নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের অনুভুতিগুলোকে চোখের সামনে বর্ণমালার সমষ্টিরূপে দেখতে ভালোবাসি

নৈরীতা

নিজের অনুভুতিগুলোকে চোখের সামনে বর্ণমালার সমষ্টিরূপে দেখতে ভালোবাসি।

নৈরীতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবির রাঙা অন্তি

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:২৪

সন্ধ্যার দিকে অন্তি ফোন করলো আবির কে,
"বাড়ি ফিরেছ?"
"হুম।"
"খুব ক্লান্ত তাইনা?"
"হ্যাঁ, সারাটা দিন ভার্সিটিতে হাজার কাজ। পরীক্ষাও শেষ হয়েছে কিছুদিন হল, তাই খাতা দেখার চাপ তো লেগেই আছে। তাই বড্ড ক্লান্ত আমি অন্তি।"
"আচ্ছা শুনো, আম্মু আসছে, ফোনটা রাখি এখন, পড়ে কথা হবে।"
"বেশ!"

কিছুক্ষণ পর আবার অন্তির ফোন,
"কি করছো?"
"কিছু না!"
" 'কিছু না বলতে কিছু নেই', তুমিই তো বল।"
"সত্যি কথা বলতে কি, নিজেকে দেখি। নিজের একাকীত্ব কে দেখি।"
"এমন করে কেন বলছো? আমি তো আছি।"
"সকালে ভার্সিটি গিয়ে এক কাপ চা আর বিস্কুট খেয়েছি। তারপর টানা কয়েক ঘণ্টা ক্লাস নিয়েছি। বিকেল ৪টা পর্যন্ত আর কিচ্ছু পেটে যায়নি অন্তি। আর এখন বাজেঁ রাত ৯.৩০ প্রায়। ঘরে এতটুকুন তরকারিও নেই রান্না করা। আমি এক চুলোয় ভাত আর আরেক চুলোয় আলু সিদ্ধ দিতে রেখে এসেছি। আর তুমি কিনা বল তুমি আছ?"
"আমি জানি তোমার অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু আমি আম্মুকে কোনভাবেই রাজি করতে পারছি না। প্লিজ মন খারাপ করো না। দেখে নিও একদিন সব ঠিকই ঠিক হয়ে যাবে।"
"সবাই তাঁর মা কে রাজি করতে পারে, শুধু তোমারই শত অজুহাত অন্তি। আচ্ছা এসব না হয় বাদই দিলাম। এমন কি একটা দিন আছে তুমি আমাকে কিছু রান্না করে এনেছ? বেশি কিছু না, নুডুলস কি নিয়ে আসা যায়না? রান্না বাদই দাও, তুমি কবে আমার সাথে দুটা মিনিট ঠিকভাবে কথা বলেছ? এই তোমার আম্মু আসলো, এই তোমার খালা।"
অন্তি চুপ করে রইলো। কিছু বলছিল না।
"দেখো অন্তি, কিছু মনে করোনা প্লিজ। আমার মনটা ভীষণ খারাপ। তাই তোমার ওপর রাগ দেখাচ্ছি। আমরা পরে কথা বলি, ঠিক আছে?"
"হুম!"
অন্তির গাল বেঁয়ে কান্না গড়িয়ে পরছিল। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ বসে রইলো সে।

এখন এক বছর পিছনে যাওয়া যাক...
অন্তি অনার্স থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। ভার্সিটি থেকে ঘরে ফিরলো দুপুরের দিকে। ভাত খাওয়ার টেবিলে মা কে বলছে সারাদিন কিভাবে কাটলো তাঁর। হঠাৎ ওর ফোন বেঁজে উঠলো। খাওয়া শেষ না করে সে দৌড়ে গেল ফোনটা রিসিভ করতে। ফোনের স্ক্রিন দেখতেই একটা মৃদু হাসি চলে এলো ওর মুখে। আবিরের ফোন।

"হ্যালো।"
"কি, ঘরে ফিরেছ?"
"হ্যাঁ, ফিরেছি। ভাবলাম তুমি ক্লাসে তাই ফোন দিইনি।"
"হ্যাঁ ক্লাসই নিচ্ছিলাম। মাত্র টঙ এ এলাম, এক কাপ চা খাব। তুমি খেয়েছো?"
"এইতো খাচ্ছিলাম। তোমার ফোন পেয়ে উঠে আসলাম।"
"ওহ, ঠিক আছে তাহলে খেয়ে আসো। রাখছি তাহলে।"
"তুমি লাঞ্চ করেছো?"
"একেবারে বাসায় গিয়ে খেয়ে নিবো।"
"আচ্ছা, ঠিক আছে। রাখছি তাহলে।"
"বাই।"

খাওয়া শেষ করে অন্তি আবিরকে ফোন করলো,
"কি মিস্টার কি কর?"
"আমি ক্লাস নিচ্ছি। পরে ফোন দিই?"
"দাঁত বের করে হাসো দেখি।"
একটু লজ্জা পেয়ে মুচকি হেঁসে সে বিদায় নিয়ে ফোনটা রাখলো।

অন্তিও ঘুমোতে গেলো। মসজিদে মসজিদে আযান হতে শুরু করলো। অন্তি আড়মোড়া দিয়ে ঘুম থেকে উঠে, নামায পড়ে একটা ফোন দিলো আবিরকে।
"কি করো?"
"এইতো, আড্ডা দিই। তুমি কি করো?"
"পড়তে বসবো ভাবছি।"
"যাও, যাও, তাড়াতাড়ি পড়তে বসো। মা জানলে বলবে আমার জন্যে উনার মেয়ের পড়াশুনা নষ্ট।"
"হয়েছে, আমার সাথে আর মাস্টারি ঝাড়তে হবে না। রাখছি তাহলে এখন। পরে কথা হবে। বাই।"
"হুম, বাই।"

পরদিন ছিল মঙ্গলবার। আবিরের ক্লাস নেই। তাই দুজনে সারাদিন একসাথে ঘুরে কাটাবে ঠিক করে নিলো। তাই পরদিন বিকেল ৩টার দিকে বেড়িয়ে পরল অন্তি। রিকশা নিয়ে কিছুটা দূরে অপেক্ষা করছিলো আবির। ড্রাইভারের সাথে কথা বলে ঘণ্টা হিসেবে ঘুরতে বেরুলো দুজন।

এই রিকশায় করে ঘুরে বেরানো অন্তির খুবই পছন্দের। সে তো খুবই খুশি। তার উপর আবিরের ব্যাস্ততার জন্যেও ওদের দেখা করার বেশ সময় সুযোগ হয়ে উঠে না। তাই দেখা করার দিনগুলোতে অন্তি খুবই খুশি থাকে।

যেদিকটায় ওরা যাচ্ছিলো, ঐ পাশটা সবুজের এক অসাধারন সমারোহ। রাস্তার দু'ধার দিয়ে অনেক গাছ আর ধানক্ষেত। শহুরে কোলাহল বিহীন নিশ্চুপ নগরী।

ওদের গল্পের তো ইতি নেই, তবু সন্ধ্যার দিকে ফিরলো দুজনে। অন্তিকে বাসায় ড্রপ করেই আবির চলে গেল।

আবির প্রায়ই অন্তিকে ফাজলামো করে বলত, যে ওকে বিয়ে করলে খালিপেট থাকতে হবে তাঁকে। শিগগির রান্না শিখতে।

আবির যেহেতু একা থাকে, আর খাবারের খুবই অসুবিধা তার, রান্নার ও কেউ নেই, তাই অন্তি একদিন ডিম ভোনা, ভাত আর গাজরের হালুয়া করে নিয়ে যাবে ভাবলো। গাজরের হালুয়া আবিরের খুবই পছন্দের সেটা অন্তি জানতো।

পরদিন সকালে অন্তি ঘুম থেকে উঠেই ভেবেছে রেঁধে নিয়ে সারপ্রাইজ করবে আবিরকে। রোম থেকে বের হতেই শুনে, বাজার নিয়ে ঝগড়া হচ্ছে ঘরে। মাসের শেষ, টাকাও শেষ তাই হয়তো। অবশ্য শুধু বাজার না, আরও অনেক ব্যাপার নিয়েই প্রায় প্রতিদিনই ঘরে ঝগড়া হয়। অন্তি আবিরকে কিছু বলে না। নিজেই চুপ করে কষ্টটা সয়ে নেয়। যাই হোক, অন্তির আর রান্না করা হয়নি তারপর।

এভাবেই কেটে গেল অনেকটা বছর। হঠাৎ বাসা বদলাতে হলো তাঁদের। বাড়িওয়ালার ভাইয়ের পরিবার আসবে বিদেশ থেকে, তাই।নতুন বাসায় অন্তি কে তার মায়ের সাথে রোম শেয়ার করতে হয়। রোম সংখ্যা কম আর মানুষ আমরা ৫ জন থাকি তো, তাই।

টিং টং!
বেলের আওয়াজ এ ঘুম ভাঙল আমার। রকিং চেয়ারেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
আবিরের সাথে অনেকদিন হয় কোন যোগাযোগ নেই আমার। জানিনা ও কেমন আছে? এখনও কি আগের মতন আলু সিদ্ধ দিয়ে ভাত খায়? নাকি...
এভাবে অনেক গূধুলি লগ্মে আমি চলে যাই আমার জীবনের ফেলে আসা সেই মুহুর্তগুলোতে যা এখনও এতটুকুনও ঝাপসা হয়নি।
ছোট্ট ব্যালকনিটা, রকিং চেয়ার আর অন্তি। এই তো চলে যাচ্ছে বেশ এভাবেই...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.