পর বছর ধরে তিনি বিশ্বের দ্বন্দ্বমান অবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত ছিলেন। তিনি এমন এক মতবাদের সবচেয়ে কর্তৃত্ববাদী প্রতিনিধি ছিলেন, যে মতবাদ বহু লোক ঘৃণা করেন- ইহুদীবাদ। ভিয়েতনাম যুদ্ধের উপর একটা বইয়ে চোখ বুলাতে বুলাতে তিনি বলেছিলেন, আমি নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করছিলাম, যুদ্ধ সম্পর্কে নারীরা কি পুরুষদের থেকে ভিন্নতর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারে? আমি বলবো, না। বিগত বছর গুলোতে আমি নিজে কিছু নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছি। যেমন, আমন কিছু স্থানে আমাদের সৈন্যদের প্রেরণ করেছি যেখান থেকে তারা আর ফিরে আসবে না। অথবা এমন অভিযানে পাঠাতে হয়েছে যেখানে উভয় পক্ষে কত জীবন বিনাশ হয়েছে কেউ জানে না। আমার কষ্ট হয়েছে--- ভীষণ কষ্ট হয়েছে। কিন্তু আমি একজন পুরুষের মতই নির্দেশ দিয়েছি। যখন ভাবি, মনে হয়, আমি একজন পুরুষ মানুষের মতই কষ্ট পেয়েছি। আমার পুরুষ সহকর্মীর মধ্যে বিষাদের ছায়া দেখাছি আমার চেয়ে বেশি। আমি যে কম দুঃখ পেয়েছি, তা নয়। কিন্তু সে কাতরতা আমাকে বা আমার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারেনি। যুদ্ধ খুবই বাজে ব্যাপার। আমি নিশ্চিত যে, একদিন যারা যুদ্ধ কে অসম্ভব করে তুলবে। ওরা অবাক হবে , মর্মাহত হবে, ঠিক এখন যেমন আমরা যুদ্ধের ধ্বংস্লীলায় মর্মাহত হই। অথচ এই ধ্বংসলীলাকে দীর্ঘকাল পূর্বেই স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে গ্রহন করা হয়েছিল।

মৃত্যু নিয়ে গোল্ডা মায়ার এর দৃষ্টিভঙ্গী ছিলো অনেকটা এমন “ দীর্ঘ জীবন বেঁচে থাকাটাই বরং আমার কাছে ভয়ের। তুমি জান যে বার্ধক্য পাপও নায়, আবার আনন্দও নয়। দৈহিক অসুবিধা কোন ব্যাপারই নয়, কিন্তু বার্ধক্যে, মানুষের মানসিক সৌন্দর্য হারিয়ে যায়, মানসিক ভারসাম্য লুপ্ত হয়, আমি অনেক লোক কে জানি, যারা খুব শীঘ্র-ই মারা গেছে।তাতে আমার দুঃখ হয়েছে। আবার দীর্ঘ জীবনের পর মারা গেছে এমন লোকের জন্যও আমার অনুরূপ দুঃখ লেগেছে। আমার কাছে সুন্দর বুদ্ধিমত্তার অবক্ষয় অপমান তুল্য। আমি চাই না যে সে অপমান আমার ভাগ্যে ঘটুক। আমি আমার পরিচ্ছন্ন মন নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে চাই। হ্যাঁ, দীর্ঘদিন বেঁচে থাকাই আমার একমাত্র ভয়”।

##

এই বই টাতে আরো যাদের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে তারা হলেনঃ

• বাদশাহ হোসেন- যার প্রতিদিনের সন্দেহ ছিলো, “এটাই তার জীবনের শেষ দিন”।

• ইয়াসির আরাফাত- মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বিখ্যাত গেরিলা। বিশ্ব জুড়ে বহুল আলোচিত ব্যক্তিত্ব।

• উইলী ব্রাণ্ডট- পশ্চিম জার্মান নেতা চ্যান্সেলর উইলী ব্রাণ্ডট, যিনি চ্যন্সেলর হিসাবে ইউরোপের বিরাট ব্যক্তিত্ব। নোবেল বিজয়ী। এবং জন্মের মুহূর্ত থেকেই তার জীবন ছিল ব্যতিক্রমধর্মী।

• শাহ রেজা পাহলবী- যার করমর্দন নিস্প্রাণ। ঠোঁট তালাবদ্ধ দরজার মতো রুদ্ধ, শীতের বাতাসের মতো শীতল চোখ। মৃদুহাসি হীন মুখ। তিনি ঐশ্বরিক স্বপ্নে বিশ্বাস করতেন। শিশুসুলভ রহস্যের প্রতি তার আগ্রহ।

• জেনারেল গিয়াপ- ভিয়েতনাম যুদ্ধে যার নাম বার বার শোনা যেত। হ্যানয়ের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়। বরং ফরাসী বাহিনীকে দিয়েন বিয়েন ফু’তে পরাভূত করেছিলেন বলেই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। আমেরিকানরা দিয়েন বিয়েন ফু’র আতংকে দিন কাটাতো। নাম টা সংক্ষিপ্ত এবং মুখের উপর চপেটাঘাতের মত শুষ্ক। হুমকির মতো এই নাম বাতাসে ভাসতো। গিয়াপের বজ্রতুল্য ক্রোধ এবং পাথুরে নীরবতার জন্য হো চি মিন তাকে বলতেন ‘তুষারে ঢাকা আগ্নেয়গিরি’।

• নগুয়েন ভ্যান থিউ- রাষ্ট্রপতি, দক্ষিন ভিয়েতনাম।

• আর্চবিশপ ম্যাকারিয়স ।

ইতিহাসের স্রষ্টা ও উৎসের গুরুত্ব কখনো কমে না। অনাগত দিনগুলোতেও বইটির রাজনৈতিক মূল্য অক্ষুন্ন থাকবে।

বই- ইন্টারভিউ উইথ হিস্টরী
লেখক- ওরিয়ানা ফ্যালাচি
অনুবাদ- আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু
প্রকাশনা- আহমদ পাবলিশিং হাউজ
মূল্য- ২২০টাকা

:) :) হ্যাপি রিডিং :) :)

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪২

নিঝু বলেছেন: চমত্‍কার! প্রচন্ড আগ্রহ রয়েছে বইটি পড়ার।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪৮

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: সামনেই বই মেলা............ :) :)
হ্যাপি রিডিং !!!
ধন্যবাদ

২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪৪

প্রামানিক বলেছেন: বইটা পড়ার আগ্রহ জন্মে গেল।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৩

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: অসাধারণ একটা বই………………… এই বই নিয়ে বিতর্ক আছে এবং সেটা থাকবে-ই।
তবে গত ১২ বছরে আমি বেশ কয়েকজনকে দিয়ে এই বই কিনিয়েছি। তার মানে, এটা সংগ্রহে রাখার মতো একটা বই।
ভালো থাকবেন ভাইয়া :)
হ্যাপি রিডিং!!!!

৩| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৩

সাহসী সন্তান বলেছেন: বই সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে যে চমৎকার রিভিউটা পেশ করলেন তাতে.....হ্যাপি রিডিং'ই.....হবে বলে মনে হয়!




শুভ কামনা জানবেন!

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৮

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: আমার তো পুরো বইটাই লিখে দিতে ইচ্ছে করছিলো!!!!!!!!!!!
এই বই পড়ে আমার কথা মনে করতে হবে, হুমমম এবং ধন্যবাদ দেয়ার জন্য আমাকে খুঁজে বের করতে ইচ্ছে করবে :)
আমার সংগ্রহে রাখা প্রিয় বই গুলোর একটা। ১২ বছর ধরে আগলে রেখেছি।
হ্যাপি রিডিং !!!

৪| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৪১

অগ্নি সারথি বলেছেন: রিভিউ পরে তো বইটি পড়ার লোভ সামলাতে পারছিনা। ভাললাগা জানিয়ে গেলাম।

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:১৭

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: হ্যাপি রিডিং !!!

৫| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:২৫

কল্লোল পথিক বলেছেন: বইটা পড়ার আগ্রহ জন্মে গেল। শুভ কামনা জানবেন!

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২০

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ :)
হ্যাপি রিডিং !!!

৬| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎকারটা পড়লাম।
ধন্যবাদ শেয়ারের জন্য।
বইটা কিনতেই হচ্ছে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:০৯

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: হ্যাপি রিডিং !!!

৭| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২০

সায়ান তানভি বলেছেন: অসাধারণ একটা বই ।ভালো লাগলো রিভিউ ।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০৯

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: সংগ্রহে রাখার মতো একটা বই।
হ্যাপি রিডিং !!!

৮| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩৮

সায়ান তানভি বলেছেন: বইটা পড়েছিলাম এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়ে ,পড়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এটা সংগ্রহে রাখতে হবে ।তবে এখনো সংগ্রহে যুক্ত করতে পারি নি ।শীঘ্রই করবো ।বার বার পড়ার মতো ।ফালাচি অসাধারণ একজন সাংবাদিক ।তার একটা উপন্যাসও বাংলায় অনুবাদ হয়েছে ।সম্ভবত আনু মুহাম্মদ অনুবাদ করেছেন ।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৪

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: হুমমমম, বই টার নাম “হাত বাড়িয়ে দাও”।

৯| ১৫ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:২৭

ইমরান আশফাক বলেছেন: বইটি পড়ার আগ্রহ তৈরী হলো। অনেক কিছুই জানতে পারলাম যা আগে জানতাম না।

১৫ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০২

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ!!
সময় করে পড়ে ফেলুন :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.