নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি হচ্ছে প্রেমে পড়ার মতন একটা ব্যাপার, কোনো ধরনের কর্তৃত্ব জাহির করা নয়।
'এই বিভাগের একজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মার্ডার কেসের চার্জ আছে। অভিযুক্তের বিষয়ে কয়েকটা বিষয় জানার ছিলো। আপনার কী একটু সময় হবে ম্যাডাম...' বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি তখন আমি সহকারী প্রক্টরের দ্বায়িত্বে ছিলাম। ২০১৫ সালের ঘটনা। এটেন্ডেন্ট হানিফ এসে একটা বিজনেস কার্ড দিলো, এএসএই তারেক। আপনার সাথে দেখা করতে চায়। বেলা সাড়ে তিনটা ঘড়িতে। বললাম পাঠিয়ে দিন হানিফ। ফ্যাকাল্টি রুমে ঢুকে তারেক সাহেব লম্বা সালাম দিলেন। দুই একটা সৌজন্য আলাপের পর বিনা মেঘে বজ্রপাত। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমন মালাকার সম্পর্কে তথ্য জানতে এসেছেন তারেক। তদন্তের সার্থে। সুমন মালাকার দিনেদুপুরে হত্যাকান্ডের সাথে যুক্ত। ঘন্টাখানেক নানান আলাপ। ১০দিন বাদে সুমন নিজে এসে হাজির। খুব স্বাভাবিক আচরণ। ফ্যাকাল্টি রুমে এসে মামা বাড়ির আবদার পেশ করলো। রেজিস্ট্রার খাতায় যেখানে শিক্ষার্থীদের প্রেজেন্স রেকর্ড রাখা হয় সেখানে তাকে উপস্থিত দেখাতে হয়ে উদ্দিষ্ট ঘটনার তারিখে। কেন? কারণ হিসেবে সুমনের ব্যাখ্যা, একটা ছোট্ট মামলায় তাকে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে আসামি করা হয়েছে। কোর্টে তাকে জামিনের জন্য এই প্রমাণ পত্র হাজির করতে এ্যাডভোকেট সাহেব পরামর্শ দিয়েছেন। তো সেই 'ছোট্ট মামলা'টা কী? সুমন হাসতে হাসতে জবাব দিলো, ম্যাডাম একটা মার্ডার কেস। কোনো একটা অদ্ভুত কারণে যেকোনো পরিস্থিতিতে আমি শান্ত থাকতে পারি। খুব স্বাভাবিকভাবেই জানতে চাইলাম কাকে মার্ডার করা হয়েছে (এজ এফ ঘটনাটা আমি প্রথমবার শুনছি। সুমনের বয়ান, 'এক বন্ধু এসে বললো বাইকে ওঠ। সুমন উঠে বসলো। তারপর তারা কিছুদূর গিয়ে একটা জায়গায় দাড়িয়ে ছিল কারণ সেখানে তার বন্ধুর কাজ ছিল। পরে সে দেখলো এক মধ্য বয়স্ক ভদ্রলোকের পথ আগলে দাড়ালো বন্ধু। পূর্বঘটনার জের ধরে কথোপকথনের এক পর্যায়ে বয়স্ক লোকটিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। পূর্বঘটনাটি হলো ভদ্রলোকের মেয়েকে স্কুলে যাওয়া আসার পথে উত্যক্ত করতো বন্ধু ছেলেটি। মেয়েটি তার বাবাকে বিষয়টা জানানোর পর ভদ্রলোক ওদেরকে নিষেধ বারন করেছিলেন। ভদ্রলোক পেশায় স্কুল শিক্ষক ছিল। শেষ তথ্যটা আমাকে নির্বাক করে দিয়েছিল। তারপর থেকে ছাত্রটি ড্রপআউট। আমি বহু বহু দিন চেষ্টা করে সুমন মালাকারের চেহারাটা ভুলে যেতে, তার হাসিমুখে বর্ননা করা পুরো ঘটনাটা অসুস্থ নির্ভেজাল বর্তমান, যা আমরা স্বেচ্ছায় ভুলে থাকি কিংবা নিজের পাশে গড়ে তোলা কৃত্রিম নিরাপদ বেষ্টনীর ভেতর নিজেদের লুকিয়ে রাখি।
পারভেজ, আমার ছাত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পপুলেশন সায়েন্স বিভাগে মাস্টার্স করছে। ডিপার্মেন্টটা কলা ভবনের চার তলায়, সেখানেই ওদের ক্লাস হয়। সম্ভবত ক্লাস শেষ করে ভবনের মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে সহপাঠীদের সাথে আলাপ করছিলো। রাত নয়টার মতো বাজে। আমি এবং ছোট ভাই কথা বলতে বলতে কলা ভবনের সামনের রাস্তা দিয়ে নীলক্ষেতের দিকে হাঁটছিলাম। আমাকে দেখে পারভেজ এগিয়ে এসে সালাম দিয়ে কুশলাদী জানতে চাইলো। আমিও তার বর্তমান কেমন যাচ্ছে, ক্যারিয়ার নিয়ে কী ভাবছে জানতে চাই। সাথে থাকা ছোট ভাই পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো। মিনিট সাতেকের মতো কথা হয় আমাদের। এবং লক্ষ্য করার মতো বিষয় যে, পারভেজ একবারও তার দিকে তাকায়নি।মানুষ যে সময়ে দাঁড়িয়ে অন্যকে প্রাইভেসি দিতে ভুলে গেছে ঠিক সেই সময়ে পারভেজের এই আচরণ আমাকে মুগ্ধ করে। অনেকেই শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য সালাম দিলেও পরিচিত কেউ কেউ তো সালাম দেয় নিজের উপস্থিতি জানান দেয়ার জন্য আর কেউ কেউ বিব্রত করার জন্য। জল্পনা-কল্পনার এই স্বর্ণ-যুগে কেউ একজন অহেতুক কৌতুহলী নয় দেখে ভাল লাগে। সম্মানিত বোধ করি। ছোট ভাইকে গর্ব করে বলি ‘ওর নাম পারভেজ। আমার ছাত্র’।
সৈয়দ মুজতবা আলী দর্শন পড়তে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। সেখানে অধ্যাপক শ্মিট তাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন, বক্তৃতা বুঝতে সমস্যা হয় কিনা (যেহেতু জার্মান ভাষায় বলা হয়) মুজতবা বললেন, জার্মান ভাষা কম জানার কারণে মাঝে মধ্যে সামান্য অসুবিধা হয়। অধ্যাপক বললেন, তখন হাত তুলো; আমি সব ভালো করে বুঝিয়ে বলবো। মুজতবা বললেন, আমার জার্মান জ্ঞানের অভাববশত সমস্ত ক্লাস সাফার করবে… এটা কেমন যেন…। গুরু গুরুগম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিলেন, আমি একশ’জনকে পড়াবো, না একজনকে পড়াব, কাকে পড়াব কাকে পড়াব না, সেটা স্থির করি একমাত্র আমি। ( দর্শনাতীত)
অধ্যাপক দেন তথ্য
জ্ঞানী দেন ব্যাখ্যা
গুরু দেন অন্তর্দৃষ্টি
'মহাকাশে নক্ষত্রের সংখ্যা যত এই পৃথিবীতে নকল গুরু এবং মিথ্যা শিক্ষকের সংখ্যা তার চাইতেও বেশি। ক্ষমতালোভী আত্মকেন্দ্রিক লোকদের সাথে সত্যিকারের শিক্ষকদের গুলিয়ে ফেলোনা। একজন সঠিক আধ্যাত্মিক গুরু কখনোই তোমার মনোযোগকে নিজের দিকে টানার চেষ্টা করবেন না এবং তোমার কাছ থেকে সর্বোচ্চ আনুগত্য বা প্রশংসাও চাইবেন না। তার বদলে তোমাকে সাহায্য করবেন তোমার আত্মাকে চিনতে এবং বুঝতে। সত্যিকারের শিক্ষা গ্রহণ কাঁচের মত স্বচ্ছ আর তার মাঝ দিয়ে কোন বাধা ছাড়াই স্রষ্টার আলো প্রবাহিত হতে পারে।'
মনে পড়ছে আমার কলেজের যুক্তিবিদ্যার শিক্ষক মনিরুজ্জামান স্যারের কথা। স্যার একবার বলেছিলেন, জীবনে লেখাপড়া হল ১। আর বাকি সব গুন-দক্ষতা ০। যার এক ঠিক থাকে তার অন্য গুনগুলো আলো ছড়ায়। এক (১) ছাড়া শূন্যের (০) কোনো মূল্যমান নাই। আমার ইংরেজির শিক্ষক আব্দুল হামিদ স্যার বলেছিলেন, মানুষ সব হতে চায়, শুধু ভালো মানুষ হতে চায় না। আমার স্কুলের শিক্ষিকা মেহের নিগার ম্যাডাম সবসময় বলতেন, সব বয়সের সৌন্দর্য্য আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আহাদুজ্জামান স্যার একজন লিভিং লিজেন্ড। আমি বড় হয়ে আপনি হতে চাই স্যার।
প্রথমসন্তানের প্রতি মায়েদের মমত্ববোধ বেশি থাকে। প্রথম মা হওয়ার উদ্বিগ্নতা সাথে নানাজনের দেয়া আদেশ-নিষেধ আর পরামর্শের তীব্র খরস্রোত। সবমিলিয়ে টালমাটাল অবস্থা। ধীরে ধীরে পরিনত হতে হতে মা তার অপরিনত ত্রুটিগুলো বুঝতে পারে। অথচ টাইমমেশিনে ফিরে গিয়ে শুধরানোর সুযোগ থাকে না। শিক্ষকরা বায়োলজিক্যাল পারেন্ট না হলেও, শিক্ষার্থীদের মনের, চিন্তার, স্বপ্নের, লক্ষ্যপূরণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশজুড়ে থাকেন। শিক্ষকতার শুরুর দিকে একটা কথা আমি প্রায়শই বলতাম, আপনারা আমার কাছে প্রথম সন্তানের মতো। আমার আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নাই, তবে অভিজ্ঞতা আর পারস্পরিক সহযোগিতার অভাবে আমার সেরাটা আমি আপনাদের দিতে পারছি না। এই দুঃখবোধটা সারাজীবন স্মরণে রাখবো। নানা মত-পথ পাড়ি দিতে হয়। সব কিছুর উর্ধ্বে ধৈর্য-প্রজ্ঞা-একাগ্রতা সমুন্নত থাকুক শিক্ষক হিসেবে নিজের জন্য এটুকুই আমার চাওয়া।সকল শিক্ষার্থীদের সাথে চিরদিনের এই বন্ধন সুন্দর থাকুক।
২০ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫১
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ পদ্ম পুকুর।
Thousands miles to go...
২| ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:১৯
রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল কথা বার্তা লিখেছেন। ভালো লাগে।
২০ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫১
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:১৬
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকের সুন্দর সম্পর্ক একজন ছাত্রকে প্রকৃত মানুষ হতে সাহায্য করে।
বাবা-মা জন্মদান করে একজন মানুষের পিতা-মাতা হ্য় আর শিক্ষক একজন ছাত্রকে নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা দিয়ে আকৃতিগত ভাবের মানুষকে প্রকৃত মানুষে পরিণত করে।
একজন আদর্শ শিক্ষক বাবা-মা থেকে বেশী ভূমিকা পালন করেন একজন ছাত্রকে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে।
২০ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫২
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ভাই
৪| ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:৫৮
নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুখময় এবং সুখ্যাতি হোক ।
২০ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৩
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ নেওয়াজ আলি ভাই।
৫| ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৩
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
খুবই ভালো লাগলো আপনার অভিজ্ঞতা ।
আমি যেই বিশ্ববিদ্যালয় পড়তাম সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছাত্রদেরকে আপনি করে বলতেন না।
২০ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৬
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: আমি শিক্ষার্থীদের আপনি করি বলি। আমার আপনি সম্বোধন করতে ভালো লাগে।
আপনি বলার সুবিধা হলো, কড়া বকাও সহজ করে দেয়া যায়।
৬| ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:৩৫
উলডুমা কেরামত বলেছেন: লেখাটি পড়ে খুব ভালো লেগেছে। আসলে প্রকৃত শিক্ষক তাকেই বলা যায়, যিনি ছাত্রদেরকে উপলদ্ধির জগতে নিয়ে যেতে পারেন।
২০ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৯
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ ঊলডুমা কেরামত। শিক্ষার্থীদেরকে আমি সত্যিই অনেক ভালোবাসি।
৭| ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২০
আহমেদ জী এস বলেছেন: নান্দনিক নন্দিনী,
আপনার এই লেখাটি পড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরুলো শুধু।
একটা সময় ছিলো যখন শিক্ষক ছাত্র সম্পর্ক ছিলো অনেকটাই পিতা ও সন্তানের মতো।
আপনি যেমন বললেন , “ শিক্ষকরা বায়োলজিক্যাল পারেন্ট না হলেও, শিক্ষার্থীদের মনের, চিন্তার, স্বপ্নের, লক্ষ্যপূরণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশজুড়ে থাকেন।“ ঠিক তেমনই ছিলো আমাদের সেদিনগুলোর অনুভূতি। ছাত্র -শিক্ষক সম্পর্ক নিয়ে কোনও কথা শুনলেই সেই পুরোনো দিনের আমার শিক্ষকদের কথা মনে পড়ে। আবেগপ্লুত হই । তাঁদের প্রতি মাথা নত হয়ে আসে আজও।
এখন ছাত্রদের আর শিক্ষকদেরও যে অবস্থার কথা শুনি, তাতে ভয় হয়, খুব ভয় হয়!
প্রাজ্ঞতা আর স্নেহময়তার খরার এমন দিনগুলোর মাঝেই আপনার এই লেখাখানিতে এটুকু -“আপনারা আমার কাছে প্রথম সন্তানের মতো। আমার আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নাই, তবে অভিজ্ঞতা আর পারস্পরিক সহযোগিতার অভাবে আমার সেরাটা আমি আপনাদের দিতে পারছি না। এই দুঃখবোধটা সারাজীবন স্মরণে রাখবো।“ যেন অন্য এক ধরনের বার্তা দিয়ে গেলো। ভিজে গেলো মনটা।
আপনি সফল হোন।
সব শিক্ষকরাই যেন আপনার মতো অনুভব লালন করতে শেখেন। তারা যেন ছাত্রদের পিতামাতা হয়ে উঠতে পারেন। হয়ে উঠতে পারেন একজন শিক্ষক থেকে একজন সত্যিকারের গুরু, যিনি দিতে পারেন অন্তর্দৃষ্টি, নিয়ে যেতে পারেন এক উপলব্ধির জগতে।
শুভেচ্ছান্তে।
২০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:০৩
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ আহমেদ জী এস।
শিক্ষার্থীদের জন্য সমানুভূতি রোজ আমাকে প্রকৃত মানুষ হতে অনুপ্রাণিত করে।
ভালোবাসার এই বিনিময় হোক স্বার্বজনীন।
৮| ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫২
জনৈক অপদার্থ বলেছেন: আপনি সম্ভবত ঢাবির শিক্ষক। সম্মান রইলো সুন্দর লেখাটির জন্য। FBS এর শিক্ষকরূপী বেতনভূকরা এভাবে এক্সপ্রেশন দিয়ে লিখতে পারে না। ইন ফ্যাক্ট তারা অন্যদের মানুষের কাতারেও ফেলতে দ্বিধাবোধ করে। আপনার লেখায় মনে হল আপনি ওরকম নন। ভাল থাকবেন
২০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:০৭
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ জনৈক অপদার্থ।
আমার জন্য শুভকামনা রাখবেন।
৯| ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:০১
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেছে দল বাজীর কারনে।
২০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:১৪
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: তেমনটা সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
১০| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:২০
সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: অবশ্যই।
২১ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৫
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ
১১| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩১
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে মনে পড়ে গেল মনিন্দ্র স্যারের কথা।
যাকে মাধ্যমিকে সবাই জমের মতো ভয় করতো। ছিলেন অংকের জাহাজ!
ভয়ের সাথে ছিল শ্রদ্ধা। উনারও শাসনের সাথে ছিল অপত্য স্নেহ!
দীর্ঘ একযুগ পর বাসে বাড়ী থেকে ঢাকা ফিরছি। ঝিমুনির ফাকে দেখি স্বভাব দোষে স্ট্যািডং লোক তুলে ভরে ফেলেছে।
আমার পাশে সাদা পাজামা পাঞ্জাবী পড়া এক বয়স্ক লোক। প্রথমে লক্ষ্য করিনি। হঠাৎ কি মনে হতে আবার তাকালাম!
বয়সের ভারে নুজ্ব্য, চেহারা ভেঙ্গে গেছে, সেই তাগড়া, পেটানো শরীরের ছিটেফোটা নেই.. কিন্তু তিনিই যে মনিন্দ্র স্যার শিউর হলাম।
দাড়িয়ে আদাব দিয়ে বল্লাম - স্যার বসুন! উনি জড়োসরো হয়ে বলছেন- না বাবা আপনি বসেন!
আমি বল্লাম স্যার -আপনি কি করছেন আপনি আপনি বলছেন কেন? আমাকে তুমি করে বলুন বা ছোটবেলার মতো তুই করে!
কে বাবা আপনি? উনার জড়তা যাচ্ছেই না। আপনি মনিন্দ্র স্যার না? হ্যা বাবা! বলতেই -ঝুঁকে কদমবুসি করলাম। হাহা করে উঠৈ বুকে জড়িয়ে ধরলেন। চোখ জলে ভেজা ! কে বাবা তুমি! নিজের পরিচয় দিলাম। সেকি আদার। মাথায়, বুকে হাত বুলিয়ে কত আশীর্বাদ! আর চোখে সেই জল!
বিনয়, ভক্তি, প্রেম আর শ্রদ্ধার যে পাঠ পেয়েছিলাম - আজো তাই নিয়েই চলার চেষ্টা করছি।
কিন্তু এখনকার শিক্ষকরাও বদলে গেছেন- ছাত্ররাতো কয়েক কাঠি সরেস!
আপনি একজন আদর্শ শিক্ষক হোন - অনুকরনীয় - এই শুভকামনা রইলো।
২১ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:১৫
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ বিদ্রোহী ভৃগু।
এই শুভকামনা আমার অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
১২| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:২৫
শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ছোট ভাইয়ের ধৈর্য্যশক্তি প্রশংসার দাবিদার!
২১ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৩৭
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: সেই দাবি পূরণের সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।
১৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০২০ ভোর ৪:০১
নীল বরফ বলেছেন: আমার জীবনে শিক্ষকদের সবচেয়ে সম্মান করে এসেছি যা আজো বিদ্যমান। আমি উনাদের সামনে কখনোই আগে বসে পরে নাই যতক্ষণ না আমাকে বসতে বলেছেন। প্রিয় শিক্ষকদের বাসায় গেলে উনারা সোফায় বসলে আমি উনাদের পায়ে কাছে বসে বসে আলোচনা করতাম। এখনো করি দেশে বেড়াতে যাবার পর। আমাদের বাসায় সবসময় শিক্ষকরা আমন্ত্রিত এবং অত্যন্ত সম্মানের সাথে ব্যবহার করা হয়। বাবার কাছ থেকে এই সুশিক্ষা পেয়েছি।
বাসায় বাগানের ফলমূল, কোরবানীর সময় কিংবা কোন বড় পালাপার্বণের তাদেরকে কুশলী জানা, আমন্ত্রণ এক সাথে শেয়ার করি। আমি উচ্চশিক্ষা আর উন্নত জীবনের লোভে বিদেশে থিতু হলেও একদম ছোটভাই এখনো সব দায়িত্ন পালন করে আমাকে একদম সকাল সকাল জানিয়ে দেয় যেন আমি ফোন করে না হাউকাউ করি বাসার সবার সাথে।
বিশেষ করে স্কুল জীবন শেষ করার পর শিক্ষকের সাথে আমার সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিলো বন্ধুর মত। ভালো কবিতার বই,ভালো মুভি আর গান কিংবা প্রবন্ধ পেলে আমাকে পড়তে দিতো যা আমাকে পরবর্তীতে একজন ভালো মানুষ হিসাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে। দেশে গেলে পরিবারের বাইরে সবার আগে শিক্ষকদের সাথে দেখা করার আয়োজন করে আসছি প্রথম থেকেই।
একজন প্রিয় শিক্ষক এই বছর এপ্রিলে বিরল এক ব্রেইন টিউমারে ইন্তেকাল করেছেন পঞ্চাশ পেরনের আগেই। উনার লেখা কবিতার বইয়ে,উপহার দেয়া বইয়ে অটোগ্রাফ দেয়া নানা ছোট ছোট প্যারা লেখা যা আমি প্রায়ই হাত দিয়ে ছুয়ে দেখি,সাথে আমার নিরবে গাল বেয়ে আসা চোখের পানি। আমি আসলে এই শোকের ধাক্কাটা সামলে উঠতে পারছিনা।কাউকে বলতেও/বুঝাতেও পারছিনা। আসলে কিছু আঘাত/শোক থাকে একদমএকান্ত নিজের।
লেখাটা আসলে খুব ভালো লিখেছেন। আসলে শিক্ষক আমার কাছে এক আরাধ্যের বিষয়।ভ্যান গগের অমর সৃষ্টি "The Starry Night" এর পেইন্ট করা কফি মগ টা দারুন। আমার কাছে ভ্যান গগের আঁকা এরকম চারটি মগ রয়েছে আয়েশ করে কফি পান করার জন্যে প্রিয় গান ছেড়ে।
আপনি ভালো থাকবেন ম্যাডাম।
২২ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:৩৭
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: নীল বরফ, 'Starry Night' এর এই মগটা একজন শিক্ষার্থীর নিজের আঁকা। পরীক্ষার ইনভিজিলেশন থেকে এসে দেখি ডেস্কে রেখে গেছে। ফুল, চিঠি, বই, চকলেটও ডেস্কে পেয়েছি নাম-ঠিকানা লেখা থাকে না। এতে আনন্দ আছে সাথে বিড়ম্বনাও!
আপনিও ভালো থাকবেন নীল। শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষার্থীদের প্রকাশিত কিংবা অপ্রকাশিত ভালোবাসাগুলোয় আমাদের (শিক্ষকদের) সঞ্চয়।
১৪| ২২ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:২৮
ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন: খুব ভালো লাগলো লেখাটা পড়ে। আমি গণিতের ছাত্র, কিছুদিন স্কুল/কলেজে পড়িয়েছি। আমার জীবনের খুব সুন্দর একটা সময় সেটা। ছাত্রদের মধ্যে গণিতভীতি ছিল খুব। আমি খেয়াল করেছিলাম যে ওদের বন্ধু হতে পারলে আর ভালোবাসতে পারলে সবাইকেই তাদের অপছন্দের বিষয়টাতেও আগ্রহী করে তোলা যায়। একজন ভালো শিক্ষক হবার জন্য মনে হয় জ্যামিতির শেখার মতই এটা ছাড়া কোনো শর্টকাট নেই।
আপনার লেখাটা পড়তে পড়তে নিজের জীবনে পাওয়া কিছু শিক্ষকের কথা মনে পড়ে গেল, আভূমি নত হয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারতাম যদি!(একজন কিছুদিন আগে মারা গেছেন)।
সুযোগ থাকলে আপনার ক্লাসেও একদিন হাজিরা দিতাম! আপাতত আপনার লেখার সাথে আছি।
শ্রদ্ধাবনত ভালোবাসা জানবেন।
২২ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:১৫
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: এখন তো অনলাইনে ক্লাস লেকচার চলছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে চলে আসেন একদিন। আপনি যেদিন আসবেন, সেদিন জালাল উদ্দিন রুমি এবং শামস তাবরিজি'কে নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বলে রাখি, আমি কিন্তু ক্লাসে পড়া ধরি
১৫| ২২ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৪
Anwar shah বলেছেন: অহেতুক কৌতুহলি এ সমাজে ভরপুর।
আর এই স্বর্ণযুগ অন্যকে প্রাইভেসি দেয়ার বিষয়টা ডাইনোসরের মত বিলুপ্ত।
২২ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:১৬
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: আপনার বক্তব্য ভীষণ সত্যি।
ধন্যবাদ Anwar Shah.
১৬| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ৭:৫৭
সোহানী বলেছেন: শিক্ষক! এটা যে একটা সমন্মানিত পেশা সেটা মনে হয় সবাই ভুলতে বসেছে।
অভিজ্ঞতা শেয়ারিং এ ভালোলাগা।
২৪ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১:৩২
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: প্রফেশন আর প্যাশনটা ঠিক ক্লিক করছে না। সবাই লিফটে উঠতে চায়।
শিক্ষার্থী অবস্থায় ফ্যাকাল্টি লাউঞ্জের প্রতি যে আগ্রহ ছিল, শিক্ষক হয়ে জেনেছি ওটা আসে 'গিল্টি করা ভেতর ভরা টিন'।
প্রফেসররা ছেলে-মেয়েদের সেটেল্ড করা নিয়ে ব্যস্ত, তরুণ শিক্ষকরা কার মুরিদানা নিলে আখেরে লাভ সেই ক্যালকুলেশনে ব্যস্ত। অনেক শিক্ষিকার একমাত্র আলোচ্য ইস্যু 'রিপ্রোডাকশান'।
আথচ শিক্ষকদের ঘরভর্তি বই থাকার কথা। শিক্ষার্থীদের জীবনে অনুপ্রেরণা হওয়ার কথা।
ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন।
১৭| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:১৪
ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন: কেন নয়? আর শামস তো সেই গুরু যে তার শিষ্যকে খুঁজতে বের হয়েছিল নিজের শির বাজী রেখে, আর মাওলানা রুমী, যার বিচ্ছেদে হলেন প্রেমিক কবি! পড়া না পারলে উত্তর শিক্ষক দেবেন, এই পরিনামে যথোচিত শাস্তি শিরোধার্য।
২৪ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১:৫৯
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: 'এঞ্জেলস এন্ড ডেমোন্স' বইয়ে শেষাংশে পোপের পক্ষ থেকে রবার্ট ল্যাংডনকে একটা প্রীতি উপহার পাঠানো হয় সাথে একটা চিরকুট। চিরকুটের একটা লাইন এমন 'কিছু কিছু সময় প্রশ্নের চেয়েও উত্তরগুলো বেশি জটিল হয়ে পড়ে'। আপনি আমাকে জটিল প্রশ্ন করবেন আর আমি সহজ উত্তর দিবো
১৮| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪২
আমি তুমি আমরা বলেছেন: শেষ পর্যন্ত সুমন মালাকার কিংবা তার বিচার হয়েছিল কি?
২৫ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ২:৫২
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: এদেশের অভিভাবকরা সেরা আইনজীবীর সাহায্যে যেমন সন্তানকে নির্দোষ প্রমাণিত করেন, এখানেও তেমনটাই ঘটেছিল। তবে তার ছাত্রত্ব ছিলো না। তাই এখন কেমন আছে, কোথায় আছে বলতে পারবো না।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৩১
পদ্মপুকুর বলেছেন: সুমনের বয়ান শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম! জীবন ও মৃত্যুর সীমানা মুছে দেয়ার আয়োজনে সম্পৃক্ত থাকাটা এখন এত সহজ হয়ে গেছে!! সবই হয়তো ঘটনার পরম্পরা, একটার সাথে একটা যুক্ত। মাছের যেমন পচন শুরু হয় মাথা থেকে, আমাদের সমাজের পচনও শুরু হয়েছে মাথা থেকেই। এ কারণে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এভাবে নির্লিপ্তভাবে ওরকম একটা ঘটনা বলে যেতে পারে।
বিবিধকারণে, আমার মনে হয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে, শিক্ষাদানকারীদেরকে নিচে নামানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে কারণে আমাদের মনন, আমাদের শৈলী, শিক্ষা সব আস্তে আস্তে ভেস্তে যাচ্ছে। জাতির মনন গঠনে যে শিক্ষকরা জড়িত, তাঁদেরকে এমনই আনস্টেবল করা হয়েছে যে ড. সাখাওয়াত হোসেন বা এরকম নামে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে কিছুবছর আগে প্রথম আলোতে 'কত টাকা পাই, কিভাবে চলি' শিরোনোমের একটা লেখাও লিখতে হয়েছিলো।
এ সবকিছুর ফলাফল ওই সুমনদের আধিক্য আর পারভেজদের লুপ্ততা।
ভালো থাকবেন, শুভ ব্লগিং।