নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নওশীন শিকদার

নওশীন শিকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

খোলা চিঠি

০১ লা জুলাই, ২০১৫ রাত ২:৫৬

অরুন্ধতী রহমান,
সোনালি ফ্রেমের চশমায় ঢাকা তোমার চোখের নগরীতে আজও কি আমি নামক মানবী নিজ ছায়া লুটিয়ে খিলখিল হাসে? বড্ড সন্দেহ হয়! হাতঘড়ির কাটার টিক টিক করে ছুটে চলাটা কানের কাছে নিয়ে শুনে দেখো, ওটা আমারই হৃদপিণ্ডের পৌনঃপুনিকতা। সেদিন সন্ধ্যায় বৃষ্টি শেষে লাইব্রেরীর বাইরে একখানা সেকেলে উপন্যাস হাতে নিয়ে বেখেয়ালে পড়ছিলে সিঁড়ির কোনায়, পলিথিন বিছিয়ে গুটিসুটি মেরে বসে... তোমার পায়ের জুতো কাদায় মাখামাখি,তোমার কোনো বিকার নেই, নেই অস্বস্তি! আমি হলে অস্বস্তিতে কোনো বইয়েই মনোযোগী হতে পারতামনা। আসলে তুমি তো আর আমার মতন নও! আমি কিন্তু দূর থেকে তোমাকে দেখেছি, আমার হাতেও কিছু ছিল, আমিও ব্যস্ত ছিলাম! তবে তোমার মতন মনোযোগী পাঠক হয়ে নয় খাদক হয়ে... ঠিকই অনুমান করেছো, আমার হাতে সবজির পাকোড়া ছিল। হাসছো? ভাবছো আমি এখনও তোমার সেই "পাকোড়া বালিকা " হয়েই রইলাম! হ্যাঁ, সত্যিই তাই... এখনও গরম গরম পাকোড়া ভাজা দেখলে আমি বাচ্চাদের মতন হয়ে যাই! সে যাইহোক, তোমার সামনে আসিনি কেন সেটাই বলি। সামনে এলে সচকিত হয়ে যেতে। তোমার প্রাকৃতিক রূপ থেকে বঞ্চিত হতাম। দূর থেকেই সোনালি ফ্রেমের চশমায় ঢাকা বইপোকাটাকে দেখছিলাম, তুমি যে স্বাচ্ছন্দ্যেই সুন্দর। তুমি যখন একাকীত্বের মাঝে বইয়ের পাতায় ডুবে যাও... তখন তোমাকে দেখায় বিকেলের শেষ প্রহরটার মতন! এক ঝলক বাতাসে দুলে ওঠা চুপচাপ দোলনার মতন... তোমার চোখে মুগ্ধতা হুটোপুটি খায় সমস্ত পৃথিবীর সৌন্দর্য একীভূত করে, কখনও চাপা অভিমানে নীলাভ হয়ে ওঠো ঘাটলার পাড়ে কচুরিপানা ফুলগুলোর মতন। নীলাভ নাকি বেগুনি? ভাববার বিষয় বটে! তবে তোমাকে কিন্তু বেগুনি পাঞ্জাবি তে একদম কাব্যের মতন লাগে। তোমার লেখা কাব্য। তোমার গালজুড়ে বেড়ে ওঠা খোঁচা খোঁচা দাড়িতে আদর বুলিয়ে সূক্ষ্ম আকার আকৃতির পোকামাকড় - বাতাস - সবুজ - ঘামের বিন্দু- বৃষ্টির ফোঁটা... সবাই তোমার চোখের পাতায় চুম খেয়ে যাবার সৌভাগ্যে ঝলমলে। শুধু পেছনে পড়ে থাকে শরৎচন্দ্র আমলের মতন ফুলহাতা ব্লাউজ আর গোছানো শাড়ির পাড়ে ঢাকা পায়ে নূপুর জড়িয়ে চঞ্চলা কবিতার মতন উড়নচন্ডী এই মেয়েটা। মনে পড়ে? আমার খোলা চুলের গুচ্ছ তোমার চোখেমুখে পড়ে তোমাকে কেমন এলোমেলো করে দিচ্ছিলো আমাদের প্রথম দেখায়? কাশফুলের মতন ফুরফুরে মনে হচ্ছিল তোমাকে, তবে তুমি তো খেয়ালই করোনি সেদিন তোমার বইটা আমি লুকিয়ে রেখেছিলাম আমার শাড়ির আঁচলে! জানোতো শাড়ির আঁচলের শক্তি অনেক, প্রিয় মানুষটাকেও লুকিয়ে রাখতে পারা যায় সেখানে! কিন্তু নিজেকে লুকোনো যায়না। বৃষ্টি এসেছিলো এইতো সকালেই। আমার সর্ষে ফুল রঙা জামাটা রোদে শুকোতে দিয়েছিলাম, সেটা ভিজে গিয়েছে! শুধু তাইনা... আমি জানি তুমিও ভিজে গিয়েছো। তোমার অফিসের দরজা পর্যন্ত আজও ছুটে গিয়েছো ছাতা ছাড়াই! ছাতার সাথে তোমার কিরকম দুশমনি ভেবে পাইনা, কতো করে বললাম "অরুন্ধতী, ছাতা তোমার বন্ধু! " তুমি শুনোইনা, বরং আমার ওড়নাটা মাথায় দিয়ে বৃষ্টি আটকাতে চাও। এখন অবশ্যই এই পাগলামিগুলো করোনা, বড় হয়ে গিয়েছো যে! আগে বলতাম "পাগল, আমার ওড়নার ছায়া সবসময় কি দিতে পারব? আমিতো পৃথিবী থেকে হারিয়েও যেতে পারি! " এখনও রাগ করলে? দুঃখ পেলে? দুঃখদের ছুটি দিয়ে দাও... নাহয় আমার কাছে পাঠিয়ে দিও চিঠির খাম এ ভরে। চিঠি লিখতে আজ তোমার অনাগ্রহ জানি, আমার কবিতায় আজ তোমার অনীহা জানি তবে আজও আমি তোমার দুঃখ আমার হৃদয়ের আলমারিতে সামলে রাখবো কথা দিলাম! খামের ওপর আমার ঠিকানা লিখতে ভুলো না যেন... সেই তো এক বর্ষাকালে ঠিকানাবিহীন চিঠি পাঠিয়েছিলে যখন আমাকে ঘিরে তোমার চিন্তাচেতনা সবকিছু মুগ্ধতার কক্ষপথে আবর্তিত হতো দিনরাত্রি! আফসোস, শেষমেষ আমার কাছে এসে পৌঁছেনি সেই চিঠি। আমার প্রতি তিলে তিলে গড়া তোমার একান্ত মুগ্ধতাকেও দিয়েছো ছুটি। আমি কতো কতো কেঁদেছি, আমার শাড়ির আঁচলে কতো কতো লবন জমেছে... সেই লবন আবার ওয়াসার পানিতে ধুয়ে নর্দমায় চলে গিয়েছে! এসব খবর তো রাখোনি তুমি, রাখলেতো আমার চোখের জল ঠোঁটে চেপে শুষে নিতে! খুব পাগলামি কথা বলে ফেললাম তাইনা? আচ্ছা তোমার তো বারান্দায় মাঝারি মাপের খাঁচায় একজোড়া ঘুঘু পাখি ছিল, ওরা কেমন আছে? ওদের কি মুক্ত করে দিয়েছো নাকি... তুমিতো আবার মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করা টাকা দিয়ে পাখি কিনতে আর কিছুদিন পর পর মুক্ত করে দিতে ভালোবাসো! এমন ভালোবাসাপ্রবণ একটা ছেলেকে কার না ভালোলাগে! ভালোলাগা যখন বাষ্পের মতন পুঞ্জীভূত হতে থাকে তখন কবিতা লেখা হয়েই যায়, চোখের জলে ডুবুরি হয়েও অবশ্য কবিতা লিখি! সেদিন একটা ছন্নছাড়া কবিতা লিখেছিলাম, শুনবে? কবিতাটা কিন্তু তোমার পড়া উপন্যাসগুলোর মতই সেকেলে। নাহ থাক, শোনাবোনা। অভিমান হচ্ছে? আচ্ছা যাবার বেলায় শুনিয়ে ইতি জানাবো। এবার ঠোঁট নেয়ে একটু হাসো, সোনালি ফ্রেমের চশমা খুলে রাখো... আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছি, তোমার চোখজোড়া দেখবো বলে চোখ মেলেছি! তোমার চোখের সাদা বালুচরে কালোকেশী কন্যার মাথার মতন মনি! ওই কন্যা কি আমি আর আমার প্রতিবিম্ব? কন্যা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে... আরে একি!তোমার চোখের বালুচরও ভিজে যাচ্ছে! বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে কন্যার কালো চুলে ঢেকে থাকা মাথা। মুখচোরা ওই কন্যা তোমার চোখে কেন? আমিতো পোড়ারমুখো, মুখচোরা নই! তবে মনে হয় ওটা আমিই! কিজানি, আমার মনে হওয়া কথা সত্য কিনা! আকাশে মেঘ করেছে, আজ আসি... তোমার অনেকগুলো সময় নষ্ট করলাম বালিকাসুলভ আলাপে! আচ্ছা ছোট্ট একটা বায়না, কোনোদিন সুযোগ হলে তোমার পাঞ্জাবির খুঁট দিয়ে কন্যার চোখের জল মুছে দিও, আমাকে খুঁজে পাবে সেখানে। রাত হয়েছে, জোনাকিদের ভীড়ে মিশে একলাই নৌকোয় করে জোছনা দেখতে যাবার সময় হয়েছে, যাবার বেলায় কবিতাটা শুনিয়েই যাই...

তোমার জন্য জোয়ার হয়েছি পৌরাণিক গল্পে
হয়েছি সিন্ধুপাড়ের কন্যা পড়ন্ত বিকেলে...
রাতের কৌটোয় বন্দী তারাদের মাঝে
তোমাকে পেয়েছি অরুন্ধতি!
তোমার জন্যই বেসামাল বাতাসের ঝাপটা
শোবার ঘরের জানলা খুলে দেয়ার স্বাধীনতা...
চিঠির বাক্সে হাত ডুবিয়ে চোখ ডুবিয়ে
তোমাকে পেয়েছি অরুন্ধতী!

ইতি
-তোমার "অপরিচিতা"

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুলাই, ২০১৫ রাত ৩:২২

হিমিকা বলেছেন: অসাধারণ :)

০১ লা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৩

নওশীন শিকদার বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ! :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.