নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভাগ্যক্রমে আমি এই সুন্দর গ্রহের এক বাসিন্দা! তবে মাঝেমধ্যে নিজেকে এলিয়েন মনে হয়। তবে বুদ্ধিমান এলিয়েন না, কোন আজব গ্রহের বোকা এলিয়েন!
মনির মামার মন খুব খারাপ, খারাপ বলতে খুবই খারাপ। আমি উনার বাসায় ঢুকেই উনার মন খারাপের চেহারা দেখে একটু অস্বস্তি ফিল করতে লাগলাম। উনি ইশারায় আমাকে বসতে বললেন। সাধারণত কেউ মন খারাপ করে থাকলে আমি তার দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারিনা। অন্য দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি সমস্যা মামা মন খারাপ কেনো? উনি কোনো জবাব দিলো না! বাসার ভিতর থেকে মামী তার ছেলেকে বেধড়ক পিটাচ্ছে। মামাতো ভাইয়ের কান্না শুনে ভিতরে গেলাম, মামীকে বললাম এত মারার কি হলো, রাগ কমান, শান্ত হউন। আমাকে বলুন সাকিব কি করেছে এত মারছেন কেনো ওকে!
বিছানার উপর সাকিবের পরীক্ষার ড্রয়িং খাতা যেটাতে সে একটা ছবি এঁকেছে। একটা লোক একটা মহিলার উপর শুয়ে আছে এমন কিছু। এরপর ব্যাপারটা বুঝতে সময় লাগেনি আর আমার। আসার সময় মামাকে বললাম বাচ্চা বড় হয়েছে তাকে আলাদা রুমে রাখেন আর নিজেরাও একটু সতর্ক হউন।
আমি হলে গিয়ে সিনামা দেখিনি খুব একটা। আমার এইচএসসি পরীক্ষার শেষ সাবজেক্ট দিয়ে সেদিনই হল থেকে বাড়ি চলে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হটাৎ কি মনে করে হলে গিয়ে ছবি দেখার ইচ্ছে জাগলো। সবকিছু ঘুচিয়ে রেখে সিনামা দেখার জন্য বের হলাম। তখন নোংরা ছবি চালানোর জন্য অনেক হল বন্ধ করে দিয়েছিল ফখরুউদ্দিন সরকার। আমাদের এখানেও দুইটা সিনামা হলের মধ্যে একটা সিনামা হল বন্ধ করে দেয়। যে সিনেমা হলটিতে ছবি দেখতে গিয়েছিলাম সেটা গিয়ে বন্ধ দেখতে পাই। তাই অন্য সিনেমা হলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ঐখানে যাওয়ার পথে আমাদের জেলা ভূমি রেজিস্ট্রি অফিস পড়ে। আমি হেটেই যাচ্ছিলাম। ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে এসে আমি আমাদের পাশের বাড়ির শরীফ কাকাকে দেখতে পাই। উনি অফিসের ভিতর থেকে জমিলা দাদিকে নিয়ে বের হচ্ছেন। আমি উনাকে দেখে লুকানোর চেষ্টা করি আর উনি আমাকে দেখে লুকানোর চেষ্টা করছিলেন। আশেপাশে খুব বেশি দোকানপাট না থাকায় উনি জমিলা দাদিকে নিয়ে আবার ভিতরে ঢুকে গেলেন।
আমি তখনও কিছু বুঝতে পারিনি, আমার মাথায় আসেনি উনি কেনো আমাকে দেখে লুকানোর জন্য অস্থির হয়ে পড়লেন। যাক এর তিন বছর পর আমি একদিন ঢাকা থেকে বাড়িতে গেলাম, গিয়ে শুনতে পেলাম শরিফ চাচাদের বাড়িতে সালিশ বসেছে। শরিফ চাচার দুই ছোট ভাই উনাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছেন। উনাকে বেঈমান, বিশ্বাসঘাতক বলে মারার জন্য বারবার তেড়ে আসছে। পরে জানতে পারলাম জমিলা দাদি মারা যাওয়ার পর জমিজমা ভাগবাটোয়ারা করতে গিয়ে দেখা যায় জমিলা দাদি নাকি উনার নামে ৮শতক জমি লিখে দিয়ে যান!
আমরা যেবার এসএসসি পরীক্ষা দিই সেবার মোটামুটি পরীক্ষা সহজই হচ্ছিল। আমি ফার্স্ট বয় ছিলাম আমাদের সে ব্যাচের। পরীক্ষা নিয়ে আমার বাড়তি কোনো টেনশন কাজ করছিল না। আমার সামনে আমাদের স্কুলের একটি মেয়ের সিট পড়ছিল। মেয়েটির নাম শারমিন। সে পড়ালেখায় একেবারেই কাঁচা। লাজুক প্রকৃতির মেয়ে ছিল। আমিও তখন মেয়েদের সাথে কথা বলার ব্যাপারে খুবই লাজুক ছিলাম। মেয়েটি লজ্জার জন্য আমাকে কিছুই বলতে পারছিল না। আমার খাতার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নেয়। আমি তাকে আমার খাতা দেখার জন্য কিছুই বলছিলাম না। আবার তাকে সাহায্যও করছিলাম না। সে হয়তো চাচ্ছিল আমি তাকে আমার খাতা দেখার ব্যাপারে অভয় দিই কিন্তু আমি সেরকম কিছুই বলছিলাম না। একাউন্টিং পরীক্ষার দিন আমি প্রায় আধাঘন্টা আগে আমার লেখা শেষ করে বসে আছি। কি মনে করে তার দিকে তাকিয়ে দেখি সে এখনো সাদা খাতা নিয়ে বসে আছি। আমি এই প্রথম তার সাথে কথা বললাম, বললাম আমার খাতা দেখে লেখ। আমি মেলে ধরছি। সে লিখতে লাগলো। এরপর বাকি সব সাবজেক্ট সে আমার খাতা দেখে লিখলো।
আমার রেজাল্ট পাওয়ার পর আমি শারমিনের রেজাল্ট দেখতে লাগলাম। দেখলাম শারমিন ফেল করেছে। কয়েকদিন পর মার্কশিট আসলে আমি ওর মার্কশিট দেখি। দেখলাম একাউন্টিং এর পরের সব সাবজেক্টে শারমিন ভালো ভাবেই পাশ করেছে। বাকি গুলো সে পাশ করতে পারেনি। এরপর থেকে নিজের মধ্যে আমার প্রচন্ড অনুশোচনা আসে! এখনো এই ব্যাপারটা আমাকে খুব কষ্ট দেয়।
৩০ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১০:০৯
নূর আলম হিরণ বলেছেন: না, শারমিনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
২| ৩০ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১০:২৬
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: বাসার ভিতর থেকে মামী তার ছেলেকে বেধড়ক পিটাচ্ছে। ভাইগ্নার কান্না শুনে ভিতরে গেলাম ......
সম্পর্ক লিখনে সামান্য ভুল হয়েছে।
মামা-মামীর ছেলে আপনার ভাইগ্না হবে না, হবে মামাতো ভাই।
৩০ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১১:৩০
নূর আলম হিরণ বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার।
৩| ৩১ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১:২৯
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লেখা।
দারুন আবেগময়।
৩১ শে মার্চ, ২০২২ সকাল ৮:৫৬
নূর আলম হিরণ বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নূর আপনাকে। এই ধরনের ঘটনা জীবনে আরো অনেক আছে। মাঝে মাঝে মনে পড়ে।
৪| ৩১ শে মার্চ, ২০২২ সকাল ৯:৩১
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: শারমিন পরে পড়ালেখা করেছিলো? বিষয়টা কেমন যেন আমাকেও দগ্ধ করছে!
৩১ শে মার্চ, ২০২২ দুপুর ১২:০৮
নূর আলম হিরণ বলেছেন: না, পরীক্ষার রেজাল্টের কিছু দিন পরেই শারমিনের বিয়ে হয়ে যায়। বিষয়টি আসলে আমাকেও খুব কষ্ট দেয় যখন মনে পড়ে।
৫| ৩১ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১১:৫৮
গরল বলেছেন: আপনার গল্পের প্রথম অংশটা একটা করুন বাস্তবতা, আমি অনেক পরিবারকেই দেখেছি ছেলে মেয়ে নিয়ে একটা রুমে কষ্ট করে থাকে। তাদের প্রাইভেসি বলে কিছু নেই, বাধ্য হয়েই থাকতে হয়। শহরগুলোতে এরকম পরিবারে সংখ্যা সারা বাংলাদেশে কোটির কাছাকাছি না হলেও একটা বড় সংখ্যাই হবে। এদের জীবনটাও অনেক মনবেতর বলেই মনে হয় আমার কাছে, তবে আপনার গল্পের মামা-মামি হয়ত সেরকম মানবেতর জীবন যাপন করে না, তাই আপনার উপদেশ কাজে লাগাতে পারবে। কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে কিছুই করার নাই।
০১ লা এপ্রিল, ২০২২ ভোর ৫:০৬
নূর আলম হিরণ বলেছেন: একেবারে সঠিক বলেছেন। ঢাকা শহরে এই সংখ্যাটা অনেক বেশি বিশেষ করে পুরান ঢাকার দিকে। এখানে বাসা ভাড়া অত্যাধিক বেশি হওয়ায় এমন কষ্টকর জীবন যাপন করছে অনেক মানুষ।
৬| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ২:১১
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: অতীতের ঘটনা মনে আনন্দ দেয় কখনো আর দুঃখও দেয়। তবে অনেক কিছু তখন না বুঝতে পারলেও তখনকার ঘটনা মনে করে অনেক বুঝতে পারি।
সুন্দর পোস্ট
০৬ ই এপ্রিল, ২০২২ ভোর ৪:৩৮
নূর আলম হিরণ বলেছেন: ব্যস্ততা কমে গেলে নিরিবিলিতে থাকলে যাপিত জীবনের অনেক ঘটনাই মনে পড়ে। এমন কিছু ঘটনা তখন স্বাভাবিক মনে হলেও এখন তার রহস্য ভেদ করতে পারি। সবার জীবনেই এমন স্মৃতি থাকে। ধন্যবাদ ছবি আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১০:০৬
সোনাগাজী বলেছেন:
শারমিন পরে পড়ালেখা করেছিলো, নাকি পারেনি।