নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এন সি নীল

মানুষ হবার প্রচেষ্টায়

নীলমেঘ আমি

nu

নীলমেঘ আমি › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রয়োগবাদ

২৫ শে জুন, ২০১৩ ভোর ৪:৪১

নিন্দুকরা বলে থাকেন মার্কিনীদের বিজ্ঞানে যতটা প্রভূত উন্নতি দর্শনে তার ছিটেফোঁটাও নেই। তবে নিন্দুকদের উচিত জবাব দিতেই মার্কিনীদের মৌলিক দর্শন হল প্রয়োগবাদ। প্রয়োগবাদের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Pragmatism. বেশীর ভাগ দর্শনই মানুষের জীবনের প্রয়োজনীয় প্রায়োগিক দিককে উপেক্ষা করে জগত ও জীবনের উৎপত্তি ও বিকাশ, ঈশ্বর ধর্ম সহ বিভিন্ন বিমূর্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। যদিও এই ধরণের বিমূর্ত বিষয়ের জ্ঞানের দরকার রয়েছে কিন্তু তার থেকেও অনেক বেশী দরকার বাস্তব জীবন সংক্রান্ত জ্ঞানের।



এই দর্শন অনুসারে নিছক তত্ত্বানুসন্ধান দর্শনের লক্ষ্য নয়, হ্যাঁ তত্ত্বানুসন্ধান আমরা করবো তবে এই অর্থে যে তা জীবনকে বুঝতে এবং জীবনের বাস্তব সমস্যাবলী মোকাবেলা করতে সহায়ক হবে। প্রয়োগবাদ অনুযায়ী যে তত্ত্ব নিছক বিমূর্ত, যার কোন কার্যকারিতা নেই, তা অহেতুক। যৌক্তিক দৃষ্টবাদ যেমন ইউরোপিয়ান দার্শনিকদের মতবাদ তেমনি প্রয়োগবাদকে বলা চলে আমেরিকার নিজস্ব দার্শনিক মতবাদ। একমাত্র ব্রিটিশ সমর্থক এফ. সি. এস শিলার ছাড়া এ মতের সব কজন প্রবক্তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী। সি. এস. পার্স ছিলেন মার্কিন প্রয়োগবাদের প্রতিষ্ঠাতা এবং উইলিয়াম জেমস ও জন ডিউই এর দুজন বিশিষ্ট প্রবক্তা। নিম্নে এদের দর্শন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল যা প্রয়োগবাদী দর্শনকে বুঝতে সহযোগিতা করবে।



পার্সঃ





চার্লস সেন্ডারস পার্স



চার্লস সেন্ডারস পার্সের হাতে প্রয়োগবাদের সূচনা হয়। তিনি গণিত, লজিক, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও দর্শনের ইতিহাসের উপরে শিক্ষা গ্রহন করেছিলেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ছাড়াও দীর্ঘদিন সরকারী চাকুরীতে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। প্রথম দিকে ভাববাদ এবং ঈশ্বর বিশ্বাস থাকলেও একটা পর্যায়ে তার আমূল পরিবর্তন ঘটে। সমসাময়িক দার্শনিকদের অধিকাংশের মতোই পার্সও ডারউইন এর বিবর্তনবাদ দ্বারা প্রবলভাবে প্রভাবিত হন।



পার্সের দার্শনিক রচনার খুব সামান্যই তার জীবদ্দশাতে প্রকাশিত হয়। ১৯৩১ থেকে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তার রচনাবলী ৬ খণ্ডে প্রকাশিত হয়। এসব রচনা এতই মৌলিক ও উচ্চমানের ছিল যে, ক্রমশই পাঠকমহলে এগুলোর গুরুত্ব অধিক থেকে অধিকতর স্বীকৃতি লাভ করে।



পার্স প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার ভিত্তি রচনায় অবদান রাখেন। তিনি পরানীতিবিদ্যা ও অধিবিদ্যার রূপরেখা প্রণয়ন করেন। এছাড়াও তিনি অর্থ ও তাৎপর্যের সমস্যা বলি বিশ্লেষণ করেন এবং মন সম্বন্ধে সাংকেতিক মতবাদ প্রচার করেন।



উইলিয়াম জেমসঃ





উইলিয়াম জেমস



প্রয়োগবাদকে একটি সুস্পষ্ট মার্কিন মত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং বিশ শতকের প্রথমার্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক আন্দোলনে পরিনত করেন উইলিয়াম জেমস (১৮৪২-১৯১০)।

জেমস আমেরিকায় পরীক্ষণমূলক মনোবিদ্যার জনক হিসেবে পরিচিত। তিনি দর্শন ছাড়াও চিকিৎসাশাস্ত্র, শরীরবিদ্যা ও মনোবিদ্যায় শিক্ষা লাভ করেন। ১৮৮০ থেকে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন।



জেমস পার্সের প্রয়োগবাদী অর্থতত্ত্বকে সম্প্রসারিত করে সত্যতাতত্ত্বে পরিনত করেন। মৌলিক অভিজ্ঞতাবাদ নামক নতুন এক ধরণের অভিজ্ঞতাবাদের প্রবর্তন করেন। হেগেল ও ব্রাডলি প্রমুখ ভাববাদীদের মতের বিরোধিতাও তিনি করেন। প্রয়োগবাদ সম্পর্কে জেমস বলেন, বিমূর্ত তত্ত্বকেন্দ্রিক ভাববিলাস থেকে বাস্তব পরিস্থিতি ও তথ্যাবলির দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে আনার মানুশিকতাই প্রয়োগবাদ।



শিলারঃ



প্রয়োগবাদের একমাত্র ব্রিটিশ প্রতিনিধি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এফ. সি. এস শিলার (১৮৬৪-১৯৩৭) জেমসের অধিকাংশ সিদ্ধান্তের সাথে একমত ছিলেন। তিনি মনবিষয়ক গবেষণায় অনেক বেশী আগ্রহী ছিলেন। জেমসের ন্যায় তিনিও একজন মৌলিক অভিজ্ঞতাবাদী ছিলেন।



ডিউইঃ



প্রয়োগবাদের পরিপক্বতা লাভ করে কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন ডিউইর (১৮৫৯-১৯৫২) চিন্তা ও রচনায়। ডিউইর দর্শন ছিল প্রধানত নৈতিক দর্শন। তার দর্শনে সব থেকে বেশী প্রভাব ছিল ডারউইনের। ধর্ম ও নৈতিকতা নিয়ে ডিউইর প্রয়োগবাদী দর্শন অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ যা নিম্নে আলোচনা করছিঃ



ডিউইর মতে ধর্ম আবেগ নির্ভর, আবেগাত্তক প্রয়োজন নিতান্তই ব্যাক্তিগত। এরা সংখ্যায় বিপুল ও বিভিন্নমুখী। ব্যাক্তিগত ধর্মীয় অভিজ্ঞতা এতো বিচিত্র যে সব মানুষ এদের অভিন্নভাবে গ্রহন করে না। ঈশ্বর সম্পর্কে যেসব পরস্পর বিরোধী ধারণা আছে বিভিন্ন ধর্মে তা যদি ঈশ্বর থাকতেনও তাহলেও অবাক হতেন বলে মনে করেন ডিউই। ধর্মীয় বিশ্বাস একান্তই ব্যাক্তিগত ব্যাপার এবং কোন ধর্মীয় সত্যকে সমাজের সব মানুষের পক্ষে কল্যাণকর বলে প্রমান করা যায়না।



প্রয়োগবাদীরা অতীতের দর্শনকে অবজ্ঞা করে না, অতীতের দর্শন যে শুধু তত্ত্ব নির্ভর তাদের দর্শন একমাত্র ভালো তাও দাবী করেনা। তবে তাদের বক্তব্য এই যে, জীবনকে দর্শনে স্থান দিতে গিয়ে অতীতের অনেক দার্শনিক জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে নিছক তত্ত্বানুসন্ধানে আবিষ্ট হয়ে পরেন। যেমন প্লেটোর কথাই ধরা যাক, জীবনের দর্শন নিয়ে শুরু করলেও একটা পর্যায়ে তিনি বিভোর হয়ে গেলেন স্বর্গীয় কল্পিত রাজ্যের স্বপ্নে।



বাস্তবতার প্রতি প্রয়োগবাদ যে গুরুত্ব আরপ করেছে তারই স্বীকৃতিস্বরূপ কেউ কেউ এই দর্শনকে “ফিলসফি অফ ব্রেড এন্ড বাটার” বলে অভিহিত করেছেন। প্রয়োগবাদ দর্শনকে ভাববাদী কল্পনা থেকে মাটির পৃথিবীতে নামিয়ে আনার যে প্রশংসনীয় উদ্যোগ পালন করেছে তার মাধ্যমে দর্শনের প্রয়োগবাদ নিজের জায়গা করে নিয়েছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.