নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সাদা-মাটা কিন্তু হুট করে রেগে যায়।

নরকের কীট

স্বপ্ন দেখি সুন্দর একটি পৃথিবী, যেখানে থাকবে না মানুষের মধ্যে হানাহানি। অনুভব করি বৈষম্যহীন পৃথিবীর যেথায় এক চাঁদে হয় জগত আলো। মনে প্রাণে বিশ্বাস করি আমি এই আলয়ের ক্ষণস্থায়ী অতিথী মাত্র এবং এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর বুকে ছোট্ট একটি পদক্ষেপ রেখে যেতে চায়

নরকের কীট › বিস্তারিত পোস্টঃ

কালো বরফ

০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৮

প্রথম পর্ব :

আমি স্বাক্ষরকে চিনি প্রায় ১০ বছর ধরে। ছেলেটা সাহসী, তবে নিজের ব্যাপারে খুব ভিতু। আমার সাথে এখন কালেভদ্রে দেখা হয়। যদিও একসময় প্রায় প্রতিদিনই কাটাতাম একত্রে। মাঝরাতে আমি আর স্বাক্ষর প্রায়ই কাপ্তাইয়ের নীল জলে পা ডুবাতাম আর চুরুট টানতাম। কোন এক মধ্যরাতে ওর ইচ্ছে হত সেন্ট্রাল ফিল্ডে যেয়ে চাঁদ দেখতে, অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমাকে যেতে হতো। ও কবিতা আওড়াতো :
Oh, Moonlight Oh Moonlight while so many of us use your shine for light to guide us through the night and use your beauty to be amazed at as the clouds run pass you.


আজ স্বাক্ষরের কাছে ওদের ডিভোর্স লেটার এসেছে। ওদের মানে ওর আর আদৃতার্। আমাকে এজন্যই ডেকেছে বোধহয়। ও আচ্ছা, বিড়ি খাওয়ার জন্যও ডাকতে পারে। এই ইট-কাঠের শহরে বিড়ি খাওয়ার জায়গার অভাব না থাকলেও সঠিক সঙ্গের অভাব আছে। আমি সেদিক থেকে বেশ মানানসই।

আদৃতার সাথে ওর বেশ কয়েকদিনের সংসার্। বিয়ের আগে প্রেমও করেছে ওরা। আসলে স্বাক্ষর এখনো কিছু করে উঠতে পারেনি কারোও চোখে। কারোও বলতে আত্নীয়স্বজন, শ্বশুরবাড়ির লোক এদের কাছে। এই সংসারে একটা চাকরি না জোটানো মানে অপদার্থের কাতারে। যদিও স্বাক্ষর চাকর হতে কখনোই চায়নি, কবি হতে চেয়েছিলো। ও যেকোন নীলাভ চোখের দিকে তাকিয়ে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে চেয়েছিলো বাউন্ডুলের মত। কিন্তু জগৎ-সংসার তা বুঝলে হয়।


স্বাক্ষর নিঃসঙ্গ রাতে জোছনা মাখতে চেয়েছিলো মুঠো ভরে, তবুও ওর মন ভীষণ উদ্বিগ্ন থাকতো আদৃতাকে ঘিরে! ছেলেটার ভালোবাসা গাঁথা হৃদয়ের পাতাগুলো অবহেলার আঁচড়ে যে শতচ্ছিন্ন হয়ে গেছে তার ওর চোখের চাহনী দেখেই বুঝে গেছি। এটা ক্যাম্পাসের ত্রাস স্বাক্ষর না, গরীবের মুখে অন্ন তুলে দেওয়া ভালো ছাত্রটিও নয়। কিংবা কাব্য দিয়ে বন্ধুমহল মাত করে রাখা ছেলেটিও নয়।

স্বাক্ষর বলিভিয়ান কবি আদেলা জামুদিও কে ছেড়ে জিআরই হিট লিস্ট মুখস্থ করছে। আবার কভিড সংক্রমণে চাকরির বাজারেও মন্দাবস্থা! ওর শ্বশুরবাড়ির পক্ষের লোকজন আদৃতাকে ছাড়িয়ে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত কোন ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চায়। তাদের কথা কায়মনোবাক্যে আদৃতা মেনে নিয়েছে। যদিও একটু আগে তাদের বাসার কাজের ছেলেটার হাত দিয়ে দুপুরে কষা গরুর মাংস ও কালাই ডালের খিচুড়ি পাঠিয়েছে। স্বাক্ষর এখনও কিছুই খায়নি। জিজ্ঞেস করলাম, "খাবি না?"
ভাবলেশহীন মুখ করে আমাকে বললো 'তুমি খেয়ে নাও!'

স্বাক্ষর আমার সম্পর্কটা অনেকটা গুরু-শিষ্যের মত।
একবার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল মেঘালয়ের শিলং যাওয়ার। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্য নিজের চোখে দেখার একটা সুপ্ত বাসনা মনের গভীরে বাসা বেধেঁছিল অনেক দিন থেকেই। বিশেষ করে যখন জাফলং যেতাম, সেখান থেকে অবাক বিস্ময়ে ওপারের বড় বড় পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। সেবার আমি আর স্বাক্ষর বেড়িয়ে পড়লাম গারো পাহাড় বেষ্টিত স্বচ্ছ শিলংয়ে ! নিচে স্বচ্চ নীল জলরাশি, এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে ঝুলন্ত ব্রিজের উপর দিয়ে দ্রুত গতিতে গাড়ীদের ছোটাছোটি দেখে তখনই চলে যেতে ইচ্ছা করত। সেভেন সিস্টার্স খ্যাত ঝরনাসহ ছোট বড় অনেক ঝরনাই আমরা সেই সময়ে দেখেছি। কিন্তু নোহকালিকাই ঝরনার কথা সব সময় মনে পড়ে। ওখানে যেয়ে স্বাক্ষরের মনে হয়েছিলো আদৃতাকে নিয়ে আসলেই ভাল হতো।

ইস্ট খাসি হিলের রংযাইরতেহ গ্রামের নোহকালিকাই ঝরনার (আমরা সবাই যেটাকে নোয়াখালী ঝরনা বলে ডাকতাম) অপরূপ দৃশ্য দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। চতুর্দিকে ভেসে বেড়াচ্ছে ধূসর মেঘ। মেঘের চাদর সরিয়ে কখনও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি তো কখনও সামান্য উঁকি দিচ্ছে সূর্য়। পাহাড়ের বুক চিরে অঝোর ধারায় নামছে ঝরনা। গুটি কয়েক পর্যটক ছাড়া জনমানব খুব একটা চোখে পড়ে না। আমাদের গাড়ী পৌঁছানোরা আগেই গাইড আমাদের সেই ঝরনার নামকরণের কাহিনী শুনালেন। ওখানে যেয়ে স্বাক্ষর রীতিমতো বসে পড়লো William Wordsworth Longfellow 'র কবিতার বই পড়তে। ছেলেটার সবকিছুতেই কাব্য লাগে। …
চলবে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: স্বাক্ষর নামটা সুন্দর হয়েছে।
লেখা এগিয়ে যাক।

২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:৫০

নরকের কীট বলেছেন: আশীর্বাদ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.