নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাগ্যক্রমে আমি এই সুন্দর গ্রহের এক বাসিন্দা! তবে মাঝেমধ্যে নিজেকে এলিয়েন মনে হয়। তবে বুদ্ধিমান এলিয়েন না, কোন আজব গ্রহের বোকা এলিয়েন! [email protected]

নূর আলম হিরণ

ভাগ্যক্রমে আমি এই সুন্দর গ্রহের এক বাসিন্দা! তবে মাঝেমধ্যে নিজেকে এলিয়েন মনে হয়। তবে বুদ্ধিমান এলিয়েন না, কোন আজব গ্রহের বোকা এলিয়েন!

নূর আলম হিরণ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রজেক্ট শীতবস্ত্র।(গল্প)

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:১৯


আমাদের কলনীর মধ্য সবার সাথে সবার বন্ধের দিন ছাড়া খুব একটা দেখা হয় না। তবে মোনায়েম সাহেব ইদানিং সবার সাথে দেখা করছেন, কথা বলছেন, খোঁজখবর নিচ্ছেন। সম্ভবত রিটায়ার্ড হওয়ার পর উনার কথা বলার লোক পাচ্ছেন না এই জন্য সবার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন। তবে উনি শুধু কথা বলেন তা না, দুই তিন দিন হলো উনি একটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন নাম দিয়েছেন প্রজেক্ট শীতবস্ত্র।
আগামী শুক্রবার মিটিং ঢেকেছেন কলনীর সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন।
আজ আমি অফিসের যাওয়ার সময় আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বললেন, বুঝলেন আলম সাহেব সবার মাঝে বেশ আগ্রহ দেখলাম প্রজেক্ট শীতবস্ত্র নিয়ে, সবাই থাকবে মিটিংএ। আপনি থাকবেন কিন্তু, আর একটা কমিটি ঘোষনা করবো ঐদিন। মনে মনে আপনার জন্য একটা পদ রেখেছি। অনেক ভেবে দেখলাম এই পদে আপনার চেয়ে যোগ্য আর কেউ নেই কলনীতে।
আমি বেশি আগ্রহ দেখালাম না শুধু বললাম আমি থাকার চেষ্টা করবো।
উনি বললেন চেষ্টা কেনো আলম সাহেব থাকতে হবে আপনাকে এই পথশিশু, রাস্তা ঘুমানো বৃদ্ধদের হাতে একটা শীতের কাপড় তুলে দিতে পারার আনন্দ আপনি নিজ চোখে না দেখলে বুঝতে পারবেন না।
আপনি মনে হয় ফান্ডের ব্যাপারে ভাবছেন, আরে ঐটা নিয়ে বেশি ভাববেন না, আমার বড় ছেলে ঐ যে মন্ত্রনালয়ে আছে তার সাথে কথা হয়েছে সে ভালো একটা ফান্ড মেনেজ করে দিবে। ছোটটার সাথে কথা হয়েছে ও অস্ট্রেলিয়া থেকে কিছু পাঠাবে। আপনারা যারা আছেন তারা সামর্থ্যমত যা পারেন দিবেন। বুঝলেন সমাজের জন্য কিছু করতে পারার মাঝে আনন্দ আছে। আচ্ছা যাই বাকীদের সাথে আলাপ সেরে নিই।
এরপর দুইদিন মোনায়েম সাহেবের সাথে আর দেখা হয়নি। বৃহস্পতিবার অফিস থেকে আসার সময় তার প্রজেক্টের কথা ভাবতে লাগলাম, আর মনে মনে শুক্রবারে মিটিং এ থাকবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। রাস্তায় বিশাল জ্যাম থাকায় হাটা শুরু করলাম শাহাবাগ হয়ে দোয়েল চত্ত্বর আসার পর মোনায়েম সাহেবকে দেখলাম রাস্তার পাশে তিনটা বাচ্ছার সাথে দাঁড়িয়ে বিরক্তি নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন। কাছে গিয়ে বাচ্ছা গুলিকে দেখলাম কাঁদোকাঁদো ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে মোনায়েম সাহেব বললেন আরে আলম সাহেব যে, দুইদিন হলো আপনার দেখা নাই। দেখা হলো ভালো হয়েছে এই বাচ্ছা গুলি কি একটা সমস্যা পড়ছে একটু দেখেনতো আমার একটু ঢাকা মেডিকেল যেতে হবে আপনার ভাবীর ভাই মেডিক্যালে ভর্তি কিডনী ডায়ালেসিস চলছে। আর কাল মিটিংএ আসবেন কিন্তু অবশ্যিই। এই কথা বলে তিনি আর অপেক্ষাই করলেন না, হনহন করে হাঁটা দিলেন।
বাচ্ছা গুলির মধ্য দুইটা ছেলে একটা আট বছরের মেয়ে, মেয়েটার কোলে তার তিন বছরের একভাই আরেকটা পাশে দাঁড়িয়ে তিনটা বাদাম নাড়াচাড়া করছে। মনে হয় খাবে কি খাবে না সেটা ভাবছে। মেয়েটার সাথে কথা বলে বুঝলাম তার বাবা তার মায়ের সাথে ঝগড়া করে পালিয়ে গেছে। বছরখানেক আগে মা মারা গেছে। এতদিন মামা মামীর সাথে ছিলো, মামা বলেছে তার বাবার সাথে নাকি যোগাযোগ হয়েছে তাদের ঢাকা নিয়ে যেতে বলেছে। আজ বিকেলে মামা তাদের এখানে রেখে বলেছে, একটু দাঁড়া আমি যাবো আর আসবো। যাওয়ার সময় ১০ টাকার বাদাম কিনে দিয়ে গেছে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে মামা এখনো আসেনি। আমি বুঝতে পারলাম তাদের মামা আর আসবে না। কোলের বাচ্ছাটা হঠাৎ করে কান্না শুরু করে দিলো, প্রচন্ড শীতে তাদের শরীরের লোম গুলি কাঁটার মত হয়ে আছে। এদিকে আমার খুব ক্লান্তি লাগছে, রাস্তায় এমন বাচ্ছা প্রায়ই দেখি, না তাকিয়ে চলে আসি। সমস্যা হচ্ছে এদের চেহারায় মায়া আছে ছেড়ে যেতে পারছি না, আবার সমাধানও বাহির করতে পারছিনা। কি করবো বুঝতে পারছি না, হঠাৎ একজন লোক এসে কাছে দাঁড়ালো জিজ্ঞেস করলো কি হইছে ভাই?
আমিও মোনায়েম সাহেবের মত বললাম ভাই দেখেনতো এদের কি একটা সমস্যা হয়েছে আমিই দেখতাম ভাই কিন্তু জরুরী একটা কাজ আছে তাই সময় দিতে পারছি না। এই বলে আমি মেয়েটির হাতে ২০ টাকার একটা নোট দিয়ে হাটা শুরু করলাম, মেয়েটি টাকা হাতে নিয়ে আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। আমি আর অপেক্ষা না করে দ্রুত হাটা শুরু করলাম কিছুদূর গিয়ে তাকিয়ে দেখলাম সেই লোকটা খুব বিরক্তি নিয়ে মেয়েটার কথা শুনছে।
সকালবেলা দরজা ধাক্কাধাক্কিতে ঘুম ভাঙ্গলো। দরজা খুলে দেখি মোনায়েম সাহেবের শালা, বললো তার দুলাভাই মিটিংএর সময় পরিবর্তন করেছে জুমার নামাজের আগে মিটিং। আমি যেন নাস্তা করেই চলে যাই, আমার সাথে নাকি কমিটির ব্যাপারে আগে আলাপ সেরে নিবেন।
নাস্তা করে মোনায়েম সাহেবের বাসায় গিয়ে দেখলাম উনি সামনের রুমেই বসে আছে আমাকে দেখে বললো বসেন আলম সাহেব। চায়ের কাপে চা ঢেলে একটা কাগজ দিয়ে বললেন, দেখেনতো কমিটি কেমন হয়েছে?
এভাবে কমিটি ঘোষনা করে দিলে কেমন হয়? আমি কাগজটি হাতে নিলাম তার নাম, আমার নাম আর দুই একজনের নাম ছাড়া কারো নাম চিনলাম না, অবশ্য চিনার কথাও না।
চা খেতে খেতে মোনায়েম সাহেবের চোখের দিকে তাকালাম কাল সন্ধ্যার ঘটনার কোন চাপ দেখলাম না আমিও এমনভাবে কথা চালিয়ে গেলাম যেন কাল তার সাথে আমারও দেখা হয়নি!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৩২

আখেনাটেন বলেছেন: আসলে আমাদের সকলের লোক দেখানো কর্মই বেশি। যখন সত্যি সত্যিই কারো দরকার তখন আমরা নিজে থেকেই পলায়নপর হই। সমাজের বেঁধে দেওয়া চৌকাঠের বাইরে আমরা খুব কম লোকই যাওয়ার চেষ্টা করি। আবার চেষ্টা করলেও পদে পদে বিড়ম্বনা। আমি নিজে তার সাক্ষী।





২১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:২১

নূর আলম হিরণ বলেছেন: আসলে আমরা লোক দেখানো সমাজসেবা করতে চাই, চোখের সামনের অসঙ্গতি চোখে পড়ে না!

২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৩৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


ভয়ংকর অবস্হা; বাচ্ছাগুলোর মামাও পালিয়ে গেলো?
আমাদের সম্পদ আছে, রাস্তার বাচ্ছাদের নিরাপদ বাসস্হানে নিয়ে যাবার জন্য; শেখ হাসিনার মাথায় কোন বুদ্ধি নেই, মগজহীন মহিলা

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৫৫

নূর আলম হিরণ বলেছেন: পরশু একজনের এক পোষ্টে আপনার একটা মন্তব্য পড়লাম এতগুলি মানুষের ঘুমানোর ব্যবস্থা না করে, আমাদের প্রেসিডেন্ট কিভাবে ঘুমাতে যায়! আসলে বিষয়টা ভাববার মত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.