নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যে কোনো ভূমিকায় সমানে লড়ে যাই, আপনি যেমন চান আমি ঠিক তাই।

নান্দনিক নন্দিনী

লেখালেখি হচ্ছে প্রেমে পড়ার মতন একটা ব্যাপার, কোনো ধরনের কর্তৃত্ব জাহির করা নয়।

নান্দনিক নন্দিনী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আপনার বিয়েটা কোনো ঐতিহাসিক চুক্তি নয় যে...

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:২১



বিয়ের বর-কনেকে পাশাপাশি বসানো হয় কেন জানেন? এটা বোঝানোর জন্য যে, তারা একে অপরের পথচলার সঙ্গী। সহযোগীতাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে পাশাপাশি এগিয়ে যাওয়ার জন্য। মুখোমুখি হতে হয় লড়াই করতে, প্রতিযোগীতা করতে। মুখোমুখি হলে তো ঝগড়া হয়, সঙ্গ দেয়া হয় না। সাম্প্রতিক সময়ে পাওয়া বিয়ের দাওয়াতগুলো আমি সযত্নে এড়িয়ে চলি। এমনকি খুব বিশেষ দাওয়াত গুলোতেও সম্ভব হলে পরে গিয়ে দেখা করে আসি। কেন?

খুব সহজ ভাষায় বললে, বিয়ে একটা চুক্তি। আইন অনুমোদিত, ধর্মীয় বিধান মেনে, সামাজিক স্বীকৃতি সাপেক্ষে প্রাপ্ত বয়স্ক নারী একসাথে থাকার চুক্তি। এক বাসায় থেকে পরস্পরের সাথে ভালাবাসার বিনিময়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে অপর পক্ষের কাছে অলিখিত বিশ্বস্ততার আশা করা হয়, যা মিলতেও পারে আবার নাও মিলতে পারে। বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র/পাত্রী পূর্ব পরিচিতি হতেও পারেন আবার নাও হতে পারেন। এবং এই ধরনের আয়োজনে অতিথি হিসেবে প্রায়শ আমাদের সবার ডাক পড়ে। তো?

বর্তমানের বিয়ের দাওয়াতগুলো আমার কাছে শো অফ ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। আতিশয্য কাকে বলে, কত ধরনের হতে সবকিছুর ধারণা পাবেন সেখানে গেলে। আয়োজন আছে আন্তরিকতা নেই। ৫০০মানুষের ধারনক্ষম পার্টি হল ভাড়া করে দাওয়াত করা হয় ২,০০০জনকে। ভেন্যুতে ঢোকার মুখে উপহার গ্রহনের টেবিল। ভাবখানা এমন আসুন উপহার দিন, খাবার খান, বর-বৌয়ের সাথে ছবি তুলুন এবং বিদায় হোন। লাস্ট দুই তিনটা বিয়েতে মন্ত্রী মহোদয়দের আগমন আমায় আরো বেশি অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দিয়েছিল। দুই পক্ষেরই অস্থিরতা মন্ত্রী মহোদয় আসছেন না কেন! তো কাংক্ষিত সেই মহামান্য তার অনুসারী ব্যক্তিবর্গ সহকারে এলেন, দুকপি ছবি তুললেন, চলেও গেলেন। আয়োজক পক্ষ হাফ ছেড়ে বাঁচলেন 'যাক বাবা’ শেষ পর্যন্ত সমাজে মুখ দেখাতে পারবেন, না এলে তাদের সম্মান কতটা কমে যেত আপনি ভাবতেও পারছেন না!

এবার আয়োতনের প্রসঙ্গে আসি। আপনি বিবাহের ভেন্যুতে ঢুকে দেখবেন খুব সতর্কতার সাথে নিজেকে প্রদর্শন চলছে। কিছু মানুষ তো ভেন্যুর প্রতিটি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে ছবি না তুলে যাবেন না বলে বাসা থেকে পন করে এসেছেন। একটা ইঞ্চিও বাদ গেলে সম্ভবত মাঝ রাতে তাদের ঘুম ভেঙে যায়, বাকি রাত আর ঘুম আসে না। ২,০০০জন আমন্ত্রিত অতিথির জন্য স্টেজের সামনে শ'খানিক চেয়ার দেয়া থাকে। বসে বসে বর বৌয়ের ফটোসেশান উপভোগ করার জন্য। লাখ খানিক ছবি, স্লো মোশানের কিছু ভিডিও, কালাচশমা পরিহিত স্ট্যান্ড কমেডি। বৌ কখনো বরের ডান কাঁধে মাথা রাখছে কখনো বাম কাঁধে! আপনি দর্শকের ভুমিকায়। আর খাবার টেবিলেগুলোতে চলে একদল অতিথি খেয়ে উঠবে তো আরেক দল বসবে, টেবিল পরিস্কারের সময় দিতেও অতিথিরা নারাজ। যা অবস্থা তাতে আশা করি কিছু দিনের মধ্যেই বিয়ে বাড়ির খাবারের পার্সেল সার্ভিসও চালু হয়ে যাবে।

খেয়াল করবেন মেসির বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথি ২০০জনের মত। কেন? মাশআল্লাহ মেসির তো অর্থকড়ির সমস্যা নাই। সুহৃদ - বন্ধু- আত্মীয়-স্বজনেরও অভাব নাই। তবুও! কারণ সেটা সভ্য দেশ। সেখানে অতিথি মানে অতিথি। সেখানে ২০০জন ধারনক্ষম ভেন্যু মানে ২০০জন্য ৩/৪ঘন্টা নিজেদের মধ্যে সময় কাটায়। সেখানে নানা পদের খাবারের মেন্যু ধীরে সুস্থে সার্ভ করা হয়। বর-কনে হাসি মুখে অতিথিদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। মেসির অতিথি তালিকা ছিলো সামাজিক চাপ মুক্ত। বিয়ের তারিখ ঠিক হওয়ার পর তাকে নিশ্চিত 'ভাই দাওয়াত পাচ্ছি কবে' ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়নি। কিংবা বিয়ের পরে 'দাওয়াত তো পেলাম না! ধরনের আক্ষেপও শুনতে হয়নি।

যাদেরকে দায়সারাভাবে ডেকে চারটি খাবার খাইয়ে বিদায় করছেন এটা কোনো মানদণ্ডেই তাদেরকে সম্মানিত করা নয়। জাস্ট আনুষ্ঠানিকতা। তো অন্যের সাথে যেটা করছেন সেটা ফেরতও পাচ্ছেন। বলতেই পারেন দাওয়াত করলেও সবাই আসে না বলে এই আয়োজন। সংখ্যাটা বড় ব্যাপার নয়। আত্মিক বন্ধনটা বড়! দেখানো আয়োজন বন্ধ করুন। যাদেরকে অতিথি করেছেন তাদের কাছ থেকে নিজেদের সম্পর্কে শুনুন। তাদের প্রতি ভালোবাসা শব্দে-বাক্যে- অনুচ্ছেদে প্রকাশ করুন। বিশ্বাস করুন আয়োজনটা ভরে যাবে ভালোবাসায় এবং শ্রদ্ধায়!

বিয়েতে বর-কনের পরিবার সাধ্যের মধ্যে সম্ভাব্য সব পণ্য হাজির করেন। এসি, ফ্রিজ, টিভি, গাড়ি, বাড়ি সব। অথচ এর চেয়েও জরুরি বিষয় হলো সন্তানকে জীবনের নতুন অধ্যায় নিয়ে বোঝানো। এটা ঠিক যে জীবনের কোনো ব্যাকরণ নাই, (a+b) এর কোনো সূত্রও নাই। তবুও অভিজ্ঞতার বিনিয়ম অনাকাংখিত পরিস্থিতিকে সহনীয় করে তোলে। বিয়েতে অভিভাবকদের উচিৎ ভোগ্যপণ্যের সাথে সাথে কিছু উপদেশ-পরামর্শও উপহার দেয়া। বলে দিন, সংসারটা সার্ভাইভ করার জায়গা নয়, এটা ধারন করতে হয়। দায়িত্ব, ভালাবাসা, মায়া এগুলো দ্বিগুন হয়ে ফিরে আসে।

এখন পর্যন্ত কিছু বিয়ে দেখেছি বর-কনেকে নানা ভাবে রাজি করানো হয়। পদ এবং পদবীর সাথে বিয়ে দেয়া হয়। পরিচিতি আর সুনামের কথা ভেবে লাভের গোপন বাসনাপূরণ করতে গিয়ে প্রথম অপকারটা করে অভিভাবক এবং আত্মীয়রা। অথচ ইসলাম ধর্মে স্পষ্ট করে বলা আছে, বিবাহ এবং ব্যবসায়ে অংশীদারদের কাছে তথ্য গোপন করবেন না। অনেকেই আছেন এমন যে, অনত্র্য বিয়ের পর প্রাক্তন প্রেমিক কিংবা প্রেমিকাকে ভুলতে পারেন না। অভিভাবকদের কছে হয়তো নিজের ভালোলাগার মানুষের কথা সাহস করে বলতে পারেননি কিংবা বলেছিলেন হয়তো, অভিভাবকরা মানেননি অন্যত্র বিয়ে দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে ইসলাম বলছে, এই যে প্রাক্তনকে মনে করছেন কখনো কখনো গভীর ভাবেই মনে করছেন এটা জ্বিনা করার সমান অপরাধ। এই পাপের শাস্তি পেতে হবে অভিভাবকদেরকে। এইধরনের অপ্রাপ্তি থেকে সামাজিক ব্যভিচারও বাড়ে। কেউ কেউ পরিবারের সাথে, আত্নীয়তার সম্পর্ক পর্যন্ত ত্যাগ করে থাকে। ইসলাম বলছে কেউ যখন মুখ ফুটে পছন্দের কাউকে বিয়ের কথা বলে তাকে এবং পাত্র-পাত্রী উভয়ে রাজি থাকলে বিয়ে করিয়ে দেয়াটা উত্তম। সেই বিয়েটা অন্যদের মতে মানান সই না হলেও, এতে করে খুব খারাপ কিছু হলে বিবাহ বিচ্ছেদ হবে; অন্য অপরাধগুলো সংগঠিত হবে না। অভিভাবকগন ভাবেন অল্প বয়েস, ঠিক মতো বোঝে না, ভুল করছে। এক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন, ধর্ম যে বয়সকে বিয়ের উপযুক্ত বলে ঘোষণা করে, সেখানে শারীরিক এবং মানসিক উভয় বিষয়কেই ধাতব্যের মধ্যে রাখা হয়েছে।

শীর্ষেন্দুর 'পার্থিব' পড়া থাকলে একটা লাইন মনে করতে পারবেন, বিয়ে হচ্ছে দু'জন মানুষের নিরাবরন সম্পর্ক। তো তাদেরকে একে অন্যের সাথে সহজ হতে সময় দিন। অনধিকার চর্চা বন্ধ করুন। আত্মীয়-প্রতিবেশি-দাওয়াতের অতিথি কেউ এসে সংসারটা করে দেয় না। বিয়েটা ভাল হয়েছে বা মন্দ হয়েছে এই মন্তব্য থেকে বিরত থাকুন। সবথেকে প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ন কথা হলো, পনার বিয়েটা কোনো ঐতিহাসিক চুক্তি নয় যে সব্বাইকে সেখানে উপস্থিত থাকতেই হবে। তার চেয়ে বরং আপনজন আর কাছের মানুষদের সমাদর করে ডেকে নিন। আড়ম্বরতা সম্পর্কের সৌন্দর্য ঢেকে দিচ্ছে না তো?

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:০২

রাফা বলেছেন: ছোট বেলায় দেখেছি ,বিশেষ করে চট্টগ্রামের দিকে ।কম্পিটিশন করে কোরবানির গরু কেনার হিরিক।কে কত উচ্চমূল্যে ক্রয় করতে পারে তার অসুস্থ প্রতিযোগিতা।এটা দিয়ে স্ট্যাটাস নিশ্চিত করা।
ঠিক তেমনি এখন বিয়ের প্রতিযোগিতা দেখতেছি।ফটোসেশন হলো যার মূখ্য উদ্দেশ্য।হানিমুন পর্যন্ত বাদ যাচ্ছেনা।যদি সম্ভব হইতো অন্দরমহলের ভিডিও আপলোড হয়ে যেতো।অথচ যা শুধুই একান্ত নিজেদের মধ্যেই থাকার কথা।
আমি একটা বুদ্ধি বের করেছি এরকম বিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার।মেইল করে বিয়ের গিফট পাঠিয়ে বলছি শিডিউল মেলাতে পারলামনা বলে দুঃখিত।

ধন্যবাদ,না.নন্দিনী টু দ্যা পয়েন্ট পোষ্টের জন্য।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:২১

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: বাহ, আপনিও আমার দলে...

২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:৩২

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: অনেক সুন্দর একটি পোস্ট। আপনার সাথে একমত না হয়ে পারলাম না।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:৩৭

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ সুজন ভাই।
ভালো থাকবেন।

৩| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল ভাষায় চমৎকার লিখেছেন।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫০

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ, ধন্যবাদ !

৪| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:০৬

লিংকন১১৫ বলেছেন: হুম সহমত
এখন কার ট্রেন্ড তো আরও খারাপ
আপনি জানেন কিনা জানিনা আমাদের দেশে বিয়েতে মদের জন্য আলাদা বাজেট থাকে !
কে কার থেকে বেশি কাবীন করতে পারে
কে কার থেকে বেশি অলংকার দিতে পারে
কে কার থেকে বেশি বড় আয়োজন করতে পারে !
আজব আগে আমরা আস্তে আস্তে অসুস্থ সমাজের দিকে আগাচ্ছি

০১ লা মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:০০

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ লিংকন১১৫
ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.