নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি হচ্ছে প্রেমে পড়ার মতন একটা ব্যাপার, কোনো ধরনের কর্তৃত্ব জাহির করা নয়।
"যে পাথর একবার পাহাড় থেকে নেমেছে সে তার গন্তব্যে পৌঁছবেই। কোথাও সে বাধা প্রাপ্ত হবে, কোথাও তার গতি শ্লথ হবে কিন্তু যেখানে যাবার সেখানে সে যাবেই" হোসে মার্তির এই বিখ্যাত উক্তি লেখা হয়েছিল ফিদেলের জন্মের আগে তবে বোধকরি ফিদেলের জন্যেই। যার নেতৃত্ব নতুন করে লিখেছে কিউবার ইতিহাস। যিনি মুক্তির বার্তা পৌছে দিয়েছেন প্রতিটি কিউবানের ঘরে।
১৫৯২ সালে কলম্বাসের জাহাজ এসে ভীড়ে কিউবার বন্দরে। তারপর প্রায় তিনশ বছর স্পেনের অধীনে ছিলো কিউবা। ১৮৯৫ সালে প্রথমবারের মতো হোসে মার্তির নেতৃ্ত্বে স্পেনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে যুদ্ধ ঘোষণা করে কিউবা। যুদ্ধ ক্ষেত্রেই নিহত হন মার্তি। উনবিংশ শতকে স্পেনের কাছ থেকে কিউবা কিনে নেয়ার প্রস্তাব রাখে আমেরিকা। তবে স্পেন সেটা বিক্রি করতে রাজি হয়নি। তাই মার্সির বিদ্রোহকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করে আমেরিকা। চার বছর স্থায়ী যুদ্ধে পরাজিত হয় স্পেন। তবে আমেরিকা নিজেরা শাসনভার গ্রহণ করলো না। অনুগত সরকার বসিয়ে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে লাগলো দেশটির অর্থনীতি-রাজনীতি-নিরাপত্তা।
ফিদেল ক্যাষ্ট্রো’র পিতা এঞ্জেলো ক্যাষ্ট্রো ছিলেন তরুন স্প্যানিশ সৈনিক। কিউবাতে এসেছিলেন স্পেনের হয়ে যুদ্ধ লড়তে। পরাজিত হয়ে দেশে ফিরেও যান। পরে ভাগ্যের অন্বেষনে তিনি কিউবাতে এসে কাজ নেন চিনির কারখানায়। পরিশ্রম আর উদ্যোমের কারণে বিভিন্ন কাজ করে তিনি রীতি মত ভূস্বামী বনে যান। ফিদেলের মাতা লিনা ছিলেন কিউবান আদিবাসী। গরীব কৃষকের মেয়ে। ধর্মভীরু লিনা পড়াশোনা জানতেন না। ন্যায় অন্যায় বোধটা ফিদেল তার মায়ের কাছেই শিখেছেন। প্রেমে পড়ে ছিলেন এঞ্জেলো এবং লিনা। প্রণয় থেকে পরিণয়। জন্ম হয় ফিদেল ক্যাষ্ট্রো’র। সময়টা ১৩ আগষ্ট ১৯২৬। ঝড়-বাদলের মধ্য রাতে।
প্রথম ধর্মপিতা ফিদেল সান্টোস এর ফিদেল আর পিতার পদবী ক্যাস্ট্রো মিলিয়ে পাঁচ বছর বয়সে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে নাম রাখা হয় ফিদেল ক্যাষ্ট্রো। খ্রিষ্টানদের নাম রাখা হয় ব্যাপটাইজ করার মধ্য দিয়ে। কিউবাতে জন্মের পর সকলের-ই একজন ধর্মপিতা ঠিক করা হতো। তখন লোকের আয়ু ছিলো কম। নানা অসুখে বিসুখে মারা যেত তারা। তো বাবা মারা গেলে সেই ধর্মপিতা সন্তানের দেখাশোনা করবেন এটাই ছিল নিয়ম। ব্যবসায়ী বন্ধু ফিদেল সান্টোস কাজের চাপে সময় বের করতে পারছিলেন না। এদিকে ফিদেলেরও বয়স বেড়ে যাচ্ছিলো। তাই পাঁচ বছর বয়সে একজন হাইতিয়ান সরকারী চাকুরীজীবী লুই হিকর্ট'কে ফিদেলের ধর্মপিতা করে ব্যাপটাইজ করা হয়। মিশনারি বোর্ডিং স্কুল ‘কলেজ ডু ডোলারেস’ এ ফিদেলের শিক্ষা জীবন শুরু হয়। বাস্কেটবল, বেসবল আর পাহাড়ে ওঠা ছিলো ফিদেলের প্রিয় খেলা। পাহাড়ের চূড়ায় ওঠা ছিল ফিদেলের নেশা আর স্কুল বাস্কেটবল’এ চ্যাম্পিয়ানশীপ অর্জন ছিল তার চ্যালেঞ্জ। স্কুল শেষ করে ফিদেল ভর্তি হন হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়তে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের সময় সেটা। কিউবার সম্পত্তির উপর জনগনের কোন অধিকার ছিলো না। ৮০ ভাগ সম্পদের উপর অধিকার ছিলো কয়েকটি বিদেশি কোম্পানীর হাতে। তারুন্যের প্রথম প্রেম, হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের ছাত্রী মিত্রার সাথে বিয়ে করেন ফিদেল। অনন্য সুন্দরী মিত্রা ছিলেন ধনী পরিবারের মেয়ে। বাতিস্তা সরকারের পারিবারিক বন্ধু। যার বিরুদ্ধে পরে ফিদের আন্দোলনে নেমেছিলেন। ছয় বছরের বিবাহিত জীবনে তাদের এক পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। পারস্পারিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে তারা বিচ্ছেদের চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
বাস ভাড়াকে কেন্দ্র করে সরকার বিরোধী এক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু। কিউবার রাজনীতি মঞ্চে অভিষেক ঘটলো ফিদেলের ।যোগ দিলেন কিউবান পিপলস পার্টিতে। একসময় ফিদেল দলটির প্রধান এডুয়ার্দো চিবাসের প্রধান সহকারী হন। সে সময় রাজনীতির পাশাপাশি পলিটিক্যাল ইকোনোমিতে উচ্চশিক্ষার জন্য চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু ১৯৫২ সালের একটা ঘটনা জীবনের সব হিসাব নিকাশ বদলে দেয়। এক সময় চিবাস তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট কতগুলো অভিযোগ তোলেন। সরকার চিবাসকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন অভিযোগ প্রমাণের। রেডিও স্টেশনের মালিক চিবাস রেডিও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দুর্নীতি বিরোধি অভিযান পরিচালনা করতেন। চিবাস ফিদেলকে নিয়ে যান উক্ত স্টেশনে, সরকারের দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধ এক আবেগঘন বক্তৃতা রাখেন। চ্যালেঞ্জের প্রতি উত্তরে যথেষ্ট প্রমাণ পত্র হাজির করতে ব্যর্থ চিবাস লাইভ সম্প্রচারিত বক্তৃতার এক পর্যায়ে লাইসেন্সকৃ্ত পিস্তল দিয়ে নিজের মাথায় গুলি করেন। ব্যক্তিগত অপমানবোধের মুক্তির এই ঘটনা বদলে দেয় কিউবার ইতিহাস। এসময় ফিদেলকে কিউবান পিপলস পার্টির প্রধানের দায়িত্ব নেয়ার অনুরোধ করা হলে তিনি সেটা উপেক্ষা করেন। কেননা পিপলস পার্টির সাথে ফিদেলের কিছু মতাদর্শগত পার্থক্য ছিলো।
রাজনীতির মাঠে নামেন ফিদেল। ১০ জনকে নিয়ে গঠন করেন একটি রাজনৈতিক সেল। দলটির নাম রাখেন “মুভমেন্ট”। ভাই রাউল ক্যাষ্ট্রোও ছিলেন সেই দলের সদস্য। তাদের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য ছিলো বাতিস্তা সরকারকে উৎখাত করা। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে দলের সদস্য সংখ্যা। দলের জন্য অস্ত্র সংগ্রহের জন্য তারা মনকাডা ক্যান্টনমেন্ট আক্রমনের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৫৩ সালের ২৬ জুলাই রাতে ১২০ জন মিলে অপারেশনের যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। সামনে থাকবে ৮০ জন ব্যাক আপে ৪০জন। চরমভাবে ব্যর্থ হয় সেই অভিযান। মাত্র ১৯ জন পালিয়ে সিয়েরা মিয়েস্ত্রা পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। বাকিদের অনেকে মারা যায়, অনেকে পালিয়ে যায়, অনেক দলত্যাগ করেন।
পরদিন-ই মার্শাল জারি হয়। মারাত্মক আহতদেরকে ডাক্তারের শরনাপন্ন করানো ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না। সিদ্ধান্ত হলো আহতদেরকে সান্তিয়াগো ডু কিউবার আর্চ বিশপের মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করানো হবে। ৩জন রওনা হয় সান্তিয়াগোর উপকূলের দিকে। পাহাড়ি পথের দীর্ঘ যাত্রায় ক্লান্ত হয়ে ভোর রাতে তারা একটা কুড়ে ঘরে বিশ্রাম নেয়ার জন্য থামে। ক্লান্তিতে ঘুমিয়েও পড়েন। ঘুম ভাঙ্গে বুটের লাথিতে। আর্চ বিশপের ফোনে আড়ি পেতেই মুলত সেনাবাহিনী এই অভিযানে নামে। দড়ি দিয়ে হাত বেধে তিনজনকে লাইন করে দাঁড় করানো হয়। নাম জিজ্ঞেস করতেই ফিদেল সহ বাকি দুই জন নিজেদের নাম বানিয়ে বলে। সৈন্যরা তাদেরকে বসতে বললে তারা বলে গুলি করলে দাঁড়ানো অবস্থাতেই করো। কৃষাঙ্গ লেফটেন্যান্ট পেড্রো সারিয়া সৈন্যদেরকে গুলি করতে বারন করেন। বন্দীদেরকে ক্যান্টনমেনটে নিয়ে যাওয়াকে যথার্থ বিবেচনা করে ৩জনকে হাত বাধা অবস্থায় হাঁটিয়ে হাইওয়ে পর্যন্ত নিয়ে যান। এক পর্যায়ে ফিদেল পেড্রোর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলেন আমি-ই ফিদেল। লেফটেনেন্ট চমকে উঠে বলেন, “ আর কাউকে বলবে না, কিছুতেই বলবে না, এ নাম আর একবারও উচ্চারন করবে না আর”। লেফটেনেন্ট জানতেন ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে গেলে বন্দিদেরকে আর জীবিত রাখা হবে না। তাই তিনি প্রচলিত আইনের আওতায় বিচার পাওয়ার জন্য ৩জনকে থানায় সোপার্দ করেন। বিপ্লব সফল হওয়ার পর এই লেফটেনেন্টকে ফিদেল প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের প্রধান করেন।
বিচারে ১৫ বছরের জেল হয় ফিদেলের। মার্তে ছিলেন ফিদেলের প্রথম অনুপ্রেরণা। জেলখানার বন্দী জীবনে তিনি কার্ল মার্কস’এর উপর বিস্তর পড়াশুনা করেন। জেলে বসেই আবার নতুন দল গঠন করেন। নাম দেন “মুভমেন্ট ২৬ জুলাই” সংক্ষেপে এম-২৬-৭। আন্দোলনের নাম দেন ২৬ জুলাই আন্দোলন। ২২ মাস জেল খাটার পর আসন্ন জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষ্যে সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি পান ফিদেলসহ অন্যান্যরা। বাতিস্তা সরকার তার কফিনের শেষ পেরেকটা তখনই ঠুকে দেন। ফিদেল এবং রাউল চলে যান মেক্সিকোতে। সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকে সফল করতে গেরিলা বাহিনী গঠনে মনোযোগী হন। প্রশিক্ষক হিসেবে পান স্প্যানিশ জেনারেল আলবার্তো বায়ো'কে। পরিচয় ঘটে চে' গুয়েভারা’র সঙ্গে। ডাক্তার হিসেবেই গেরিলা দলের সক্রিয় সদস্য হন চে'। ১৯৫৬ সালের ২৫ নভেম্ভর রাতে ৮২জন সহযোদ্ধাকে নিয়ে ‘গ্রানমা’ নামের একটা ছোট জাহাজে করে মেক্সিকো থেকে কিউবার উদ্দেশ্যে রওনা হন ফিদেল। পৌঁছানোর কথা ৩০ ডিসেম্বর। উপকূলে যোগ দিবে অভ্যন্তরীন আরেকটি দল। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে তারা যখন কিউবা উপকূলে পৌঁছে। কোস্ট গার্ড টের পেয়ে সেনা বাহিনীকে খবর দেয়। শুরু হয় বন্দুক যুদ্ধ। শেষ পর্যন্ত ২২ জন সিয়েরা মিয়েস্ত্রা পাহাড়ে পৌছাতে সক্ষম হয়। বাকিরা মারা যায়, পালিয়ে যায়, অনেকে আবার ধরাও পড়ে। সিয়েরা মিয়েস্ত্রা পাহাড়ে থেকেই আখ চাষীদের প্রশিক্ষিত করে ছোট ছোট গেরিলা দল গঠন করেন ফিদেল। পুরো বিপ্লবে মনকাডা পাহাড়ের গেরিলা যুদ্ধের কথাও সমান উল্লেখযোগ্য।
মাত্র তিনশ জন গেরিলা বাতিস্তা সরকারের আশিহাজার সৈন্যের সেনাবাহিনীকে নাজেহাল করে ছাড়ে। ২৫ মাস ধরে চলে সেই যুদ্ধ। এই পচিশ মাসের প্রতিটি দিন প্রতিটি রাত ফিদেল ছিলেন যুদ্ধক্ষেত্রে। একদিন তিনি যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে ছিলেন। ১৯৫৮সালের ২৪ ডিসেম্বর। দুটো জীপে চড়ে কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে ফিদেল সেদিন তার মে’কে দেখতে যান। “নিউইয়র্ক টাইমস” এক সাংবাদিক গোপনে সিয়েরা মিয়েস্ত্রা পাহারে এসে ফিদেলের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ করেন। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এই কিউবার আন্দোলনের কথা, সংগ্রামের কথা গোপণ যুদ্ধ প্রস্তুতির কথা। কিউবাতে বাতিস্তার জনসমর্থন নেমে আসে শূন্যের কোঠায়। ১৯৫৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাতিস্তা হাভানা ছেড়ে পালিয়ে যায় মেক্সিকোতে। ক্ষমতায় বসিয়ে রেখে যান এক সেনা অফিসারকে, যিনি ছিলেন কিউবার ধনীক শ্রেণীর মদতপুষ্ট। সিয়েরা পাহাড় থেকে বের হয়ে কিউবার দ্বিতীয় শহর সান্তিয়াগো ডু কিউবা দখল করে ফিদেল। হাভানার দিকে অগ্রসর হন তিনি। খবর পেয়ে পালিয়ে যায় সেনা অধ্যুষিত সেই সরকার। হাভানায় পৌঁছে কয়েক লাখ মানুষের সামনে বক্তৃতা রাখে ফিদেল। জন সমুদ্র থেকে সেদিন উড়ানো হয় শান্তির প্রতীক কবুতর। উড়তে উড়তে এক কবুতর এসে বসে ফিদেলের কাঁধে। জনগনের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন সৌভাগ্যের বার্তা বাহক।
বিপ্লবের পর সরাসরি ক্ষমতা দখল করেননি ফিদেল। অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় বিচারপতি উরুশিয়াকে। ফিদেল হলেন বিপ্লবী সেনা বাহিনী প্রধান। সরকার চালানো তো আর ছেলে খেলার বিষয় নয়। অভিজ্ঞতা থাকা চাই। সেই সময় ফিদেল, রাউল, চে, আবেল সবার বয়সই ত্রিশের কোঠায়, কারো কারো ত্রিশের নিচে। সেই সময় কিছু জটিলতা দেখা দিলে উরুশিয়া জনগনের দাবীর মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন ফিদেল। চে’ দায়িত্ব নেন অর্থ দপ্তরের। জাতিসংঘে কিউবাকে প্রতিনিধিত্ব করা প্রথম অধিবেশনে চার ঘন্টার এক বক্তৃতা রাখেন। সম্ভবত সেটাই জাতি সংঘের সব থেকে লম্বা বক্তৃতা। ক্লান্তিহীন ভাবে কথা বলতে পারেন তিনি। কিউবা,আমেরিকা থেকে যে দেশের দূরত্ব মাত্র ৯০ মাইল। চিনি এবং তামাকের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত। কিউবাতে সবাই শিক্ষিত। বেকারত্ব শূন্য কোঠায়। বর্তমানে কিউবানদের গড় আয়ু ৭৫ বছর।
১৯৬১ সালের এপ্রিলে কিউবাতে অতর্কিত বিমান হামলা চালায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কেনেডী সরকার। সবটুকু শক্তি দিয়ে আক্রমণ প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চে’ নেয় পশ্চিমাঞ্চলের দায়িত্ব, রাউল নেউ দক্ষিনের আর ফিদেল থাকেন হাভানাতে। বে অব পিগস এ এক সর্বাত্মক যুদ্ধ হয়। মাত্র ৭টি বিমান ছিলো কিউবার। সেটা দিয়েই তারা মার্কিন নৌবহরে হামলা চালায়। কিউবান’রা সবটুকু শক্তি ঢেলে নেমে পড়ে স্থল যুদ্ধে। শতাধিক যোদ্ধা নিহত হয় সে যুদ্ধে। এক যোদ্ধা বোমার আঘাতে মারাত্মক আহত হয়ে রক্তাত্ত অবস্থায় ক্রলিং করে গিয়ে একটা বাড়ির দরজায় নিজের রক্ত দিয়ে লেখে, ‘ফিদেল’। তারপরই সে মারা যায়। ‘ফিদেল’ নামটার মধ্যেই হয়তো কিউবান’রা খুঁজে নিয়েছিলেন মুক্তির মন্ত্র। পিছু হটতে বাধ্য হয় আমেরিকা। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ক্রশ্চেভের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করেন ফিদেল। সেই অনুযায়ী সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবার মাটিতে মিসাইল বসায়। যদি মিসাইল না সরানো হয় তবে সোভিয়েতের বিরুদ্ধে আণবিক যুদ্ধ বাধানোর ঘোষনা দেন কেনেডি। মিসাইল সরিয়ে নেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। অরক্ষিত হয়ে পড়ে কিউবা।
সব বিপর্যয় কাটিয়ে এখন পর্যন্ত কিউবা টিকে আছে কারণ প্রতিটি কিউবান নাগরিক মনে করেন “আমিই কিউবা”। যে জাতি প্রলোভনকে প্রত্যাখান করতে পারে সে জাতিকে সহজে পরাজিত করা সম্ভব নয়। অন্তত কিউবান'রা তার প্রমাণ রেখেছেন। বহুবার হত্যা চেষ্টার পরো বহাল তবিয়তে আছেন ফিদেল। কারন তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে তার জনগন। কারণ তিনি জনগনের সাথে মিশে আছেন, তাদের সাথে মিশে অবিরাম যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। কিউবার রাষ্ট্রীয় সব দায়িত্ব থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়িয়েছেন ফিদেল। তার থাকা কিংবা না-থাকার উপর যে কিউবার ভবিষ্যত নির্ভর করেনা, সেটার জন্যই তার এই সিদ্ধান্ত। তিনি মনে করেন, “অন্যকে দায়ী করে লাভ নেই, অন্যের উপর ভরসা করে লাভ নেই, অন্যের চাটুকারিতা করেও লাভ নেই। আস্থা রাখতে হবে নিজের উপর, হতে হবে আত্মবিশ্বাসী”।
তথ্য ঋণ- শাহাদুজ্জামান স্যার
১০ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০৯
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ পুলহ, ঠিক করে দিয়েছি।
আমি জীবনেও নিজের লেখা পুনপঠন করি না (খারাপ অভ্যাস)
আপনিও ভালো থাকবেন!
২| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৪০
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সব বিপর্যয় কাটিয়ে এখন পর্যন্ত কিউবা টিকে আছে কারণ প্রতিটি কিউবান নাগরিক মনে করেন “আমিই কিউবা”। যে জাতি প্রলোভনকে প্রত্যাখান করতে পারে সে জাতিকে সহজে পরাজিত করা সম্ভব নয়।
-----
“আস্থা রাখতে হবে নিজের উপর, হতে হবে আত্মবিশ্বাসী”। -একেবারে অন্তর্নিহিত সত্য।
অসাধারন অনন্য নেতার জীবনী মন্ত্রমুগ্ধের মতো পাঠ করলাম!
অনেক অনেক ধন্যবাদ সহজ, সাবলিল, সংক্ষিপ্ত অথচ পূর্নতর ইতিহাস তুলে ধরায়
+++++++++++++++++++++
১০ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:১২
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: এত্তো গুলো প্লাস !!!!!!
অসংখ্য ধন্যবাদ বিদ্রোহী ভৃগু
৩| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৫২
মোঃ আক্তারুজ্জামান ভূঞা বলেছেন: মুগ্ধ পাঠ।
১০ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:১৩
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: নেক অনেক ধন্যবাদ মোঃ আক্তারুজ্জামান ভূঞা ।
ভালো থাকবেন অনেক অনেক !!
৪| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫৭
রিমন রনবীর বলেছেন: সন্ত্রাসী বিজয়ী হলে হয়ে যায় কিংবদন্তী।
১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৫৬
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: কিউবার ইতিহাসটা আর কিভাবে লেখা হতে পারতো, ফিদেল কাষ্ট্রো'কে ছাড়া!
৫| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৩৩
অ্যালেন সাইফুল বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম। ধন্যবাদ।
১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৯
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন:
৬| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৫
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন। ধন্যবাদ নান্দনিক নন্দিনী।
১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩২
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: অনেক খুশি হলাম !!
ভালো থাকবেন
৭| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৫০
সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: নন্দিনী আপু, ভীষন গোছালো একটা লেখা। যত্নের ছাপ আছে লেখায়। নতুন কিছু শিখলাম, জানলাম সেজন্যে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
অনেক ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।
১২ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১৩
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: সামু পাগলা০০৭, লেখাটা আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।
আপনিও ভালো থাকবেন অনেক-অনেক!!
৮| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ২:৪৭
ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
বাংলার জনগনের জন্য রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে মুজিবের উপরে কেউ নেই। কাস্ত্রো বলেছিলেন- আমি হিমালয় দেখিনি তবে মুজিব দেখেছি। ব্রিটিশ পত্রিকাগুলোতে মুজিবের কথা ফলাও করে প্রচার হয়েছে। মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত সেই নেতার মৃত্যুতে বারবার আফসোস করেছেন। নিউজ উইক তাকে বলেছে পয়েট অব পলিটিক্স!!
তাই আমাদের সকলের কাস্ত্রোর নীতি নয় মুজিবের জীবনী আর তার ইতিহাস জানার প্রয়োজন।
লেখায় কিছু টাইপো আছে ঠিক করে নিয়েন। ধন্যবাদ।
১২ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৪৭
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: সকলের জানার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক সিদ্ধান্তের ভার, সকলের উপর-ই থাকুক।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!
ভালো থাকবেন
৯| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪১
অন্তু নীল বলেছেন:
সাবলীল বর্ণনা। এক নিমেষেই পড়ে ফেললাম।
অনেক কিছু জানতেও পারলাম।
+++
১২ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৫৩
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ অন্তু নীল !
ভালো থাকবেন
বি. দ্র. মাত্র ৩টা প্লাস (ফুঁপিয়ে কান্নার ইমো হবে)
১০| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৪৪
ডঃ এম এ আলী বলেছেন: ফিদেল কাষ্ট্রো’র জীবনী নিয়ে সুন্দর সাবলিল লিখাটি পাঠে ভাল লাগল । অনেক বিষয় জানা হল ।মন্তব্যের ঘরে ভ্রমরের ডানার কথাগুলিইও প্রনিতব্য । আপনার লিখার মধ্যেফিদেল কাষ্ট্রো’র পিতা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রথম ধর্ম পিতার প্রসঙ্গটি একটু বুঝতে পারছিনা , আপনার লিখায় ফিদেল সান্টোস নামে কিছু দেখতে না পাওয়ায় এমনটি হচ্ছে । এটা আমার জানার অজ্ঞতা তাতে কোন সন্দেহ নেই । বিষয়টি একটু পরিস্কার করে দিলে খুশী হব ।
ফিদেল কাষ্ট্রো’র পিতা এঞ্জেলো কাষ্ট্রো ছিলেন তরুন স্প্যানিশ সৈনিক। কিউবাতে এসেছিলেন স্পেনের হয়ে যুদ্ধ লড়তে। পরাজিত হয়ে দেশে ফিরেও যান। পরে ভাগ্যের অন্বেষনে তিনি কিউবাতে এসে কাজ নেন চিনির কারখানায়। পরিশ্রম আর উদ্যোমের কারণে বিভিন্ন কাজ করে তিনি রীতি মত ভূস্বামী বনে যান। ফিদেলের মাতা লিনা ছিলেন কিউবান আদিবাসী। গরীব কৃ্ষকের মেয়ে। ধর্মভীরু লিনা পড়াশোনা জানতেন না। ন্যায় অন্যায় বোধটা ফিদেল তার মায়ের কাছেই শিখেন। প্রেমে পড়ে ছিলেন তারা। জন্ম হয় ফিদেল কাষ্ট্রোর। সময়টা ১৩ আগষ্ট ১৯২৬। ঝড়-বাদলের মধ্য রাতে।
প্রথম ধর্মপিতা ফিদেল সান্টোস এর ফিদেল আর পিতার পদবী মিলিয়ে ৫ বছর বয়সে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে নাম রাখা হয় ফিদেল কাষ্ট্রো।
আবারো ধন্যবাদ তথ্যবহুল লিখাটির জন্য
শুভেচ্ছা রইল
১২ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:১৯
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: প্রেমে পড়ে ছিলেন এঞ্জেলো এবং লিনা। প্রণয় থেকে পরিণয়। জন্ম হয় ফিদেল ক্যাষ্ট্রো’র। সময়টা ১৩ আগষ্ট ১৯২৬।ঝড়-বাদলের মধ্য রাতে।
প্রথম ধর্মপিতা ফিদেল সান্টোস এর ফিদেল আর পিতার পদবী ক্যাস্ট্রো মিলিয়ে পাঁচ বছর বয়সে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে নাম রাখা হয় ফিদেল ক্যাষ্ট্রো। খ্রিষ্টানদের নাম রাখা হয় ব্যাপটাইজ করার মধ্য দিয়ে। কিউবাতে জন্মের পর সকলের-ই একজন ধর্মপিতা ঠিক করা হতো। তখন লোকের আয়ু ছিলো কম। নানা অসুখে বিসুখে মারা যেত তারা। তো বাবা মারা গেলে সেই ধর্মপিতা সন্তানের দেখাশোনা করবেন এটাই ছিল নিয়ম। ব্যবসায়ী বন্ধু ফিদেল সান্টোস কাজের চাপে সময় বের করতে পারছিলেন না। এদিকে ফিদেলেরও বয়স বেড়ে যাচ্ছিলো। তাই পাঁচ বছর বয়সে একজন হাইতিয়ান সরকারী চাকুরীজীবী লুই হিকর্ট'কে ফিদেলের ধর্মপিতা করে ব্যাপটাইজ করা হয়।
মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা। আশা করি তথ্য গুলো এখন অনেকটাই বোধগম্য হয়েছে।
ভালো থাকবেন ডঃ এম এ আলী।
১১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:২২
লিযেন বলেছেন: ধন্যবাদ নান্দনিক নন্দিনী । Next plz.................
১৩ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:২৭
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন:
১২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৩
কলম চোর বলেছেন: এ++++++++++++++
এক কথায় অসাধারণ লেখা।
১৩ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:২৯
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ!! ধন্যবাদ!!!
১৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫৭
আলোরিকা বলেছেন: “অন্যকে দায়ী করে লাভ নেই, অন্যের উপর ভরসা করে লাভ নেই, অন্যের চাটুকারিতা করেও লাভ নেই। আস্থা রাখতে হবে নিজের উপর, হতে হবে আত্মবিশ্বাসী”-----------অসাধারণ উক্তি ! ফিদেল সম্পর্কে অনেক কিছু জানা হলো । ভাল থাকুন নন্দিনী । অনেক অনেক শুভ কামনা
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:১৭
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ!! ধন্যবাদ!!!
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৩৭
পুলহ বলেছেন: তথ্যবহুল লেখা। পড়ে ভালো লেগেছে। শেষ প্যারাটা ইন্সপায়ারিং।
পুরো লেখাটা উত্তম পুরুষে লেখা হয়েছে, "লেফটেনেন্ট জানতেন ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে গেলে আমাদেরকে আর জীবিত রাখা হবে না।"-- এই লাইনটাও সেক্ষেত্রে উত্তম পুরুষেই হবার কথা।
কিছু কিছু টাইপো আছে। সময় সুযোগ মত ঠিক করে নিয়েন আপু।
শুভকামনা আপনার জন্য! ভালো থাকবেন।